গ্রামাঞ্চলের অশিক্ষিত মানুষের প্রচলিত একটি বাক্য হচ্ছে — “পড়াশোনা করে কী করবা; দেশে তো চাকরি নাই”। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাক্যটির সত্যতা হয়তো ক্যারিয়ার নিয়ে যারা দুশ্চিন্তায় ভুগছেন তারা খুব ভালো করে উপলব্ধি করতে পারবেন। তবে প্রযুক্তির গতিময়তার এ সময়ে ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশায় ভোগেন, তাহলে আপনি হয়তো প্রযুক্তির সম্ভাবনাকে এখনো উপলব্ধি করতে পারেননি।
বিগত কয়েক বছরে প্রযু্ক্তির আগ্রগতি বলে বোঝানোর মতো না। কারণ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযুক্তি এখন ওতপ্রতভাবে জড়িত। আর এই প্রযু্ক্তির উন্নতি কিংবা আগ্রগতি সবকিছুর মূলেই রয়েছে প্রোগ্রামিং। প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক, প্রোগ্রামিং কী?
প্রোগ্রামিংকে খুব সহজভাবে বললে, এটি একটি ভাষা যার মাধ্যমে কম্পিউটারকে দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়। ঠিক যেভাবে আমরা তথা মানুষেরা নিজস্ব মাতৃভাষার মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করি। জেনে অবাক হবেন, কম্পিউটার কিংবা আপনার হাতে থাকা ছোট স্মার্ট ফোনটির প্রত্যেকটি ক্লিকের পিছনে যে অসাধারণ বস্তুটি কাজ করে সেটিই প্রোগ্রামিং। অন্যভাবে বললে প্রযুক্তির প্রাণ এই প্রোগ্রামিং। তাই আসুন প্রযুক্তির অপার সম্বাবনাময় এই প্রোগ্রামিংকে ভালোবাসলে আপনার ক্যারিয়ার কতটা সুনিশ্চিত হতে পারে, তা কিছু বাস্তব উদাহরণের মাধ্যমে জেনে নেই।
উদ্যোক্তা হওয়ার সম্ভাবনা
প্রথমেই কিছু অনুপ্রেরণা দিয়ে শুরু করি। বর্তমান পৃথিবীর শীর্ষ ধনী যেমন বিল গেটস, মার্ক জাকারবার্গ, জেফ বেজোস এই মানুষগুলোর শীর্ষ হওয়ার পিছনে প্রধান এবং অন্যতম হাতিয়ার কিন্তু প্রযুক্তি। এসব মহানায়ক প্রযুক্তির উপযু্ক্ত সৎ ব্যবহারের মাধ্যমেই আজ পৃথিবীর সেরা। এবার চলুন বিষয়টিকে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করি, যেভাবে আপনি প্রযুক্তি তথা প্রোগ্রামিং জানার মাধ্যমে উদ্যোক্তা হতে পারবেন খুব সহজেই। মূলত উদ্যোক্তারা কোনো নির্দিষ্ট সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে নিজে সাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি দেশ ও জাতির উন্নতিতে বড় রকমের ভূমিকা পালন করেন।
আর বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে সমস্যা খুবই জনপ্রিয় একটি জিনিস। সমস্যাকে ইচ্ছেকরে জনপ্রিয় বলার কারণ হচ্ছে, একটি স্টার্টআপ বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য সমস্যা এবং জনবল দুটিই অত্যান্ত প্রয়োজনীয়। লক্ষ্য করুন, আমরা কিন্তু দুটিতেই সেরা। এছাড়াও প্রযুক্তিতে উদ্যোক্তা হতে গেলে আপনার খুব বেশি পুঁজির ও প্রয়োজন হচ্ছে না, শুধুমাত্র একটি কম্পিউটার, সুদূরপ্রসারী গঠনমূলক চিন্তাশক্তি এবং প্রযুক্তিগতভাবে নির্দিষ্ট বিষয়ে কয়েকজন দক্ষ মানুষ। এই কয়েকটির সংমিশ্রণে যেকেউ উদ্যোক্তা হতে পারেন খুব সহজেই।
শতভাগ চাকরির নিশ্চয়তা
পৃথিবীর শতভাগ চাকরির নিশ্চয়তা কোনো সাবজেক্ট বা বিষয়ের উপর যদি থাকে তাহলে সেটা প্রযুক্তি তথা প্রোগ্রামিং। এজন্যই প্রযুক্তি প্রেমিদের খুব অনুপ্রেরণাদায়ক প্রচলিত একটি বাক্যে হলো – “চাকরি আমি খুঁজব না চাকরি আমাকে খুঁজবে”। বাক্যটিকে আপাত দৃষ্টিতে খুবই ছেলেখেলা কিংবা দুর্বল মনে হলেও এর বাস্তবতা সত্যিই অবিশ্বাস্য।
পূর্বেই বলেছি প্রযু্ক্তির মানেই প্রোগ্রামিং। আর এই প্রযুক্তির উন্নত ব্যবস্থা আমাদের জীবনকে করছে সহজ থেকে সহজতর। কিন্তু একবার ভেবে দেখেছেন কি? প্রযুক্তির এই উন্নত ব্যবস্থাগুলো নিয়ন্ত্রণে কতো দক্ষ মানুষের প্রয়োজন। এজন্যই গুগল, ফেসবুক, মাইক্রোসফটের মতো সর্ববৃহত প্রযুক্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে দক্ষ এবং মেধাবীদের সুযোগ দেন প্রযুক্তিতে সুনিশ্চিত ক্যারিয়ার গড়তে।
আশার বিষয়, বর্তমানে বাংলাদেশে থেকে প্রতিবছর কেউ না কেউ সুযোগ পাচ্ছেন গুগলে চাকরি করার। যা নিঃসন্দহে আমাদের জন্য একটি গর্বের বিষয়। এছাড়াও প্রোগ্রামিং জানার মাধ্যোমে আপনি ঘড়ে বসেই দেশে কিংবা বিদেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারেন কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই। ঘড়ে বসে কাজ করা মতো মজাদার এই ক্ষেত্রটাকে প্রফেশনালি রিমুট জব বলা হয়। এজন্য শুধু প্রয়োজন নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষ এবং উচ্চমানের শক্তিশালী ইন্টারনেট সংযোগ। এখন পুরো বিষয়টিকে আপনি এভাবে চিন্তা করতে পারেন, যতবেশি উন্নত প্রযুক্তি ততবেশি দক্ষ প্রোগ্রামিং জানা মানুষের প্রয়োজন। তাই বেকারত্ব নামক কলঙ্ক থেকে বের হয়ে আসতে, আজই শুরু করে দিন প্রোগ্রামিং।
সৃজনশীলতা প্রয়োগের অপার সুযোগ
একটি দেশে যতবেশি সৃজনশীল সুনাগরিক তৈরী হবে সে দেশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে অর্থনীতিতে তত বেশি উন্নত হবে। এর বাস্তব উদাহরণ জনসংখ্যার সর্ববৃহত দেশ চীন। একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখবেন, আমাদের নিত্য ব্যবহৃত প্রায় সবকিছুই চীনের তৈরী। অপরদিকে প্রযুক্তির পরিভাষায় সৃজনশীলতা বলতে আমরা বুঝি, প্রযুক্তি তথা প্রোগ্রামিংকে কাজে লাগিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টি করা। লক্ষ্য করুন, আপনার হাতে থাকা প্রাণের স্মার্ট ফোনটির অ্যাপস স্টোরে প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে অসাধারণ প্রযুক্তিক বৈশিষ্ট্যে ভরপুর চমৎকার সব অ্যাপ্লিকেশন বা সফটওয়্যার।
যা কোনো না কোনোভাবে আপনার দৈনন্দিন প্রোডাকটিভিটিকে উন্নত করছে। আর এই অসাধারণ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সফটওয়্যারগুলো বানাচ্ছে আপনার আমার মতো দক্ষ প্রোগ্রামিং জানা মানুষ। তাই এখনেই উপযুক্ত সময় আপনার মনের গভিরে আত্মগোপনে থাকা প্রাযুক্তিক সৃজনশীলতার তাৎক্ষণিক প্রয়োগ ঘটানোর।
দ্রুত আর্থিক উন্নতি
হোয়াটস আপ নামক ম্যাসেঞ্জার অ্যাপ্লিকেশনটির সাথে আমরা প্রায় সবাই পরিচিত। কিন্তু আপনারা কি জানেন? এ সফটওয়্যারটির পর্দার আড়ালে লুকিয়ে আছে অসাধারণ অনুপ্রেরণা মূলক এক গল্প। কে জানে! হয়তো এটি আপনার প্রোগ্রামিংকে ভালোবাসার অনুপ্রেরণা হলেও হতে পারে। যাই হোক, ২০০৯ সালের জানুয়ারীতে তৈরী হওয়া এই ম্যাসেঞ্জার অ্যাপ্লিকেশনটি ৫ বছরের মধ্যে ফেসবুকের কাছে বিক্রি হয় প্রায় ১৯ বিলিয়ন ডলারে।
যার পরিমাণ বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। অথচ স্বাধীনতার পর থেকে গত ৪৭ বছরে বাংলাদেশ সরকারের রিজার্ভ টাকার পরিমাণ প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার। এবার টাকার এই সংখ্যার সাথে নিজের নিজের আর্থিক উন্নতিটা মিলিয়ে নিন প্রোগ্রামিং শেখার মাধ্যেমে।
চিন্তার বাইরে
মানুষ হিসেবে পরিপূর্ণভাবে বাঁচতে হলে জানতে হবে আর জানতে হলে প্রচুর পড়তে হবে। এজন্যই ক্যারিয়ার হিসাবে আপনি প্রযুক্তিকে বেছে নিন বা অন্য কোনো বিষয় বেছে নিন, পড়াশোনার কোনো বিকল্প নেই। মূলত পড়াশোনার মাধ্যমেই আপনি পৌঁছে যাবেন তথাকথিত সফল ক্যারিয়ারের নির্ধারিত গন্তব্যে। তবে আধুনিক যুগের এ সময়ে আপনার পারিপার্শ্বিকের সাপেক্ষে ক্যারিয়ারের সঠিক সিন্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই গঠনমূলক চিন্তাশক্তির প্রযুক্তিপ্রেমী সকলের জন্য সুনিশ্চিত ক্যারিয়ার হিসাবে প্রোগ্রামিং নিঃসন্দেহে অসাধারণ একটি বিষয়।