যেভাবে ইতিবাচক চিন্তা ভাবনার বিকাশ ঘটাবেন

একটি গ্লাসে যদি অর্ধেকের বেশি পানি থাকে এবং আপনি যদি মনে করেন গ্লাসের খানিক অংশে পানি নেই তাহলে আপনার চিন্তার পরিবর্তন করা জরুরী। গবেষকগণ বলে থাকেন, ইতিবাচক চিন্তা যারা করেন তারা অসুস্থতায় কাবু হয়ে যান না বরং মনের শক্তি দ্বারা নিজেকে শক্ত রাখেন। ইতিবাচক চিন্তার অধিকারী ব্যক্তিগণ খুব কঠিন সময়েও মাথা ঠান্ডা রাখতে জানেন, স্ট্রোকের ঝুঁকি থেকে বেঁচে যান এবং সর্বদা চিন্তা মুক্ত থাকতে জানেন। ইতিবাচক চিন্তা করার ক্ষমতা প্রকৃতিগত ভাবে হয় না। তবে আপনি অনুশীলনের মাধ্যমে ইতিবাচক চিন্তার অধিকারী হতে পারেন। আসুন জেনে নেই কিভাবে ইতিবাচক চিন্তার বিকাশ ঘটিয়ে নিজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করবেন তা সম্পর্কে।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

আপনার কৃতজ্ঞতার কারণগুলো লিখে ফেলুন

ছবিসূত্রঃ depositphotos.com

কৃতজ্ঞতা সুখী হতে, ইতিবাচক আবেগ তৈরিতে, সুস্থ-সুন্দর দেহ, সম্পর্কের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে। আপনি প্রতিদিন যে ভালো কাজগুলো করেন তার মধ্যে থেকে অন্তত তিনটি ভালো কাজ একটি ডায়েরিতে লিখে ফেলুন। প্রতিরাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এর চর্চা করুন। একটি ডায়েরি ও কলম এনে দিনের তিনটি ভালো কাজ লিপিবদ্ধ করুন যার মাধ্যমে আপনি খুশি হয়েছেন। আপনি কেন কৃতজ্ঞ হয়েছেন তাও উল্লেখ করুন। প্রতি সপ্তাহের শেষের দিন ডায়েরি খুলে ভালো কাজগুলো পড়ুন। নিশ্চয়ই তখন আপনার খুব ভালো লাগবে। এভাবে প্রতিদিন, প্রতি সপ্তাহ এবং প্রতি মাসে চর্চা অব্যাহত রাখুন।

স্বেচ্ছাসেবী

ছবিসূত্রঃ Kinda Kind

স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করে অন্যকে সহযোগিতা করার মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়, ইতিবাচক চিন্তার বিকাশ ঘটে, দুশ্চিন্তা দূর হয় এবং স্বাস্থ্য ভালো থাকে। চিন্তা করুন আপনার কোন দক্ষতা, গুণাগুণগুলোর মাধ্যমে অপরকে সহযোগিতা করতে পারবেন এবং কিভাবে, কত দ্রুত সহযোগিতা করতে পারবেন। অন্যকে সাহায্য করার মাধ্যমে আত্মতৃপ্তি অর্জন করা যায়। আপনি যদি ভালো বই পড়তে পছন্দ করেন তাহলে অন্যদের ভালো বই পড়ায় উৎসাহী করুন। আপনি যদি অন্য কোন গুণাবলীর অধিকারী হয়ে থাকেন তাহলে তার বিকাশ ঘটান।

হাসুন মন খুলে

ছবিসূত্রঃ online–dating-canada-girl.blogspot.com

বলা হয়ে থাকে হাসি হল সর্বোৎকৃষ্ট ঔষধ। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হলে প্রতিনিয়ত মন খুলে হাসুন। হাসলে শরীরে অসুখ বিসুখ দানা বাঁধতে পারে না এবং দুশ্চিন্তা আপনা আপনি বিদায় হয়। তবে অকারণে একা একা হাসলে লোকে আপনাকে বোকা ভাবতে পারে। তাই চমৎকার ও মজাদার কোন সিনেমা দেখে হাসতে পারেন, বান্ধুবীর সাথে গল্প করতে করতে হাসতে পারেন, বাইরে বেড়াতে গিয়ে হাসতে পারেন, বন্ধুকে সাথে নিয়ে কেনা কাটা করতে গেলে হাসতে পারেন।

{ "slotId": "", "unitType": "in-article", "pubId": "pub-6767816662210766" }

অন্যের প্রশংসা করা চাই

অন্যের গুণাগুণের প্রশংসা করুন বেশি করে। প্রশংসা করার মাধ্যমে উক্ত ব্যক্তির কাছে আপনি ভালো হৃদয়ের মানুষ বলে বিবেচিত হবেন। উক্ত ব্যক্তি আপনা্র প্রশংসাকে মর্যাদার সাথে গ্রহণ করবে। অনেকে মনে করেন অন্যের প্রশংসা করলে তিনি শীর্ষে উঠে যাবেন এবং প্রশংসাকারীকে মূল্যায়ন করবে না। এটা ভুল ধারণা। সর্বদা সুনির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ করে দিন আপনি কী কারণে তার প্রশংসা করছেন। যাকে প্রশংসা করবেন তাকে প্রকৃতভাবেই প্রশংসা করুন, মিথ্যা প্রশংসা নয়।

ইতিবাচক মানুষদের সাথে সখ্যতা

ছবিসূত্রঃ standard.co.uk

ইতিবাচক মনোভাবের উন্নতির জন্য আশেপাশে ইতিবাচক মানুষ থাকা প্রয়োজন। তাই ইতিবাচক চিন্তা করে, ইতিবাচক কাজ করে এমন মানুষের সাথে মিশুন। নেতিবাচক বাক্য বলা থেকে বিরত থাকুন। নেতিবাচকতা সম্পূর্ণভাবে পরিহার করুন। এভাবে জীবন সুন্দর ও সাফল্যময় হবে।

আত্মনিয়োগ

ছবিসূত্রঃ bigthink.com

প্রতিদিন মেডিটেশনের মাধ্যমে আত্মনিয়োগ করলে ইতিবাচক চিন্তার উন্নতি হয়। প্রতিনিয়ত মেডিটেশনের মাধ্যমে জীবনের সমস্যা সমাধান করা যায় সহজেই। এক গবেষণায় বলা হয়েছে, মনের শক্তির প্রয়োগ করে ডিএনএ পর্যায়ে গিয়ে স্তন ক্যান্সারের সহজ নিরাময় করা সম্ভব। তাই ইতিবাচক চিন্তা ভেতরে ও বাইরের জগতকে সাজিয়ে তোলে। একটি নির্জন জায়গায় আরামদায়ক অবস্থায় বসে কিছুক্ষণ দীর্ঘ শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। আপনি আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে মনোনিবেশ করে কিংবা অডিওর দিকে মনোনিবেশ করে মেডিটেশন চালিয়ে যেতে পারেন।

শরীরচর্চা

জীবনের সকল ভার, চাপ থেকে মুক্ত থাকার জন্য প্রয়োজন শরীরচর্চার অনুশীলন। প্রতিদিন শরীরচর্চা করলে শারীরিক ও মানসিকভাবে আপনি সুস্থ থাকবেন। প্রতিদিন শরীরচর্চা আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখবে, হার্ট সুস্থ রাখবে, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করবে। গবেষকগণ বলেন- আশাবাদী ও স্বপ্নবাজ মানুষেরা নিয়মিত ব্যায়ামে আগ্রহী থাকে কিন্তু হতাশাবাদীরা ব্যায়ামে আগ্রহী থাকে না।

পর্যাপ্ত ঘুম

ছবিসূত্রঃ dreams.co.uk

প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম আপনাকে আশাবাদী করে তুলতে সহায়তা করবে। প্রাপ্ত বয়স্কদের প্রতিদিন ৭-৯ ঘন্টা ঘুমানো উচিত। অনেকের সময়মতো ঘুম আসে না। তাই ঘুমের জন্য বা বিশ্রামের জন্য নরম সুরের গান ছেড়ে চোখ বন্ধ করে খানিক সময় বিশ্রাম নিতে পারেন। ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভালো করে গোসল করলে তাড়াতাড়ি চোখে ঘুম চলে আসবে। অনেকের ঘুমের আগে বই পড়ার অভ্যাস। বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে যাওয়া দারুণ এক অভ্যাস। মানুষ যখন কম ঘুমায় তখন সে উদ্বিগ্ন থাকে এবং হতাশ থাকে। তাই আশাবাদী ও ইতিবাচক মনোভাবের বিকাশের জন্য ঘুমানো খুব প্রয়োজন।

অ্যালকোহল পরিহার

মানুষ যখন নেতিবাচক চিন্তা, নেতিবাচক পরিবেশ দ্বারা বেষ্টিত থাকে তখন অ্যালকোহল, ড্রাগসের দিকে ধাবিত হয়। অ্যালকোহল এবং ড্রাগে আসক্ত হলে নিজের মারাত্মক ক্ষতি করার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই নেতিবাচকতা পরিহার করে ইতিবাচক থাকার জন্য অ্যালকোহল ও ড্রাগ পরিহার করুন।

অন্যের সাথে তুলনা নয়

ছবিসূত্রঃ dreamstime.com

অন্যের রুপ, গুণ ও সৌন্দর্যের সাথে কখনো নিজের রুপ, গুণ ও সৌন্দর্যের তুলনা করবেন না। কখনো অন্যের চেয়ে নিজেকে ছোট মনে করবেন না। অন্যের সাথে নিজের তুলনা করলে নিজের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে যাবে এবং হতাশা আপনার পিছু ছাড়বে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *