চাকরি প্রার্থীদের একটি সাধারণ প্রশ্ন হলো, অভিজ্ঞতা না থাকলে আমি কীভাবে একটি নতুন ক্ষেত্রে চাকরি পেতে পারি? ভালো চাকরি পাওয়ার জন্য অভিজ্ঞতা খুব দরকারি। অনেক চাকরি প্রার্থী যথেষ্ট দক্ষ হওয়া সত্ত্বেও শুধু অভিজ্ঞতার অভাবে চাকরি পান না। ফলে তারা হতাশ হয়ে পড়ে্ন।
কেননা বেশিরভাগ নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান সম্ভাবনাময় তরুণদের নিয়োগ দেওয়ার পরিবর্তে অভিজ্ঞদের নিয়োগ দিতে বেশি আগ্রহী হয়ে থাকে, যেন প্রথম দিন থেকেই কর্মীরা সঠিকভাবে কাজ করতে পারেন।
যেহেতু চাকরিপ্রার্থীর পক্ষে প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ বোর্ড পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, তাই চাকরি পেতে হলে আপনাকেই অভিজ্ঞ হয়ে উঠতে হবে। তবে এই অভিজ্ঞতার জন্য পূর্ণকালীন নয়টা থেকে পাঁচটা অফিস করার প্রয়োজন নেই। সুনির্দিষ্ট কোনো ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ হতে হলে পূর্ণকালীন চাকরি ছাড়াও আরো অনেক উপায় আছে।
১. ইন্টার্নশিপ শুরু করুন
ইন্টার্নশিপের কথা শুনে নিশ্চয়ই ভাবছেন, আপনি তো সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েট নন, তাহলে ইন্টার্নশিপ কেন করবেন? বিশ্বব্যাপী অসংখ্য কোম্পানি আছে, যারা পার্টটাইম ও বাড়িতে বসে কাজের সুযোগ দিয়ে থাকে।
আপনি যদি এমন কোনো পার্ট টাইম বা বাড়িতে বসে কাজের সুযোগ পান তবে অবশ্যই তা গ্রহণ করুন। যে ক্ষেত্রে আপনি অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চান, সেই ক্ষেত্রের কাজ নিন। অথবা আপনি যদি পূর্ণকালীন কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চান, তবে দূর থেকে বা বাড়িতে বসে করার মত পূর্ণকালীন চাকরি করুন।
২. ব্লগিং শুরু করুন
নিজের বুদ্ধিমত্তা এবং দক্ষতা বাড়ানোর একটি চমৎকার উপায় হল ব্লগিং করা। আপনার পছন্দের যে কোনো বিষয় নিয়ে আপনি লেখালেখি করতে পারেন। তাতে সে বিষয়টি যেমন ভালোভাবে জানা হবে, তেমনি আপনার লেখার দক্ষতাও বাড়বে। বিশেষ করে আপনি যদি লেখক হতে চান বা লেখালেখি করতে হয় এমন চাকরি করতে চান, তবে ব্লগিং হবে আপনার জন্য সেরা পছন্দ।
অন্যান্য ক্ষেত্রে কাজ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় সনদ আবশ্যক হলেও লেখালেখির ক্ষেত্রে লেখার দক্ষতাই সবচেয়ে বড় গুণ। ব্লগিংয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে আপনি যে কোনো টেলিভিশন, রেডিও, প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বা পত্রিকায় সহজে কাজ নিতে পারবেন। এমনকি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে দীর্ঘদিন লেখালেখি করলে বাস্তবক্ষেত্রে কাজ না করেও আপনি সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠতে পারেন। বিভিন্ন সেমিনার এবং অনুষ্ঠানে কথা বলার সুযোগ পেতেও পারেন।
৩. লেখক নয়, অন্য কিছু হোন
আপনি লেখক হতে চান না, বা সরাসরি লেখালেখি করতে হয় এমন কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চান না। তাহলে ব্লগিং করে আপনার লাভ কী? ব্লগিং এবং লেখালেখির দক্ষতা শুধু যে লেখকের জন্য প্রয়োজনীয়, তা নয়। লেখালিখির দক্ষতা কাজে লাগিয়ে আরো অনেক কাজ করা যায়।
যেমন, ইউটিউবে ভিডিও সিরিজ তৈরি করতে হলে তার স্ক্রিপ্ট লেখার জন্য আপনার লেখালেখির দক্ষতা থাকতে হবে। কোনো অনুষ্ঠান বা সেমিনার পরিচালনা করা, সুনির্দিষ্ট বিষয়ে বক্তব্য দেওয়া, প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার জন্য আপনার লেখালেখির দক্ষতা কাজে লাগবে।
৪. স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করুন
আপনি যদি বিপণন, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এবং সামাজিক যোগাযোগ ক্ষেত্রে কাজ করতে চান, তবে অভিজ্ঞতার জন্য স্বেচ্ছাসেবী কাজে অংশ নিন। সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এমনকি এই সব কাজে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের সনদও দেওয়া হয়। আপনি যদি এমন কোনো স্বেচ্ছাসেবী কাজে অংশ নিয়ে সনদ অর্জন করতে পারেন, তবে শুধু অভিজ্ঞতা নয়, অভিজ্ঞতার প্রমাণপত্রও হাতে পেয়ে যাবেন।
এছাড়া পাড়া, মহল্লা বা অঞ্চল ভিত্তিক বিভিন্ন পেশাদারী গ্রুপ, সমিতি এবং অলাভজনক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে কাজ করেও অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়। আবার কিছু লাভজনক প্রতিষ্ঠানে আছে, যারা স্বল্প সময়ের জন্য বিশেষ ভাতার বিনিময়ে স্বেচ্ছাসেবীদের কাজে নিয়ে থাকে। এ জাতীয় কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করে আপনি অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন।
৫. প্রকল্পে অংশ নেওয়া
স্বল্প সময় কাজ করে অভিজ্ঞতার জন্য আপনি বিভিন্ন প্রকল্পে যুক্ত হতে পারেন। সরকারি, বেসরকারি নানান প্রকল্পে সহযোগী হিসেবে খণ্ডকালীন চাকরি পাওয়া যায়, যার বিনিময়ে প্রকল্পগুলো কর্মীদের এককালীন বা মাসিক ভাতা দিয়ে থাকে। আপনি এমন কোনো প্রকল্প অনুসন্ধান করুন এবং সেখানে সাহায্যকারী কর্মী হিসেবে যুক্ত হোন।
৬. প্রশিক্ষণ
কিছু কিছু ক্ষেত্রের প্রশিক্ষণ অভিজ্ঞতা হিসেবে গণ্য করা হয়। সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সনদ থাকলেও সুনির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষ হয়ে উঠতে প্রশিক্ষণ গ্রহন করুন। নিয়োগকর্তারা আপনার এই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করাকে অভিজ্ঞতা হিসেবে মূল্যায়ন করবেন।
৭. আবেদনের পূর্বে কাজ করুন
অনেক সময় নিয়োগকর্তারা জানতে চান,আপনি যে চাকরির জন্য আবেদন করছেন, সেই কাজ আপনি জানেন কিনা। কাজটি আপনি কত বছর ধরে করেন সেটা মুখ্য নয়, কাজটি যথাযথভাবে করতে পারাটাই আসল ব্যাপার। সুতরাং কোনো সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে আবেদন করার পূর্বে কাজটি করার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে কোনো প্রতিষ্ঠানে বিনা বেতনে কাজ নিন অথবা উক্ত কাজ সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনে, বিভিন্ন টিউটোরিয়াল দেখে অভিজ্ঞ হয়ে উঠুন।
আবেদন করার পর নিয়োগকর্তাদের কাজটি করে দেখানোর চেষ্টা করুন। তবে সব নিয়োগকর্তা শুরুতেই আপনাকে কাজ করে দেখানোর সুযোগ দেবেন না। সুযোগ আপনাকেই তৈরি করে নিতে হবে। ।
স্বপ্নের চাকরি খুঁজে পেতে প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা অর্জন করার জন্য নিজেকে পরিশ্রমী করে তুলুন। শেখা এবং যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি করুন। বিচক্ষণতা আর বুদ্ধিমত্তা দিয়ে যে কোনো ক্ষেত্রের কাজ জয় করার সামর্থ্য অর্জন করুন।
Feature photo: experience event