অটোমেশন আর রোবটিক টেকনোলজির এই যুগে ২০২০ সালের মধ্যেই অনেক ধরনের কর্মক্ষেত্র দখল হয়ে যাবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের হাত ধরে। তবে তারপরও যেসব চাকরির বাজার হ্রাস হবে না সেগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে ইনফরমেশন টেকনোলজি। চলুন জেনে নেওয়া যাক এর সম্পর্কে।
ইনফরমেশন টেকনোলজি কী?
পড়াশোনার বিভিন্ন বইয়ে আপনি অনেক সুন্দর এবং বিস্তারিত সংঙ্গা পাবেন। তবে আমরা যেহেতু পড়াশোনা অথবা পরীক্ষা জন্য পড়ছি না এই আর্টিকেলটি, তাই সহজ ভাষায় বলছি। ইনফরমেশন টেকনোলজি হচ্ছে কম্পিউটারের একটি অর্গানাইজেশন সিস্টেম। যেটা কিনা হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার কাজ সহ বিভিন্ন তথ্য সাজানো এবং সংরক্ষণ করা নিয়ে হয়ে থাকে।
অনেকে কম্পিউটার সায়েন্স আর ইনফরমেশন টেকনোলজির কাজ একই ধরনের ভেবে থাকেন। যে ধারণাটি ভুল। ইনফরমেশন টেকনোলজির নিয়ে আমাদের মধ্যে কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। যেগুলো অর্থহীন। আসলে ইনফরমেশন টেকনোলজি সম্পর্কে আরেকটু বিস্তারিত বললে –
- এর কাজ ব্যক্তিগত কম্পিউটিং নিয়ে হয়ে থাকে না। অর্থাৎ আপনাকে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসার সাপোর্ট হিসাবে কাজ করতে হবে।
- শুধু কম্পিউটার নিয়েই ইনফরমেশন টেকনোলজির কাজ সীমাবদ্ধ নয়। বিভিন্ন ধরনের হার্ডওয়্যারের কাজ সেটা হোক সার্ভারের অথবা প্রিন্টারের কাজও ইনফরমেশন টেকনোলজির অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া এইসব যন্ত্রের সফটওয়্যার, ডেটাবেজ ও ব্যবহার এই সেক্টরে পড়ে।
কর্মক্ষেত্র
ইনফরমেশন টেকনোলজি ব্যবসার মূল অংশ বলা চলে। কোম্পানির তথ্য সংগ্রহ ছাড়াও সকল ধরনের হিসাব-নিকাশ, কর্মচারীদের সকল তথ্য এবং তাদের কাজের তথ্য রক্ষা করাও একজন আইটি এক্সপার্টের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তাই কমপক্ষে ডজনখানেক চাকরির স্থান তৈরি হয়েছে এই সেক্টর। চলুন জেনে নেওয়া যার একজন ইনফরমেশন টেকনোলজির এক্সপার্টের কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে।
হেল্প ডেস্ক টেকনিশিয়ান
যখন কোন নন টেকনিক্যাল মানুষ আইটি নিয়ে ভাবলে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি কল্পনায় আসে সেটা হচ্ছে হেল্প ডেস্ক টেকনিশিয়ান। বাস্তবেও তাই! ইনফরমেশন টেকনোলজিতে পাস করে বেশিরভাগ মানুষের কর্মক্ষেত্র শুরু হয় এই এন্টি লেভেল পদ হতে। সাধারণত বিভিন্ন কাষ্টমার সাপোর্ট আর হার্ডওয়্যার মেরামত করা এই পদের দায়িত্ব। কাস্টোমার সাপোর্টে সাধারণত ক্রেতাদের বিভিন্ন সমস্যা যেমন কেন ফাইল ওপেন হচ্ছে না, প্রিন্ট হচ্ছে না, অথবা ইন্টারনেট কাজ করছে না এইসব সমস্যার সমাধান নিয়ে কাজ করতে হয়। এই কাজের জন্য যোগাযোগের দক্ষতা, সবধরনের অপারেটিং সিস্টেমের উপর জ্ঞান থাকা ছাড়ও অসম্ভব পরিমাণের ধৈর্য্য থাকা অবশ্যক।
সিস্টেম এনালিস্ট
বিভিন্ন ধরনের গবেষণা, উন্নয়ন এবং কোম্পানির ইনফরমেশন সিস্টেমের সর্বোচ্চ কর্মদক্ষতা বাড়ানোই একজন সিস্টেম এনালিস্টের মুখ্য কাজ। এছাড়া নতুন কাজের পরিকল্পনা এবং প্রোগ্রামার দিয়ে নতুন সফটওয়্যার আপডেট করার ছাড়াও সেগুলোর উপর প্রয়োজনীয় ম্যানুয়াল লেখাও সিস্টেম এনালিস্টের কাজ।
সিস্টেম এনালিস্ট সাধারণত কোম্পানির কাঠামোগত কাজে বেশি যুক্ত থাকেন না। তবে কোনো কোনো সিস্টেম এনালিস্ট কর্মচারীদের মধ্যে বিভিন্ন জরিপ চালিয়ে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেন। আর সেই সমস্যা অনুযায়ী নতুন সফটওয়্যার গঠন এবং প্রোগ্রামাদের দিয়ে নতুন সফটওয়্যার তৈরি করে থাকেন। এছাড়া কোম্পানির প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক জিনিস এবং সেগুলোর উন্নয়ন নিয়েও একজন সিস্টেম এনালিস্ট কাজ করে থাকেন। তাদের বিচক্ষণতা আর যোগাযোগের উপর কোম্পানির উন্নতি অনেকাংশে নির্ভরশীল।
আইটি সিকিউরিটি
বড়সর কোম্পানিগুলোর আইটি সিকিউরিটি সেকশন সবথেকে বৃহৎ এবং ক্রমবর্ধমান একটি ক্ষেত্র। বিগত কয়েক দশক ধরে কম্পিউটার সব ধরনের আধুনিক ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত। তাই বিভিন্ন বিদ্বেষপরায়ণ মানুষের সাইবার আক্রমণের মাধ্যমে তথ্য চুরি করার মতো বিষয় ঘটে।
তাই প্রতিটি কোম্পানিতে নিয়োগ করা হয় একাধিক আইটি সিকিউরিটি এক্সপার্ট। যাদের দায়িত্ব সাইবার আক্রমণ প্রতিরোধ আর তথ্য নিরাপদ রাখা হয়ে থাকে। এই পদের কাজ করতে, ঠান্ডা মাথার পাশাপাশি হ্যাকারদের থেকে এক কদম এগিয়ে থাকার মতো দক্ষতা থাকা জরুরি।
নেটওয়ার্ক এডমিনেস্ট্রেটর
নেটওয়ার্কিং কতখানি জটিল কাজ সেটা প্রতিটি নেটওয়ার্ক এডমিন ভালোভাবে জানেন। ব্যবসায় নতুন নেটওয়ার্ক সেটআপ থেকে শুরু করে চলতি নেটওয়ার্কের নিয়ন্ত্রণ এবং ভালোভাবে বজায় রাখা একজন নেটওয়ার্ক এডমিনেস্টেটরের কাজ। এছাড়া বিভিন্ন প্রজেক্ট অথবা নতুন ক্যাম্পাসে ভিপিএন বসানো ছাড়াও সেগুলোর রিমোর্ট টেস্ট, নেটওয়ার্কের দুর্বল পয়েন্ট বের করা এবং উন্নতি ঘটানো নেটওয়ার্ক এডমিনেস্ট্রেটরের দায়িত্ব।
নেটওয়ার্কের উপর প্রায় অফিসের সব কাজেই নির্ভর করে। নেটওয়ার্ক ডাউন হলে কর্মচারীদের ভোগান্তি ছাড়াও আরো যে কী পরিমাণ সমস্যা সৃষ্টি ঘটে সেটা অফিসের কর্মকর্তারা ভালোভাবেই জানেন। অন্যদিকে সফটওয়্যারের সুক্ষ্ম পরিবর্তন নেটওয়ার্কের বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে পারে। আর এদিকে প্রতিদিনই কোম্পানির সফটওয়্যার আপডেট হতে থাকে। ফলে বিভিন্ন সমস্যার হার সমসময় বেশি হয়ে থাকে। একজন নেটওয়ার্ক এডমিনেস্টেটরের নিত্যনতুন বিষয়ে দ্রুত খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতার পাশাপাশি শেখার আগ্রহ থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
ডেটাবেজ এডমিনেস্ট্রেটর
একটি কোম্পানির সকল তথ্য সংরক্ষণ এবং সেগুলোকে ব্যবহার করার বিষয়টি দেখে থাকেন একজন ডেটাবেজ এডমিনেস্ট্রেটর। কোম্পানির কর্মীদের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার ইতিহাস থেকে শুরু হয়ে ডিপার্টমেন্টের ক্রেতাদের তথ্য একজন ডেটাবেজ এডমিনেস্ট্রেটর সামলে থাকেন।
এছাড়া নতুন ডেটাবেজ সিস্টেম প্রতিস্থাপনা অথবা চলিত ডেটাবেজ সিস্টেমকে আপগ্রেড করার একজন ডেটাবেজ এডমিনেস্ট্রেটরের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। ডাটাবেজের উপর অসম্ভব রকমের দক্ষতা ছাড়াও এসকিউএল, তথ্য জমা করার পদ্ধতি এবং প্রতিনিয়ত রক্ষণাবেক্ষণ করার ক্ষমতাও ডেটাবেজ এডমিনেস্ট্রেটরের থাকা জরুরি।
অন্যান্য কর্মক্ষেত্র
উপরোক্ত পাঁচটি আইটি সেক্টরে বর্তমান সময়ে জনপ্রিয়তা বেশি অর্জন করেছে। তবে এছাড়া আরো পাঁচটি চাকরির কথা উল্লেখ করা হলো যেগুলো কিনা কোন অংশে কম নয়।
১. আইটি কনসোলটেন্ট : হেল্প ডেস্ক টেকনিশিয়ানদের মতো আইটি কনসোলটেন্ট বিভিন্ন ধরনের ক্রেতাদের সহয়তা করে থাকে। এরা সাধারণত নির্দিষ্ট কোন কোম্পানির আওতাধীন না হয়ে সকল ধরনের ক্রেতাদের ফ্রিল্যান্সার হিসাবে সহায়তা করে থাকে।
২. প্রজেক্ট ম্যানেজার : বিভিন্ন টেকনিক্যাল প্রজেক্ট সংগঠন করা এবং টিমের মেম্বাদের তত্বাবধায়ন করা একজন প্রজেক্ট ম্যানেজারের দায়িত্ব।
৩. কোয়ালিটি এস্যুরেন্স : নতুন পণ্য বা সফটওয়্যারের সমস্যা ও ইরর দূর করে ক্রেতাদের জন্য মানগত পণ্য নিশ্চিত করা এই পদের কাজ।
৪. ক্লাউড আর্কিটেক্ট : বর্তমানে অসংখ্য কোম্পানি ক্লাউড নেটওয়ার্কিংয়ের সাথে সাথে সার্ভার নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে বিভিন্ন ক্লাউডজনিত কাজ যেমন আপগ্রেড ও ত্রুটি সমাধান করার জন্য প্রয়োজন হচ্ছে কাউড আর্কিটেক্টের।
৫. আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স / মেশিন লার্নিংয়ে রয়েছে বর্তমানের সবথেকে বৃহত কর্মক্ষেত্র। সারাবিশ্বে প্রতিবছর লাখ লাখ চাকরির পদ এই কাজের জন্য তৈরি হচ্ছে।