সকাল কারো জন্যই সুখকর নয়, যদি না সকাল সকাল উঠেই অফিস বা ক্লাসের জন্য দৌড়াতে হয়। কিন্তু এই সকালই নির্ধারণ করে সারাদিনটি আপনার কেমন যাবে। তাই আমাদের সবার জন্য সকাল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সকালের শুরুটা তাই এমনভাবে হওয়া উচিত যাতে আপনার মানসিক প্রস্তুতি ভালো থাকে পুরো দিনটি ভালোভাবে কাটানোর জন্য। কিছু দিক মেনে চললে সকালটা হতে পারে বেশ চমৎকার যা আপনার সারাদিনের ঔষধের মতো কাজ করবে।
১. জানালা বা দরজার কিছু অংশ খোলা রাখা
জানালা বা দরজার কিছু অংশ খোলা রেখে ঘুমাতে যাওয়া উচিত যাতে সূর্যের রশ্মি সহজেই ঘরে ঢুকতে পারে। আর সকালের এই উপকারী সূর্য রশ্মি আপনার মস্তিকের মেলাটোনিন উৎপাদনকে দুর্বল করে দেয় এবং এড্রেনালিন উৎপাদনকে বাড়িয়ে দেয় যা আপনার মস্তিষ্ককে সংকেত দেয় যে, এখন ঘুম থেকে উঠতে হবে। এছাড়া রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাবেন যাতে সূর্যের আলো ঘরে ঢুকতেই আপনার ঘুম ভেঙ্গে যায়। এই রুটিন যদি মেনে চলতে পারেন তাহলে সহজেই নির্ভরশীল হতে পারবেন আপনার জৈব ঘড়ির উপর। আপনার এর্লাম ঘড়ি আপনাকে আর তখন আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। এছাড়া সকলে উঠেই অল্প পরিমাণ চিনি খাবেন যাতে সারাদিন স্মৃতিশক্তি মজবুত থাকে।
২. পনেরো মিনিট আগে এলার্ম সেট
নির্দিষ্ট সময়ের পনেরো মিনিট আগে এর্লাম সেট করলে তাড়াহুড়ো করে উঠে কাজে বের হতে হবে না । শুয়েই সংবাদপত্রে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন। এছাড়া, কি পরে বের হবেন, সারাদিন কি করবেন এইসব ছোটখাটো পরিকল্পনা করার জন্য সময় পাবেন। আর এইসময়টুকু আপনার সারাদিনের জন্য মানসিক প্রস্তুতি যা অনেক বেশি প্রয়োজন শারীরিক প্রস্তুতির মতোই। সবাই উঠে পড়ার আগে বিছানায় শুয়ে নিজের সাথে যে সময়টুকু কাটাবেন পুরোদিনে সেই সময়টুকু শুধুই আপনার।
৩. হাত পা প্রসারিত করে ব্যায়াম
প্রতিদিন সকালে অন্তত ১৫ মিনিট ব্যায়াম করুন। সকালে উঠেই ব্যায়াম করলে আপনার শরীরের টিস্যুগুলো অতিরিক্ত অক্সিজেন সাপ্লাই করবে। যা সারাদিন অনেক বেশি শক্তি নিয়ে দিন কাটাতে সাহায্য করবে।
৪. গোসলের সময় চেয়ার ব্যবহার
সকালে বের হবার আগে অবশ্যই গোসল করে নিবেন। আর গোসলের সময় প্লাস্টিকের চেয়ার ব্যবহার করতে পারেন। এরপর বসে পিঠে পানি নিবেন। এটি একপ্রকার পানির ব্যয়াম যা আপনার কর্মশক্তি বাড়াবে এবং আপনাকে অনেক বেশি প্রশান্তি দিবে। এই ব্যায়ামটি কমপক্ষে দুই মিনিট করে করবেন।
৫. প্রেরণাদায়ক উদ্ধৃতি পড়া
প্রতিদিন সকালে একটি করে প্রেরণাদানকারী উদ্ধৃতি পড়বেন। সকাল যখন শুরু করবেন খুব ভালো কিছু উদ্ধৃতি দিয়ে, এই ভাবনাগুলো আপনাকে একটি সুন্দর এবং সুস্থভাবে দিন শুরু করার প্রেরণা জোগাবে।
৬. বড় সিদ্ধান্ত পরিহার করুন
সকালে উঠেই বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে পড়বেন না। এটি আপনার সারাদিনের মানসিক শক্তিকে কমিয়ে দিবে। সকালটা শুরু করুন নিশ্চন্তে। কি পরে বের হবেন, কি নাস্তা করবেন, কোথায় যাবেন- চেষ্টা করবেন এসব আগের রাতেই গুছিয়ে রাখার। যাতে সকালটা শুরু করতে পারেন নির্ভাবনায়।
৭. সন্তানের সাথে কাটান কিছুটা সময়
ছোট বাচ্চা থাকলে সকালে জলদি উঠে বাচ্চার সাথে কিছুটা সময় কাটান। এই সুন্দর মুহুর্তগুলো সারাদিনের টনিক হিসেবে কাজ করবে। হাসিখুশি সুন্দর মুহুর্তগুলো আপনার সারাদিনে মনের উপর একটি স্থায়ী সুন্দর প্রভাব ফেলবে।
৮. কিছু সময় কাটান গান শুনে
প্রতিদিন হালকা শব্দের সংগীত শুনুন অন্তত পাঁচ থেকে দশ মিনিট। গান শোনার এই সময়টুকুতে নিজের অজান্তেই হয়তো সৃজনশীল কোন পরিকল্পনা মাথায় আসতে পারে। কারণ এই সময়টুকু আপনি দিনের শুরুতে শুধুমাত্র নিজেকে নিয়ে ভাবার পেছনে ব্যয় করছেন যা আপনার সারাদিনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে সহায়তা করবে।
৯. চা বা কফির সুগন্ধে শুরু হোক দিন
প্রতিদিন সকাল শুরু হোক এক কাপ কড়া চা বা কফি দিয়ে। স্বাদে এবং সুগন্ধিতে অবশ্যই যেন তা নিখুঁত থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ ভালো চা বা কফির সুগন্ধ আপনার মনকে করবে সতেজ।
১০. দাঁত ব্রাশ করুন অন্তত একমিনিট
সকালের ঝিমানো মনকে সতেজ করার জন্য ব্রাশের চেয়ে উপকারী পন্থা হতে পারে না। প্রতিদিন রাতে প্রায় ৩০০ ব্যাকটেরিয়া আপনার মুখে অবস্থান করে। তাই দাঁত ব্রাশ করার অভ্যাসটি কখনোই তাড়াহুড়ো করে করবেন না। খুব ভালোভাবে সময় নিয়ে দাঁত ব্রাশ করুন প্রতিদিন।
১১. সকালেই দেখে নিন সারাদিনের রুটিন
রুমের এমন একটি জায়গায় রুটিনটা রাখবেন যাতে করে সকালে বের হওয়ার সময়ই দেখে নিতে পারেন সারদিনে আপনার কখন কোথায় কী কী কাজ রয়েছে। দিনের শুরুতে কাজের সূচী দেখে নেওয়ার অভ্যাসটি আপনার কর্মদক্ষতা বাড়াবে।
১২. পানি পান করুন
ঘুম থেকে উঠেই একগ্লাস পানি পান করুন নিয়মিত। পানি পান করার এই অভ্যাসটি আপনার শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখবেন।
১৩. গোসল করে নিবেন অল্প সময়ে
সকালের গোসল যতটা সম্ভব জলদি করে নিবেন। এই অভ্যাসটির জন্য অবশ্য পরিচর্যা প্রয়োজন। অনেকেই গোসলের জন্য অনেকসময় ব্যয় করেন। তবে সকালে বের হবার আগে গোসল যতটা সম্ভব জলদি সেরে নিবেন এতে হাতে কিছু সময় থাকবে, তাড়াহুড়ো করে বের হতে হবে না।
১৪. হাঁটার অভ্যাস
একটি গবেষণায় জানা গিয়েছে, সকালে নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস আপনার এন্ডোরপিনস নামক হরমোনকে সচল করে যা সারাদিনের কর্মদক্ষতা বাড়াবে একই সাথে মনের উপর একটি সুন্দর প্রভাব ফেলবে যা আপনার দিনেকে উৎফুল্লভাবে শুরু করতে সাহায্য করবে।