সুপারিশপত্র হচ্ছে এমন একটি চিঠি, যেখানে কোনো প্রাক্তন কর্মকর্তা, সহকর্মী, ক্লায়েন্ট অথবা শিক্ষক একজন ব্যক্তির কর্মদক্ষতা, যোগ্যতা, পেশাদারিত্ব সম্পর্কিত তথ্য এবং যাবতীয় গুণাবলী উল্লেখ করে থাকেন।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুপারিশ পত্রের প্রয়োজন হয়, বিশেষ করে দেশের বাইরে পড়তে গেলে এবং চাকরিক্ষেত্রে। আজকের নিবন্ধে কিভাবে চাকরি জন্য একটি সুপারিশ পত্র জোগাড় করবেন তা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
ধরুন, আপনি আপনার বর্তমান চাকরিটি ছেড়ে অন্য কোথাও চাকরি করতে চান। সেক্ষেত্রে আপনি যদি কোনোভাবে আপনার প্রাক্তন কর্মকর্তার কাছ থেকে একটি সুপারিশপত্র সংগ্রহ করতে পারেন, তাহলে এটি আপনার স্বপ্নের চাকরি পেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
চাকরি খোঁজার ক্ষেত্রে একটি সুপারিশপত্র আপনাকে অন্যান্য প্রার্থীদের তুলনায় এগিয়ে রাখবে। তাই আপনার পছন্দের চাকরিটি হাতের মুঠোয় পেতে চাইলে ভালো একটি সুপারিশপত্রের বিকল্প নেই। এই সুপারিশ পত্রের সঠিক ব্যবহার আপনার জন্য অনেক সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে।
প্রথমে জেনে নেই কী কী বিষয় একটি সুপারিশ পত্রে উল্লেখ করতে হবে এবং কোন বিষয়গুলো বর্জন করতে হবে।
- সুপারিশকারীকে অবশ্যই প্রার্থী সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য প্রদান করতে হবে।
- সবচেয়ে ভালো হয় যদি প্রার্থীর ইতিবাচক দিকসমূহ উদাহরণসহ তুলে ধরতে পারেন।
- সুপারিশকারীর সাথে আবেদনকারীর কী ধরনের সম্পর্ক, কীভাবে একে অপরকে চিনেন, কতদিন একসাথে কাজ করেছেন, কোন প্রজেক্টে একসাথে কাজ করেছেন, সেসব বিষয় উল্লেখ করতে হবে।
- আবেদনকারী কেন এই চাকরির জন্য উপযুক্ত তার সম্ভাব্য কারণসমূহ তুলে ধরতে হবে। সেইসাথে আবেদনকারীকে নিয়োগ করলে নিয়োগকর্তা কীভাবে উপকৃত হতে পারবেন, সে বিষয়টি আলোচনা করতে হবে।
- আগের চাকরির অভিজ্ঞতা কীভাবে ভবিষ্যতে আবেদনকারীর নতুন কর্মক্ষেত্রে কাজে লাগবে, তা উল্লেখ করতে পারেন।
- আবেদনকারীর সাথে সুপারিশকারী এবং অন্যান্য সহকর্মীদের সাথে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে হবে।
- সুপারিশ পত্র ছোট করে লেখা যাবে না। যাবতীয় তথ্য বিস্তারিতভাবে তুলে ধরে হবে।
- লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে কোন নেতিবাচক তথ্য যাতে সুপারিশপত্রে উল্লেখ না থাকে।
- এক কথায় সুন্দর এবং স্পষ্ট ভাষায় আবেদনকারীর সকল তথ্য সুপারিশপত্রে তুলে ধরতে হবে।
এবার চলুন জেনে নেই, কীভাবে চাকরি জন্য সুপারিশপত্র জোগাড় করবেন।
কর্মকর্তার সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করুন
আপনি কার কাছে সুপারিশপত্রের জন্য অনুরোধ করবেন, কীভাবে তার সাথে কথা শুরু করবেন, সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে ফোনে কথা না বলে বরং তার সরাসরি সাক্ষাত করতে যান। সরাসরি কথা বললে আপনি কী রকম সুপারিশ পত্র চাচ্ছেন, কেন আপনার সুপারিশ পত্রের প্রয়োজন, কীভাবে এটি ভবিষ্যতে আপনার কাজে লাগবে এসব বিষয়ে সরাসরি আলোচনা করতে পারবেন। যিনি আপনার জন্য সুপারিশ পত্র লিখবেন, তার জন্যও বিষয়টি সহজ হবে।
আপনার সুপারভাইজারের কাছ থেকে সুপারিশপত্র নিন
আপনার এমন একজন ব্যক্তির কাছ থেকে সুপারিশপত্র নেয়া উচিত, যিনি আপনার সকল গুণ, দক্ষতা ও যোগ্যতা সম্পর্কে ভালো করে জানেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয়, যদি আপনি যে কর্মকর্তার অধীনে কর্মরত ছিলেন, তার কাছ থেকে সুপারিশ পত্র সংগ্রহ করতে পারেন। কারণ আপনার কর্মদক্ষতা সম্পর্কে তার চেয়ে বেশি আর কারো ধারণা থাকার কথা নয়।
সুপারিশপত্র লেখার জন্য সময় দিন
যিনি আপনাকে সুপারিশপত্র দেবেন, তাকে সুপারিশপত্র লিখার জন্য কম করে হলেও দুই সপ্তাহ সময় দিন। এখন আপনি যদি আজকে সুপারিশ পত্রের জন্য অনুরোধ করে আগামীকালের মধ্যেই সুপারিশপত্র লিখে দিতে বলেন, তাহলে হয়তোবা তিনি লিখেও দেবেন। কিন্তু এটি কখনো একটি আদর্শ সুপারিশপত্র হবে না। তাই যিনি সুপারিশপত্র লিখবেন, তাকে পর্যাপ্ত সময় দিন।
নোটিশ পিরিয়ডে থাকাকালীন সময় সুপারিশপত্র সংগ্রহ করুন
বর্তমান চাকরি ছাড়ার আগে আপনি যখন অফিসে নোটিশ পিরিয়ডে থাকবেন, সে সময় সুপারিশ পত্র সংগ্রহ করে রাখা উচিত। কারণ আপনি যখন বর্তমান চাকরিটি একেবারে ছেড়ে দেবেন, তখন হয়তো আপনার জন্য সুপারিশপত্র সংগ্রহ করা একটু কষ্টকর হয়ে যাবে।
তাই আপনি যদি আগে থেকেই সুপারিশপত্র জোগাড় করে রেখে দিতে পারেন, তাহলে পরবর্তী চাকরির জন্য সুপারিশপত্র নিয়ে আপনাকে আর চিন্তা করতে হবে না।
জীবন বৃত্তান্ত
যিনি আপনাকে সুপারিশ পত্র দেবেন, তার হাতে আপনার একটি জীবন বৃত্তান্ত তুলে দিন। যেখানে আপনার কর্মদক্ষতা, যোগ্যতা, পেশাদারিত্ব সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য বিস্তারিতভাবে উল্লেখ থাকবে। আপনার কর্মকর্তার হয়তো সুপারিশ পত্র লেখার সময় আপনার সব কর্মদক্ষতা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা সম্পর্কিত তথ্য মনে নাও থাকতে পারে। তাই তার হাতের কাছে যদি আপনার জীবন বৃত্তান্ত থাকে, তাহলে তার জন্য সুপারিশপত্র লেখা সহজ হবে।
সুপারিশ পত্রের বিষয়বস্ত নিয়ে আলোচনা করুন
এমন হতে পারে যে, আপনার ম্যানেজার সুপারিশপত্র লিখতে পারদর্শী নন। সেক্ষেত্রে আপনি আপনার ম্যানেজারকে সাহায্য করতে পারেন। তার সাথে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করুন।কোন ফরম্যাটে সুপারিশপত্র লিখতে হবে, আপনি কোন কোন বিষয় সুপারিশপত্রে যুক্ত করতে চাচ্ছেন এবং কোন বিষয়সমূহ এখানে উল্লেখ করা যাবে না, সে সম্পর্কে তাকে ধারণা দিন।
এছাড়াও সুপারিশপত্রে আপনার দায়িত্বপালনের যোগ্যতা, কাজের ধরন, কাজের বিবরণী, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও দলগত কাজের দক্ষতা উল্লেখ করা আবশ্যক। এসব তথ্য আপনার সুপারিশ পত্র আরো ফলপ্রসূ করে তু্লবে।