রিফাতের আজকাল মন খুব বিষন্ন হয়ে থাকে। অপরের দেওয়া দেওয়া নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াগুলো কেন জানি সহজে গ্রহণ করতে পারছে না। অনেক সময় সে হয়তো বুঝতে পারছে যে অপরের তার প্রতি দেওয়া নেতিবাচক মন্তব্যগুলো তার ভবিষ্যতের ভালোর জন্য বলা হয়ে থাকে তবুও বিষয়টি মানসিকভাবে মেনে নিতে রিফাতের খুব বেগ পেতে হচ্ছে।
আমাদের সকলের মাঝেই এই সহজাত প্রবৃত্তি টি বেশ লক্ষণীয় যে অপরের নেতিবাচক মন্তব্য আমরা সহজে গ্রহণ করতে পারি না। অনেক সময় হয়তো ভাবি আমাদের প্রতি করা মন্তব্য গুলো সঠিক, তবুও তা মেনে নেবার মত মন মানসিকতা অনেকের মাঝেই কম আছে। কর্মক্ষেত্রে কিংবা ঘরে বাইরে যেখানেই হোক নেতিবাচক মন্তব্য শুনে তা মেনে নেওয়ার অপারগতা অনেক সময় আমাদের দ্বারা নেতিবাচক আচরণ করিয়ে বসে যা কিনা অনেক ক্ষেত্রেই করিয়ে বসে যা কিনা কাম্য নয়। আর তাই নেতিবাচক মন্তব্যগুলোকে কিভাবে সহজভাবে মেনে নিতে হবে তা জানাটা অনেক বেশি প্রয়োজন। কেননা আপনি যেখানেই কাজ করেন বা যাদের সাথে কাজ করেন আপনাকে প্রায়ই আপনার দ্বারা করণীয় ভুল কিংবা সঠিক কাজের জন্য সমালোচনার সম্মুখীন হতে হবে। আর তাই জেনে নিতে পারেন কিভাবে সমালোচনা বা নেতিবাচক মন্তব্যগুলো মেনে নিয়ে পুনরায় কাজে মনোনিবেশ করতে পারবেন পারবেন।
আমরা কেউই নেতিবাচক মন্তব্য গ্রহণ করতে পছন্দ করি না কিন্তু সমালোচনা বা নেতিবাচক মন্তব্য শুনে কিভাবে আচরণ করতে হবে তা জানতে হবে। দুইভাবে নেতিবাচক মন্তব্যে বা সমালোচনা গ্রহণ করা যেতে পারে। কিন্তু ভাল এবং খারাপের মাঝে ভালো দিকটাকে মানতে হবে। সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে মন্তব্য গ্রহণ করে জলদি পাল্টা মন্তব্য না করে, কোন খারাপ আচরণ না করে বরং শান্তভাবে তা শুনে সেখান থেকে হাসিমুখে ফিরে আসাটা সবচেয়ে সহজ এবং একই সাথে কঠিন একটি কাজ।
Tasha Eurich হচ্ছেন একজন সাংগঠনিক সাইকোলজিস্ট এবং এক্সকিউটিভ কোচ,তার লিখিত বই “the Harvard Business Review” তিনি উল্লেখ করেছেন কর্মক্ষেত্র সমালোচনার সম্মুখীন হওয়া কর্মীদের আচরণের ব্যাপারে। এরকম অনেকেই দেখেছেন যারা কিনা হঠাৎ হুটহাট কেঁদে ফেলেছেন কিংবা প্রচন্ড রেগে গিয়েছেন তাদের ব্যাপারে শোনা নেতিবাচক মন্তব্য শুনে।
১. বিরতি নিন, হুট করে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করবেন না
বিষয়টি খুব স্বাভাবিক যখন আমরা নেতিবাচক মন্তব্য শুনি তখন ব্যক্তিটিকে প্রতিহত করার জন্য এবং নিজের অবস্থান ঠিক করার জন্য আমরা কিছু না কিছু বলে বসি। আপনি ভুল বলছেন বিষয়টা এমন না কিন্তু ব্যাপার হচ্ছে এরকম যেকোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া প্রকাশের আগে একটু সময় নিন।
এটি সত্য যে সমালোচনা বা বা মন্তব্য যতই নেতিবাচক হোক না কেন আপনার নিজের পক্ষে নিজের জন্য কিছু ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া থাকবেই। হুট করে বলা আপনার কৌশলী উত্তর অবশ্যই মন্তব্য প্রদানকারী ব্যক্তিটিকে অনেক কিছু আপনার সম্পর্কে জানিয়ে দিবে। আর তাই খুব বেশি সতর্ক থাকতে হবে যেন হুট করে কোনো ভুল কথায় প্রতিক্রিয়া করে না বসেন। মন্তব্য শোনার পর চুপ থেকে ভেবে উত্তর দেওয়ার বিষয়টি মন্তব্যগুলো নিয়ে ভালোভাবে ভাবার সুযোগ করে দিবে। এতে অপর ব্যক্তিকে দেওয়া আপনার পালটা মন্তব্য নিঃসন্দেহে অনেক বেশি যৌক্তিক এবং গ্রহণযোগ্য হবে।
আর তাই নিজের সম্পর্কে শোনা সমালোচনা বা নেতিবাচক মন্তব্য শুনে হুট করে কোনো প্রতিক্রিয়া প্রকাশ না করে বরং একটু বিরতি নিন এবং ভেবে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করুন।
২. অপরের ভাবনা বোঝার চেষ্টা করুন
প্রতিটি মন্তব্য ইতিবাচক বা নেতিবাচক তার উৎপত্তি কোথাও না কোথা থেকে হয়ে থাকে। আপনি কিছু বলেছেন বা করেছেন আর সেজন্যই অপর ব্যক্তিটি এই ধরণের মন্তব্য করেছে। আপনি হয়তো মন্তব্যগুলোকে এড়িয়ে যেতে পারেন, যদি এড়িয়ে যান সেক্ষেত্রে অপর ব্যক্তিটি কেন এই ধরনের ভাবনা পোষণ করেছে তার সূত্রপাত সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন না। আর তাই সে ক্ষেত্রে সে মন্তব্যটি ভবিষ্যতে প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা রাখে।
মনোযোগ সহকারে অপর ব্যক্তিটির মন্তব্য শুনুন সেই সাথে নিজেকে কিছু প্রশ্ন করুন এতে করে অপরের ভাবনা সম্পর্কে আপনি সঠিক উপায়ে অবগত হতে পারবেন প্রশ্নগুলো হচ্ছে-
- তিনি কোন বিষয়ে উদ্বিগ্ন? আসল সমস্যাটা কী?
- কেন তিনি এভাবে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করছেন?
- আপনি কি বলেছেন বা করেছেন যা থেকে তার এই ধরনের মন্তব্যের সূত্রপাত
প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে জেনে রাখুন যাতে আপনি নিজেকে বিচার করতে পারেন। অনেক সময় মন্তব্যপ্রদানকারী ব্যক্তিটি হয়তো আসল সমস্যার ব্যাপারে ততটা সচেতন নয়। হয়তো তার মনে যা আছে সে সেভাবেই ভেবেই আপনাকে মন্তব্য করছে। আর তাই অপরপাশের ব্যক্তিটির মনের ভাবনা বোঝার চেষ্টা করুন সে কেন আপনাকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করছে তা জানার চেষ্টা করুন। অপর ব্যক্তির ভাবনা বোঝার অভ্যাসটি আপনাকে আপনার সমস্যা সম্পর্কে করবে সচেতন একই সাথে নেতিবাচক মন্তব্য বা সমালোচনা শুনে কি রকম প্রতিক্রিয়া দেয়া উচিত বা নিজের পক্ষে কি বলা উচিৎ সে ব্যপারে সমাধান সহজে খুজে পাবেন সহজেই।
৩. মন্তব্য বোঝার চেষ্টা করুন
যেকোনো ধরনের মন্তব্য বোঝার চেষ্টা করুন। মন্তব্যের পেছনে কোনো সত্যতা আছে কিনা তা যাচাই করার চেষ্টা করুন। যিনি মন্তব্য করছেন তার মন্তব্যের পিছনে বিকল্প কারণগুলো ভাবাত চেষ্টা করুন। মন্তব্যের কারণে নিজেকে ছোট না ভেবে বরং বোঝার চেষ্টা করুন। অপর ব্যক্তি আপনাকে যে নেতিবাচক মন্তব্য করল তা কি সত্যি আপনার শুধরানো উচিত কিনা।
আর অনেক সময় নেতিবাচক মন্তব্য নির্ণয় করার সবচেয়ে সহজ সমাধান হতে পারে আপনার বন্ধু। বন্ধুরা ভালোভাবে বলতে পারবে, আপনার জন্য বলা নেতিবাচক মন্তব্য কোন মন্তব্য গুলো সঠিক কিনা। নিঃসন্দেহে আপনার বন্ধুরা হতে পারে আপনার যেকোন হতাশার সমাধান। একটি কাছের বন্ধু আপনাকে সঠিকভাবে বুঝতে সক্ষম। আর তাই যদি কখনো কারো নেতিবাচক মন্তব্যে নিজেকে ছোট মনে হয় একসাথে তার তার ব্যক্ত করা মন্তব্যটি যদি কোন অংশে সঠিক মনে হয় কিন্তু সমাধানের বা সত্যতা যাচাই কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকে সেক্ষেত্রে বন্ধুর পরামর্শ হতে পারে একটি সঠিক সমাধান।
৪. উদারতার সাথে উত্তর দিন
নেতিবাচক মন্তব্যকারীকে কোনো ধরনের খারাপ ব্যবহার প্রদর্শন না করে বরং উদারতার সাথে উত্তর দিন। যখনই কোনো নেতিবাচক মন্তব্য কারো কাছ থেকে শুনতে পারবেন তখন একটু সময় নিয়ে তার ভাবনাটি বোঝার চেষ্টা করুন। একই সাথে সে কেন এই ধরনের মন্তব্য করল তা অনুসন্ধান করার চেষ্টা করুন। অত্যন্ত ঠাণ্ডা গলায় নিজের অবস্থান তুলে ধরুন। একই সাথে তার মন্তব্যটি যদি ভুল হয় তবে তার মন্তব্য অনুযায়ী সে যা বলেছে ঠিক সেই অবস্থানগুলো সঠিকভাবে তার সামনে তুলে ধরুন।
দু’জনে বসে আলোচনা করার মতো সুন্দর পরিবেশ গড়ে তুলুন। সামনে কী করতে চাচ্ছেন তার মন্তব্য অনুযায়ি তাকে সে বিষয়টি বুঝিয়ে বলুন। অবশ্যই আলোচনা শেষে তাকে ধন্যবাদ দিন। মোটকথা নেতিবাচক মন্তব্যকারী ব্যক্তিটির মাঝে বিশ্বাস করি করুন গড়ে তুলুন যে, আপনি যেকোনো ধরনের মন্তব্য স্বাগতম করতে প্রস্তুত একই সাথে আপনি আপনার ভুল অবস্থানগুলোতে সঠিক করার ব্যাপারে সচেতন।
৫. নেতিবাচক মন্তব্যগুলো ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করুন
নিঃসন্দেহে নেতিবাচক মন্তব্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। কেননা নেতিবাচক মন্তব্যের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন আপনাকে কোনো অবস্থানগুলোতে নিজেকে শুধরাতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিশ্বাস করতে হবে নেতিবাচক মন্তব্যকারীরা আপনাকে ভালোবাসে কেননা তারা আপনাকে সঠিক অবস্থানে দেখতে চায়। নেতিবাচক মন্তব্য আপনাকে সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। অবশ্যই মানসিকভাবেই বিশ্বাস রাখতে হবে যে আপনি যতই সঠিক কাজ করেন না কেন বা যতটা সঠিক উপায়ে সব কিছু ভাবেন না কেন তবুও মানুষ মাত্রই আমাদের মাঝে কোনো না কোনো ভুল থেকে যায়।
আর তাই নেতিবাচক মন্তব্যগুলো হচ্ছে সেই ভুলগুলোকে শুধরে সামনে এগিয়ে যাবার একটি অন্যতম মাধ্যম। অবশ্যই নেতিবাচক মন্তব্য গ্রহণ করা কঠিন তবে নেতিবাচক মন্তব্য কিন্তু আপনাকে বিভিন্ন দিক থেকে ভাববার একই সাথে বিভিন্ন বিষয়ে সঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য সহায়তা করে আর। তাই নেতিবাচক মন্তব্যগুলোকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করুন।
৬. মন্তব্য থেকে শেখার চেষ্টা করুন
আপনি সবচেয়ে বেশি শিখতে পারবেন যখন আপনি বেশি নেতিবাচক মন্তব্যের সম্মুখীন হবেন। কেননা নেতিবাচক মন্তব্যগুলো আপনাকে প্রতিনিয়ত সঠিকভাবে কাজ করবার প্রেরণা যোগাবে। আপনি চাইলেই হয়তো যেকোনো নেতিবাচক মন্তব্য এড়িয়ে যেতে পারেন, কিন্তু এড়িয়ে না গিয়ে বরং সেই মন্তব্যগুলো থেকে শেখার চেষ্টা করুন যে আর কোন কোন দিকগুলো শুধরে নিলে আরও সঠিকভাবে এবং সফলভাবে কাজ করতে পারবেন। আপনি জেনে অবাক হবেন প্রায় প্রতিটি নেতিবাচক মন্তব্য থেকে অনেক নিত্য নতুন কিছু শিখতে পারবেন।
আর তাই নেতিবাচক মন্তব্য গুলোকে এড়িয়ে না গিয়ে বরং উদারতার সাথে সম্মুখীন হোন সেই সাথে নেতিবাচক মন্তব্যগুলো থেকে ইতিবাচক উপায় নিজের উন্নয়নের জন্য নিত্য নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করি করুন।