প্রযুক্তির গতিময়তা দিনদিন এতোটাই বৃদ্ধি পাচ্ছে যে, প্রযুক্তি ছাড়া এক মুহূর্ত কল্পনা করা যায় না। এজন্যই হয়তো, ছোট বড় প্রায় সকল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ব্যবসায়িক সাফল্যের জন্য বেছে নিচ্ছেন প্রযুক্তিক কলা কৌশলগুলোকে। আর নিবেই না কেন বলুন! কেবলমাত্র প্রযুক্তির গঠনমূলক ব্যবহারই পারে একটি প্রতিষ্ঠানের তাৎক্ষণিক তথা ধারাবাহিক সাফল্য নিয়ে আসতে।
তবে প্রযুক্তির অগ্রগতি ব্যবসায়িক সাফল্য নিয়ে এলেও সকল কর্মকর্তা সহ ব্যবহারকারীর ডিজিটাল নিরাপত্তা রক্ষার্থে প্রতিষ্ঠানটি কতোটুকু সচেতন, এটা দেখার বিষয়। কারণ ডিজিটাল এই যুগে হ্যাকাররা ওৎ পেতে বসে আছে আপনার প্রতিষ্ঠানের সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো হাতিয়ে নেওয়ার জন্য। এজন্যই প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের উন্নতির বৃহত্তর স্বার্থে ডিজিটাল নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা অত্যন্ত জরুরী। এই ধারাবাহিকতায় আজ থাকছে, আপনার প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল নিরাপত্তা রক্ষার কৌশল।
অনুসন্ধান করুন আপনার প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতি নিয়ে
প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তার নিজস্ব কিছু সংস্কৃতি তথা নিয়মনীতি মেনে চলে। তাই আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে, আপনার প্রতিষ্ঠানের নিয়মনীতিগুলো কি? প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মকর্তা, নিয়োগকর্তা কিংবা ব্যবহারকারীর নিয়মনীতি সম্পর্কে জানলে আপনি খুব সহজেই প্রত্যেকের জন্য পরিপূর্ণ একটি নিরাপত্তা মডেল দাঁড় করতে পারবেন। যার ফলে আপনি পরিষ্কার ধারণা পাবেন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর উপর।
এরপর আপনি সহায়তা নিতে পারেন একজন দক্ষ আইনজীবীর। যিনি তার দক্ষতা এবং গঠনমূলক চিন্তাশক্তির মাধ্যমে পুরো প্রতিষ্ঠানের একটি আইনি অবকাঠামো দাঁড় করতে সাহায্য করবেন। মোটকথা, অনুসন্ধান এবং আইনজীবীর সংমিশ্রণে আপনাকে প্রতিষ্ঠানের যুগোপযোগী একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যাতে করে প্রতিষ্ঠানের সকল স্থরের মানুষেরা বিশ্বস্ততার সাথে প্রতিষ্ঠানকে ভালোবাসে।
কর্মকর্তাদের নিয়মনীতিগুলো জানিয়ে দিন
এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের নিয়মনীতিগুলো সম্পর্কে সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের গঠনমূলক ধারণা থাকা আবশ্যক। এজন্যই নতুন কোনো কর্মকর্তা আপনার প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হওয়ার সাথে সাথে তাকে জানিয়ে দিন প্রতিষ্ঠানের নিয়মনীতিগুলো। অফিসের কোন সময়গুলোতে সিসিটিভি’র মাধ্যমে তাদের উপর নজর দেওয়া হবে, অথবা ব্যক্তিগত কাজ যেমন ইমেইল, সোশ্যাল মিডিয়া সহ অন্যান্য কোন কোন কাজে তাদের উপর কড়া নজর দেওয়া হবে- এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর কর্মীদের অবগত করতে হবে দায়িত্বের সাথে।
এক্ষেত্রে কর্মীরা সতর্কতার সাথে কাজ করার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা রক্ষার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। এজন্যই গঠনমূলক নীতিমালা প্রণয়ন করা যেকোনো স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ।
নিরাপত্তা বিজ্ঞপ্তিগুলো সর্বসাধারণের মাঝে ছড়িয়ে দিন
আপনারা কি জানেন? অ্যাপলের প্রতিটি পণ্যের বাজার মূল্য এতো বেশি হয় কেন? অনেকগুলো কারণের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ হলো বাজারে অন্যসব ডিজিটাল পণ্যের তুলনায় অ্যাপল তাদের পণ্যগুলোর নিরাপত্তার দিকে অনেক বেশি খেয়াল রাখে। আর এই গোপনীয় নিরাপত্তার জন্যই হয়তো অ্যাপল পৃথিবীর অন্যতম ব্যবসা সফল একটি প্রতিষ্ঠান। আরো একটি ভয়ানক তথ্য দিই, প্রযুক্তির গতিময়তা দৈনন্দিন বাড়লেও, ওই হারে আমাদের ডিজিটাল নিরাপত্তা মোটেও বাড়ে নাই। তাই সামনের বছরগুলোতে ডিজিটাল নিরাপত্তা অনেক বড় একটি ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে, এ নিয়ে নিশ্চিত থাকতে পারেন।
এজন্যই গুগল, ফেসবুক, টুইটার সহ প্রযুক্তির বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো এখন গুরুত্বের সাথে নজর দিচ্ছে ব্যবহারকারীর নিরাপত্তার দিকটিতে। তাইতো, আপনার প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের গতিকে সাম্যবস্থায় রাখতে নিরাপত্তার প্রতি জোরালো নজর দিতেই হবে। এটিকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে অফিস থেকে কর্মচারী কিংবা ব্যবহারকারী সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে আপনার প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার চূড়ান্ত বিশ্বস্ততা।
কর্মচারীদের প্রতি সতর্ক নজর রাখুন
বিশ্ববিখ্যাত প্রতিষ্ঠান অ্যাপলের নিরাপত্তার উপর নজর দিই, চলুন। এটি এমন একটি প্রতিষ্ঠান যার কোনো পণ্য সম্পর্কে আপনি আগে থেকে ধারণা পাবেন না। অ্যাপলের প্রতিটি পণ্যের প্রস্তুতি তারা এতো গোপনীয়ভাবে করে, যাতে পণ্যটি বাজারে আসার আগে কোনো তথ্য ফাঁস না হয়। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, অ্যাপলের মতো ব্যবসা সফল এই প্রতিষ্ঠানটি তার কর্মচারীদের উপর কতোটা সতর্ক নজর রাখে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ফেসবুক, জিমেইল, স্মার্টফোনের যুগে আপনি কীভাবে সতর্ক নজর রাখবেন?
এক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়ের উপর খেয়াল রাখা যেতে পারে। প্রথমত আপনার কর্মচারীরা যেন অন্য প্রতিষ্ঠানের কোনো ডিজিটাল সেবা গ্রহণ না করে। দ্বিতীয়ত কারো সাথে প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগের সময় যেন প্রতিষ্ঠানের দেওয়া নিরাপদ সফটওয়্যার বা টুলস ব্যবহার করে। প্রাথমিকভাবে এ দুটি কাজ করলে আপনার প্রতিষ্ঠান অনেকখানি নিরাপদে থাকতে পারবে। তবে এরকম আরো অসাধারণ নিয়মনীতি প্রণয়নের মাধ্যমে আপনাকে সতর্ক নজর রাখতে হবে কর্মচারীদের উপর, যাতে আপনার প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো অন্য কারো হাতে না পড়ে।
নীতিমালা বাস্তবায়নে গুরুত্বের সাথে নজর দিন
কোনোকিছুর নীতিমালা প্রণয়ন যতটা না গুরুত্বপূর্ণ, তারচেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ঐ নীতিমালার বাস্তবায়ন করা। তাই আপনার প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে সকলেই নির্ধারিত নীতিমালা স্বাচ্ছন্দে গ্রহণ করে এবং প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের প্রতি উৎসাহী হয়। এই নীতিমালা রক্ষার্থে সকল কর্মকর্তা কর্মচারীর নজরদারীর জন্য প্রয়োজন সিসিটিভি সহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু সফটওয়্যার বা টুলস।
যার মাধ্যমে আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা রক্ষার নিয়মনীতিগুলো খুব সহজেই বাস্তবায়ন করতে পারবেন পরিপূর্ণভাবে। এজন্যই একজন ভালো উদ্যোক্তা হিসেবে আপনার প্রতিষ্ঠানের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নীতিমালা বাস্তবায়নের পাশাপাশি দৈনন্দিন বিভিন্ন বিষয়ের উপর পড়াশোনা করা অত্যন্ত প্রয়োজন। এতে করে আপনি পরিপূর্ণ একটি ইকোসিস্টেম দাঁড় করাতে পারবেন আপনার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে।
শেষের শুরু
বাংলাদেশের বেকারত্ব দূরীকরণে স্টার্টআপ কিংবা উদ্যোক্তাদের ভূমিকা অনেক। কিন্তু এই নিরাপত্তা জনিত কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান কিংবা উদ্যোক্তা আজ হুমকির মুখে। তাই প্রত্যেক উদ্যোক্তাদের উচিৎ, গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টিকে দায়িত্বের সাথে পরিচালনা করা। তাহলেই প্রতিটি স্টার্টআপের বাজার মূল্য বৃদ্ধির সাথে সাথে উপকৃত হবে দেশ ও জাতি উভয়ই।
Featured Image: pexels