বসের সাথে যেভাবে কাঙ্ক্ষিত বেতন বৃদ্ধি বা পদোন্নতির জন্য আলোচনা করবেন

আমাদের মধ্যে কিছু মানুষ আছেন, যারা তর্কবিতর্ক করতে ভালোবাসেন। বিচক্ষণতার সাথে দরকষাকষি করে নিজের প্রাপ্য অধিকার আদায় করে নিতে জানেন। আপনি যদি এই শ্রেণীর মানুষ হয়ে থাকেন, তবে নিশ্চয়ই জীবনের সব ক্ষেত্রে সফল হবেন। আর যদি সব পক্ষের মন রক্ষা করে দরকষাকষির মাধ্যমে নিজের প্রাপ্য আদায় করে নিতে না জানেন, তবে জেনে রাখু্‌ন, কেউ আপনার অধিকার বুঝিয়ে দিতে এগিয়ে আসবে না।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }
photo: engagement multiplier

আর এই দরকষাকষি বা যুক্তি তর্ক যখন নিজের পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে, তখন মানুষ উভয় সংকটে পড়ে যায়। কেননা অধিক যুক্তিতর্কে জড়ালে যেমন চাকরি হারানোর ভয় থাকে, তেমনি চুপচাপ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মেনে নিলে নিজের কাঙ্খিত সম্মানী থেকে বঞ্চিত হতে হয়।

সুতরাং পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধির জন্য কর্তৃপক্ষের সাথে অবশ্যই যুক্তি তর্ক এবং আলোচনা করতে হবে। তবে তার জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে। আজকের নিবন্ধে এমন কিছু কৌশল নিয়ে আলোচনা করব। তবে যুক্তিতর্কে জড়ানোর আগে নিজের অবস্থান সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে।

নিজের অবস্থান

উচ্চ বেতন বা পদোন্নতির জন্য ঊর্ধ্বতনদের সাথে আলোচনা করার পূর্বে নিজের দক্ষতা, যোগ্যতা এবং প্রতিষ্ঠানে আপনার যৌক্তিক অবস্থান নিয়ে গবেষণা করতে হবে। আপনি সত্যিই পদোন্নতি বা উচ্চ বেতনের যোগ্য কিনা, তা নিজেকে মূল্যায়ন করে যাচাই করতে হবে। আন্তর্জাতিক এক পরিসংখ্যান মতে, প্রায় ৫৭ শতাংশ মানুষ কখনই চাকরিতে পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করেন না। আবার এসব ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় নারীরা অনেক বেশি বৈষম্যের শিকার হন।

{ "slotId": "", "unitType": "in-article", "pubId": "pub-6767816662210766" }
photo: inc

কেননা তারা বেতন বৃদ্ধি বা পদোন্নতি সম্পর্কিত যুক্তিতর্ক এবং আলোচনা করতে ভয় পান। তারা চাকরি হারানো সহ নানা কারণে অনিরাপদ বোধ করে। তাই এসব ঝুঁকি এড়াতে বেতন বৃদ্ধির আলোচনার পূর্বে কর্মক্ষেত্রে আপনার অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করতে হবে। নিজের দক্ষতা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, কাজের পরিমাণ, সামাজিক অবস্থান ইত্যাদি বিবেচনা করে বাস্তবসম্মত অর্থমূল্য বা সম্মানী নির্ধারণ করতে হবে। তবে দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কাঙ্ক্ষিত সম্মানী লক্ষ্য নির্ধারণ করলেই হবে না। চাকরির স্থায়িত্ব এবং নিয়মিত সম্মানী পাওয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে।

চলুন জেনে নিই, চাকরিতে বেতন বৃদ্ধি বা পদোন্নতির জন্য আলোচনা করার কিছু মোক্ষম কৌশল।

. দ্রুত আলোচনা শুরু করুন  

বেতন নিয়ে আলোচনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো দ্রুত আলোচনা শুরু করা। সুতরাং শীঘ্রই আপনার ব্যবস্থাপকের সাথে আলোচনায় বসুন এবং অদূর ভবিষ্যতে আপনার কাজের পরিকল্পনা, আয়ের লক্ষ্যমাত্রা এবং সম্পর্কিত সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করুন। আপনার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা এবং দূরদর্শিতাই আপনার বেতন ভাতা বৃদ্ধি সম্পর্কিত আলোচনাকে সহজ এবং প্রাসঙ্গিক করে তুলতে পারে।

. আপনার গবেষণা শেয়ার করুন

আপনার কাজের ক্ষেত্র, কাজের পরিমাণ, বেতন এবং সম্পর্কিত সকল বিষয় নিয়ে গবেষণা করুন। গবেষণার পর পর্যাপ্ত তথ্য হাতে নিয়ে যৌক্তিকভাবে বেতন বৃদ্ধির আবেদন করুন। মনে রাখবেন, আপনি যত বেশি তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন, ঊর্ধ্বতনদের কাছে আপনি ততটাই যোগ্য হয়ে উঠবেন।

photo: tradeready

আপনি বৃহৎ দৃষ্টিকোণ থেকে বিদ্যমান ব্যবসা কীভাবে মূল্যায়ন করেন, ভবিষ্যতে আপনি ব্যবসার উন্নতিতে কী অবদান রাখবেন এবং নিজ ক্ষেত্রে আপনি কতটা দক্ষ হয়ে উঠেছেন, এসব বিষয়ে পর্যালোচনা করুন। আপনার গবেষণা এবং মতামতের উপর ভিত্তি করে ম্যানেজার স্পষ্টভাবে বুঝতে পারবেন, আপনি পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধির জন্য কতটা যোগ্য।

. সব সময় পেশাদার থাকুন

কর্মক্ষেত্রে সবসময় পেশাদারিত্ব ধরে রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই বেতন বৃদ্ধি সম্পর্কিত আলোচনায় সব সময় পেশাদারী মনোভাব বজায় রাখবেন। এমনকি যদি আপনি এ আলোচনায় মানসিকভাবে দুর্বল, হতাশ এবং দ্বিধান্বিত থাকেন তবুও। তাতে নিশ্চয়ই আলোচনা ফলপ্রসূ হবে এবং আপনি যার সাথে আলোচনা করছেন তার সাথে আপনার সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে।

photo: bulgaria sega

যদি আপনি বর্তমান চাকরি ছেড়ে একটি নতুন চাকরি এবং পদোন্নতির জন্য চেষ্টা করেন, তবুও নতুন প্রতিষ্ঠানের কাছে সবসময় পেশাদার থাকার চেষ্টা করুন। ভুলেও পূর্বের প্রতিষ্ঠান সম্বন্ধে বাড়াবাড়ি কোনো মন্তব্য করতে যাবেন না। কেননা এই আচরণগুলোর মধ্য দিয়ে বসের কাছে আপনার ব্যক্তিত্বের পরিচয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এমনকি আপনি যদি অপ্রয়োজনীয় বা উদ্দেশ্যহীন বিষয় নিয়ে বসের সাথে কথা বলেন, তবুও নিজের কাজে পেশাদার থাকার চেষ্টা করুন।

. অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বিবেচনা করুন

চাকরি ক্ষেত্রে শুধু আপনার মৌলিক বেতন নয়, সম্পর্কিত অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বিবেচনা করুন। বেতন বৃদ্ধির জন্য আলোচনার পূর্বে এই প্রতিষ্ঠানে প্রাপ্ত সকল সুযোগ সুবিধা, যা সরাসরি অর্থের সাথে সম্পর্কিত নয় তাও বিবেচনা করুন।

photo: codec prime

যেমন, দৈনিক কর্মঘন্টা, কাজের পরিবেশ, বিনামূল্যে পাওয়া খাবার, মোবাইল ফোনের বিল এবং বিশেষ ভাতা এইসব বিষয়ের অর্থমূল্য নির্ধারণ করে মূল বেতনের সাথে যোগ করে হিসাব করুন। তারপর বিবেচনা করে দেখুন আপনি বেতন বৃদ্ধির জন্য আলোচনা করবেন কিনা।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

. যুক্তিসঙ্গত দাবি উত্থাপন

ঊর্ধ্বতনদের কাছে আপনার বেতন বৃদ্ধির আবেদনটি যেন গুরুত্বপূর্ণ হয়, তার জন্য যুক্তিসঙ্গত দাবি উত্থাপন করুন। খুব উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য, অযৌক্তিক বা লোভীর মতো বেতন বৃদ্ধির দাবি কখনোই গ্রহণযোগ্য হয় না। এতে বরং আপনার গ্রহণযোগ্যতা কমে যায়। তাই সবদিক বিবেচনা করে আপনার মূল বেতনের শতাংশ হারে বেতন বৃদ্ধির আবেদন করুন।

. নিজের দায়বদ্ধতা

বেতন বৃদ্ধির দাবি উত্থাপন বা আলোচনার পর নিজের দায়বদ্ধতার ব্যাপারেও সচেতন থাকতে হবে। আপনার বেতন বৃদ্ধির দাবি যেন কর্তৃপক্ষের কাছে আল্টিমেটাম মনে না হয়। আবার বেতন বৃদ্ধির দাবি করার পর যেন আপনার কাজের গতি কমে না যায়, অথবা কর্তৃপক্ষ আপনার আবেদনে সাড়া না দিলেও যেন কাজের প্রতি আপনার অনীহা প্রকাশ না পায়, সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।

photo: jxe

আপনার কাজের মান ভালো হলে নিশ্চয়ই আপনি অধিক সম্মানী পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু তার জন্য অবশ্যই আপনাকে দাবি উত্থাপন করতে হবে। কাজেই বেতন বৃদ্ধির আলোচনায় ভয় পাবেন না। বরং নিজের অবস্থান ঠিক রেখে দক্ষতার সাথে ঊর্ধ্বতনদের সাথে কথা বলুন।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

Feature photo: bulgaria sega

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *