ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা খুব পরিচিত একটি শব্দ। কার জীবনে হানা দেয় নি এই বিষণ্ণতা? রেজাল্ট খারাপ হওয়া,পারিবারিক সমস্যা, স্কুল/কলেজ/ভার্সিটি তে বন্ধুদের সাথে ঝগড়া, মৃত্যুশোক, একাকিত্ব ইত্যাদি আরো হাজারটা কারণে বিষণ্ণতা গুটিগুটি পায়ে প্রবেশ করে আমাদের জীবনে। আর অল্প সময়েই নিজের পাকা অবস্থানও বানিয়ে নিতে পারে এই মানসিক ব্যাধি।
শুরুতেই জেনে নেই ডিপ্রেশনের কবলে পড়লে, জীবনে ঠিক কী কী পরিবর্তন আসতে পারে।
- বিষন্নতা অনুভব বা মন খারাপ থাকা
- যেকোনো কাজে অনীহা
- পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব বা ইনসমনিয়া
- নিজেকে নিষ্কর্মা বা অকর্মণ্য মনে করা
- খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন বা অরুচি ফলস্বরূপ ওজন কমতে থাকা
- কোনো কিছুতে মনোযোগ স্থাপন করতে না পারা
- হতাশাপূর্ণ মনোভাব
- মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া
- দেহে এবং মনে শক্তির অভাব বোধ
- আত্মহত্যা করার মনোভাব তৈরী হওয়া
জীবনের এই বন্ধুর পথে নানান রকম সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় প্রায় সবাইকে। ইংরেজীতে বলে “ Life is not a bed of roses ” জীবন পুষ্প শয্যা নয়। বিভিন্ন সমস্যার হাত ধরে আমাদের জীবনে আসে বিষন্নতা বা ডিপ্রেশন। ডিপ্রেশন না ছোঁয়া যায়, না দেখা যায়। তবে এ থেকে মুক্তির উপায় কি? বা আদৌ কি কোনো উপায় আছে ?
প্রশ্নের উত্তরে বলবো, হ্যাঁ আছে। ডিপ্রেশন কাটানোর একমাত্র উপায় আত্মহত্যা। কি অবাক লাগছে? তবে বুঝিয়ে বলি। আত্মহত্যা মানে নিজেকে হত্যা। বিষন্নতার হাত থেকে বাঁচতে হলে সর্বপ্রথম এই বিষন্ন সত্ত্বা কে হত্যা করতে হবে। পুরোনো বিষন্ন মানুষটি কে দূর করে নতুন এক মানুষকে গড়ে তুলতে হবে। ফিরিয়ে আনতে হবে হারিয়ে যাওয়া মনোবল আর বেঁচে থাকার প্রবল ইচ্ছা শক্তি। জন্ম দিতে হবে নতুন এক সত্ত্বাকে। খুব কঠিন কি? তবে জেনে নেই বিষন্ন এই সত্ত্বা কে দূর করে নতুন কে গড়ে তোলার সহজ কয়েকটি উপায়।
১. লক্ষ্য নির্ধারণ করা
আমরা জীবনের প্রতি মায়া হারিয়ে ফেলি তখনি যখন আমাদের কোনো স্থির লক্ষ্য থাকে না বা বলতে পারি স্বপ্ন থাকে না। লক্ষ্যহীন জীবন হলো পালহীন নৌকার মতো। বিশাল সমুদ্রের ন্যায় এই জীবনে, নিজের জীবনের নৌকা চালিয়ে নিতে তুলে ধরতে হবে নৌকার পাল। ঠিক একই ভাবে, একটি স্বপ্ন বা একটি লক্ষ্য আমাদের জীবন কে নতুন ভাবে গড়ে তোলার শক্তি সঞ্চার করবে। আমাদের স্বপ্ন দেখতে হবে, স্থির করতে হবে লক্ষ্য। কাজ করতে হবে স্বপ্ন পূরণের জন্য।
লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যেতে হবে। ব্যস্ত থাকতে হবে। জীবনে ডিপ্রেশনের জন্য সময় রাখা চলবে না ।
২. নেগেটিভিটি কে “না”
জীবনের সকল নেগিটিভিটি দূর করতে হবে। হোক সেটা গলার কাঁটা হয়ে থাকা পুরোনো কোনো সম্পর্ক, হোক কোনো স্মৃতি। ইতি টানতে হবে আজই। জীবন কে সাজানোর চেষ্টা করতে হবে নতুনত্ব দিয়ে।
৩. স্বাস্থ্য সচেতনতা
নিজের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে। বিষন্নতা সবার আগে কেড়ে নেয় সুস্থ শরীর যা প্রভাব ফেলে আমাদের মনে। তাই সুস্থ খাদ্যাভ্যাসের সাথে সাথে রুটিন মাফিক জীবনযাপন করার চেষ্টা করতে হবে।
শুধু খাদ্যাভ্যাস নয় ব্যায়াম কিংবা যোগ ব্যায়াম করেও মনে প্রশান্তি আনা যায় আর সাথে পর্যাপ্ত ঘুম তো আছেই।
৪. নতুন কিছুকে আমন্ত্রণ
একঘেয়ে জীবনও বয়ে নিয়ে আসে বিষন্নতা। তাই প্রতিদিনকার কাজের মাঝে নতুন কিছু করার চেষ্টা করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ হতে পারে নতুন কিছু শেখা। কোনো বাদ্যযন্ত্র বা নতুন কোনো ভাষা শেখা কিংবা যা মনকে আনন্দ দেয় এমন কিছু কে স্থান দিতে হবে জীবনে।
৫. সামাজিক কাজে জড়ানো
আজকাল আমরা বড্ড বেশী ভার্চুয়াল। ইন্টারনেটের এই যুগে, স্ক্রিনের আড়ালে বসে গল্প করে সময় পার করি। কিন্তু এতে কোনো লাভ তো হয় ই না বরং ক্ষতি হয় বেশী।
স্ক্রিনের আড়াল থেকে বেড়িয়ে এসে মানুষের সাথে সামনা সামনি কথা বলার চেষ্টা করা উচিত। নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে বিভিন্ন সামাজিক কাজে। জড়তা কাটানোর চেষ্টা করতে হবে। ডিপ্রেশন শেয়ার করতে হবে। মনের কথাগুলো মনে রেখে নয় বরং তুলে ধরলেই আসবে সমাধান। মন হালকা হবে।
৬. ডায়েরী লেখা
মনের কথাগুলো সব গুছিয়ে প্রতিদিন লেখার অভ্যাস করা উচিত। এতে যেকোনো সমস্যার দ্রুত সমাধান করা সম্ভব। কি বিষয়ে ডিপ্রেসড, মূলত কোন ঘটনাগুলো মন কে অশান্ত করে তার একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাওয়া যাবে।
৭. ডাক্তারের পরামর্শ
ডিপ্রেশন একটি মানসিক ব্যাধি। আমরা অনেকেই ঘরে বসেই এই রোগ দূর করতে চাই। কখনো ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াকে তেমন গুরুত্ব দেই না। আমাদের সকলের ধারণা সাইকিয়াট্রিস্ট মানেই “পাগলের ডাক্তার”। আর ডিপ্রেশন? সে আবার কেমন রোগ?
এ সকল ধারণাই এই রোগকে জীবনে প্রবেশের পথ তৈরী করে দেয়। কাউন্সিলিং বা ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ। ডিপ্রেশনের চিকিৎসা আছে অনেক। একজন সাইকিয়াট্রিস্টের কথা অনুযায়ী জীবন যাপন করলে ডিপ্রেশন এর হাত থেকে অতি দ্রুত রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
জীবন অনেক মূল্যবান। শুধুমাত্র ডিপ্রেশনের মত অসুস্থতার কারণে আমরা হারিয়ে ফেলি আমাদের কাছের মানুষদেরই। অনেকেই হারিয়ে যায় না ফেরার দেশে। সম্প্রতি দেশে টিনেজ দের আত্মহত্যার পরিমাণ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা দায়ী করছেন ডিপ্রেশনকে। এই মরণফাঁদ থেকে আপনজনদের রক্ষা করতে আমাদের উচিত সচেতন হওয়া। সচেতন করা আমাদের চারপাশের সকলকেই। যাতে ডিপ্রেশনের কবলে পরে আর কোনো প্রাণ হারিয়ে না যায়।