আপনি যদি কোনো ব্যবসায়ী হন তবে আপনি চাইবেন আপনার ব্যবসাটা যেন সফলতার শিখরে পৌঁছায়। কোনো ব্যবসায় আপনি যদি সফল হতে চান তবে আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর নজর দিতে হবে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ক্লায়েন্টের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। কেননা আপনার ব্যবসায়িক সাফল্য ক্লায়েন্টের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। ক্লায়েন্টের সাথে আপনি যদি ভালো সম্পর্ক না রাখতে পারেন তবে আপনার ব্যবসা কখনোই আগাতে পারবেনা। আরো ভালো হয় যদি আপনি ক্লায়েন্টের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্কের পাশাপাশি ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি করতে পারেন। এর ফলে আপনি বিভিন্ন দিক দিয়ে লাভবান হতে পারবেন। তো চলুন জেনে নিই কিভাবে আপনি ক্লায়েন্টের সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ স্থাপন করবেন।
১. ভালো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন
“বাইরের আবহাওয়াটা আজকে কেমন?” “আকাশটা আজকে অনেক নীল, তাই না?” আপনার ক্লায়েন্টকে এই ধরনের বাস্তববাদী প্রশ্ন করতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে আবহাওয়া বিষয়ক কিছু প্রশ্ন কথোপকথন শুরু করার মাধ্যম হতে পারে। এই ধরনের প্রশ্ন অস্বস্তিকর নীরবতা ভাঙতে অনেক সময় কাজে দেয় এবং বৈঠক এর পরিবেশ হালকা করে তুলতে সাহায্য করে। তবে এই ধরনের প্রশ্ন সকল প্রকার কথোপকথন শুরুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
আমরা সচরাচর ব্যবসায়িক বৈঠকগুলো ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয় দিয়েই শুরু করে থাকি। যেমন: গত সপ্তাহের ব্যবসার অবস্থা কি? চলতি সপ্তাহ কেমন যাচ্ছে? আমাদের লাভ হচ্ছে না কি ক্ষতি? ইত্যাদি। এই ধরনের প্রশ্নগুলো শুধু আপনার সাথে আপনার ক্লায়েন্টের ব্যবসায়িক সম্পর্কেরই উন্নতি করবে ব্যক্তিগত সম্পর্কের নয়। আপনি চাইলে আপনার ক্লায়েন্টকে ভিন্নধর্মী কিছু প্রশ্ন করতে পারেন। যেমন আপনি তাকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন “এই সপ্তাহের ছুটির দিনটি কিভাবে কাটাবেন?” বা “সম্প্রতি আপনি কি নতুন কোনো জায়গায় ঘুরতে গিয়েছিলেন?” অথবা “সম্প্রতি আপনি কি এমন কোনো বই পড়েছেন যেটা আপনার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে?”
আপনি তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে পারেন অথবা তার সন্তানদের সম্পর্কে প্রশ্ন করতে পারেন। এই ধরনের প্রশ্নের মাধ্যমে আপনি তার সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে পারবেন এবং আপনাদের সম্পর্ক শুধুমাত্র ব্যবসার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না।
২. তার কথাগুলো মনোযোগ সহকারে শুনুন
কিছু অর্থপূর্ণ প্রশ্ন আপনার সাথে আপনার ক্লায়েন্টের আলোচনা সুষ্ঠুভাবে শেষ করতে সহায়তা করবে। আপনার ক্লায়েন্টকে সবসময় এটা বুঝাতে চেষ্টা করবেন যে আপনি তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছেন। এই কাজটি করার জন্য প্রথমে আপনি আপনার মোবাইল ফোনটি দূরে সরিয়ে রাখুন। আপনার ল্যাপটপটি বন্ধ করুন। আপনার ক্লায়েন্টের চোখের দিকে তাকান এবং তার কথা মন দিয়ে শুনুন।
তিনি কথা বলার সময় আপনি কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবেন না। তার কথা শেষ হওয়ার পর সহজভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেন। কোন বিষয় ভালভাবে বোঝার জন্য তাকে একাধিকবার প্রশ্ন করুন। আপনি চাইলে আপনার হাতে কাগজ কলমও রাখতে পারেন। তার কথার মাঝে যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থাকে সেগুলো নোট করতে পারেন। এই বিষয়টি আপনার ক্লায়েন্টকে বুঝতে সহায়তা করবে যে আপনি তার কাজ সম্পর্কে আরো বেশি জানতে চান।
আপনি আপনার ক্লায়েন্টের পরিবারের অন্য সদস্যদের খবরা-খবর জিজ্ঞাসা করতে পারেন। এই ধরনের প্রশ্ন এটা প্রকাশ করবে যে আপনি তার পরিবারের প্রতিও যত্নশীল। পুরো বৈঠক জুড়ে আপনার কান খোলা রাখুন কেননা আপনি জানেন না কখন তার ব্যক্তিগত কোনো তথ্য তার মুখ ফসকে বেরিয়ে যাবে। আপনি সেই তথ্যটি মনে রাখুন এবং সুযোগ বুঝে সেই বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করুন।
৩. কোনো বিষয় শেয়ার করতে আগ্রহী হন
দেখুন, এই বিষয়টি একটি দ্বিমুখী রাস্তার মতন। আপনি যদি আপনার ব্যক্তিগত জীবনের কোনো কথা তার সাথে ভাগাভাগি না করেন তবে সম্ভবত আপনার ক্লায়েন্টও চাইবে না তার ব্যক্তিগত জীবনের কোনো কথা আপনার কাছে উন্মোচন করতে। আপনাকে অবশ্যই কিছু না কিছু তার সাথে শেয়ার করতে হবে।
আপনাকে এটা বলা হচ্ছে না যে তার কাছে আপনাকে আপনার জীবনের লজ্জাজনক কোন ঘটনা বা খারাপ কোন কাজের কথা অথবা কোন অপরাধের কথা শেয়ার করতে হবে। এগুলো ভাগাভাগি করার জন্য অবশ্যই আপনার পরিবার কিংবা কাছের বন্ধুরা আছে। আপনি তার সাথে আপনার পরিবার নিয়ে কথা বলতে পারেন।
তাছাড়া আপনি কি খেতে ভালোবাসেন, কোন জায়গায় ঘুরতে আপনার ভাল লাগে, আপনার কোন বইটি সবচেয়ে প্রিয়, ভবিষ্যতে আপনার কি করার ইচ্ছা আছে, কোন ধরনের মুভি দেখতে আপনার ভালো লাগে, কোন গানগুলো আপনার সবচেয়ে বেশি প্রিয় এই ধরনের বিষয়গুলো আপনার ক্লায়েন্টের সাথে শেয়ার করতে পারেন।
৪. রাগান্বিত হবেন না
আপনার যদি হুট করেই রেগে যাওয়ার বদঅভ্যাস থাকে তাহলে আজই তা পরিত্যাগ করুন। কেননা এই বিষয়টি আপনার এবং আপনার ক্লায়েন্টের সম্পর্কের মাঝে দেয়াল হয়ে উঠতে পারে। এই একটি কারণের জন্য আপনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সম্পাদনে ব্যর্থ হতে পারেন।
এজন্য কখনো আপনার ক্লায়েন্টের উপর রাগান্বিত হবেন না।কোনো বিষয়ে মতের মিল না হলে তাকে বুঝিয়ে বলুন। আপনি যদি আপনার ক্লায়েন্টের সাথে রাগারাগি করেন তবে ধরে নিন আপনি তার সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে বেশ কয়েক ধাপ পিছিয়ে গেলেন।
এই কাজগুলো করার লক্ষ্য হচ্ছে আপনার ক্লায়েন্টের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি করা। একান্ত কাছের কোনো বন্ধু হয়ে ওঠা এই কাজগুলোর লক্ষ্য নয়। তবে আপনি যদি তার কাছের কোনো বন্ধুতে রূপান্তরিত হয়েই যান তবে সেটাকে সাদরে গ্রহণ করুন। এভাবে আপনি আপনার ক্লায়েন্টের সাথে সম্পর্কের ভিত আরও শক্তিশালী করে তুলুন এবং একসাথে সফল হন। সেই সাথে সব সময় বন্ধুত্বের সুসম্পর্কটাও উপভোগ করতে থাকুন।