জীবনে সবাই সুখী ও সফল হতে চায়। সফলতা বলতে আমরা বুঝি ভালো ফ্ল্যাট, সুন্দর বাড়ি, দামী গাড়ি, আর্থিক নিশ্চয়তা সর্বোপরি একটি সুন্দর ও গোছানো জীবন যাপনের অধিকারী হওয়া। সফলতা শব্দটি মুখে যতো সহজে উচ্চারণ করা যায় ততো সহজে বাস্তব জীবনে প্রতীয়মান করা যায় না। মুখে বলার চেয়ে করাটা খুব কঠিন। সফলতা বয়সের ভারে বাধা নয়। আপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, যেখানেই বসবাস করেন না কেন আপনার প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তিই আপনাকে সফল করতে পারে। প্রতিটি মানুষের সফলতার ক্ষেত্র আবার ভিন্ন। চাইলে যেকোন পেশা থেকেই সর্বোচ্চ সফল হওয়া যায়।
জীবনে সফল হতে হলে সফল মানুষের পথ অনুসরণ করতে হবে। অদম্য প্রচেষ্টা নিয়ে সামনের পথে এগুতে হবে। চলুন জেনে আসা যাক সফল মানুষদের সফলতার মূলসূত্র কী ছিল।
১। আপনি সফল, তা মনের গভীরে ফুটিয়ে তুলুন
সফলতার একটি সূত্র হচ্ছে আপনি নিজেকে প্রথম থেকেই সফল ভাবুন। আপনি নিজেকে যে অবস্থানে দেখতে চান, জীবনে যা কিছু পেতে চান তার চিত্র মনের গভীরে ভালো করে ফুটিয়ে তুলুন। আপনার কল্পনার জগতে আপনি যা কিছু ভাববেন তা বাস্তবে আপনার হাতে ধরা দিতে বাধ্য।
আইনস্টাইন বলেছিলেন, “Imagination is more important than knowledge” অর্থাৎ কল্পনা জ্ঞানের চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ। আপনার কল্পনার জগত যত রুচিশীলভাবে সাজানো হবে আপনার সফলতা তত তাড়াতাড়ি আপনাকে ধরা দিবে। উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, একজন ইঞ্জিনিয়ার যখন একটি ব্রিজ বা সেতু বা বাড়ি নির্মাণ করেন তার আগেই পরিকল্পনা করে রাখেন তারপর উক্ত কাজে হাত দেন। পূর্ব পরিকল্পনা থাকলে কাজটা অধিক সুন্দর ও আকর্ষণীয় হবে। কোন প্রকার পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়া কাজ করলে কাজে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা ৯৮%।
তাই বলা যায় কল্পনা করুণ, সুন্দর মানসিকতা গড়ুন, এবং ইতিবাচক থাকুন। এ তিনটি কাজ সফলতার পথ সহজ করে দেয়।
২। জীবনের উদ্দেশ্য এবং গোল সেট করুন
প্রথমেই খুঁজে বের করুন আপনি কোন কাজ করতে ভালবাসেন এবং কোন কাজ আপনাকে সন্তুষ্টি এনে দেয়। যে কাজ আপনাকে সন্তুষ্টি এনে দেয় সে কাজে আপনি সবচেয়ে বেশি সফল হবেন। অন্যকে অনুকরণ না করে নিজের মতো হোন। আপনি ছবি আঁকায় ভালো হলে ছবি আঁকুন, নাচ ভালো জানলে নাচুন এবং গাইতে জানলে গানকে নিয়েই স্বপ্ন দেখুন। উদ্যোক্তা হতে চাইলে উদ্যোক্তা হোন এবং ব্যবসা করতে চাইলে ব্যবসা করুন। আপনি যদি সিদ্ধান্ত নিতে অপ্রস্তুত থাকেন তাহলে একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি যে উক্ত বিষয়ে সফল হয়েছে তার কাছ থেকে পরামর্শ নয়ে কাজ শুরু করতে পারেন।
আপনি নিজের ভালোবাসার কাজকে বাছাই করতে না জানলে সফলতা আপনার হাতে ধরা দিবে না। প্রত্যেকটি মানুষের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকে ভিন্ন। তাই নিজের সঠিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করুন।
৩। কৌতূহলী হোন
প্রতিটি সফল ব্যক্তির অদম্য জানার ইচ্ছা বা কৌতূহল থাকে। যদি তাঁরা কোন প্রশ্নের উত্তর না জানে তাহলে সেই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য বার বার চেষ্টা করে যায়। এবং অবশেষে উত্তরটি বের করে তবেই ক্ষান্ত হয়। সফল হওয়ার জন্য কোতূহলী হতে হবে, জানার আগ্রহ থাকতে হবে, পরিবেশকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
৪। সফল ব্যক্তিদের সান্নিধ্যে থাকুন
আপনার কাছে যারা সফল তাদের সান্নিধ্যে থাকুন। সফল ব্যক্তিদের অনুসরণ করুন। পৃথিবীতে যারা ধনী, সুপরিচিত এবং সফল তাঁদের অনুসরণ করুন, তাঁদের লেখা পড়ুন এবং বক্তব্য শুনুন। ব্যর্থ ব্যক্তিদের থেকে দশহাত দূরে থাকুন কারণ ব্যর্থ ব্যক্তির মুখ থেকে আট দশটা হতাশার বাণী শোনার চেয়ে সফল ব্যক্তির একটি কথা শোনাও অধিক উপকারী।
৫। প্রচুর জ্ঞান অর্জন করুন
সফলতা অর্জনের জন্য পছন্দের কাজ সম্পর্কে প্রচুর পড়াশুনা করুন, বেশি বেশি শুনুন, বুঝুন, শিখুন এবং পুনরাবৃত্তি করুন। মানুষ অতি চমৎকার প্রাণী যার বুদ্ধিমত্তা আছে এবং সেই বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে জীবনে যা কিছু প্রয়োজন সবকিছু অর্জন করতে পারে। আপনার জানার বা জ্ঞান অর্জনের দরজাটিকে কখনো বন্ধ করবেন না। কারণ আপনি নিজেও জানবেন না জ্ঞান আপনাকে কত দ্রূত সফলতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে পারে।
৬। উদ্যমী ও একরোখা হোন
সফলতার জন্য উদ্যমী ও একরোখা হোন। কখনো ঝুঁকি ও অনিশ্চিয়তা নিয়ে চিন্তা করবেন না। সমস্যা নিয়ে চিন্তা নয় বরং এর সমাধানের দিকে ফোকাস করুন। কাজে ব্যর্থতা থাকবেই তাই বলে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া চলবে না। সামনের পথে এগুতে হবে সাহসের সঙ্গে।
৭। স্বপ্ন দেখুন
সফল হওয়ার পেছনে যে বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তা হলো স্বপ্ন। স্বপ্নই মানুষকে লক্ষ্যের দিকে ধাবিত করে। ব্রায়ান ডায়সন বলেন, “স্বপ্ন ছাড়া জীবন অর্থহীন”।
এপিজে আবদুল কালামের মতে, “স্বপ্ন সেটা নয় যেটা মানুষ, ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখে;
স্বপ্ন সেটাই যেটা পূরণের প্রত্যাশা, মানুষকে ঘুমাতে দেয় না”
ওয়াল্টার ডেসনের মতে, “if you can dream it, you can do it” অর্থাৎ তুমি যদি স্বপ্ন দেখতে পারো তাহলে তুমি তা করতে পারো।
বিখ্যাত ব্যক্তিদের মতবাদ থেকে বোঝা যায় স্বপ্ন ভেতর থেকে তাড়না দেয়, সামনের পথে অগ্রসর হওয়ার প্রেরণা যোগায়। তাই স্বপ্ন দেখুন বেশি করে।
৮। একশন বা কাজে দৃঢ়প্রত্যয়ী হোন
জীবন যেখানে আছে সেখানে কাজ আছে। সফলতার জন্য প্রয়োজন চিন্তা, পরিকল্পনা ও কাজ। আর কাজ হল সফলতার সাথে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। কাজের মধ্যে ধারাবাহিকতা জরুরী। তাহলেই খুব দ্রুত সফলতার দিগন্ত উন্মোচিত হবে। উইলিয়াম ল্যাঙলেট বলেছেন, “যেখানে পরিশ্রম নেই সেখানে সফলতা নেই”।
সফলতা রাতারাতি ধরা দেয় না। সফলতা অর্জনের জন্য প্রয়োজন প্রচেষ্টা, ঝুঁকি নেয়ার মানসিকতা, ইতিবাচক চিন্তা করা এবং যেকোন অনিশ্চিয়তা স্বত্বেও কাজের আগ্রহ বাড়িয়ে তোলা। ঝড়, বাধা, বিপত্তি অতিক্রম করেই যুগে যুগে বহু গুণীজন সফল হয়েছেন এবং আপনাকেও সমস্ত প্রতিকূলতা সহ্য করে সফলতার পথে অগ্রসর হতে হবে।