যে ৫টি আচরণ এই মুহূর্তেই আপনার ত্যাগ করা উচিৎ

সাফল্যের তন্ত্র মন্ত্র জানা হল, সফল মানুষের গল্পও শোনা হল, কিন্তু একবারও ভাবা হল না অল্প কিছু সফল মানুষ বাদে চারদিকে মিলিয়ন মিলিয়ন ব্যর্থ মানুষ কেন! আবার কথাটা ভিন্নভাবে বলা যায়, এত এত সফল মানুষের গল্প শুনলাম অথচ আমি কেন এখন অব্দি তাদের একজন হতে পারলাম না? কেন আমি এখনও সফলদের গল্পই শুনে চলেছি, নিজে কেন গল্প হয়ে উঠলাম না? হতে পারে, নিজের দিকে ছুড়ে দেওয়া এমন কয়েকটি “কেন” আপনার সামনে আজ স্পষ্ট করে দিবে আপনার খুব তাচ্ছিলে অথবা দাম্ভিকতায় দৈনন্দিন হয়ে ওঠা কিছু ভুল আচরণ, যা আপনাকে পেছনেই ফেলে রেখেছে। আজ এমন কিছু আচরণ নিয়ে কথা বলব, যা নিত্যদিন আমরা করে থাকি অথচ জানি না এই ছোট ছোট ভুলগুলো আমাদের সকল ব্যর্থতার কারণ; এমনকি এইসব আচরণ যে ব্যর্থতার কারণ হতে পারে তা আমরা বিশ্বাসও করি না।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }
সফল হতে চাইলে ভূল আচরণগুলো এই মুহূর্ত থেকে ত্যাগ করুন  photo : business 2 community

১। আমিই সঠিক, আমিই সেরা

আমি যা জানি, আমি যা ভাবি, আমি যা করি, তা কেউ করে না। আমি আমিই; আমিই সেরা। আমি যা বিশ্বাস করি তার চেয়ে উৎকৃষ্ট কিছু হতে পারে না। আমাদের চারপাশে এমন অনেক মানুষ আছে যারা নিজের সম্বন্ধে এমন ধারণা পোষণ করেন। ভাবেন তিনিই সেরা। তাদের ভাবখানা এমন যে, “বিচার মানি, তবে তালগাছ আমার।” আপনার মধ্যে যদি এই আত্মঅহমিকা থাকে তবে এই মুহুর্তেই তা পরিত্যাগ করুন, না হলে সাফল্য তো দূরের কথা চারপাশের মানুষ, আত্মীয়, পরিবার, এমনকি কলিগদের সাথেও স্বাভাবিক সম্পর্ক ক্রমশ ফিকে হয়ে যাবে। মনে রাখতে হবে, পৃথিবীর যাবতীয় জ্ঞান আমার মাথায় না, আর আমি সবজান্তাও নই। তাছাড়া পৃথিবী প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল, সুতরাং যে কোন ধারণা, বিশ্বাস বা দর্শন সব সময় সব জায়গায় কাজ করে না। সুতরাং, ব্রাহ্মণ না হয়ে সবার সাথে মিশে অন্যের মতামতকে শ্রদ্ধা করে পথ চলুন, জীবন সাফল্যে আর সৌন্দর্যে ভরে উঠবে।

কথায় কথায় “আমি এমনই” বাক্যটা আপনার ডিকশনারী থেকে চিরতরে ডিলিট করে দিন আর অন্যের ভালোবাসায় সেই শূন্যস্থান পূরণ করুন।

২। আমি এমনই

কিছু কিছু মানুষের এমন কিছু আচরণ আছে যাতে অন্যের কোন ক্ষতি হয় না, কিন্তু বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠে। তারা জানে যে, তার আচরণ অন্যকে তিক্ত বিরক্ত করে তুলছে, কিন্তু নিজেকে শোধরানোর কোন তাগাদা অনুভব করেন না। আসলে শোধরানো যে দরকার এটা তারা বোঝেনই না। শিশু কালে ধনী বাবাকে করা সব আবদার পূরণ হওয়ার মত, তারা ভাবে সারা জীবন অন্যরা তাকে অকারণে ভালোবেসে তার সব আচরণ সহ্য করে যাবে, কারণ “তিনি এমনই” !

আপনি যদি এই গোত্রের কেউ হয়ে থাকেন, তবে আজই নিজেকে পাল্টান। আমাদের মনে রাখা দরকার, পৃথিবীর সব মানুষ আপনার বাবা না আর আপনি জীবনভর শিশু না। অন্যের চোখ দিয়ে নিজেকে দেখুন। আপনার সঙ্গী/সঙ্গিনী, বস, পরিবার, প্রতিবেশী আপনাকে কেমন দেখতে চায়। কেমন দেখলে তারা আপনাকে শ্রদ্ধা করবে, ভালোবাসবে, নিজেকে তেমন করে গড়ে তুলুন। কথায় কথায় “আমি এমনই” বাক্যটা আপনার ডিকশনারী থেকে চিরতরে ডিলিট করে দিন আর অন্যের ভালোবাসায় সেই শূন্যস্থান পূরণ করুন।

{ "slotId": "", "unitType": "in-article", "pubId": "pub-6767816662210766" }
যেসব সিদ্ধান্তে পরিবার বা কর্মক্ষেত্রের অন্য মানুষের স্বার্থ, সম্মান, বিশ্বাস জড়িত সেসব সিদ্ধান্ত আপনি একা নেওয়ার অধিকার রাখেন না।  photo : david summerton consulting

৩। আমার সিদ্ধান্তই শেষ কথা

এক ধরনের কর্তৃত্ববাদী মানুষ আছে যারা সবসময় অন্যকে ডমিনেট (প্রভুত্ব করা) করতে চাই, হোক সেটা পরিবার বা কর্মক্ষেত্র। আমার কথাই শুনতে হবে, আমার কথাই মানতে হবে, আমার সিদ্ধান্তই শেষ কথা – এই কর্তৃত্ব পরায়ণতা ধ্বংস করে দিতে পারে আপনার পারিবারিক সুখ, এমনকি চাকরি বা ব্যবসায়িক জীবন। এই প্রবৃত্তি পুরনো ধ্যনধারণা পোষনকারী কিছু মানুষের মধ্যে দেখা যায়, যারা কখনও পরিবারের প্রিয় পাত্র হয়ে উঠতে পারেন না। মনে রাখতে হবে, আপনার চারপাশের মানুষগুলোর প্রত্যেকের আলাদা আলাদা মস্তিষ্ক আছে, তারা স্বাধীনভাবে ভাবতে পারে এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আপনি নিজের ব্যাপারে কী করবেন সেটা আপনার একান্ত নিজের ব্যাপার কিন্তু যেসব সিদ্ধান্তে পরিবার বা কর্মক্ষেত্রের অন্য মানুষের স্বার্থ, সম্মান, বিশ্বাস জড়িত সেসব সিদ্ধান্ত আপনি একা নেওয়ার অধিকার রাখেন না। সুতরাং, নিজের এই দাম্ভিকতা নিয়ে দ্বিতীয়বার ভাবুন।

বন্দুকের গুলি আর মুখের কথা একবার বেরিয়ে গেলে আর ফিরিয়ে আনা যায় না। সুতরাং বাচালতা আজ, এই মুহূর্তে ত্যাগ করুন, অন্যের চোখে শ্রদ্ধাভাজন হয়ে উঠুন।   photo : talkative man

৪। বাচালতা পরিহার করুন

নিজেকে জ্ঞানী জাহির করতে গিয়ে আমরা বাচাল হয়ে উঠি, আর তা নিয়ে গর্ববোধ করি অথচ অন্যরা মুখ টিপে টিপে হাসে। এই স্বভাব সম্মান বয়ে আনে না বরং আমাদের বোকা বানিয়ে তোলে। কথায় বলে “ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না।” ঠিক তেমনি, আমাদের কথা বলার সময় ভেবে বলা উচিৎ। কেননা, বন্দুকের গুলি আর মুখের কথা একবার বেরিয়ে গেলে আর ফিরিয়ে আনা যায় না। সুতরাং বাচালতা আজ, এই মহূর্তেই ত্যাগ করুন, অন্যের চোখে শ্রদ্ধাভাজন হয়ে উঠুন।

একা হওয়ার অভিনয় ছাড়ুন, সামাজিক হোন, পারিবারিক হোন, বন্ধু হোন, জীবনের আসল স্বাদ খুঁজে পাবেন আর নিশ্চয় বলবেন “জীবনটা সত্যিই সুন্দর”।  photo : thought catalog

৫। একা আছি, বেশ আছি

একা আছি, বেশ আছি। একা থাকাই ভাল। কাজ করছি, রোজগার করছি, নিজের মত খাচ্ছি, ঘুরছি, সময় কাটাচ্ছি – এই বেশ ভাল আছি, এভাবেই জীবনটা কাটিয়ে দেওয়া যায়।

না, জীবন নিয়ে যদি এমন ভাবনা থাকে আপনার তবে আপনি বোকা। “একা” বলে আসলে কিছু হয় না। আপনি রোজ যে খাবার খান, তা কি নিজেই উৎপাদন করেন অথবা আপনার অফিসে কী আপনি একাই কর্মী? নিশ্চয় না। তাহলে কেন একা হওয়ার হাস্যকর অভিনয় করছেন?

এমন শখের একা হওয়ার কারণে আপনি কতটা অসামাজিক হয়ে উঠেছেন তা আপনি নিজেও জানেন না। হয়তো আপনার আড়ালে এই ব্যাপারটা নিয়েই কলিগরা হাসাহাসি করে বা আপনাকে তারা অসুস্থ ভাবে, যা কর্মক্ষেত্রে আপনাকে স্বাভাবিক হতে বাধাগ্রস্থ করে। একা সেজে আপনি রোজ নিজেকে ঠকাচ্ছেন, আপনার পরিবারকে ঠকাচ্ছেন। একসময় আপনার চৈতন্য ফিরবে যখন বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হবে, কিন্তু তখন বড্ড দেরি হয়ে যাবে। কারণ সূর্য ডুবতে আর মাত্র কিছুক্ষণ বাকি থাকবে। কাজেই একা হওয়ার অভিনয় ছাড়ুন, সামাজিক হোন, পারিবারিক হোন, বন্ধু হোন, জীবনের আসল স্বাদ খুঁজে পাবেন আর নিশ্চয় বলবেন “জীবনটা সত্যিই সুন্দর”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *