বাঙালি উৎসবপ্রিয় জাতি। উদযাপন করতে আমরা খুব ভালোবাসি। তাই যেকোনো অনুষ্ঠান আয়োজনের ক্ষেত্রে এই দেশ স্বর্ণভূমি! তাছাড়া বর্তমান সময়ে বিনোদনের বাজার খুব চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। কোনো অনুষ্ঠান, কনসার্ট বা বিনোদন আয়োজনের খবর শুনলে মানুষ সেখানে হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
তবে তার জন্য আপনাকে যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে। সময়মত কাঙ্ক্ষিত শ্রোতা দর্শকদের মধ্যে প্রচার চালাতে হবে এবং সার্বিকভাবে আয়োজনটি প্রাণবন্ত করে তুলতে হবে। একসাথে এই সবগুলো কাজ করা এতটা সহজ নয়।
আমি এই নিবন্ধে কোনো অনুষ্ঠান বা ইভেন্ট আয়োজন করে প্রাণবন্ত ও সফল করে তুলতে কিছু পরামর্শ আলোচনা করবো। আমার বিশ্বাস এই পরামর্শগুলো আপনাদের অনুষ্ঠান আয়োজনের খুঁটিনাটি দিক সম্বন্ধে সচেতন করে তুলবে।
১. বিজ্ঞাপন বা প্রচার
যেকোনো অনুষ্ঠান সফল করার প্রধান চাবিকাঠি হল যথাযথভাবে প্রচার চালান। এই প্রচার চালানোর জন্য আপনাকে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ সময় নিতে হবে। একই অনুষ্ঠানের বিভিন্ন রঙের প্রচারপত্র ব্যবহার করতে হবে। সাথে সাথে অনুষ্ঠানের ধরন বুঝে হাতে আঁকা কার্ড বা প্রচার পত্র বিতরণ করতে হবে, যা আপনার আয়োজনকে অনেক বেশি সৃজনশীল করে তুলবে।
তবে প্রচারপত্র লেখার ব্যাপারে যত সম্ভব সংক্ষিপ্ত বক্তব্য উপস্থাপন করতে হবে। মনে রাখবেন, আধুনিক বিজ্ঞাপনে অনেক বেশি তথ্য মিথ্যা বা নেতিবাচক তথ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। সুতরাং সংক্ষিপ্ত এবং স্মার্ট প্রচারপত্র নিয়ে অনুষ্ঠানের দুই সপ্তাহ আগেই প্রচার অভিযানে নেমে পড়ুন।
২. স্থানীয় গণমাধ্যমের সাথে যোগাযোগ
কোনো অনুষ্ঠানের যথাযথ প্রচার নিশ্চিত করতে স্থানীয় গণমাধ্যমের সাথে যোগাযোগ করার কোনো বিকল্প নেই। আপনি যে এলাকায় অনুষ্ঠানটি আয়োজন করছেন অত্র এলাকার স্থানীয় টিভি স্টেশন, রেডিও, স্থানীয় অনলাইন এবং দৈনিক পত্রিকা, বিভিন্ন তথ্য প্রদানকারী সংস্থা, ওয়েবসাইট পরিচালনাকারীদের সাথে যোগাযোগ করুন।
প্রয়োজনে একটি সংবাদ সম্মেলন করুন। তাদের সবাইকে একত্রিত করে বিশেষ আলোচনার আয়োজন করুন। আপনার অনুষ্ঠানে কী হতে চলেছে তা তাদের জানান। সংবাদ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হওয়ায় তারা নিজ থেকেই আপনার এই খবরটি প্রচার করবে।
সাথে সাথে আপনার অনুষ্ঠানে যদি জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কোনো বিশেষ ব্যক্তি আমন্ত্রিত থাকে তার তথ্যও তাদের জানান। মনে রাখবেন প্রচারেই প্রসার। আপনার এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মিডিয়া প্রচার চালালে আপনার চেয়ে তারাই বেশি লাভবান হবে। সুতরাং স্থানীয় মিডিয়াকে সাথে নিয়ে কাজ করলে উভয়পক্ষই সমান লাভবান হবে।
৩. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সংযুক্ত করা
অনুষ্ঠানের ধরন বুঝে স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আপনি যুক্ত করতে পারেন। তবে অবশ্যই আপনার আয়োজনটি শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত হতে হবে। স্থানীয় স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ প্রচার মিডিয়াকে সংযুক্ত করে প্রচার চালাতে পারলে বিনামূল্যে আপনি অনুষ্ঠানের ব্যাপক প্রচার করতে পারবেন। সাথে সাথে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ দর্শকও পেয়ে যাবেন।
৪. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম
আপনার অনুষ্ঠানের প্রচার চালানোর জন্য আরেকটি চমৎকার মাধ্যম হতে পারে সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলো। জনপ্রিয় সব সামাজিক যোগাযোগ এবং ভিডিও শেয়ারিং মাধ্যমগুলোতে প্রচার চালাতে হবে।
স্থানীয় পর্যায়ে বিজ্ঞাপন করতে, পোস্টার, লিফলেট বিতরণ করতে যেমন খরচ হয়, তেমনি যে এলাকায় অনুষ্ঠানটি করছেন সেই এলাকা এবং কাঙ্ক্ষিত আগ্রহের ব্যক্তিদের টার্গেট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আপনার ইভেন্ট বুস্ট করুন। তাহলে ভালো প্রচার পাবেন।
৫. যথাযথ বিজ্ঞাপন
আপনি কোন এলাকায় অনুষ্ঠান করছেন সেটা প্রধান বিবেচ্য বিষয় নয়, বরং কি অনুষ্ঠান করছেন এবং আপনার কাঙ্ক্ষিত দর্শক-শ্রোতা কারা সেটাই প্রধান বিষয় অর্থাৎ যে এলাকায় অনুষ্ঠান করছেন সেখানে প্রচার নয় বরং যাদের টার্গেট করে অনুষ্ঠান করছেন তাদের মধ্যে প্রচার চালান।
উদাহরণস্বরূপ আপনি শিক্ষা বিষয়ক একটি অনুষ্ঠান করতে চান। এই অনুষ্ঠানের প্রচার নিশ্চয়ই স্থানীয় হাট-বাজারে চালালে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে না। এই অনুষ্ঠানের প্রচার চালাতে হবে স্থানীয় স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একইভাবে আপনি একটি যাত্রাপালার আয়োজন করতে চলেছেন। যাত্রাপালার প্রচর নিশ্চয়ই স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় চালালে হবে না।
৬. মুখে মুখে প্রচার
আপনার অনুষ্ঠানের কথা স্থানীয় হাট-বাজার, চায়ের দোকান, বন্ধু মহল সহ সব জায়গায় মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে দিন। আপনার বন্ধু এবং পরিচিতজনদের দিয়ে বিভিন্ন জায়গাতে মানুষের মধ্যে এই অনুষ্ঠানের ব্যাপারে বলুন। মানুষের মুখের কথা খুব দ্রুত ছড়ায়। আপনার অনুষ্ঠানটি আকর্ষণীয় কোনো বিষয় নিয়ে হলে অবশ্যই তা দ্রুত মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়বে।
৭. অনুষ্ঠানের পারফরমার নির্বাচন
অনুষ্ঠানের পারফরমার কে এটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ধরা যাক, আপনি একটি গানের কনসার্টের আয়োজন করবেন। কিন্তু এমন এক বেনামি ব্যান্ডদল নিয়ে এলেন যাদের খুব একটা পরিচিতি নেই। স্বভাবতই আপনার এই অনুষ্ঠানে লোক সমাগম কম হবে। কিন্তু আপনি যদি সুপরিচিত কোনো ব্যান্ড দল বা পারফরমার নিয়ে আসেন তাহলে স্বভাবতই আপনার অনুষ্ঠানে দর্শক সমাগম বেশি হবে।
তবে আপনার ধারণক্ষমতা এবং সক্ষমতার দিকেও নজর রাখতে হবে। আপনি যেই স্থানে অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন সেই স্থানে কত সংখ্যক দর্শক জায়গা পেতে পারে, আর পারফর্ম করতে যাকে নিয়ে আসছেন তার কথা শুনলে কত সংখ্যক মানুষ আগ্রহী হতে পারে এই দুটি বিষয়ের সমন্বয় করা খুব জরুরি।
মোটামুটিভাবে, উপরিউক্ত বিষয়গুলোর দিকে নজর রাখলে যেকোনো ইভেন্ট বা অনুষ্ঠানকে সফল করে তোলা সম্ভব। তবে এই প্রস্তুতিগুলো সবই অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বের। অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বে কিভাবে বিজ্ঞাপন করবেন, কোথায় বিজ্ঞাপন করবেন, কাদের টার্গেট করবেন আর অনুষ্ঠানে পারফর্ম করার জন্য কাদের নিয়ে আসবেন, এইসব বিষয় নিয়েই আলোচনা করা হলো। পরবর্তী নিবন্ধ অনুষ্ঠানকে সফল করতে আরও কিছু পরামর্শ আলোচনা করার আশা রাখছি।