চাকরির সাক্ষাৎকার ২: অভিজ্ঞদের যেসব কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়

চাকরির সাক্ষাৎকার দেওয়ার কথা ভাবলেই আমরা যতটা ভীত হয়ে পড়ি, আদতে সাক্ষাৎকার এতটা ভীতিকর নয়। আমাদের মধ্যে অযথা দুঃচিন্তা কাজ করে যা আত্মবিশ্বাস ভেঙে দেয়। আর ফলস্বরূপ সাক্ষাৎকার খারাপ হয়। সুতরাং চাকরির সাক্ষাতকারে ভাল করার প্রথম এবং প্রধান অস্ত্র হলো আত্মবিশ্বাস। তবে চাকরির সাক্ষাতকার শুধু সদ্য স্নাতক পাশ করা শিক্ষার্থীরাই দিয়ে থাকে না। অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করা অনেক অভিজ্ঞ মানুষ নতুন চাকরির জন্য সাক্ষাতকার দিয়ে থাকে। আর সাক্ষাতকার গ্রহীতারা আবেনকারীর বায়োডাটা হাতে পাওয়া মাত্রই অভিজ্ঞদের আলাদা করে ফেলেন। সুতরাং বুঝতেই পারছেন সদ্য স্নাতক আর অভিজ্ঞদের সাক্ষাতকারের মধ্যে কিছুটা তফাত থাকবেই।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }
photo: zeta yarwood

আমি ইতিমধ্যে চাকরির সাক্ষাতকারে করা এমন ৩টি সহজ অথচ গোলমেলে প্রশ্ন এবং তার উত্তর নিয়ে নিবন্ধ লিখেছি। আজ দ্বিতীয় পর্বে থাকছে অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করা অভিজ্ঞদের জন্য সম্ভাব্য কয়েকটি প্রশ্ন ও তার উত্তর দেওয়ার কলাকৌশল।

১. পূর্ববর্তী চাকরিতে আপনার কি দায়িত্ব ছিল?

এমন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে বুঝতে হবে এই প্রশ্নের পেছনে প্রশ্নকর্তার উদ্দেশ্য কী? এমন প্রশ্ন করা হলে বুঝতে হবে, প্রশ্নকর্তা এই প্রশ্নের আড়ালে কাজের প্রতি আপনার দায়বদ্ধতা ও দায়িত্ববোধ বোঝার চেষ্টা করছেন। সুতরাং এই প্রশ্নের উত্তর হবে আপনার বায়োডাটায় উল্লেখ করা বিবরণীর আলোকে। তবে সবসময় চেষ্টা করবেন ইন্টারভিউ দিতে আসা প্রতিষ্ঠানে যে কাজের জন্য আবেদন করেছেন পূর্বের অভিজ্ঞতাকে এই কাজের বা পদের সাথে সংযোগ ঘটাতে।

photo: cnbc

যেমন, আপনি যদি নতুন প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থপনা বা পরিচালনার কাজ করার জন্য ইন্টারভিউ দিতে এসে থাকেন তবে পূর্ববর্তী এমন কোনো প্রকল্প নিয়ে কথা বলুন যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আপনি। যদি নেতৃত্ব না দিয়ে থাকেন তবে এমন মানুষের বা কর্মীদের কথা বলুন যাদের আপনি পরিচালনা করেছেন। মোটকথা এমন কিছু বলুন যাতে আপনার নেতৃত্ব ও দায়িত্ববোধের পরিচয় প্রকাশ পায়।

{ "slotId": "", "unitType": "in-article", "pubId": "pub-6767816662210766" }

মনে রাখবেন, এটি আপনার ব্যক্তিত্ব প্রকাশের একটা চমৎকার সুযোগ। সুতরাং এই সুযোগের যথাযথ ব্যবহার করে নিজেকে একটি সামান্য সিভি বা কাগুজে ব্যক্তির ঊর্ধ্বে নিয়ে যান। কোনো ক্রমেই এই প্রশ্নের কোনো নিম্নমানের বা বিরক্তিকর উত্তর যেন আপনার থেকে বের না হয়।

২. আপনার পূর্ববর্তী পেশায় কেমন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী হয়েছেন এবং কিভাবে তা মোকাবেলা করেছেন?

এমন প্রশ্ন করে প্রশ্নকর্তা আপনার ঝুঁকি নেওয়ার সাহস ও যেকোন সমস্যা মোকাবেলায় আপনার দক্ষতা যাচাই করেন। সাথে সাথে সমস্যা সমাধানে আপনার দক্ষতা কতটা কার্যকরী তাও বোঝার চেষ্টা করেন। সুতরাং এক্ষেত্রে পূর্ববর্তী কোনো সফর কাজের একটি যৌক্তিক চ্যালেঞ্জের কথা বলুন। সাথে সাথে ব্যাখ্যা করুন, আপনি সেই চ্যালেঞ্জ কিভাবে মোকাবেলা করেছিলেন আর সেই চ্যালেঞ্জ থেকে ভবিষ্যতে এমন সমস্যা সমাধানে কী কী শিখেছিলেন।

photo: bizfluent

উদাহরণস্বরূপ বলতে পারেন, “আমাদের কোম্পানির সফটওয়্যার সিস্টেমে যখন একটা বড় ধরনের ত্রুটি দেখা দিল, তখন হঠাৎ করে আমাদের কাজের স্বাভাবিক গতি ও সুন্দর কর্ম পরিবেশ দারুণভাবে বিঘ্নিত হল। তখন আমার দায়িত্ব ছিল সফটওয়্যার প্রকৌশলীদের একত্রিত করে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান করা। আমি বাস্তব অভিজ্ঞতা দিয়ে শিখেছিলাম, কিভাবে খুব দ্রুত এমন জটিল কাজের জন্য টিমকে অনুপ্রাণিত ও সুগঠিত করে সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে হয়।

৩. পূর্ববর্তী পেশায় কী কী আপানর পছন্দনীয় বা অপছন্দনীয় ছিল ?

এমন প্রশ্নের জবাব দেওয়ার ক্ষেত্রে মাথায় রাখবেন আপনার পূর্ববর্তী চাকরি যদি কোনোক্রমে আপনার অপছন্দনীয় হয় তবুও যেন তা ইতিবাচকভাবে প্রকাশ করেন। কেননা এই প্রশ্ন দিয়ে প্রশ্নকর্তা সুকৌশলে বের করতে চান আপনার উপর ন্যস্ত যে কোনো কাজ আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করেন।

photo: viec lam 68

আপনার কাঙ্ক্ষিত চাকরিতে যে ধরনের যোগ্যতা আবশ্যক তার সাথে সংগতিপূর্ণ, আকর্ষণীয় ও কিছুটা বর্ণনামূলকভাবে উত্তর দেওয়ার চষ্টা করবেন। যেমন আপনি বলতে পারেন: “আমি কোম্পানির অভ্যন্তরীণ কাজের ধারাবাহিকতা আরও সুগঠিত ও উৎপাদনমুখী করতে সহযোগীতা করেছি, যা কোম্পানির মূল্যবান সময় সাশ্রয় করেছে।” কোনো পুরস্কৃত হওয়ার খবর এক্ষেত্রে বিশেষভাবে কার্যকরী।

৪. পূর্ববর্তী চাকরিতে আপনার সবচেয়ে বড় সাফল্য কি ছিল?

পূর্ববর্তী চাকরিতে আপনি সবচেয়ে বেশি সফল হয়েছেন বা আত্মতৃপ্ত হয়েছেন কোন কাজে এবং তা থেকে কী কী শিখেছেন – এই প্রশ্নের উত্তরে এসব বিষয় নিয়ে বলতে হবে। মনে রাখবেন, এমন সাফল্য থেকে আপনি বাস্তবসম্মত কী কী পেয়েছেন তার চেয়েও হাজার গুণ গুরুত্বপূর্ণ সেই অভিজ্ঞতা থেকে আপনি কী কী দক্ষতা ও জ্ঞান অর্জন করেছেন।

photo: abracomex

যেমন বলতে পারেন: “আমি প্রধান প্রকল্প ব্যবস্থাপক থাকা অবস্থায় একটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। এটা আমার জন্য খুব বড় একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু কাজ বাস্তবায়নের জন্য আমি একটি বড় দল গঠন করেছিলাম, যা অভ্যন্তরীণ ও বাইরের ভাড়াটে কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত ছিল। আমার সেই প্রকল্প খুবই সফল হয়, যা কোম্পানিকে বিপুল অর্থ রোজগারের পথ করে দেয়।”

এই আলোচনা এখানেই শেষ নয়। নতুন চাকরির সাক্ষাৎকারে নিয়োগ বোর্ড নানান দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নানান প্রশ্ন করে থাকে। তবে তার কোনোটি কোনো বিশেষ তত্ত্বীয় প্রশ্ন নয়, যা নিয়ে বিস্তর পড়াশোনা বা গবেষণার দাবি রাখে। সবই উপস্থিত বুদ্ধি আর বিচক্ষণতা দিয়ে উত্তর দেওয়ার যোগ্য। চাকরির সাক্ষাৎকারে জিজ্ঞেস করা হয় এমন আরও কিছু প্রশ্ন ও তার যথাযথ উত্তর দেওয়ার কলাকৌশল নিয়ে পরবর্তী নিবন্ধে আরও আলোচনা করার আশা রাখছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *