যেকোনো কাজ শুরুর পূর্বে সময় ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সময় ব্যবস্থাপনা হলো যেকোনো কাজ আপনি কোন সময়ে শুরু করবেন আর কতটুকু সময়ের ভেতর শেষ করবেন তার একটি খসড়া করে রাখা। সময় ব্যবস্থাপনার বিষয়টি যদি আপনি ব্যক্তি জীবনেই অর্জন করতে না পারেন কর্ম ক্ষেত্রে নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। গুরুজনেরা সবসময়ই আমাদের বলেন সময়ের কাজ সময়ে শেষ করতে। শুধু যে সময়ের কাজ সময়েই শেষ করবেন তা নয় বরং কোন কাজটি কখন শুরু করবেন আর কতটুকু সময়ের মধ্যে শেষ তার একটি বিশদ পরিকল্পনা থাকাও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। আর সময়ের সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে পারলে অনেক ব্যস্ত সময়ের মাঝেও অবসর খুঁজে পাওয়া সম্ভব। একই সাথে অনেকগুলো কাজের মধ্যে আমরা অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করতে ভুল যাই।
সময় ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অনুধাবনে আমরা অনেক সময়ই অপারগ। কিছু পরিস্থিতির উপস্থিতি আপনাকে একটি ধারণা দিতে পারে কেন আমাদের জীবনে সময় ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ। এমন হতেই পারে কাজের প্রচন্ড চাপে প্রতিনিয়ত আপনার মাঝে অস্থিরতা কাজ করছে, নতুন কিছু করার উদ্যমী মনোভাব জাগ্রত হচ্ছে না, সবকিছুর প্রতি আপনি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন এমনকি যেসব কাজ করতে আপনি ভালোবাসেন সেগুলোর প্রতিও। ভেবে দেখেছেন কি এরকম কোনো লক্ষণ আপনার মাঝে আছে কিনা? এই ক্ষেত্রে কিন্তু সময় ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়াও আরো কিছু লক্ষণ হতে পারে অল্পতেই রেগে যাচ্ছেন, মানসিক এবং শারীরিকভাবে খুব অবসাদ অনুভব করছেন, কিন্তু যখনই ঘুমাতে যাচ্ছেন নানান চিন্তা আপনাকে ঘুমাতে দিচ্ছে না কিংবা মনে হচ্ছে আপনাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। নিজের উপর কোনো ভরসা নেই, কোনো ইতিবাচক প্রেরণা পাচ্ছেন না কোথাও, সবাইকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছেন কিন্তু কাজের ক্ষেত্রেও কোনো আনন্দ পাচ্ছেন না এরকম আরো নানান নেতিবাচক পরিস্থিতি যদি আপনার মনকে গ্রাস করে রাখে আর যাই হোক কোন কাজে সফলতা পাওয়ার পথটি কিন্তু কঠিন হয়ে যাবে আপনার জন্য। এরকম যেকোনো নেতিবাচক পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার জন্য সময় ব্যবস্থাপনার বিকল্প কিছু হতে পারে না। জেনে নিতে পারেন কিভাবে সফলভাবে সময় ব্যবস্থাপনা করতে পারবেন।
সঠিক সময় ব্যবস্থাপনা কিন্তু সব কাজ ঠিকভাবে করছেন তা নয়, বরং সময় ব্যবস্থাপনা হলো সঠিকভাবে জীবনটাকে উপভোগ করা। আপনার জীবনে আপনি যা যা করতে চান তার সবকিছুর জন্য আপনার সময় থাকতে হবে। হোক সেটা কাজ, ভ্রমণ, খেলাধুলা অথবা অযথা বসে বসে নিজের ভাবনায় ডুবে থাকা। মোট কথা সময় ব্যবস্থাপনার আপনার প্রতিটি ইচ্ছা, স্বপ্ন অলসতা সবকিছুর জন্য সময় থাকতে হবে।
১. পরিকল্পতিভাবে দিন শুরু করা
প্রতিটি সকাল সুন্দর সময় ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো কাজের জন্যই তাড়াহুড়ো করে সকালে বের হয়ে যাবেন না। ঘুম থেকে জলদি উঠুন এরপর বসুন ঠান্ডা মাথায় সারাদিনের পরিকল্পনাগুলো সাজিয়ে নিন। কোন কাজগুলো আপনার জন্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো সবার আগে সেরে ফেলার একটি খসড়া করুন। সকাল বেলায় নিজের সাথে বসে নিজের কাজের জন্য কোন সময়ে কোন কাজগুলো করবেন সেগুলোর পরিকল্পনা অবশ্যই সারা দিনের টনিক হিসেবে কাজ করবে।
২. অর্ধসমাপ্ত কাজের পরিকল্পনা
যে কাজগুলো শেষ করতে পারেন নি সেগুলোর একটি তালিকা করে ফেলুন। জরুরী কাজগুলোর পাশাপাশি অর্ধসমাপ্ত কাজগুলোও করে ফেলুন। সেজন্য অবশ্যই শোমোয়টাকে ভাগ করে নিতে হবে। কোন সময়ে আপনি কাজগুলো করবেন তার একটি পরিকল্পনা করে ফেলুন।
৩. কাজগুলো বিভিন্নভাগে ভাগ করুন
বড় বড় কাজগুলো একবারে করতে গেলে অনেকসময়ই কাজের উদ্যমশীল মনোভাব হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে। পুরোপুরি প্রাণশক্তি নিয়ে কাজ করার জন্য তাই কাজগুলো বিভিন্ন ভাগে ভাগ করুন। সময় নির্ধারণ করুন আজ কোনসময়ে কতটুকু করবেন এমনকি সামনের দিনগুলোতেও কোন সময়ে কাজের বাকি অংশ করতে চান তার পরিকল্পনা করে ফেলুন।
৪. গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোকে অগ্রাধিকার দিন
সফলতার অন্যতম চাবিকাঠি হলো কাজের গুরুত্ব বোঝা। দিনের শুরুতেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিন কোন কাজগুলো আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।সময় বিভাজন সেই গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য আগে করুন। আর যে সময়ে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় কাজে আছেন সেই সময়গুলোতে অপ্রয়োজনীয় কাজগুলোকে না বলুন। জেনে রাখা ভালো সঠিক সময়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোই আপনার সফলতার জন্য দায়ী থাকবে।
৫. যদি সম্ভব হয় প্রতিনিধিত্বকে গুরুত্ব দিন
যেকাজ গুলোতে আপনার অধিনস্থরা ভালো সেইকাজগুলো অধিনস্থদের ভাগ করে দিন। সেই সময়ে আপনি যেকাজে দক্ষ সেইকাজগুলো করুন। অর্থাৎ সঠিক সময়ে সঠিক কাজ বিভাজন করুন। এতে করে অনেক ব্যস্ততার মাঝেও কিছুটা অবসর আপনাকে আরো উদ্যমী করে তুলবে।
৬. পছন্দের কাজের জন্য সময় বের করুন
যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি হতাশ না হয়ে যাবেন ততক্ষণ পর্যন্ত কিন্তু কোন কাজকে আপনি ছেড়ে দিবেন না।আর তাই এরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার আগেই নিজের পছন্দের কাজের জন্য সময় বের করুন। ভালো ঘুম,পরিমিত খাওয়াদাওয়া, ব্যায়াম সামাজিকতার জন্য সময় রাখুন। একটানা কাজ মনের জন্য অস্বাস্থ্যকর হয়ে দাঁড়াবে। সঠিকভাবে সময়কে গুছান যাতে করে নিজের জন্য অবসর মনের জন্য ফলদায়ক হয়।
৭. বড় কাজের মধ্যে বিরতি নিন
অনেক সময়ই আপনাকে টানা কাজ করতে হচ্ছে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য।।অথবা রাতে টানা কাজ করে আপনি বেশ প্রশান্তি পাচ্ছেন এবং প্রাণ শক্তির সাথেই কাজ করতে পারছেন। বেশ ভালো যে আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন না,তবুও বড় কাজ বা একটানা কাজের মাঝে একটু বিরতি নিন। অবিরাম কাজ করে যাবেন না। সময়টাকে গুছিয়ে নিন কোন সময়ে আপনি বিরতি নিবেন।তবে অবশ্যই একটানা কাজের মাঝে খানিকটা বিরতি নেবার চেষ্টা করবেন।
৮. দশ মিনিট করে কাজের নিয়ম অনুসরণ
এরকম অনেক কাজই আছে যেগুলোর জন্য আমাদের ভেতর ভয় কাজ করে যে কাজটি শেষ করতে পারবো কি না। অথবা দিনের পর দিন ওই কাজ ফেলে রাখছি আবার দুশ্চিন্তাও করছি কাজটি কিভাবে শেষ করবো। আপনার জন্য ছোট সমাধাণের পথ হলো কাজটি শুরু করুন আর টানা দশ মিনিট সেই কাজটি করুন। সম্ভাবনা রয়েছে একবার আপনি কাজ শুরু করলে তা শেষ হবেই। আর তাই প্রতিদিন টানা দশ মিনিট অসমাপ্ত কাজগুলো করার অভ্যাস গড়ে তুলুন, দেখবেম ধীরে ধীরে সব কাজই শুরু করার সাহস এবং শেষ করা পর্যন্ত মনোবল আপনার আয়ত্তে এসে গেছে।
৯. প্রতিটি দিন শেষ করুন আগামীকালের পরিকল্পনায়
প্রতিটি দিন শেষ করুন পরবর্তী দিনে কি করবেন তার তড়িৎ পরিকল্পনার মাধ্যমে। অল্প কিছু সময় নিন আগামীকাল কি করবেন সে ভাবনায়। দেখবেন পরের দিন সবগুলোর কাজের তালিকা আপনার মনে বেশ পরিস্কারভাবে রয়েছে। অহেতুক কষ্ট করে কিছু মনে করতে হবে না যে আজ আপনি কি কি করবেন। এই ছোট অভ্যাসটি আপনার প্রতিটি দিন অনেকবেশি প্রাণ শক্তি নিয়ে শুরু করার শক্তি যোগাবে।