কোন বিধিনিষেধ নেই, নির্ধারিত মিটিংয়ের জন্য তাড়াহুড়ো নেই, কোন ড্রেস কোড নেই; বাড়িতে বসে কাজ করা আসলে এমনই! অফিস থেকে বহু দূরে বসে নিয়ম করে কাজ করা অনেকটা স্বপ্নের মতো। যতক্ষণ না আলসেমির বিপরীতে আপনার কাজের প্রতি ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধ শক্তিশালী হচ্ছে ততক্ষণ বাড়িতে বসে কাজের চিন্তা বলা যায় দুঃস্বপ্ন। অবশ্য অফিসে থাকলে এই বিক্ষিপ্ততা কাটিয়ে ওঠা খুব সহজ, কিন্তু বাড়িতে থেকে ব্যক্তিগত সময় আর কাজের সময়ের মধ্যে সীমারেখা টানা সত্যিই খুব কঠিন।
ধরুন, আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্টের কাজ করছেন আর এমন সময় আপনার এক বন্ধু আপনার ফোনে কল দিচ্ছে। আপনি জানেন কাজটা খুব মনোযোগ দিয়ে করা দরকার, একই সাথে যত দ্রুত সম্ভব শেষও করা দরকার। এমন কাজের মুহূর্তে আপনি সচরাচর ফোন ধরেন না, তারপরও বারবার বেজে যাওয়া ফোন কলে আপনার একধরণের বিরক্তি কাজ করে যা আপনার কাজের ব্যাঘাত ঘটায়।
অথবা আপনি সকালে দৈনন্দিন কাজের তালিকা তৈরি করছেন, এমন সময় ব্যক্তিগত ও পারিবারিক নানা দায়িত্ব নিয়েও আপনাকে ভাবতে হচ্ছে। বাড়িতে থাকার কারণে এই দুই ধরণের কাজ করার সময় নিয়ে নিজের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হচ্ছে। আবার ধরুন, সারাদিনের অফিসিয়াল কাজের টাইট সিডিউলের মধ্যে কোনো এক সময় কাপড় লন্ড্রি করার একাট বাড়তি চাপ আছে, যা আপনি কোনো ভাবেই উপেক্ষা করতে পারবেন না। আসলে ব্যক্তিগত আর প্রফেশনাল কাজের সমন্বয় করতে গিয়ে আপনি কখনোই বুঝে উঠতে পারবেন না আপনি কখন ‘অন’ হচ্ছেন আর কখন ‘অফ’ হচ্ছেন।
দীর্ঘদিন ধরে বাড়িতে বসে কাজ করার অভিজ্ঞতার আলোকে আমি বলতে পারি এর ভাল, মন্দ দুই দিকই আছে। তবে কখনো কখনো একটু হেঁয়ালিপনা অনেক খারাপ অভিজ্ঞাতার জন্ম দেয়। কেননা হেঁয়ালিপনা করলে আপনাকে বাধা দেওয়ার কেউ থাকে না। কিন্তু পরে যখন হিসাব মেলানো হয় সারা দিনে কী কী করলাম তখন দেখা যায়, একটু হেঁয়ালিপনার কারণে গোটা দিনটা মাটি হয়ে গেছে।
যারা দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ এবং নিজের কর্ম জীবনের প্রধান কাজ বাড়িতে বসে করেন তারা নিজে থেকেই কিছু সীমারেখা সৃষ্টি করেন আর কোন ক্রমেই সেই সীমারেখা অতিক্রম করেন না। আজ এমন আরও কয়েকটি পরামর্শ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো। কিভাবে আপনি অফিস থেকে বহু দূরে বাড়িতে বসেও আরও কার্যকরভাবে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ কাজ করতে পারেন?
কর্মঘন্টা নির্ধারণ করুন
কারো কারো কাছে কথাগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে নাও হতে পারে, কিন্তু আমি বলবো আপনি যদি একটি সফল কর্মময় দিন পার করতে চান তবে আপনার চিন্তা করতে হবে আপনি বাড়ি থেকে কাজ করছেন না। মাত্র কিছু দিন পূর্বে সময়ের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার আগে আমার দিন ছিল বিক্ষিপ্ত, কোনো দৈনন্দিন পরিকল্পনা ছিল না। আমি কখন কম্পিউটারে বসবো, কী কী কাজ করব বা আদৌ কোনো দরকারী কাজ করব কিনা, করলেও কতটুকু করবো। এসব নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছিল না।
আমার ব্যক্তিগত জীবনের কোন বাধ্যবাধকতা ছিল না। যে কারণে ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে আমি কর্মজীবন খুঁজে পেতাম না! আবার দিন শেষে নিজের কাছেই অপরাধী হয়ে যেতাম সারা দিনে কী কী করেছি তা মেলাতে গিয়ে। অথচ সারা দিনে আমি কখনো আলাদা করে বিশ্রামের সময় পেতাম না, তাহলে আমি করতাম কী?
কিন্তু যখন আমি বাড়িতে বসে কাজের জন্য ‘অফিস আওয়ার’ আর দৈনন্দিন কাজের পরিমাণ নির্ধারণ করে ফেললাম তখন এক মহাবিপ্লব ঘটে গেল। মাসের শুরুতেই আমি হিসাব করে দেখলাম এই নিয়ম মেনে যদি সারা মাস কাজ করে যায় তাহলে বাড়িতে বসেই অনায়াশে আমি ৫০ হাজার টাকার বেশি রোজগার করতে পারি, যা একজন প্রথম শ্রেণীর কর্মকতার বেতনের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়!
বাড়ির কোনো কাজ সামনে এলে আমি নিজেকে প্রশ্ন করি, অফিসে থাকলে আমি এই কাজটা করতাম কিনা অথবা কখন করতাম? তারপর আমি নিজে থেকেই অনুধাবন করি- বাড়ির এই কাজটা তখন আমার করা ঠিক হবে কিনা। অফিস টাইমের আগে পরে অন্য কাজগুলো মিলিয়ে নিই। আত্মীয়স্বজনের সাথে সাক্ষাত বা বন্ধুদের সাথে আড্ডা অফিস টাইমের আগে পরে নির্ধারণ করি।
যদি আপনিও বাড়িতে বসে কাজ করে থাকেন তবে আজই নিজের কর্মঘন্টা আর কাজের পরিমাণ নির্ধারণ করে ফেলুন।
সাফল্যের জন্য প্রতিটি দিন আলাদা করে সাজান
একটি সম্পূর্ণ দিনের কার্যকারিতা সম্পূর্ণভাবে পেতে অন্য সাধারণ কর্মদিবসের চেয়ে একে আলাদাভাবে পরিকল্পনা করে দিনটির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করুন। যেমন, আপনি যদি কর্মদিবস হিসেবে সপ্তাহে ৪ দিন কাজ করে থাকেন, তবে এই ৪ দিন সকল প্রকার মিটিং বা অন্যান্য কাজ বন্ধ রাখুন। যদি একান্তই হঠাৎ করে সৃষ্টি হওয়া কোন বাড়ির কাজ উপেক্ষা করতে না পারেন তবে অন্তত ওই কর্মদিবসের অর্ধেকটা সময় সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে কাজ করুন। এমন সময় নির্বাচন করুন যখন কেউ আপনাকে কোন প্রকার বাড়ির কাজের জন্য বিরক্ত করবে না।
তারপর এই স্বল্প সময়ের মধ্যে কী কী করবেন তাও চটজলদি ভেবে ফেলুন। আর নিজের কাজের জায়গা একটি অফিসের পরিবেশে নিয়ে আসুন। এভাবে প্রতিটি দিন পরিকল্পনা করে এগোলে আপনার সাফল্য অবশ্যম্ভাবী
অন্যদের সঙ্গে নির্দিষ্ট সীমানা নির্ধারণ করুন
আপনার কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে বাড়ির ও আশপাশের অন্যান্যদের সাথে সাক্ষাতের ব্যাপারে নির্দিষ্ট সীমারেখা নির্ধারণ করুন। নিশ্চিত করুন, অন্যান্য সাধারণ দিনের মতো কর্মময় দিনেও যেন তারা আপনাকে খুব সহজেই সাক্ষাত না পেয়ে যায়। পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশী আর পরিচিতজনদেন জানান যে, কাজের দিনগুলোতে আপনি অন্যান্য সাধারণ দিনের মতো যে কোন সময় তাদের ডাকে সাড়া দিতে পারবেন না। কারণ দূর থেকে করলেও সেটা কাজ, আর সাফল্য পেতে আপনাকে নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট পরিমাণ কাজ করতে হয়। এভাবে সবার প্রত্যাশার সমন্বয় করে কাজ করতে পারলে আপনি বাড়িতে থেকেও যথার্থ কাজ করতে পারবেন।