প্রথমেই বলতে চাই, সফলতা অর্জনের মূল মন্ত্র হচ্ছে সঠিক পরিকল্পনা। সেইসাথে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত পরিকল্পনার বাস্তবায়ন এবং অসীম ধৈর্যের সাথে লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত অবিচল থাকা। বিখ্যাত টেলিভিশন উপস্থাপিকা অপেরাহ উইনফ্রে এক বক্তৃতায় বলেছেন ‘পরিকল্পনা + পরিশ্রম = সফলতা”।
এজন্য কর্মক্ষেত্রে উন্নতি করতে হলে সঠিক পরিকল্পনার বিকল্প নেই। প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট বা কর্মক্ষেত্রে উন্নতি হচ্ছে নিজের জীবনে লক্ষ্য এর একটি লিখিত দলিল। তাই এই পরিকল্পনা প্রণয়নে প্রথমেই ভেবে নিন, আপনি কর্মক্ষেত্রে কতটা উন্নতি করতে চান। আজ থেকে পাঁচ বছর, দশ বছর পর নিজেকে কোন অবস্থানে দেখতে চান। সেই অনুযায়ী সময় এবং করনীয় কাজকে ভাগ করে নিন। করনীয় প্রতিটি অংশ বাস্তবায়ন করতে থাকুন, এরপর শতভাগ নিশ্চিত সফলতা আসবেই।
কর্মক্ষেত্রে উন্নতির পরিকল্পনায় যে বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে
০১. নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনি এখন কোন অবস্থানে রয়েছেন এবং কোন অবস্থানে যেতে চান?
০২. পরিকল্পনায় নিজের ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা, সখ ইত্যাদিকে প্রাধান্য দিন। কারণ যদি এই চাকুরীটি আপনার ভালোই না লাগে তাহলে সময় এসে গেছে এই পরিকল্পনা বাদ দিয়ে নতুন কর্মক্ষেত্র খুঁজে বের করার। নইলে সফলতার পথে অবিচল থাকা প্রায় অসম্ভব।
০৩. পরিকল্পনার এই পর্যায়ে ক্যারিয়ারের স্বল্প মেয়াদী লক্ষ্য এবং দীর্ঘ মেয়াদী লক্ষ্য দু’টোকেই প্রাধান্য দিন।
০৪. এবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আপনার কী কী গুন থাকা প্রয়োজন? যেমন- কতটা যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে সফলতা অর্জন করা সম্ভব। কতোটুকুই বা আপনার মাঝে রয়েছে আর কতোটুকু অর্জন করতে হবে।
০৫. লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিটি উপাদানের উপর সূক্ষ্ম গবেষণা করে নিন। এতে করে সফলতা অর্জন অনেকটা সহজ হয়ে উঠবে।
যে গুরুত্বপূর্ণ টিপসগুলো অনুসরণ করে অবিচল থাকতে পারেন সফলতার পথে, তা নিচে দেওয়া হলো।
লক্ষ্য স্থির করুন এবং বাস্তবায়নের জন্য রোড ম্যাপ তৈরি করুন
জীবনের যেকোনো ক্ষেত্রে সফলতা অর্জনের জন্য সবার আগে যেটা দরকার, সেটা হলো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করা। এরপর গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য চাই সঠিক পরিকল্পনা, যা অনুসরণ করে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সফলতার পথে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলেই কেবল সফলতা অর্জন করা সম্ভব হবে।
আর তাই এখনই মোক্ষম সময়। কর্মক্ষেত্রে সফলতা অর্জনের জন্য নিদিষ্ট গোল সেট করুন এবং তার ওপর ভিত্তি করেই একটি সঠিক পরিকল্পনার করে নিন। আপনার পরিকল্পনাকে অনেকগুলো ভাগে বিভক্ত করুন। যেমন ধরুন, কর্মক্ষেত্রে সফলতা অর্জনের জন্য যে নির্দিষ্ট সময়ের রোড-ম্যাপ এঁকেছেন সেটা বছরে, মাসে, সপ্তাহে এমনকি দিনে ভাগ করুন। এভাবে আপনার হৃদয়ে পরিকল্পনাটির ছবি এঁকে নিন এবং বাস্তবায়ন করতে থাকুন প্রতিদিনের কাজ। সফলতা অধরা থাকবে না।
টেকনোলজির সাহায্য নিয়ে সফলতার পথে অবিচল থাকুন
আজকের ডিজিটাল পৃথিবীতে টেকনোলজি সহজ করে তুলেছে মানুষের চলমান জীবন, সহজ করেছে মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্ম। তাই প্রতিটি ক্ষেত্রেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এসব টেকনোলজি। যদি আপনি কর্মক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করতে চান। আর এজন্য যদি আপনার একটা পরিকল্পনা থাকে তাহলে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সহজ করতে রয়েছে বেশ কিছু অ্যাপস।
এই আ্যাপসগুলো আপনার করনীয় কাজগুলোর রিমাইন্ডার হিসেবে কাজ করতে পারে। অ্যাপসগুলো জানিয়ে দিবে আপনার প্রতিদিনের কাজ, যা আপনি আগেই পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন। আমি এমন একটি অ্যাপের নাম বলে দিতে পারি। any.do. এটি আমি নিজেই ব্যবহার করি। এটা আমার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অনেক সাহায্য করে যাচ্ছে। এছাড়াও অসংখ্য টেকনোলজি রয়েছে যেগুলো এর চেয়েও ভালো এবং সহায়ক। যদি এরকম টেকনোলজি আপনার জানা থাকে, তাহলে কমেন্ট বক্সে আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। এতে করে হাজারো মানুষ উপকৃত হবে।
প্রকাশ করুন আপনার পরিকল্পনা
আপনার পরিকল্পনা আপনার খুব কাছের মানুষদের সাথে শেয়ার করুন। এতে করে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের একটি তাগিদ অনুভব করবেন। কারণ এই লক্ষ্য অর্জন করতে না পারলে তাদের নিকট নিজেকে ব্যর্থ হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে, যা আপনি কখনোই চাইবেন না।
তাই আপনার পরিকল্পনা অন্যের সাথে প্রকাশ করলে আপনার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সহজ হয়ে উঠবে। এছাড়া তাদের সাথে প্রতিদিনের অগ্রগতি শেয়ার করে বাড়িয়ে তুলতে পারেন আত্মবিশ্বাস। প্রয়োজনে তাদের কাছ থেকে সাহায্যও নিতে পারবেন। আপনি আপনার বসের কাছে প্রকাশ করতে পারেন আপনার কর্মক্ষেত্রে উন্নয়ন পরিকল্পনা। কারণ তিনিও দিতে পারেন বিভিন্ন সমস্যার সঠিক সমাধান।
নিজেকে পুরষ্কার দিন
কর্মক্ষেত্রে সফলতা অর্জনের জন্য বা লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রতিদিনের যেসব করনীয় কাজ সম্পন্ন করেছেন, তার জন্য নিজেকে পুরস্কৃত করা যেতেই পারে। আমরা যখন পুরষ্কার পাই তখন আমাদের ব্রেইনের ডোপামিন ক্ষরণ হতে শুরু করে যা আমাদের সুখ অনুভব করায়।
এজন্য আমরা ঐ কাজটাই বার বার করতে আগ্রহী হয়ে উঠি। তাই যদি আপনি নিজেকে পুরস্কৃত করেন তাহলে আপনি লক্ষ্য অর্জনের জন্য আরও বেশি মোটিভেট হবেন বা আগ্রহী হয়ে উঠবেন। শুধু কর্মক্ষেত্র নয়, জীবনের কাঙ্ক্ষিত প্রতিটি অর্জনকে উদযাপন করুন।
অর্জনগুলোকে লিপিবদ্ধ করে রাখুন
কর্মক্ষেত্রে উন্নয়ন করতে হলে চাই সঠিক পরিকল্পনা, কঠোর পরিশ্রম এবং অসীম ধৈর্য। প্রতিটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে পরিকল্পনাকে ভেঙে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করতে হবে। প্রতিটি ক্ষুদ্র অংশ বাস্তবায়িত হলে একটি খাতায় লিপিবদ্ধ করুন।
একটি ডায়েরি তৈরি করুন এবং এই অর্জনে আপনার প্রতিক্রিয়া লিখে ফেলুন সেই ডায়েরিতে। এই লেখাগুলোই একদিন সঠিক রাস্তায় অবিচল রাখতে সাহায্য করবে, যখন আপনি হাল ছেড়ে দিতে চাইবেন।
Image Source: edsurge.com