বিদেশে স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে অধ্যয়নের সেরা ১০টি দেশ

source:google.com

আপনি যদি স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে অধ্যয়ন করতে ইচ্ছুক হন তবে আপনাকে ডিজাইন, স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং, কন্সট্রাকসন এবং বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালসের উপর যথেষ্ট জ্ঞান রাখতে হবে। বাস্তবিকপক্ষে প্রত্যেক স্থাপত্যবিদই একজন জাদুকর যারা ভবনগুলো নির্মাণের জন্য সুন্দর সুন্দর নকশা তৈরি করে থাকেন। কোনো স্থাপনার জন্য নকশা যেমন অধিক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় তেমনি নকশার সাথে স্থাপনাটি নির্মাণের উদ্দেশ্যের সম্বনয় করাটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

source:google.com

সেইসাথে স্থাপনা নির্মাণের সময় নিরাপত্তা এমন একটি বিষয় যা কোনো স্থাপত্যবিদ এড়িয়ে যেতে পারেন না। কন্সট্রাকসন কোম্পানিতে স্থাপত্যবিদরা একজন ডিজাইনার হিসেবে কাজ করে থাকেন। একজন স্থাপত্যবিদ তার কল্পনাগুলোকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার মাধ্যমে কোনো একটি প্রজেক্টকে নির্ভুলভাবে সম্পন্ন করে থাকেন। এছাড়া একটি স্থাপনা নির্মাণের জন্য কত টাকা ব্যয় হবে এবং কী পরিমাণ সময় লাগবে সেটিও তারাই পরিকল্পনা করে থাকেন। সমগ্র পৃথিবীতে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখান থেকে আপনি স্থাপত্যবিদ্যা অধ্যয়ন করতে পারবেন।

source:google.com

এই প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আপনি মানসম্মত শিক্ষাগ্রহণের মাধ্যমে ক্যারিয়ারের উন্নতি ঘটাতে পারেন। আর আপনি যদি স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে বিদেশে অধ্যয়ন করার কথা ভাবেন তবে এই লেখায় আপনার জন্য সেরা ১০টি দেশের কথা উল্লেখ করা হলো। আপনি চাইলে এই দশটি দেশের মধ্য থেকে যেকোনোটি বেছে নিতে পারেন উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য। তো চলুন জেনে নিই কোন সেই দেশগুলো সম্পর্কে।

১. বার্সেলোনা, স্পেন

স্থাপত্যবিদ্যা এবং শিল্পকলার শিক্ষার্থীদের জন্য বার্সেলোনা সেরা জায়গাগুলোর মধ্যে একটি। এই শহরটি তাদের কাছে স্বপ্নের শহর মনে হতে পারে। এই শহরেই রয়েছে বিশ্ববিখ্যাত স্থপতি এন্টনি গাউদির বিখ্যাত ও অনন্য কাজগুলোর বহু নিদর্শন। এই ঐতিহাসিক শহরের রয়েছে চমৎকার গঠনশৈলী যা গাউদি স্টাইলে নির্মিত।

source:google.com

বার্সেলোনার বিভিন্ন স্থান বিভিন্ন সময়ে ইউনেস্কো কর্তৃক ‘বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান’ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। বার্সেলোনায় নির্মিত স্থাপনাগুলো আপনাকে বিস্মিত করবে এবং স্থাপত্যবিদ্যা অধ্যয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আপনি এখান থেকে স্থাপনা নির্মাণের জন্য বিভিন্ন ধরনের জটিল নকশা আয়ত্ত করতে পারবেন।

২. লন্ডন, ইংল্যান্ড

স্থাপত্যবিদ্যা এবং চারুকলার শিক্ষার্থীদের জন্য লন্ডন একটি স্বর্গরাজ্য। কেননা স্থাপত্য বিদ্যা এবং চারুকলায় লন্ডন অসমান্য অবদান রেখে যাচ্ছে। লন্ডনে অবস্থিত ব্রিটিশ মিউজিয়ামের শোকেসগুলো প্রায় ৮ মিলিয়ন বস্তু দ্বারা পরিপূর্ণ যা পুরো মানবজাতির ইতিহাসকে আচ্ছাদন করে রেখেছে। এছাড়া লন্ডনের ডিজাইন মিউজিয়ামের সংগ্রহে থাকা বিপুল পরিমাণ ডিজাইন একজন স্থাপত্যবিদ্যার শিক্ষার্থীর শিক্ষা অর্জনের জন্য বিরাট ভূমিকা পালন করতে পারে।

source:google.com

লন্ডনে নির্মিত পশ্চিমাধাঁচের বিভিন্ন স্থাপনা একজন শিক্ষার্থীকে স্থাপত্য বিদ্যা সম্পর্কে গভীর জ্ঞান দান করতে পারে। লন্ডনে নির্মিত বহুসংখ্যক স্থাপনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে টাওয়ার অফ লন্ডন, ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবে এবং কুইনস হাউজ। আপনি যদি স্থাপত্যবিদ্যার শিক্ষার্থী হন তবে এই কারুকার্যময় স্থাপনাগুলো থেকে অনেক জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন।

৩. প্যারিস, ফ্রান্স

স্থাপত্যবিদ্যা অধ্যয়নের জন্য প্যারিস একটি আদর্শ জায়গা। আদিকাল থেকে প্যারিস চিত্রকর্মের জন্য বিখ্যাত। প্যারিসের ল্যুভর মিউজিয়ামে সংরক্ষিত চিত্রকর্মগুলো থেকে একজন স্থাপত্যবিদ্যার শিক্ষার্থী অনায়াসে জটিল জটিল নকশা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা অর্জন করতে পারেন।

source:google.com

এই মিউজিয়ামে সংরক্ষিত রয়েছে সুবিশাল গ্লাস পিরামিড যা প্রাচীন শিল্পের অনুকরণে তৈরি হয়েছিল এবং এই স্থাপনাটি স্থাপত্যবিদ্যার শিক্ষার্থীদের কাছে বিস্ময় সৃষ্টি করতে সক্ষম। সমগ্র প্যারিস জুড়ে রয়েছে হরেক রকমের স্থাপনা যার নির্মাণশৈলী একজন স্থাপত্যবিদ্যার শিক্ষার্থীকে স্থাপত্যবিদ্যা শেখাতে অনেকাংশে সহায়তা করতে পারে।

৪. রোম, ইতালি

রোমান স্থাপত্যশিল্প পুরো পৃথিবীতে তার অনন্যতার জন্য বিখ্যাত। রোমে নির্মিত বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা স্থাপত্য ইতিহাসে বিরাট অবদান রাখে। ‘দ্যা কলোসিয়াম’, ‘রোমান ফোরাম’ এবং ‘পান্থিও’ রোমানদের কিছু বড় ধরনের কাজ যা স্থাপত্যশিল্পের ক্ষেত্রে একটি মাইলস্টোন।

source:google.com

রোমে অবস্থিত ভ্যাটিকান সিটি একটি মাস্টারপিস। এছাড়া রোমে রয়েছে ক্যাপিটোলাইন মিউজিয়াম যেটি পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন মিউজিয়াম। প্রত্যেক স্থাপত্যবিদ্যার শিক্ষার্থীর একবার হলেও এখানে গমন করা উচিত। আর এখানে যদি আপনি শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন তবে অনেক বিষয় হাতে-কলমেও শিখতে পারবেন।

৫. টোকিও, জাপান

স্থাপত্যবিদ্যার শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা মর্ডান ডিজাইনে আগ্রহী, টোকিও তাদের জন্য একটি চমৎকার জায়গা হতে পারে। ‘টোকিও ইন্টারন্যশনাল ফোরাম’ অথবা ‘রিভার্সিবল ডেসটিনি লফটস মিটাকা’ স্থাপত্যবিদ্যার একটি চমৎকার নিদর্শন এবং শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষণীয় একটি জায়গা।

source:google.com

এছাড়া টোকিওতে বিভিন্ন ধরনের বাগান দেখা যায় যা স্থাপত্যবিদ্যা এবং চারুকলার এক অপূর্ব সংমিশ্রণে তৈরি। শিক্ষার্থীরা টোকিওর বিভিন্ন স্থাপনা থেকে আধুনিক স্থাপত্যশিল্পে ব্যাপক জ্ঞান লাভ করতে পারেন।

৬. এথেন্স, গ্রিস

স্থাপত্য ধ্বংসাবশেষের জন্য এথেন্স পুরো পৃথিবীব্যাপী স্বীকৃত। ‘দ্য অ্যাক্রোপলিস’ এবং ‘পার্থেনন’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই ধ্বংসাবশেষগুলো থেকে শিক্ষার্থীরা তাদের জ্ঞানকে অনেকাংশে বৃদ্ধি করতে পারেন।

source:google.com

এছাড়া শিক্ষার্থীরা আরেকটি চিত্তাকর্ষক স্থাপনা ‘টেম্পল অব পোসেইডন’ থেকেও জ্ঞান অর্জন করতে পারে। গ্রিসের ন্যাশনাল গ্যালারিতে সংরক্ষিত চিত্রকর্ম স্থাপত্যবিদ্যা এবং চারুকলার শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয় শিখতে ব্যাপক অবদান রাখতে পারে।

৭. বার্লিন, জার্মানি

বার্লিনের ঐতিহাসিক ভবনগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ধ্বংস হয়ে গেলেও বর্তমানে বার্লিন পুরো পৃথিবীর কাছে স্থাপত্য শিল্পের এক অপার বিস্ময় হয়ে উঠেছে। বর্তমানে সমগ্র ইউরোপের মধ্যে বার্লিন চারুকলার প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এখানে রয়েছে পৃথিবীর বিখ্যাত কিছু মিউজিয়াম।

source:google.com

বার্লিনের ন্যুয়স মিউজিয়াম প্রাচীন নিদর্শন সমূহের জন্য বিখ্যাত। এছাড়া বারগ্রুয়েন মিউজিয়াম পিকাসো, ম্যাটিস ইত্যাদি বিভিন্ন খ্যাতিমান চিত্রশিল্পীর অঙ্কিত চিত্র কর্মের জন্য বিখ্যাত। বার্লিনে নির্মিত বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা স্থাপত্যবিদ্যার শিক্ষার্থীদের বর্তমান বার্লিন সম্পর্কে জানতে অনেক সাহায্য করবে।

৮. মস্কো, রাশিয়া

রাশিয়ার রাজধানী মস্কো বিভিন্ন শিল্প জাদুঘরের জন্য পৃথিবী বিখ্যাত। অনন্য সাধারণ স্থাপত্য শিল্পের জন্য মস্কো পুরো পৃথিবীকে প্রশংসিত। মস্কোর উল্লেখযোগ্য স্থাপনাগুলো হচ্ছে ‘সেন্ট ব্যাসিলস ক্যাথিড্রাল’, ‘দ্যা ক্রেমলিন’ এবং ‘দ্যা ক্যাথিড্রাল খ্রিষ্ট দ্যা সেভিয়র’ ইত্যাদি।

source:google.com

এছাড়া ‘সেন্ট পিটার্সবার্গ’ হেরিটেজ মিউজিয়ামের জন্য পুরো পৃথিবীতে সমাদৃত। আর্কিটেকচারের ছাত্রছাত্রীরা রাশিয়ার বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যকর্মের থেকে অনেক জ্ঞান অর্জন করতে পারেন যা তাদের ক্যারিয়ারের উন্নতি সাধন করতে পারে।

৯. বেইজিং, চায়না

ঐতিহ্য এবং আধুনিক স্থাপত্যের সংমিশ্রণের মাধ্যমে কিভাবে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা নির্মাণ করা যায় বেইজিং সেটা প্রমাণ করে দিয়েছে। বেইজিং এ অবস্থিত ‘তায়ানানম্যান গেট’ এবং দ্য ফরবিডেন সিটি’ এর একটি চমৎকার উদাহরণ। এই দুটি স্থাপনার স্থাপত্য সৌন্দর্যের কারণে বেইজিং সমগ্র পৃথিবীতে প্রশংসিত।

source:google.com

এছাড়া চীনের অন্যান্য জায়গায় নির্মিত অতি আধুনিক স্থাপত্যের কারণে স্থাপত্যবিদ্যা অধ্যয়নের জন্য চীন একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। এখানে নির্মিত ভবনগুলো মানুষের মনে বিস্ময় সৃষ্টি করতে সক্ষম। স্থাপত্যবিদ্যার শিক্ষার্থীরা চাইলে চীন থেকে মানসম্মত শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।

১০. মেক্সিকো সিটি, মেক্সিকো

যারা স্থাপত্যবিদ্যা অধ্যয়ন করতে চান মেক্সিকো সিটি তাদের কাছে একটি গুপ্তধন হয়ে উঠতে পারে। এই শহরটি বিভিন্ন ধরনের ঐতিহাসিক স্থাপনা এবং জাদুঘরে পরিপূর্ণ। এখানে অবস্থিত ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব অ্যানথ্রপলজিতে বহুসংখ্যক প্রাচীন নির্দশন বিদ্যমান রয়েছে। এই শহরে অবস্থিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘ন্যাশনাল প্যালেস’, ‘মেট্রোপলিটন ক্যাথিড্রাল’ এবং ‘দ্য ক্যাসেল অব চাপুলটিপ্যাক’ ইত্যাদি। এই গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো স্থাপত্যবিদ্যার শিক্ষার্থীদের কাছে ফলপ্রসূ হতে পারে।

source:google.com

আপনি যদি একজন স্থাপত্যবিদ্যার শিক্ষার্থী হন তবে নিজেকে শুধুমাত্র ক্লাসরুমের ভেতরে সীমাবদ্ধ রাখবেন না। আপনি বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে যতটুকু শিখতে পারবেন ক্লাসরুম থেকে ততটুকু শিখতে পারবেন না। যে কোন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার আগে সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে পুরোপুরি জানুন তারপর ভর্তি হন। আপনি যদি স্থাপত্যবিদ্যায় উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে চান তবে এই দশটি দেশের মধ্য থেকে যেকোনোটি নির্বাচন করে সেখানে অধ্যয়ন করতে পারেন। কেননা আপনি সেখান থেকে পুঁথিগত বিদ্যা অর্জনের পাশাপাশি বাস্তব জ্ঞান ও অর্জন করতে পারবেন। এটি আপনার দক্ষতা বাড়াতে অনেকাংশে সহায়তা করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *