অবশেষে সেই অপেক্ষার মুহূর্তটি এলো, যার জন্য আপনি বেশ কয়েক দিন ধরে অপেক্ষা করে ছিলেন। কয়েক দিন আগে চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দেওয়া প্রতিষ্ঠান থেকে মাত্রই অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারটি পেয়েছেন। চাকরিটা আপনাকে পেতেই হবে এই আশা নিয়ে আপনি ইন্টারভিউ দেননি। বরং পরখ করে দেখলেন আপনি যেমন চাকরি খুঁজছেন এটি তেমন কিনা। এখন তাদের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ এসেছে, কিন্তু আপনি চাকরিটা করতে আগ্রহী নন। এখন নিয়োগকর্তাদের মনঃক্ষুণ্ণ না করে হাসিমুখে কিভাবে আপনি এই চাকরির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করবেন? নিশ্চয়ই এর কোনো সঠিক পন্থা খুঁজে পাচ্ছেন না? না পাওয়ারই কথা, কেননা আপনিই কয়েক দিন আগে গিয়েছিলেন এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাওয়ার জন্য ইন্টারভিউ দিতে। এমন সমস্যায় যদি পড়ে থাকেন, তাহলে নিচের পথ অনুসরণ করতে পারেন।
কেন প্রত্যাখ্যান করবেন, বিরক্ত হয়ে?
একজন চাকরি সন্ধানী হিসেবে আপনি হয়তো বহুবার ব্যর্থ হয়েছেন প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন, হতে পারে এখনও হচ্ছেন। আর সেই কারণে বারবার এক চরম হতাশা ভর করেছে আপনার উপর, খারাপ লেগেছে। এ কারণে স্বভাবতই নিয়োগকর্তাদের উপর আপনি কিছুটা ক্ষিপ্ত। কিন্তু মনে রাখবেন, কোনো নির্বাচিত প্রার্থীর কাছ থেকে যখন একই রকমভাবে নিয়োগকর্তারা প্রত্যাখ্যাত হন, তাদেরও খারাপ লাগে!
সাধারণত, মানুষ যে কাজে আগ্রহ বোধ করে না সেখানে চাকরির জন্য আবেদনও করে না। কিন্তু ইন্টারভিউ দিয়ে নির্বাচিত হওয়ার পর সেই চাকরিতে আগ্রহ হারানো বা না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে নিশ্চয়ই কোনো বিশেষ কারণ থাকে। এমন পরিস্থিতিতে যেসব কারণে আপনি ভাবতে পারেন এই চাকরিটা আপনার জন্য নয়, তা হলো-
১. বেতন বা সম্মানী আপনার প্রত্যাশার চেয়েও কম। আপনার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বেতন প্রত্যাশা আছে আর আপনি কোভাবেই সেই প্রত্যাশার চেয়ে কমে কোনো কাজ করতে চান না।
২. আপনি আগেই এর চেয়ে ভাল একটি চাকরির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। সার্বিকভাবে তারা নতুন এই প্রস্তাবের চেয়ে আপনার চোখে উচ্চ পর্যায়ের, তাই আপনি অন্যান্য সুযোগ সুবিধা আর বিবেচনায় নিতে চান না।
৩. আপনি মনে করছেন এই কাজ করে আপনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন না। এই চাকরির সকল দায়িত্ব আপনার দক্ষতার সাথে যায় না। নিজের সাচ্ছন্দের বাইরে কোন চাকরি নিলে শেষমেশ আপনাকে পস্তাতে হবে। কারণ হয়তো আপনার কাজ ভাল হবে না। ফলে ভবিষতে কখনো আপনি ছাঁটাইও হতে পারেন।
৪. এই চাকরিতে আপনার সম্ভাব্য বসের সাথে আপনার সাক্ষাৎ হয়েছে এবং তাকে আপনার ভাল লাগেনি। মানুষ সাধারণত যাদের পছন্দ করতে পারে না তাদের সাথে কাজ তো দূরের কথা, কোন প্রকার সঙ্গও আশা করে না। সুতরাং আপনিও কাজটা করবেন না।
৫. এই অফিসের সার্বিক পরিবেশ আপনার ভাল লাগেনি। আপনি মনে করছেন এখানে আপনি স্বাচ্ছন্দে কাজ করতে পারবেন না। আপনার বিশ্বাস ও প্রত্যাশার সাথে জায়গাটা সাংঘর্ষিক।
আপনি যদি এমন কিছু ভেবে থাকেন তবে ইন্টারভিউ দেওয়ার পরই আপনার আবেদনটা তুলে নেওয়া উচিত। কিন্তু যদি তা করার আগেই আপনি চাকরির জন্য তাদের আমন্ত্রণ পেয়ে থাকেন তবে অবশ্যই আপনার একটি প্রত্যাখ্যান পত্র পাঠানো উচিত। কেননা প্রত্যাখ্যান পত্র ৩টি বিষয়কে স্পষ্ট করে। যেমন-
১. চাকরি প্রত্যাখ্যানের এটিই সবচেয়ে সম্মানজনক উপায়।
২. এতে প্রত্যাখ্যাত প্রতিষ্ঠানের কাছে আপনাম দায়িত্ববোধ ও বিনয়ের বহিঃপ্রকাশ ঘটে, যা ভবিষ্যতে এই কোম্পানিতে আপনার প্রবেশের আরও জোরালো সম্ভাব্যতা নিশ্চিত করে।
৩. আপনার জায়গায় কোম্পানি নতুন কাউকে নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
প্রত্যাখ্যান পত্র দেখতে কেমন হবে?
অনেকে মনে করেন, চাকরি না থাকার চেয়ে যেকোন চাকরি করা ভাল। এই ধারণা চাকরিদাতা ও গ্রহীতা কারো জন্যই মঙ্গলজনক নয়। আপনি আপনার দক্ষতা ও প্রত্যাশা অনুযায়ী সঠিক চাকরিটা খুঁজে পেতে চান তাই এই চাকরির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছেন এটিই আসল কথা। এই নিবন্ধে আমি একম কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই যা কোন চাকরির প্রত্যাখ্যান পত্রে অবশ্যই থাকা উচিত।
পত্র লিখুন ব্যক্তির প্রতি, পদবির প্রতি নয়
প্রত্যাখ্যান পত্র লেখার সময় তা কোনো কর্মকর্তার পদবির প্রতি লেখা উচিত নয়। মনে রাখতে হবে আপনি পত্র লিখছেন সেই ব্যক্তির প্রতি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে যিনি আপনাকে চাকরির প্রস্তাব পাঠিয়েছেন।
প্রত্যাখ্যান পত্রের বক্তব্যে যেন আপনার আন্তরিকতা ফুটে ওঠে
স্বভাবতই আপনার প্রত্যাখ্যান পত্র পেয়ে নিয়োগকর্তার মন খারাপ হবে। তাই আপনার বক্তব্যে যতটা সম্ভব কৃতজ্ঞতা ও আন্তরিকতা ফুটিয়ে তুলুন। ‘চাকরিটা আপনি করবেন না’ সূচক বক্তব্য লেখার বদলে শিখুন ‘করা সম্ভব হচ্ছে না’। সাথে অবশ্যই আরও যুক্ত করুন যে তারা আপনাকে নির্বাচিত করায় আপনি কৃতজ্ঞ ও ভীষণ খুশি, কিন্তু কাজটা করা সম্ভব হচ্ছে না একান্ত কিছু ব্যক্তিগত কারণে। তবে ভবিষ্যতে আপনি সুযোগ পেলে অবশ্যই তাদের সাথে কাজ করতে আগ্রহী।
প্রত্যাখ্যানের যথাযথ কারণ লিখুন, কোন খোঁড়া অজুহাত নয়
যদি এই চাকরি আপনার প্রত্যাশিত সেলারী পূরণ না করে বা কোন আকস্মিক ঘটনার কারণে অথবা ঠিক এই কাজে আপনার আগ্রহ না থাকার কারণে প্রত্যাখ্যান করে থাকেন, তবে আপনার প্রত্যাখ্যানকে যথাযথ ভাবে ব্যাখ্যা করুন। লিখুন আপনি সত্যিই এই কাজে খুব আগ্রহী ছিলেন, কিন্তু সুনির্দিষ্ট কারণে করতে পারেছেন না।
তবে নিয়োগকর্তা আপনার প্রত্যাখ্যানের কারণ আরও স্পষ্টভাবে বুঝতে পারবেন যদি সাক্ষাতকারের সময় আপনি বেতন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয়তা, কাজের সময়সূচী এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিয়ে আলোচনা করে থাকেন বা কথা প্রসঙ্গে যথাযথ প্রস্তাব করে থাকেন।
প্রত্যাখ্যান সম্পূর্ণরুপে স্পষ্ট করুন
নিয়োগকর্তাদের একজন যোগ্য প্রার্থী খুঁজে পেতে প্রচুর অর্থ ও সময় ব্যয় করতে হয়। তারপর নানা প্রক্রিয়া শেষে নির্বাচিত প্রার্থী যখন ‘না’ বলেন তখন তাদের জন্য সেটা আরও পীড়াদায়ক। তাই আপনার প্রত্যাখ্যান পত্রের মধ্যে কোথাও কোনো শর্ত বা অস্পষ্ট বক্তব্যে আবার আপনার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এই পদে চাকরি করার কোন সম্ভাব্যতা রাখবেন না। তাদের স্পষ্ট করে ‘না’ এবং ‘ধন্যবাদ’ জানান। যেন তারা আপনার স্থলে অন্য কোনো প্রার্থী নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেন।