খারাপ বস চিনবেন যেভাবে

লাগাতার চেষ্টা করতে থাকলে চাকরি ঠিকই পাওয়া যায়, কিন্তু সেই চাকরির সুন্দর পরিবেশ এবং একজন ভালো মনের বস পাওয়ার সৌভাগ্য সবার হয় না। প্রতিষ্ঠানের বস যদি ছোট মানসিকতার হন তবে সেই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের জন্য তা বিরাট দুঃসংবাদ। এমন অবস্থায় কর্মীরা বাধ্য হয়ে কাজ করেন সত্য, কিন্তু সুন্দর কাজের পরিবেশ সেখানে কখনোই সৃষ্টি হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এমন অতিউৎসাহী বসের প্রকল্প ব্যর্থ হয়।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }
photo: robert half

আমি ইতিপূর্বে একটি নিবন্ধ খারাপ বা অতিউৎসাহী বসের কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করেছি, পাশাপাশি তার বিপরীতে ভাল বস কেমন হতে পারে তা নিয়েও আলোচনা করেছি। আজকের এই নিবন্ধে ভালো এবং খারাপ বসের আরও কয়েকটি বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করবো। আমার বিশ্বাস এই নিবন্ধটিও কর্মক্ষেত্রে আপনাদের নেতা চিনতে সহযোগিতা করবে।

১. কর্মীদের মতামত পরামর্শ আমলে না নেওয়া

বস কখনো কেউ এমনি এমনি হয় না। বস হতে হলে তার যথেষ্ট যোগ্যতা থাকতে হয়। একজন ব্যক্তি নেতৃস্থানীয় অবস্থায় আছেন তার অর্থ হলো তিনি এই দল পরিচালনার জন্য যথেষ্ট অভিজ্ঞ। সাধারণত নেতা নেতৃত্ব দিবেন আর কর্মীরা তাকে অনুসরণ করবেন এটাই কাম্য। কিন্তু কখনো কখনো নেতার নেতৃত্বে ভুল হতে পারে। কর্মীদের বিশেষ পরামর্শ এবং মতামতের প্রয়োজন হতে পারে। কোনো কর্মী যদি দলনেতাকে কোনো পরামর্শ দিতে চান তবে নিশ্চয়ই তা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বেশিরভাগ বস নিজেদের সবজান্তা জ্ঞান করেন এবং কর্মীদের সকল পরামর্শ এবং মতামত উপেক্ষা করে চলেন।

photo: engagient

কিন্তু একজন দক্ষ নেতা কখনো এমন ধ্যান-ধারণা পোষণ করেন না। তিনি কর্মীদের সাথে কথা বলেন। তাদের মতামত, পরামর্শ নিয়েই যেকোনো প্রকল্পের পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করেন। এভাবে দলের মতামত, পরামর্শ নিয়ে কাজ করলে দলের মধ্যে পরস্পরের প্রতি আন্তরিকতা বৃদ্ধি পায়, দলের প্রত্যেকের অবস্থান পোক্ত হয়, যা সুন্দর কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করে।

{ "slotId": "", "unitType": "in-article", "pubId": "pub-6767816662210766" }

২. নিজের কাজ যথাযথভাবে না করা

বস যিনি হবেন তিনি সব দিক থেকেই হবেন সর্বোচ্চ। তিনি সাধারণ কর্মীদের চোখে হবেন একজন রোল মডেল। তিনি কর্মীদের থেকে যতটা কাজ আশা করেন, নিজেও ততটা পরিশ্রম করেন। কোনো বিষয়ে কর্মীদের খোঁজ রাখার আগেই তিনি সবকিছুর খোঁজ খবর রাখেন। সযত্নে নিজের সকল কাজ দ্রুত সম্পাদন করেন। ভালো বস তার কর্মীদের জন্য অনুকরণীয় আদর্শে পরিণত হন। কর্মীরা কোনো কিছু প্রত্যাশা করার আগেই তিনি তার ব্যবস্থা করে ফেলেন।

photo: youth village

পক্ষান্তরে একজন খারাপ বস নিজেকে অনেক বড় জ্ঞান করেন এবং নিজের কাজ কর্মীদের দিয়ে করাতে চান। এমনকি তার নিজের দায়িত্বে থাকা কাজ যথাযথভাবে সম্পাদন করেন না। একজন বস হিসেবে যদি আপনার মধ্যে এই প্রবণতা থাকে তবে আজই তা ত্যাগ করুন। আপনার কর্মীদের থেকে যতটা শ্রম আশা করেন নিজে তার চেয়ে বেশি শ্রম দেওয়া শুরু করেন।

৩. নির্দেশনা না দেওয়া

নতুন যোগ দেয়া কর্মী যত ভালো শিক্ষার্থী হোক না কেন প্রাথমিক অবস্থায় তার নির্দেশনার প্রয়োজন হয়। বস এবং সহকর্মীদের কাছ থেকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা প্রয়োজন হয়। অন্ততপক্ষে কাজে যোগ দেওয়ার ১৫ দিন বা এক মাস বসের তত্ত্বাবধানে কাজ করার প্রয়োজন হয়।

photo: vjoy photography

নতুনদের ক্ষেত্রে যেকোনো প্রকল্প সঠিকভাবে সম্পাদন করতে সার্বক্ষণিক বস এবং সহকর্মীর সহযোগিতার ঘাটতি পড়লে প্রকল্প ব্যর্থ হতে পারে। তাই ভালো বসেরা সব সময় কর্মীদের কাজের সমন্বয় করার স্বার্থে তাদের সার্বক্ষণিকভাবে সহযোগিতা করেন, প্রয়োজনীয় সময় যথাযথ নির্দেশনা দিয়ে থাকেন।

কিন্তু একজন অদক্ষ বাস সব সময় উল্টো আচরণ করেন। তিনি ভাবেন কর্মীরা সব কিছুই জানেন এবং তারা সব কাজ ঠিকঠাকভাবেই করবেন। এমন বসের সাথে কাজ করতে নতুন কর্মীরা নানান ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ হন।

৪. লক্ষ্যহীন গন্তব্য

যেকোনো প্রকল্পের একটা লক্ষ্য থাকে। কর্মীরা দিনশেষে কাজের একটা পর্যায়ে উপনীত হতে চায়। একজন দক্ষ বস জানেন কর্মীদের কিভাবে নির্দেশনা দিতে হবে এবং একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিতে হবে।

photo: archers flowers

কোম্পানির দৃষ্টিভঙ্গি এবং স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য সামনে রেখে বস কর্মীদের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। যেকোনো কাজ শুরুর পূর্বে স্পষ্টভাবে সকল নির্দেশনা দেওয়ার সাথে সাথে একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেন, যা কর্মীদের কাজের প্রতি উৎসাহিত করে তোলে। কিন্তু একজন অদক্ষ বাস বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লক্ষ্যহীন হয়ে থাকেন। গতানুগতিক পন্থায় কর্মীরা কাজ করে যান, সাফল্য নির্ভর করে কর্মীদের দক্ষতার ওপর। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এমন বসের নেতৃত্বে কাজ করলে প্রকল্প ব্যর্থ হয়।

৫. দল গঠনে গুরুত্ব না দেওয়া

যেকোনো প্রতিষ্ঠানে কাঙ্ক্ষিত কর্মতৎপরতার জন্য দল গঠন করা খুব জরুরী। কোম্পানির প্রত্যাশা অনুযায়ী কর্মীদের দিয়ে আলাদা আলাদা কাজ সফল ভাবে সম্পাদন করতে আলাদা আলাদা টিম গঠনের প্রয়োজন হয়। যে টিমের মধ্যে যোগাযোগ যত ভালো সেই টিম তত শক্তিশালী এবং তারা তত দ্রুত প্রকল্প সম্পাদন করতে পারে।

photo: dfrens

তাছাড়া একটি শক্তিশালী টিম সংঘবদ্ধভাবে কাজ করে অপেক্ষাকৃত দুর্বল কর্মীদের কাজ এগিয়ে নিতে পারে। এ কারণে দক্ষ বস সবসময় দল গঠনের দিকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। কিন্তু একজন অদক্ষ বাস দল গঠনের এই গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেন না। ফলশ্রুতিতে কর্মীদের কাজ চলে ঢিলেঢালাভাবে, যা কোম্পানির সার্বিক কর্মতৎপরতা পিছিয়ে দেয়।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

৬. কম পারিশ্রমিকে বেশি কাজ করানো

আপনার কর্মদক্ষতা, কাজের মান এবং অর্পিত দায়িত্বের উপর ভিত্তি করে আপনার বেতনের অংক নির্ধারিত হওয়া আবশ্যক। তাছাড়া আপনার জন্য সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা এবং নিয়মাবলী থাকা আবশ্যক। চাকরি গ্রহণের সময় চুক্তিতে উল্লেখিত বিষয়ের বাইরে আপনাকে দিয়ে বেশি কাজ করানো কোনোক্রমেই কোম্পানি আইনের আওতায় পড়ে না।

photo: hr technologist

একজন ভাল বস এসব বিষয়ে সচেতন। তিনি কর্মীদের সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে তৎপর থাকেন এবং কর্মীদের যথাযোগ্য সম্মানী ও মর্যাদা দিয়ে থাকেন। তারা কখনোই কর্মীদের দিয়ে অতিরিক্ত কাজ করিয়ে নেওয়ার কুটকৌশল অবলম্বন করেন না। পক্ষান্তরে, একজন খারাপ মানসিকতার বস কম পারিশ্রমিকের বেশি কাজ করিয়ে নিতে চান। তিনি সবসময় কর্মীদের চাপের মধ্যে রাখেন এবং সুযোগ পেলেই বাড়তি কাজ চাপিয়ে দেন। তারা মনে করেন যেহেতু মাস শেষে আমরা কর্মীদের সম্মানী দেয়, তাই তাদের দিয়ে বেশি কাজ করানোর সম্পূর্ণ অধিকার তাদের আছে।

এটি একটি অমূলক ধারণা। কর্মীদের দিয়ে বেশি কাজ করালে প্রতিষ্ঠানের সাফল্য আসে না। তাছাড়া কাজের মান কমে যায়, ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই দক্ষ বসরা কখনোই এই পন্থা অবলম্বন করেন না।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *