চাকরির সাক্ষাৎকার ১: যে সহজ প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে আমরা বেশি ভুল করি

চাকরির সাক্ষাৎকার সত্যিই আমাদের ভীত করে ফেলে যখন আমরা আসন্ন প্রশ্নের ব্যাপারে বেশি দুশ্চিন্তা করি। আমরা এমন সব কঠিন প্রশ্নের ব্যাপারে ভাবি, যে ব্যাপারে আমাদের কোনো প্রস্তুতি নেই। এই অতি ভাবনা আমাদের স্নায়ুকে দূর্বল করে দয়ে, যা যেকোনো আত্মবিশ্বাসী মানুষকেও ভীত করে তুলতে পারে। চাকরির সাক্ষাৎকারের যেহেতু কোনো পাঠ্য তালিকা থাকে না, কাজেই কী কী প্রশ্ন আসতে পারে তারও কোনো বাঁধাধরা নিয়ম থাকে না। আবার চাকরিটা যদি আপনার খুব দরকারী হয়, তবে এ ব্যপারে দুশ্চিন্তা হওয়াই স্বাভাবিক।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }
photo: abovethelaw

কিন্তু এমন কিছু প্রশ্ন আছে যা সাধারণত প্রায় সব ইন্টারভিউতে করা হয়ে থাকে। মোটামুটিভাবে এই প্রশ্নগুলোর ভাল প্রস্তুতি নিলে যে কোন চাকরির ইন্টারভিউ সাফল্যের সাথে মোকাবেলা করা সম্ভব। আমি ধারাবাহিক কয়েকটি নিবন্ধে এমন অনেকগুলো প্রশ্ন ও তার প্রস্তুতি নেওয়ার কলা কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করি ধারাবাহিক সবগুলো নিবন্ধ থেকে আপনি খুব সহজেই যে কোন ইন্টারভিউ মোকাবেলা করার যাবতীয় কৌশল শিখে যাবেন। আমার চাকরির সাক্ষাৎকার নিয়ে ধারাবাহিক নিবন্ধের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।

প্রস্তুতিই আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর সর্বোত্তম উপায়

যেকোনো কাজের প্রস্তুতি আমাদের মনস্থির করে লক্ষ্য নির্ধারণ ও আত্মবিশ্বাসী হওয়ার সক্ষমতা দেয়। কিন্তু শত প্রস্তুতি সত্ত্বেও মনের মধ্যে ভয় ও দ্বিধা কাজ করে। এই ভয়ের কারণ কী? ইন্টারভিউ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া নিয়ে আমাদের মধ্যে কিছু ভ্রান্ত ধারণা আছে। আমরা মনে করি ভাল ইন্টারভিউ মানে কোনো প্রকার কালক্ষেপণ ও দ্বিধা দ্বন্দ্ব ছাড়া খুব দ্রুত সব প্রশ্নের খুবই উচ্চমানের উত্তর দেওয়া। কিন্তু আদৌ বাস্তবতা তা বলে না। সবজান্তা রোবটের মতো সব প্রশ্নের দ্রুত ও নিখুঁত জবাব দেওয়া মানুষের পক্ষে সম্ভব না।

photo: point recruitment

সুতরাং ইন্টারভিউ প্রশ্নের ভালো প্রস্তুতি দেওয়ার অর্থ সম্ভাব্য সব প্রশ্নের উত্তর তোতাপাখির মত সুখস্থ করা নয়, বরং আপনি যা বলতে চান সে ব্যাপারে ভাল ধারণা রাখা, সাথে সাথে নিজেকে ভাল ভাবে উপস্থাপন করা। আত্মবিশ্বাস নিয়ে আর কথা নয়। চলুন এবার প্রশ্নের গভীরে যাওয়া যাক। প্রশ্ন এবং উত্তর নিয়ে আলোচনা করতে করতে নিশ্চয় আপনার মনের সব দ্বিধা দূর হয়ে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে।

{ "slotId": "", "unitType": "in-article", "pubId": "pub-6767816662210766" }

১. নিজের সম্বন্ধে কিছু বলুন

সাধারণত প্রায় সব সাক্ষাৎকার এই প্রশ্নটি দিয়ে শুরু হয় আর এই সহজ সাধারণ প্রশ্নটি বুঝতেই বেশিরভাগ মানুষ ভুল করে। সিংহভাগ আবেদনকারী এই প্রশ্নের জবাবে বলতে শুরু করেন এভাবে: “আমার নাম মোস্তাফিজুর রহমান, আমার বাবার নাম আব্দুল্লাহ আল মামুন, আমার গ্রামের বাড়ি যশোর, আমি ঢাকায় বসবাস করি, ব্লা ব্লা ব্লা . . .।

মনে রাখা দরকার, এই সবগুলো তথ্য আপনার বায়োডাটায় উল্লেখ আছে আর আপনি এই সাক্ষাৎকারে বসার আগেই আপনার বায়োডাটা সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীদের কাছে পৌঁছেছে। সুতরাং এই প্রশ্নের উদ্দেশ্য আপনার জীবনী জানা নয়।

photo: alphagamma

এই প্রশ্নের আসল উদ্দেশ্য হলো সকল প্রকার জড়তা ভেঙে পরিবেশটাকে স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তোলা। সাথে সাথে এই প্রশ্ন দিয়ে শুরুতেই সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী আপনার ব্যক্তিত্ব, বিচক্ষণতা ও অন্যের কথা বোঝার দক্ষতা যাচাই করেন, যা আপনার মানসিক পরিপক্কতা ও ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করে। এক্ষেত্রে নিজের সম্পর্কে অতিরিক্ত বিবরণ ও অপ্রাসঙ্গিক তথ্য দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আপনার কোনো প্যাশন বা কোনো ইতিবাচক ভাবনার কথা দিযে শুরু করতে পারেন। যেমন, আপনি লম্বা দূরত্ব অতিক্রম করতে বা বই পড়তে পছন্দ করেন। এই সুযোগে খুব সংক্ষেপে উল্লেখ করুন সেই সব স্বেচ্ছাসেবী কাজ বা উদ্যোগের কথা, যা আপনার সাংগঠনিক দক্ষতা ও মহত্ত্ব প্রকাশ করে।

এরপর আপনার পেশাগত জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে দুই-একটি কথা বলতে পারেন। তবে এই প্রথম প্রশ্নের উত্তর যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত করুন। যেন আপনার অল্প কথায় বেশি প্রকাশের দক্ষতা প্রকাশ পায়।

২. আপনার সবচেয়ে ভালো গুণ কোনটি?

আপাতদৃষ্টিতে এই প্রশ্নের উত্তর খুব সহজ মনে হলেও এটি খুব কঠিন প্রশ্ন। কেননা অনেকে নিজেকে জাহির করার মোক্ষম উপায় মনে করে এই প্রশ্নের উত্তরে নিজের সব গুণের ঝাঁপি খুলে বসেন আর তরতর করে বলতে থাকেন তার যাবতীয় গুণের কথা।

photo: certified talent

মনে রাখা দরকার, যার বেশি গুণ তার কোনো গুণই পরিপূর্ণ না। সুতরাং এক্ষেত্রে নিজেকে জাহির না করে ভারসাম্য বজায় রেখে কথা বলুন। মনে রাখতে হবে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীরা আপনার মধ্যে যেন সেসব গুণ খুঁজে পান ঠিক যেমন দক্ষতা ও যোগ্যতা সম্পন্ন মানুষ তারা খুঁজছেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ বিবেচ্য বিষয় হলো, আপনি কেমন প্রতিষ্ঠানে কোন পদের জন্য সাক্ষাৎকার দিতে এসেছেন তা মাথায় রাখা। যেমন আপনি বলতে পারেন: “আমি মনে করি, আমার সময়জ্ঞান খুব ভাল। নিজেকে সময়ের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে পারি এবং নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কোনো প্রকল্প শেষ করতে আমি বদ্ধপরিকর। এর আগে একটি প্রজেক্ট আমি নির্ধারিত সময়ের ২ সপ্তাহ আগে শেষ করেছি।”

৩. আপনার সবচেয়ে দুর্বল দিক কী?

এটা ভুল করার মতো আরও একটি ফাঁদ। বেশিরভাগ মানুষ এই প্রশ্নেরও ভুল উত্তর দেয়। এই প্রশ্নের যথার্থ উত্তর দেওয়ার সবচেয়ে ভাল কৌশল হলো সৎ থাকা এবং নিজের সেই দক্ষতার কথা বলা যার মাধ্যমে আপনি কোনো বিশেষ দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারেন।

photo: impact business group

বলা যেতে পারে, সবসময় নির্ভুল ও নিখুঁত থাকা হয়তো সম্ভব হয় না, তবে আমি সময়ের যথার্থ ব্যবহার করতে জানি, যা খুব দ্রুত যে কোনো পরিস্থিতি আমার অনুকূলে আনতে সহায়তা করে। মাত্র এই তিনটি প্রশ্ন নয়। ইন্টারভিউ বোর্ডে সচরাচর করা হয় এমন আরও অনেকগুলো প্রশ্ন আছে। আমি পরবর্তী নিবন্ধে এমন আরও কয়েকটি প্রশ্ন ও তার জবাব দেওয়ার কৌশল বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *