সকালে ঘুম ভাঙার পর থেকে রাতের বিছানা পর্যন্ত ডিজিটাল প্রযুক্তি আমাদের কিভাবে প্রভাবিত করছে তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। এমনকি আমাদের আবেগ-অনুভূতিও নিয়ন্ত্রণ করছে ডিজিটাল প্রযুক্তি। ব্যবসা বাণিজ্য আমূল পাল্টে দিয়েছে এই প্রযুক্তির ছোঁয়া।
কিন্তু ব্যক্তির কর্মজীবন? ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবসায় অধিক সাফল্য আনতে কাজ করছে সত্যি। কিন্তু ব্যক্তির কর্মজীবনের উন্নতিতে কতটা কাজে লাগছে? আসলে সময়ের প্রয়োজনে ব্যক্তির কর্মজীবনও আমূল পাল্টে দিয়েছে ডিজিটাল প্রযুক্তি।
সুতরাং এই ডিজিটালাইজেশনের যুগে চাকরির বাজারে টিকে থাকতে হলে আপনাকেও পাল্টে নিতে হবে। নিজেকে প্রযুক্তির উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। আজকের নিবন্ধে এমন কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো ডিজিটাল প্রযুক্তির সাথে টিকে থাকতে হলে যেসব বিষয় আপনাকে জানতেই হবে।
১. নতুন পেশা অথবা বিদ্যমান পেশার নতুনত্ব
ডিজিটাল প্রযুক্তি আসার ফলে অসংখ্য নতুন পেশার জন্ম হয়েছে। এখন থেকে মাত্র ৫ বছর আগে যেসব পেশার অস্তিত্ব ছিল না। এমনকি বিশ্বব্যাপী সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এইসব পেশার উপযুক্ত কোর্স এখনো চালু করেনি। যেমন ডাটা সায়েন্টিস্ট। মাত্র কিছুদিন আগে এই পেশার কোনো অস্তিত্ব ছিল না। এমনকি কোনো কোনো দেশ বা শহরে এখনো এই পেশা নিয়ে কেউ কিছু ভাবেনি। রোবটিক অটোমেশন প্রক্রিয়া বিশ্লেষক করা আরো একটি নতুন পেশার নাম।
একই সময়ে বিদ্যমান পেশাগুলোতেও নতুন অনেক কিছুর সংযোজন আপনি লক্ষ্য করবেন। সম্ভবত আপনি নিজে ইতিমধ্যে তা অনুভব করেছেন। বিশ্বব্যাপী ব্যাংকগুলোতে এখন থেকে ত্রিশ বছর পূর্বে হিসাব রাখার জন্য রেজিস্টার বুক ব্যবহার করা হত। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী সকল ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হিসাব রক্ষা করে কম্পিউটার।
কিছুদিন পূর্বেও সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহ করত কাগজে লিখে, অথচ বর্তমানে কাগজের জায়গা দখল করে নিয়েছে নতুন নতুন প্রযুক্তি। অথবা ধরা যাক, একজন ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের কাজ। একজন ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের নতুন করে বিশ্লেষণ করার কাজ যুক্ত হয়েছে। একজন বিপণন ব্যবস্থাপক তার বিশ্লেষণের জন্য কোম্পানির ডাটা নতুনভাবে ব্যবহার করছেন।
২. একই দায়িত্বে একাধিক ভূমিকা
আগের দিনে চাকরি করতে গেলে একজন ব্যক্তির উপর সুনির্দিষ্ট একটি দায়িত্ব অর্পিত হত। দিনভর তিনি একটি কাজ দায়িত্ব সহকারে পালন করতেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে ডিজিটাল প্রযুক্তি আসার ফলে একই পদে দায়িত্বপ্রাপ্তের উপর একাধিক কাজ অর্পিত হচ্ছে। আরো সহজ করে বললে একটি নির্দিষ্ট পেশার মানুষের বিভিন্ন কাজে দক্ষ হওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে।
এমনকি ডিজিটালাইজেশনের ফলে দুটি ভিন্ন পেশার কাজ একীভূত হয়ে যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ সফটওয়্যার ডেভেলপার এবং ডিজাইনার সম্পূর্ণ দুটি ভিন্ন পেশা। তাদের কাজের ক্ষেত্র ভিন্ন। কিন্তু উন্নত প্রযুক্তি আসার ফলে উভয়ের কাজ সহজ করতে একই রকম পদ্ধতি অবলম্বন করতে হচ্ছে। যার ফলে ক্রমান্বয়ে তাদের পরস্পরের কাজ একই রকম হয়ে যাচ্ছে।
অর্থাৎ একজন সফটওয়্যার ডেভেলপারকে যেমন ডিজাইন সম্বন্ধে জ্ঞান রাখতে হচ্ছে, তেমনি একজন দক্ষ ডিজাইনার হতে হলে সফটওয়্যার ডেভেলপ করা জানতে হচ্ছে। সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের জন্য ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা জানা গুরুত্বের সাথে বাড়ছে। আবার সফটওয়্যার ডিজাইনাররা কোডিং এবং সফটওয়্যার পরীক্ষা-নিরীক্ষার সাথে আরো ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে পড়ছে।
৩. যোগাযোগ দক্ষতা
সর্বস্তরের ডিজিটাল প্রযুক্তি আশায় সব কর্মীর ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে যোগাযোগ রক্ষা করার দক্ষতা অর্জন করতে হচ্ছে। আপনি শিক্ষক, ব্যাংকার, এনজিও কর্মী, অথবা বিজ্ঞানী যে পেশাতেই থাকুন না কেন আপনাকে যোগাযোগের কিছু সাধারণ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে জানতে হবে। কেননা যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না বর্তমানে যে প্রতিষ্ঠান যোগাযোগ প্রযুক্তিতে যত উন্নত তারা তত বেশি সফল।
সুতরাং কোম্পানির প্রয়োজনে আপনাকে প্রতিমুহূর্তে আপডেট হওয়া যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্বন্ধে বিস্তারিত জ্ঞান রাখতে হবে। নাহলে আপনার প্রতিষ্ঠান যেমন পিছিয়ে পড়বে, কর্মক্ষেত্রে আপনিও পিছিয়ে পড়বেন।
তাছাড়া আগের দিনে কোম্পানিগুলোর উৎপাদন, বিপণন এবং সার্বিক প্রক্রিয়ার সাথে সাধারন জনগনের খুব একটা সংস্পর্শ ছিল না। কিন্তু বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি আসায় সাধারণ জনগণ তাদের ব্যবহৃত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সম্বন্ধে অধিক সচেতন হয়েছে। যার ফলে কোম্পানির বিভিন্ন স্তরের কর্মীদের সাধারণ জনগণের সাথে যোগাযোগের প্রয়োজন হচ্ছে, অথবা সাধারণ জনগণের যোগাযোগ প্রবণতা প্রশমনের প্রয়োজন হচ্ছে। সুতরাং এক্ষেত্রেও আপনাকে বিভিন্ন ধরনের যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্বন্ধে বিস্তারিত জ্ঞান রাখতে হবে।
৪. কম্পিউটার জ্ঞান
এখন থেকে মাত্র দশ বছর পূর্বে কম্পিউটার জানা বিশেষ দক্ষতা হিসেবে জ্ঞান করা হতো এবং চাকরি ক্ষেত্রে কম্পিউটার জানা আবেদনকারীদের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে সর্বক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশনের ফলে কম্পিউটার জ্ঞান সাধারণ জ্ঞানে পরিণত হয়েছে, অর্থাৎ আপনি যেকোনো প্রতিষ্ঠানে যে চাকরি করেন না কেন কম্পিউটার আপনাকে জানতেই হবে।
এমনকি উন্নত বিশ্বে কম্পিউটার প্রকৌশল একটি সাধারণ জ্ঞানে পরিণত হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে নিয়োগের জন্য এখন আর কোনো প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার প্রকৌশলী খোঁজেন না। বরং তার বদলে প্রয়োজন হয় সফটওয়্যার প্রকৌশলী, বা ডাটা সায়েন্টিস্ট। সুতরাং চাকরির বাজারে টিকে থাকতে হলে ছোট-বড় সব কাজের জন্য আপনাকে কম্পিউটার জানতেই হবে।
ডিজিটাল প্রযুক্তি বিস্ময়করভাবে আমাদের সবকিছুকে প্রভাবিত করছে। এখানে ব্যক্তিবিশেষের কর্মজীবন এবং ক্যারিয়ার উন্নয়নের জন্য যেমন সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হচ্ছে। সুতরাং পুরনো জরাজীর্ণ মানসিকতা ছুঁড়ে ফেলে আমাদের ডিজিটাল প্রযুক্তির সাথে মানিয়ে নিতে হবে, নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে হবে।