চাকরির সাক্ষাৎকার নিয়ে আমি ইতিমধ্যে ধারাবাহিকভাবে ৩টি নিবন্ধ লিখেছি। আজ এই ধারাবাহিক লেখার ৪র্থ ও শেষ পর্ব। সুতরাং আজ আর কোনো দীর্ঘ ভূমিকা নয়।আজ কথা বলব এমন কিছু প্রশ্ন নিয়ে যার উত্তরে নিজের সকল সৃজনশীল ক্ষমতার প্রকাশ ঘটিয়ে হয়ে উঠতে পারবেন সাক্ষাৎকার গ্রহীতার পছন্দের আবেদনকারী।
কেন এই চাকরির জন্য আমরা আপনাকে নির্বাচন করবে?
অনেক আবেদনকারীর কাছে এই প্রশ্নটি কোনো চাকরির সাক্ষাৎকারের সবচেয়ে বিদঘুটে প্রশ্ন! কেননা আপাতদৃষ্টিতে প্রশ্নটি শুনলে প্রথমেই মনে হবে, কেনো নির্বাচন করবে সেটা তো কোম্পানির ব্যাপার। আমি জানব কিভাবে? কিন্তু না। ভাল করে ভেবে দেখুন আপনার যোগ্যতা যথাযথভাবে কেবল আপনিই জানেন। সুতরাং আপনিই বলতে পারবেন কেনো কোম্পানি এই কাজের জন্য আপনাকে নির্বাচন করবে।
অন্য কথায় বলা যায়, কোম্পানির জন্য আপনি কী করতে চান তা প্রকাশ করার এটি চমৎকার একটি সুযোগ। আপনি এই পদে কী কী অর্জন করতে চান আর তার বিপরীতে কোম্পানিকে কী দিতে চান সেটা এই প্রশ্নের জবাবে স্পষ্ট হয়ে উঠবে। মনে রাখবেন, নিজেকে কোম্পানির কাছে বেচে দেওয়ার এটিই সুবর্ণ সুযোগ।
আপনার কথার মধ্য দিয়ে নিশ্চিত করুন, এই কাজের জন্য কোম্পানির প্রত্যাশা অনুযায়ী যে ধরনের দক্ষতার প্রয়োজন তা আপনার আছে এবং আপনার অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতার কারণে আপনি এই কাজের জন্য নিজেকে উপযুক্ত মনে করছেন। তবে চেষ্টা করুন যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত আকারে বলতে।
আপনার উত্তর হতে পারে এমন: “আমার খুব ভাল ব্যবস্থাপনা দক্ষতা আছে, যা আমি আপনার কোম্পনিতে প্রয়োগ করতে চাই। আমার বিশ্বাস সুযোগ পেলে আমি আপনার কোম্পানির গুরুত্বপর্ণ সম্পদে পরিণত হব। আপনার চাকরির বিবরণী পড়েই আমার মনে হয়েছে আপনি সম্ভবত আমাকেই খুঁজছেন, কেননা এখানে উল্লেখিত সব বিষয় প্রায় আমার ভাবনার সাথে মিলে যায়। সুতরাং সব মিলিয়ে আমি চূড়ান্তভাবে আপনার টিমের একজন হতে চাই।”
পরবর্তী ৫ বছরে আপনি নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
এই প্রশ্নের উত্তর শুনে প্রশ্নকর্তা বুঝে যাবে আপনার ব্যক্তিগত ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় কোম্পানি কতটা লাভবান হবে বা সামনের দিনে আপনি কোম্পানির জন্য কতটা আন্তরিক হয়ে কাজ করবেন। সুতরাং এই প্রশ্নের উত্তর এমন ভাবে দিন যেন প্রশ্নকর্তা নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারে আপনি দীর্ঘমেয়াদে বিশ্বস্ততার সাথে এই কোম্পানিতে শ্রম দিতে ইচ্ছুক।
এক্ষেত্রে আপনার উত্তর হতে পারে: “আমি সত্যি এমন একটি কোম্পানি খুঁজছিলাম যেখানে আমি নিজের উন্নতি চোখের সামনে দেখতে পাব, নতুন নতুন দক্ষতা অর্জন করব এবং তার ভিত্তিতে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং দায়িত্ব গ্রহণ করব। আমার খুবই পছন্দ হয়েছে যে, আপনারা ক্যারিয়ার উন্নয়নে বিনিয়োগ করেন এবং আমি মনে করি এটা আমার দক্ষতা উন্নয়নের জন্য খুবই চমৎকার একটি সুযোগ, যার ফলে আমি সম্পূর্ণরূপে আপনার কোম্পানির জন্য নিজের সেরাটা দিতে সক্ষম হবো।”
আপনি কত টাকা বেতন প্রত্যাশা করেন?
অনেক চাকরি প্রত্যাশীর কাছে এটি খুবই বিব্রতকর প্রশ্ন হয়ে ওঠে। তারপর যদি এই চাকরির বেতন সম্বন্ধে তার কোনো ধারণাই না থাকে তবে তা আরও বিদঘুটে হয়ে দাঁড়ায়। অনেকে নিজের সম্ভাব্য সম্মানী নিজের মুখে বলতে লজ্জাবোধ করেন, অনেকে অপমান বোধ করেন, আবার কেউ কেউ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে থাকেন।
এই প্রশ্নের মোকাবেলা করতে হলে আপনাকে সাক্ষাৎকারে বসার আগে কিছুটা প্রস্তুতি নিতে হবে। ইন্টারনেট ঘেটে বা অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ নিয়ে আপনার কাঙ্ক্ষিত চাকরির সম্ভাব্য বেতন সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে, যেন আপনি একটি বাস্তবসম্মত অঙ্ক বলতে পারেন। সাথে সাথে নিজের যোগ্যতার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো লজ্জা রাখাও উচিত না অথবা নিজের ভাগ্য পরীক্ষা করাও উচিত না। আপনাকে বাস্তবসম্মত একটি রেঞ্জ বলতে হবে।
যেমন আপনার উত্তর হতে পারে: “আমার পদমর্যাদা ও অর্পিত দায়িত্বের ভিত্তিতেই আমি নিতে চাই। সবদিক বিবেচনা করে আমি ***** টাকার কাছাকাছি কোন অঙ্ক প্রত্যাশা করছি। তবে অবশ্যই আপনাদের বিবেচনা সবার আগে।”
আপনার প্যাশন তথা সবচেয়ে উৎসাহের বিষয় সম্বন্ধে কিছু বলুন।
এই প্রশ্নের উত্তর নিরূপণ করবে আপনি কেমন ধরনের মানুষ। এক্ষেত্রেও আপনার উত্তর যে কাজ এবং ক্যারিয়ার সম্পর্কিত হতে হবে এমন কোন কথা নেই। এবার বরং আপনি কিছুটা মুক্ত হয়ে নিজের সেই উৎসাহের বা ভাললাগা বিষয়ের কথা বলুন যা আপনাকে উজ্জীবিত করে। কাজের সময়ের বাইরে সময় পেলেই আপনি যা করতে পছন্দ করেন।
যেমন আপনার উত্তর হতে পারে: “আমি তরুণ ও কিশোরদের সাথে তাদের নানান কাজে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে যোগ দিতে খুব স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। আবার আমার একটি ডিএসএলআর ক্যামেরাও আছে। সময় পেলে ছবি তুলতেও ভালবাসি।”
আপনার কিছু জানার আছে?
সব চাকরি সাক্ষাৎকারের শেষ পর্বের একটি অবশ্যম্ভাবী প্রশ্ন এটি। এতক্ষণ যে প্রশ্নকর্তারা আপনাকে নানান জটিল প্রশ্ন করে জর্জরিত করেছে এখন তাদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়ার পালা। তাই বলে এই সুযোগ পাওয়ার সাথে সাথে নিজেকে সাক্ষাৎকার গ্রহীতার সমকক্ষ ভাবা বোকামি আবার তাদের প্রস্তাবের বিপরীতে কোন প্রশ্ন নেই বলে জানিয়ে দেওয়াও বোকামি।
তাদের প্রস্তাবের পর আপনার কোন প্রশ্ন নেই – এমন উত্তর আপনার নির্লিপ্ততা বা অনাগ্রহ প্রকাশ করে। তাই না বলার পরিবর্তে এটাও একটা সুযোগ হিসেবে কাজে লাগান। আপনার এমন কোনো দক্ষতা প্রকাশ করুন বা এমন কোনো প্রশ্ন করুন যা সাক্ষাৎকার চলাকালীন আপনার মাথায় এসেছে কিছু বলতে পারেননি।
আপনি চাইলে নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলো থেকে কোনো একটি করতে পারেন। আবার এ জাতীয় কোনো প্রশ্ন নিজ থেকে বেছেও নিতে পারেন।
১. এই পদের দায়িত্ব ও কাজের এরিয়া সম্বন্ধে আরও বিস্তারিত জানতে চাই।
২. এই কাজের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী?
৩. আপনাদের কোম্পানির ব্যবস্থাপনা সম্বন্ধে আরও জানতে চাই।
৪. এই কোম্পানিতে কাজ করার সবচেয়ে ভাল দিক কী?