চাকরির সাক্ষাৎকার নিয়ে আমি ইতিমধ্যে দুইটি নিবন্ধ লিখেছি। যেখানে খুব সাধারণ অথচ জটিল প্রশ্ন ও পূর্ববর্তী চাকরি সম্বন্ধে সম্ভাব্য প্রশ্ন ও তার উত্তর দেওয়ার কলাকৌশল নিয়ে আলোচনা করেছি। আজ এই ধারাবাহিক নিবন্ধের তৃতীয় পর্বে থাকছে এমন কিছু প্রশ্ন যার উত্তর দিতে হলে আপনাকে বিচক্ষণ হতে হবে।
আপনি কিভাবে কাজের ধকল বা চাপ সামল দিবেন?
এই ব্যাপারটি বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক যদি আপনি অধিক চাপের কোনো চাকরি শুরু করেন। তাছাড়া এই ব্যাপারটি ততোটা প্রাসঙ্গিক নয়। তবে আপনার উপর সম্ভাব্য অর্পিত দায়িত্ব চাপের হোক বা আরামদায়ক হোক, ইন্টারভিউতে এই প্রশ্নের সম্মুখীন আপনাকে হতেই হবে। এই প্রশ্ন করে প্রশ্নকর্তা মূলত কর্মক্ষেত্রে প্রচন্ড চাপের সম্মুখীন হলে আপনার প্রতিক্রিয়া কী হবে তা বোঝার চেষ্টা করেন।
এমন প্রশ্নের জবাবে আপনাকে যতটা সম্ভব কৌশলী হতে হবে। এর চমৎকার উত্তর হতে পারে, “কাজের চাপ আমার জন্য খুব ভাল অনুসঙ্গ যা আমাকে সবসময় কাজের প্রতি অনুপ্রাণিত, মনোযোগী ও উৎপাদনমুখী থাকতে সাহায্য করে। আমি মনে করি, আমার দৃঢ় সাংগঠনিক দক্ষতা আমাকে চাপমুক্ত থেকে যেকোনো প্রকল্প সহজে ও সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন করার স্মার্ট ও অভিনব কৌশল প্রণয়নে সহায়তা করে। সুতরাং সুন্দর পরিকল্পনা করার দক্ষতা যেকোনো কাজে আমাকে চাপমুক্ত থাকতে সাহায্য করে।
আপনার কর্মজীবনের প্রথম এবং সর্বশেষ বেতন কত ছিল?
এই প্রশ্নটি করার উদ্দেশ্য হলো বেতনের ব্যাপারে আপনি কতটা প্রতিযোগী, অর্থাৎ কত দ্রুত কর্মক্ষেত্রে উন্নতি করতে পারেন তা অনুধাবন করা। এক্ষেত্রে সত্য তথ্য উপস্থাপন করুন যেন খুব সহজেই আপনার নতুন চাকরিদাতা আপনার কদর বুঝতে পারেন। তবে বেতনের ব্যাপারে যেকোনো অসঙ্গতিরও সত্য ব্যাখ্যা দিতে প্রস্তুত থাকুন। কোনোক্রমেই পূর্ববর্তী চাকরিতে আপনার পদমর্যাদার অতিরিক্ত বেতনের কথা বলবেন না। মনে রাখবেন, আপনার চেয়ে আপনার সাক্ষাৎকার প্রহণকারী বেতন সম্বন্ধে ভাল জ্ঞান রাখেন। আপনার বলা যেকোনো মিথ্যা তথ্য তিনি খুব সহজেই বুঝতে পারবেন।
এমন প্রশ্নে আপনার উত্তর এভাবে শুরু করতে পারেন: “আমার প্রাথমিক বেতন ছিল ***** টাকা। কিন্তু আমি সময়ের সাথে সাথে খুব দ্রুত কোম্পানির আরও বেশি দায়িত্ব গ্রহণ করি এবং নিষ্ঠার সাথে কাজ করায় কোম্পানিও আমাকে সানন্দে দায়িত্ব দেয়। আমি লাইন-ম্যানেজার এবং পরবর্তীতে প্রজেক্ট ম্যানেজার পদে উন্নীত হই। যার ফলে আমার সর্বশেষ বেতন দাড়ায় ****** টাকা।”
কেন আপনি বর্তমান চাকরি ছেড়ে আমাদের এখানে আসতে চান?
এই প্রশ্নের নানান উত্তর হতে পারে। যেমন, আপনার পরিবারের পূর্ববর্তী চাকরির এলাকা ছেড়ে আসার কথা ছাড়াও পারিবারিক নানান কারণ দেখানো যেতে পারে। এছাড়া আরও উন্নতি করতে, আরও স্বাবলম্বী হতে বা প্যাশনের কাজের সন্ধান পেয়ে অথবা নতুন সুযোগ নিয়ে সার্বিক জীবনমানের উন্নতি করতে – এমন নানান কারণে আপনি চাকরি ছাড়তে পারেন। এক্ষেত্রে যদি চাকরি ছাড়ার কারণটি খুব জটিল কিছু হয়, তবে তা ব্যাখ্যা করার সময় যতটা সম্ভব ইতিবাচক থাকুন এবং আপনার বর্তমান লক্ষ্য ও ক্যারিয়ারের উন্নতির কথার দিকে বেশি জোর দিন।
উত্তরটা এমন হতে পারে- “আমার বর্তমান কর্মক্ষেত্রে এর চেয়ে বেশি উন্নতি করার খুব বেশি সুযোগ নেই। তাছাড়া আমি নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে ক্যারিয়ারের সার্কিব উন্নতি করতে চাই।”
আপনি কিভাবে সাফল্যের মূল্যায়ন করেন?
এই প্রশ্নটির মাধ্যমে প্রশ্নকর্তা আপনার কাজের অন্তর্দৃষ্টি, নৈতিকতা, ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিগত লক্ষ্যের সামগ্রিক উপস্থাপনের দিকে একটি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে যেকোন কাজ করার ক্ষেত্রে আপনার অন্তর্দৃষ্টি ও বাহ্যিক প্রকাশের আসল নৈতিকতা প্রকাশ পাবে। তবে একই সাথে এটি কাজের প্রতি আপনার অনুপ্রেরণা, নিষ্ঠা, গতি ও উদ্যম প্রকাশের সর্বশ্রেষ্ঠ সময়।
এক্ষেত্রে আপানর বিচক্ষণ উত্তর হতে পারে এমন- “আমি শুধু কাজ বা আমার ব্যক্তিগত সাফল্যের বিচারে সামগ্রিক সাফল্য বিবেচনা করি না, বরং সম্পূর্ণ টিমের সাফল্য আমার কাছে বেশি আরোধ্য। নিজেকে আমি তখনই সফল বলে মনে করি যখন আমার টিমের প্রতিটি সদস্য তার নিজ নিজ জায়গা থেকে সফল হয়।”
আপনি কেন এই চাকরিটা করতে চান?
“নিজের সম্বন্ধে কিছু বলুন।” এই প্রশ্নটির মত “আপনি কেন এই চাকরিটা করতে চান?” এই প্রশ্নটিও প্রায় সব ইন্টারভিউতে জিজ্ঞেস করা হয়। প্রশ্নকর্তা এই নতুন চাকরি পাওয়ার ব্যাপারে আপনার সুনির্দিষ্ট ও স্পষ্ট অবস্থান বুঝতে চান। ইন্টারভিউ দিতে আসা কাজ সুনিশ্চিতভাবে আপনার ক্যারিয়ার ও লক্ষ্যের সাথে মেলে কিনা সেটাই জানা এই প্রশ্নের আসল উদ্দেশ্য।
এই প্রশ্নের জবাবে অবশ্যই ইন্টারভিউ দিতে আসা কোম্পানি সম্বন্ধে আপনার গভীর জ্ঞান ও গবেষণা ইতিবাচকভাবে প্রকাশ করুন। সাথে সাথে জোর দিন এখানে যোগ দিলে আপনি তাদের কোম্পানির উন্নয়নে কী কী অবদান রাখতে চান তার দিকে। আপনার উত্তরের মধ্য দিয়ে প্রশ্নকর্তাকে বুঝিয়ে দিন আপনি কেন এই পদের জন্য নিজেকে যোগ্য মনে করছেন।
আপনার উত্তর হতে পারে এমন: “আমি আপনার কোম্পানি সম্বন্ধে অনেকগুলো নিবন্ধ ও প্রতিবেদন পড়েছি। আপনাদের বাৎসরিক হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে দেখেছি আপনার কোম্পানি খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে এবং ইতিমধ্যে গ্রাহকের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। ব্যক্তি জীবনে আমার নৈতিক অবস্থানের কারনেই আমি আপনার কোম্পানির হয়ে কাজ করতে চাই। আমার নৈতিকতা ও দক্ষতা দিয়ে এমন অবদান রাখতে চাই যা কোম্পানির এবং আমার সম্মান বৃদ্ধি করবে।”