বর্তমান সময় জনপ্রিয় কয়েকটি পেশার মধ্যে একটি হল নির্বাহী কর্মকর্তার চাকরি। আমাদের দেশের অনেক তরুণ এই পেশায় তাদের ক্যারিয়ার গড়তে ইচ্ছুক।
একজন নির্বাহী কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসন সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ করে থাকেন যেমন, তার অধস্তন কর্মচারীদের নেতৃত্ব প্রদান করা, দিক নির্দেশনা দেয়া, ব্যবস্থাপনা করা। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের কাজের ধরন এবং আয়তন অনুযায়ী একজন নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব এবং কাজের ব্যাপ্তি নির্ভর করে।
কিন্ত বর্তমানে এই প্রতিযোগিতাপূর্ণ চাকরির বাজারে চাইলেই তো আর মনের মতো চাকরি পাওয়া যায় না। তাই আজকে আমরা আলোচনা করব, কীভাবে আপনি নির্বাহী কর্মকর্তার পদের জন্য চাকরি খুঁজতে পারেন।
সময় নিন
তাড়াহুড়া করে অনেক কিছু পাওয়া গেলেও মনের মত চাকরি পাওয়ার কথা না। আপনি কোন ধরনের প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চান, কোন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে চান, এ পদে কাজ করার মত যোগ্যতা এবং দক্ষতা আছে নাকি সব দিকে আপনার লক্ষ্য রাখতে হবে। কাজেই ঠিক মত সময় নিন এবং ধীরেসুস্থে চাকরি খুঁজুন।
ভালো জীবনবৃত্তান্ত লেখা শিখুন
একটি ভালো জীবন বৃত্তান্তের মাধ্যমে আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত চাকরিটি পেয়ে যেতে পারেন। আপনার যোগ্যতা এবং কর্মদক্ষতা দেখেই চাকরিতে নিয়োগ দেয়া হবে। তাই আগে ভালো করে সিভি লেখা শিখুন। প্রয়োজনে অভিজ্ঞদের সাহায্য এবং পরামর্শ নিন।
অনেকেই অন্যের সিভি নকল করে সিভি তৈরি করেন। যা করা একদমই উচিত নয়। বিভিন্ন সাইট এবং ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখলে দারুণ সব সিভি নমুনা পাওয়া যাবে। এগুলো দেখে ধারণা নিতে পারেন। তারপর নিজের সিভি নিজেই তৈরি করুন। এবং সিভিতে কোনোভাবেই বানান ভুল করা যাবে না। বারবার মনোযোগ দিয়ে পড়ে, সিভি তৈরি করতে হবে। আর সিভির সঙ্গে ‘কভার লেটার’ যুক্ত করতে ভুলবেন না কিন্তু। আপনি কেন চাকরির জন্য আবেদন করছেন, কেন আপনি এই চাকরির যোগ্য, তা সংক্ষিপ্ত আকারে কভার লেটারে লিখতে হবে।
দক্ষতা বৃদ্ধি
চাকরির প্রয়োজন অনুযায়ী আপনাকে নতুন দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আপনার যদি মনে হয়, নির্বাহী কর্মকর্তার পদে চাকরির জন্য যেসব যোগ্যতা এবং দক্ষতার প্রয়োজন, তা আপনার মধ্যে নেই, তাহলে দেরি না করে এখন থেকেই তা অর্জনে লেগে পড়ুন। “আমি পারব না” বা “আমার দ্বারা সম্ভব না” এসব কথা চিন্তা করার পরিবর্তে কীভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য নিজেকে উপযোগী করে তুলতে পারবেন, সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
বর্তমানে আপনাকে দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রচুর টাকা এবং অনেক সময় ব্যয় করার কোন প্রয়োজন নেই। অনলাইনে বিভিন্ন ধরণের কোর্স রয়েছে যা থেকে আপনি আপনার প্রয়োজন ও পছন্দ অনু্যায়ী কোর্স করতে পারবেন। আপনি যত বেশি দক্ষতা অর্জনে মনোযোগী হবেন, তত বেশি উপকৃত হবেন।
জব সাইট
জব সাইটে নিয়মিত খোঁজখবর রাখুন। এসব সাইটে দ্রুত অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলুন। যেকোনো মুহূর্তে সুযোগ পেয়ে যেতে পারেন।
সোশ্যাল মিডিয়া
সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনাকে সক্রিয় থাকতে হবে। আর খেয়াল রাখুন, আপনার যোগ্যতা, দক্ষতা যেন আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিফলিত হয়। আপনি যদি কোনও অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকেন, হোক তা কলেজ বা ইউনিভার্সিটির ছোট কোনো অনুষ্ঠান, বিয়ের অনুষ্ঠান অথবা আপনি যদি কোনো সমাজসেবামূলক কাজ, লেখালেখির সাথে জড়িত থাকেন তাহলে সেসব ব্যাপারে আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন।
এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রকাশ পায় যে, আপনি কাজ করতে আগ্রহী, দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত ও দলগত কাজে পারদর্শী। আর হতে পারে, আপনার ভবিষ্যৎ নিয়োগকর্তা আপনার সোশ্যাল মিডিয়ার ফ্রেন্ডলিস্টেই আছেন।
নেটওয়ার্কিং
পরিচিতদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। হোক তা কারণে বা অকারণে। দরকারের সময় দেখবেন, পরিচিতদের রেফারেন্সে চাকরি পাওয়া কতোটা উপকারি হতে পারে। বিভিন্ন পেশার বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষের সাথে যোগাযোগ তৈরী করুন। বিভিন্ন ধরণের পেশাগত ইভেন্টগুলোতে অংশগ্রহণ করুন। এভাবে আপনি অনেক মানুষের সাথে পরিচিত হতে পারবেন এবং তাদের সাথে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবেন। ভবিষ্যতে এ সম্পর্কগুলো আপনার কাজে লাগতে পারে। এতে করে আপনার যোগাযোগ দক্ষতাও বাড়বে।
এছাড়াও লিংকডইন ও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নেটওয়ার্কিং করতে পারেন। নতুন কারো সাথে যোগাযোগের পূর্বে নিজেকে ভালোভাবে প্রস্তুত করে নিন।
পাশাপাশি আপনার পছন্দের কোম্পানিগুলোর তালিকা তৈরি করুন। আপনার পরিচিত কেউ যদি এসব কোম্পানিতে চাকরি করে থাকেন, তাহলে তাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করুন। আপনার দক্ষতা ও যোগ্যতা এবং এই কোম্পানিতে কাজ করতে আগ্রহ সম্পর্কে তাদেরকে বুঝিয়ে বলুন । সেসব কোম্পানির বিভিন্ন অনুষ্ঠান, কর্মশালা, সেমিনার ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করুন। তাদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে পরিচিত হবার চেষ্টা করুন। হতে পারে, এভাবে কোনো একসময় আপনি তাদের সহকর্মী হয়ে যেতে পারেন।
ইন্টারভিউ
ইন্টারভিউ দিতে যাবার আগে অবশ্যই সে কোম্পানির সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নিন। কোম্পানির কাজের ধরন, তাদের পণ্য, সেবা সম্পর্কিত সকল তথ্য জেনে নিন। তাদের ওয়েবসাইট থেকে এ সম্পর্কিত সকল তথ্য পেয়ে যাবেন। এছাড়া সব ইন্টারভিউতে কিছু কমন প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। এসব প্রশ্নের উত্তর আগে থেকে ঠিক করে রাখতে হবে। এতে করে আপনি ইন্টারভিউতে গিয়ে সহজেই উত্তর দিতে পারবেন।
আপ টু ডেট থাকা
আপনি যে কোম্পানিগুলোতে সিভি জমা দিয়েছেন, সেখানকার ব্যাপারে নিয়মিত খোঁজখবর রাখুন। নতুবা চাকরিটি আপনার হাত থেকে ফসকেও যেতে পারে।