মানুষের বিভিন্ন শারীরিক গতিবিধি প্রমাণ করে তারা কি ভাবছে বা তাদের ব্যক্তিত্ব কেমন। সেইসব শারীরিক গতিবিধি সম্পর্কে জানা থাকলে আপনিও জেনে নিতে পারবেন তাদের মানসিক অবস্থান সম্পর্কে। UCLA এর একটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে মাত্র ৭ শতাংশ যোগাযোগ আমরা আমাদের কথার মাধ্যমে উপস্থাপন করি, বাকি ৩৮ শতাংশ গলায় উৎপন্ন শব্দের মাধ্যমে আর বাকি ৫৫ শতাংশ যোগাযোগ আমরা আমাদের শারীরিক গতিবিধির মাধ্যমেই করে থাকি। যখন আপনি কঠোর পরিশ্রম করছেন এবং আপনার লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য আপনি অটুট তখন সাফল্য আপনার পথে আসবেই। Talent Smart এর একটি গবেষণায় প্রায় এক মিলিয়ন মানুষের উপর নিরীক্ষা করে লক্ষ্য করেছেন, উচ্চ স্তরের সফল মানুষের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষই বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে থাকেন এবং এরা বেশ দক্ষতার সাথেই না বলা কথাগুলো শারীরিক গতিবিধির মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকেন।
১. আড়াআড়ি ভাবে হাত, পা রাখা চিন্তা ধারা প্রতিরোধের চেষ্টা প্রকাশ করে
আড়াআড়ি ভাবে বা রেখিত ভাবে হাত পা রেখে বসা প্রকাশ করে সামনে বসা মানুষটি মনের সকল ভাবনা প্রকাশ করছে না। Gerard I. Nierenberg এবং Henry H. Calero এর প্রকাশিত গবেষণায় ২০০০ মানুষের সাথে আলোচনা এবং পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যারা আড়াআড়ি ভাবে বসে থাকে তারা সাধারণত শারীরিক এবং মানসিক ভাবে সামনে উপস্থিত ব্যক্তিটির থেকে আসলে দূরে অবস্থান করেন। তারা অনেক মনের ভাব সামনে উপস্থিত ব্যক্তিটির সামনে প্রকাশ করেন না।
২. সত্য এবং বাস্তব হাসি চোখকে কুঞ্চিত করে
যখন হাসির ব্যাপার আসে তখন আপনার মুখ মিথ্যা বললেও চোখ কখনোই মিথ্যা বলবে না। প্রকৃত হাসি চোখ পর্যন্ত পৌঁছায়, চোখের ত্বককে করে কুঞ্চিত করে। সাধারণত বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানুষ তখন হাসে যখন তারা নিজেদের ভেতরের ভাবনা অপরের থেকে লুকাতে চায়। আর তাই এরপর কেউ যখন হাসবে সেই হাসি প্রকৃত কিনা তা জানতে তাদের চোখের কোণায় ত্বক কুঞ্চিত হয়েছে কিনা লক্ষ্য করতে পারেন।
৩. অপরের শারীরিক গতিবিধি নকল করা ভালো লক্ষণ
আপনি কি এমন কাউকে দেখেছেন যাদের সামনে আপনি যখন হাত পা যেভাবে রাখছেন অপর ব্যক্তিটিও তাই অনুকরণ করছে? অথবা আপনি যেভাবে মাথা নাড়ছেন কথোপকথন চলাকালীন সময়ে অপর ব্যক্তিটিও একইভাবে মাথা নাড়ছে? এটি বেশ ভালো একটি লক্ষণ। অপরের শারীরিক গতিবিধি নকল করার ব্যাপারটি আমরা সাধারণত অসচেতন ভাবেই করে থাকি যখন আমরা অপর পাশের ব্যক্তিটির সাথে একটি ভালো সম্পর্ক অনুভব করি। এটির অর্থ দাঁড়ায় অপর পাশের ব্যক্তিটির সাথে আপনার কথোপকথন বেশ ভালোভাবেই এগোচ্ছে। এটি বেশি কার্যকরী যখন আপনি কারো সাথে কোন আপসের জন্য কথা বলছেন, যা প্রমাণ করে আপনি যা ভাবছেন অপর পাশের ব্যক্তিটিও আপনার ভাবনার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করছে।
৪. অঙ্গভঙ্গি আপনার সুস্পষ্ট ধারণা দেয়
আপনি কি কখনো খেয়াল করেছেন কেউ একজন কোথাও কোনো কক্ষ থেকে বের হয়ে গেলো আর সাথে সাথে আপনার মনে হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে হয়তো এই ব্যক্তি আছেন। যে ব্যাপারটি আপনার কাছে আকস্মিক মনে হচ্ছে সে ব্যাপারটি আসলে তা না। ভালোভাবে লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবেন ব্যক্তিটির চালচলন প্রকাশ করেছে সে আসলে কোন দায়িত্বের জন্য নিয়োজিত। কাজেই আপনার ব্যক্তিত্ব প্রকাশের জন্য আপনার চালচলন কিন্তু অজান্তেই বিশাল ভূমিকা রাখছে।
৫. চোখ মিথ্যা বলে
ছোট বেলা থেকে আমরা প্রায়ই শুনে এসেছি চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলার বিষয়টি। আর আমাদের বাবা মা সবসময়ই ভাবেন চোখের দিকে তাকিয়ে মিথ্যা কথা বলা অসম্ভব। কিন্তু অনেকেই তার মিথ্যা বিষয়টি গোপন রাখার জন্য চোখের সাথে সরাসরি যোগাযাগের বিষয়টি মাথায় রাখেন। একটি গবেষণায় জানা গিয়েছে, আমেরিকানরা সাত থেকে দশ সেকেন্ড সরাসরি চোখের দিকে টানা তাকিয়ে কথা বলতে পারেন। এছাড়া কোন ব্যক্তি যদি টানা বেশিক্ষণ চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলে তাহলে হতে পারে সে আপনার সাথে মিথ্যে বলছে। সবসময়ই ব্যাপারটি মিলবে তা নয়, তবে একটানা চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলার অভ্যাসটি সাধারণত আমাদের মাঝে নেই।
৬. ভ্রু কুঁচকানো
ভ্রু কুঁচকানো বিষয়টি অনেকগুলো আবেগ প্রকাশে সহায়ক। সাধারণত তিনটি বিষয়ে আমাদের ভ্রু কুঁচকে যায়- কোন কিছু নিয়ে ভয় পেলে, কোন বিষয় নিয়ে চিন্তা করলে অথবা কোন কিছু নিয়ে বিস্মিত হলে। আপনি কারো সাথে কথা বলছেন আর সেই ব্যক্তিটির যদি ভ্রু কুঞ্চিত হয় হঠাৎ তাহলে বুঝতে হবে আপনার কোন একটি বিষয় ব্যক্তিটির নিকট অন্য কোন ভাবনার সৃষ্টি করেছে।
৭. বার বার মাথা নাড়ানো
আপনি কিছু বলছেন আর সেই ব্যক্তিটির অতিরিক্ত মাথা নেড়ে সম্মতি জানাচ্ছে, ব্যাপারটি প্রমাণ করে ব্যক্তিটি আপনার কথা বা দেওয়া দায়িত্ব নিয়ে নিজের যোগ্যতার উপর সন্দিহান। আর তাই সেই নিজের অজান্তেই অতিরিক্ত মাথা নেড়ে সম্মতি প্রকাশ করছে।
৮. চোয়াল নিচু করে থাকা
যখন আমরা অনেক বেশি কোন বিষয় নিয়ে চিন্তিত থাকি তখন নিজের অজান্তেই অনেকটা সময় আমরা চোয়াল নিচের দিকে ঝুকে বসে থাকি। এই বিষয়টি প্রমাণ করে আমরা হয়তো কোন বিষয় নিয়ে হতাশায় ভুগছি।
আপনি হয়তো অন্য কারো ভাবনা সরাসরি অনুধাবন করতে পারবেন তবে তাদের শারীরিক গতিবিধি ওই ব্যক্তিটির ভাবনার অনেক কিছুই প্রকাশ করবে যা সে হয়তো বাক্য বিনিময়ের মাধ্যমেও প্রকাশ করবে না।