অনলাইনে টাকা রোজগার করতে চান? তাহলে ইউটিউব হতে পারে আপনার জন্য সবচেয়ে আদর্শ জায়গা। ইউটিউব এখন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম। প্রতিমাসে এখানে যোগ হচ্ছে এক বিলিয়নের বেশি ইউনিক ইউজার। নিঃসন্দেহে এই সংখ্যাটা বিশাল! তাছাড়া অসংখ্য মানুষ ইতোমধ্যে ইউটিউব থেকে কোটি কোটি টাকা আয় করছে। প্রতিনিয়ত ইউটিউবের পার্টনার প্রগ্রামে তাদের অংশীদারের সংখ্যা বাড়ছে, অর্থাৎ নতুন নতুন চ্যানেল নিয়ে কনটেন্ট ক্রিকেটাররা এগিয়ে আসছে।
উন্নত বিশ্বের বিবেচনায় প্রতি ১০০০ ভিউয়ের বিপরীতে ইউটিউব থেকে ২ থেকে ৪ ডলার রোজগার করা যায়। যদিও এই সংখ্যা অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। তারপরও ১০০ ভিউ থেকে মাত্র ২ ডলার? সংখ্যাটা নিশ্চয়ই খুবই কম! কিন্তু ভেবে দেখুন তো, আপনার চ্যানেলে যদি ১০০ ভিডিও থাকে, এবং প্রতিটি ভিডিও ৫,০০০ করে ভিউ হয়। তাহলে রোজগারটা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়?
সম্ভবত ১০০০ থেকে ২০০০ ডলার। নিঃসন্দেহে এই সংখ্যাটা অনেক বেশি। এভাবে বিশ্বব্যাপী অসংখ্য কনটেন্ট ক্রিয়েটর লক্ষ লক্ষ টাকা রোজগার করছে। সুতরাং আপনিও ইউটিউব থেকে রোজগার করতে পারেন। আজকের নিবন্ধে আমি আলোচনা করবো কিভাবে ইউটিউব থেকে টাকা রোজগার করা যায় তা নিয়ে।
শুধু মনিটাইজেশনই একমাত্র উপায় নয়
শুরুতেই বলি, ইউটিউবকে অনেকে শুধু মনিটাইজেশনের প্ল্যাটফর্ম মনে করেন। কিন্তু ইউটিউব শুধুমাত্র মনিটাইজেশন করে টাকা রোজগার করার প্ল্যাটফর্ম নয়। মনিটাইজেশন অবশ্যই ইউটিউব থেকে আয় করার প্রধান উপায়। তবে একমাত্র উপায় না।
তাহলে ইউটিউব থেকে আর কী কী উপায়ে আয় করা যায়? আজকের নিবন্ধে বিস্তারিতভাবে জানাবো মনিটাইজেশন ছাড়াও আরও কী কী উপায়ে ইউটিউব থেকে আয় করা যায়।
১. ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট বা ব্লগে ট্রাফিক পেতে
অনেক মানুষ আছে যাদের অনলাইনে প্রথম ব্যবসা ইউটিউব নয়। ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট, বা ব্লগের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জিনিস নিয়ে আর্টিকেল লিখে থাকেন এবং তা থেকে রোজগার করে থাকেন। কিন্তু ব্যক্তিগত ব্লগ বা ওয়েবসাইট খুব ভালোভাবে এসইও না করালে র্যাংকিয়ে আসে না র্যাংকিয়ে না এলে আশানুরূপ ভিউ পাওয়া যায় না। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট বা ব্লগ যদি ভিউ না হয় তাহলে সেখান থেকে কোনো রোজগারও হয় না।
আপনি চাইলে ইউটিউবে আপনার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট বা ব্লগে ট্রাফিক বাড়ানোর মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। আপনার ব্যক্তিগত ব্লগে যে বিষয়ে আর্টিকেল লিখবেন, সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে ইউটিউবের জন্যও একটি ভিডিও তৈরি করবেন। তারপর ইউটিউব ভিডিও ডেসক্রিপশন বক্সে প্রথম দুই-এক লাইনের মধ্যেই আপনার ওয়েবসাইটের বিষয় ভিত্তিক লিঙ্কটি সংযুক্ত করবেন।
আপনি যদি ধারাবাহিকভাবে ওয়েবসাইটে থাকা সব বিষয় নিয়ে ভিডিও তৈরি করেন, এবং তা ইউটিউবে আপলোড করেন। তাহলে ইউটিউব আপনার ওয়েবসাইটের এসইওয়ের কাজ করবে। ইউটিউবের ভিউ বাড়ার সাথে সাথে আপনার ব্যক্তিগত ব্লগ বা ওয়েবসাইটের ভিউ বাড়তে থাকবে।
সুতরাং এক্ষেত্রে আপনি শুধু ইউটিউব না, ইউটিউব এবং ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট দুটোকেই র্যাংকিংয়ে আনতে পারবেন এবং ২ উপায়েই রোজগার করতে পারবেন।
২. পণ্য বিক্রি
আপনার হয়তো ইউটিউবিং করা প্রধান উদ্দেশ্য নয়। আপনার একটি ব্যক্তিগত ব্যবসা আছে, সেখানে পণ্য উৎপাদন হয়, এবং তা বিক্রি করে আপনি আয় করে থাকেন। সুতরাং আপনি চাইলে এই পণ্যের বিপণনে ইউটিউবকে ব্যবহার করতে পারেন।
মনিটাইজেশন না করে আপনি আপনার কোম্পানির পণ্য বিক্রির মাধ্যম হিসেবে ইউটিউবকে ব্যবহার করুন, আর অধিক পণ্য বিক্রির নিশ্চিত করুন। বিশ্বব্যাপী অসংখ্য কনটেন্ট ক্রিয়েটর আছে যারা ব্যক্তিগত পণ্যের রিভিউ ইউটিউবে দিয়ে থাকেন, এবং সেখান থেকে ক্রেতারা পণ্য দেখে তাকে অর্ডার করেন।
বিশেষ করে ই-বুক, কোনো সফটওয়্যার, ফটোগ্রাফি সহ অনলাইনে বিক্রয় যোগ্য সকল পণ্য আপনি ইউটিউবে বিক্রি করতে পারেন। অবশ্য এর জন্য আপনার একটি ব্যক্তিগত ই-কমার্স সাইট থাকতে হবে। ই-কমার্স সাইটে আপনি পণ্যের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করবেন, এবং সেই পণ্যের রিভিউ ভিডিওচিত্র ইউটিউবে আপলোড করবেন। তারপর ইউটিউব এবং ই-কমার্স সাইটকে একইভাবে এসইও করাবেন। ই-কমার্স সাইটে পণ্যের বিবরণীর নিচে ইউটিউব ভিডিও লিংক সংযুক্ত করুন। এভাবে আপনি ইউটিউব ব্যবহার করে পণ্য বিক্রি করে লাভবান হতে পারেন।
৩. ভিডিও মনিটাইজেশন
এবার আসি ইউটিউবে ভিডিও মনিটাইজেশন প্রসঙ্গে। ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করে তা থেকে আয়ের প্রধানতম উপায় হলো ভিডিও মনিটাইজ করা। এখন থেকে মাত্র কয়েক বছর আগে ইউটিউবে একটি নতুন চ্যানেল খুললেই প্রথম দিন থেকে চ্যানেলটি মনিটাইজ করা যেত, এবং রোজগার করা যেত।
কিন্তু ক্রমান্বয়ে ইউটিউবে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায়, এবং বিজ্ঞাপন দাতাদের সাথে ইউটিউবের নতুন নতুন চুক্তি হওয়ার ইউটিউব তাদের পার্টনার প্রোগাম তথা মনিটাইজেশনে নানাবিধ পরিবর্তন এনেছে। এই কারণে নতুন কোনো চ্যানেল শুরুতেই মনিটাইজ করা যায় না।
অর্থাৎ বর্তমান সময়ে ইউটিউবিং শুরু করতে হলে শুরুতে কিছুটা কঠিন পথ অতিক্রম করতে হবে। একটি নতুন চ্যানেল ইউটিউবের পার্টনার প্রোগ্রামে যুক্ত হতে হলে চ্যানেলটিতে ন্যূনতম ১ হাজার সাবস্ক্রাইবার এবং চার হাজার ঘন্টা ওয়াচ টাইম থাকতে হবে। এই দুটি শর্ত পূরণ করার পর আপনার ভিডিও যদি সকল কমিউনিটি গাইডলাইন এবং কপিরাইট আইন মেনে চলে তবে আপনাকে মনিটাইজেশনের অনুমতি দেওয়া হবে। সাথে সাথে আপনাকে ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামে যুক্ত করা হবে।
এরপর থেকে আপনার ভিডিওতে বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞাপন দেখানো হবে, এবং তা থেকে লভ্যাংশ আপনার ব্যাংক একাউন্টের পাঠিয়ে দেয়া হবে। এছাড়াও ইউটিউব থেকে রোজগারের আরো অনেকগুলো মাধ্যম আছে। আমি পরবর্তী নিবন্ধে এ নিয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনা করব।