মাঝে মাঝে আমাদের মনে হয় জীবনের কোন অর্থ নেই। কেন পৃথিবীতে আসলাম আর কী করছি ইত্যাদি নিয়ে ভাবনা ঘুরপাক খেতে থাকে আমাদের মনে। এই বিভিন্ন ভাবনা নিয়ে আমাদের মনে অসন্তুষ্টি কাজ করে। মনে হয়, আমাদের অর্জনের খাতা একেবারে শুণ্য। কোনো কিছুতেই শান্তি পাই না। এত চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাওয়া স্বাভাবিক। তবে চিন্তাকে দীর্ঘস্থায়ী রুপ দেওয়া যাবে না। দীর্ঘক্ষণ এইসব হতাশার চালচিত্র নিয়ে চিন্তা করলে আপনি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়বেন। তাই প্রয়োজন কিছু বিষয় সম্পর্কে জানা। কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নিয়ে ভাবা প্রয়োজন। জীবনকে নিরর্থক মনে হলে শুরু থেকে এই পর্যন্ত সময় ও জীবনের প্রাপ্তিকে আরেকবার বিবেচনা করুন। আর অবশ্যই মনে রাখবেন নিম্নোক্ত কথাগুলো।
আপনি নিশ্চয়ই ভবিষ্যতকে নিয়ন্ত্রণ করতে জানেন না
আপনি মানুষ। আর মানুষ কখনো জানতে পারে না ভবিষ্যতে কী হতে চলছে বা কী ঘটবে। ভবিষ্যত অনিশ্চিত। আপনার জন্য ভালো কিছু অপেক্ষা করতে পারে আবার খারাপ কিছুও অপেক্ষা করতে পারে। জীবনে অনেক উত্থান-পতন থাকে। অনেক ধাপ অতিক্রম করতে হয় এক জীবনে। প্রতিটি ধাপ যে মসৃণ হবে তা ভাবা নিতান্তই মূর্খতা।
হতে পারে আপনি এখন অনলাইনে জুয়েলারি দোকান দিয়ে জুয়েলারি বিক্রি করছেন। আগামী পাঁচ বছর পর কি হতে যাচ্ছে আপনি জানেন না। পাঁচ বছর পর আপনি একজন ভালো জুয়েলারি ডিজাইনারও হতে পারেন। কিংবা তার চেয়ে ভালো কিছু করতে পারেন। তাই আজ আপনি জুয়েলারি বিক্রি করেন বলে অসন্তুষ্টিতে ভোগা, মনঃক্ষুণ্ণ হওয়া থেকে বিরত থাকুন। ভবিষ্যতের সফলতার স্বপ্ন দেখুন। আর পূর্ণ উদ্যমে কাজ করুন। সফলতা আসবেই।
সকল অস্বস্তিকর বিষয় থেকে আরামদায়কতা খুঁজে নিন
মাঝে মাঝে জীবনে কিছু অস্বস্তিকর বিষয় চলে আসে। অনেক টাকা থাকে না বলে সেসব বিরক্তিকর জিনিসকে পরিবর্তন করা যায় না। পরিপূর্ণ সুবিধাসহ ভালো মানের বাসায় থাকা নিশ্চিত করা যায় না। টাকার অভাবে জীবনের সুখ ও স্বাচ্ছ্যন্দের জন্য যা যা প্রয়োজন তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। না। তাই বলে কি আমরা জীবন থেকে পালিয়ে যাবো? বা হতাশায় ডুবে মূল্যবান সময়কে নষ্ট করবেন?
তা ঠিক নয়। বরং নিজের পরিস্থিতি ও আর্থিক অবস্থার কথা চিন্তা করে এই পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিন। ভবিষ্যতে যেন সুখে স্বাচ্ছ্যন্দে থাকতে পারেন তার জন্য ভালো কাজ করুন। আজ অর্থকষ্ট আছে বলে কালও অর্থকষ্ট থাকবে তা ভাবা ঠিক না। আগামী দিনগুলোতে আপনার জন্য শুভ কিছু নিশ্চয়ই অপেক্ষা করবে।
জীবন অনিশ্চিত
জীবন সর্বদা অনিশ্চিত তা মাথায় রাখুন। আজ আপনার অনেক ধন সম্পদ থাকলে কাল নাও থাকতে পারে। কোনো এক দূর্ঘটনায় সব নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে। আবার আপনার অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে পারে, সফলতা ধরা দিতে পারে।
জীবন নিয়ে অযথা চিন্তা না করে কাজ নিয়ে চিন্তা করুন। সফলতার জন্য পরিশ্রম করুন এবং ভালো কাজ করুন। কথায় আছে, “পরিশ্রম ধন আনে, পুণ্য আনে সুখ”।
বিক্ষিপ্ত মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসুন এবং অলসতাকে বিদায় দিন
নিশ্চয়ই আপনি শিশু নন। জীবনের অনেকগুলো বছর পার করে আজকের এই পর্যায়ে এসেছেন। কিন্তু অর্জন বলতে কিছুই নেই আপনার ঝুলিতে। এর কারণ কী? নিশ্চয়ই আপনি ফেসবুক কিংবা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি সময় নষ্ট করেন।
নিশ্চয়ই আপনি অনেক অলস এবং বিক্ষিপ্তভাবে কাজ করেন। তবে আর নয়। এতদিনের বিক্ষিপ্ততা, অলসতাকে আজই বিদায় দিন। যেকোনো কাজে পূর্ণ মনোনিবেশ করুন। সামনের পথে এগিয়ে যান। বিভিন্ন দিকে ছুটোছুটি না করে যেকোনো একদিকে পূর্ণ মনোযোগ দিলে আজ হোক কিংবা কাল, সফলতা আসবেই।
নিজেকে প্রশ্ন করুন
নিজের জন্য সময় বের করুন। নিজেকে নিজে প্রশ্ন করুন। নিজের সম্পর্কে জানুন। প্রয়োজনে মেডিটেশন করুন, জ্ঞান অর্জন করুন। শরীরচর্চায় আগ্রহী হন। জীবনের সকল ইচ্ছা ও স্বপ্নের কথাগুলো ডায়েরিতে লিখে ফেলতে পারেন। বড় বড় স্বপ্ন দেখতে থাকুন। কারণ স্বপ্ন মানুষকে বেঁচে থাকার প্রেরণা যোগায়। আর কল্পনা করুন আপনি সফল এবং আপনি জীবনে যা চান সবকিছু আপনার জীবনে চলে এসেছে।
স্বেচ্ছাসেবক
মাঝে মাঝে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে পারেন। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করলে অনেক সময় সুখ পাওয়া যায়। অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করলে আপনি হয়তো টাকা পাবেন না কিন্তু অর্জিত অভিজ্ঞতা জীবনের অন্য কাজে লাগাতে পারবেন।
জীবনের চলার জন্য অনেক অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। যার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে বেশি তথ্য থাকে সে জীবনে কখনো হোঁচট খায় না। আর হোঁচট খেলেও উঠে দাঁড়াতে পারে।
টাকা জমান
আজ টাকা কম বলে আপনি হয়ত ভালো ব্যবসা শুরু করতে পারছেন না। সুখ ও স্বাচ্ছ্যন্দের জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপকরণ কিনতে পারছেন না। তবে তা নিয়ে দুঃখ না করে একটু মিতব্যয়ী হন। স্বল্প আয় থেকে কিছু অংশ জমানো শুরু করুন। ভবিষ্যতের জন্য টাকা জমানো খুব প্রয়োজন।
অল্প অল্প করে জমালে পাঁচ থেকে দশ বছর পর দেখবেন মোটা অংকের টাকা জমে গেছে। তখন যেকোনো ব্যবসা শুরু করতে মূলধন নিয়ে ভাবতে হবেনা। তবে আপনার প্যাশন ও পছন্দের যেকোনো ব্যবসা শুরু করবেন যেন ঝুঁকির সম্ভাবনা না থাকে।
সুযোগের সদ্ব্যবহার
সময় ও সুযোগ সবসময় আসে না। কিন্তু কখনো কখনো সুযোগ দরজায় এসে কড়া নাড়ে। তাই সময় ও সুযোগের স্বদ্যবহার করা খুব জরুরী। সুযোগবুঝে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারলে জীবনে পিছু ফিরে তাকাতে হবে না।