বর্তমান সময়ে এই প্রবণতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে যে, ভাইবা বোর্ডে অসাধারণ পারফরমেন্স করে বা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশিত কোনো পদের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আবেদন পত্র জমা দিয়েও প্রতিত্তোরে চাকুরী প্রার্থীরা নিয়োগ কর্তাদের থেকে কোনো প্রতিক্রিয়াই জানতে পারছেন না। ২০১২ সালে “ক্যারিয়ার বিল্ডার” কর্তৃক ৩,৯৯১ জন ওয়ার্কার এর উপরে একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়। এই সার্ভের রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ৭৫% ওয়ার্কার দাবী করেছে যে, তারা গত একবছরে বিভিন্ন কোম্পানিতে আবেদন পত্র জমা ও ভাইবা দিয়েছে কিন্তু কোনো নিয়োগকর্তাদের থেকে কোনো সাড়া পাননি।
Source : Monoster.com
এই গবেষণায় উঠে এসেছে যে, ৬০% মানুষ মনে করেন, প্রার্থীদেরকে যেকোনো সিদ্ধান্ত জানাতে হবে! ইন্টারভিউ এরপর নিয়োগকর্তাদের এ নিয়ে মাথা ব্যথা থাকে না। ৪৩% এর অভিমত হলো আবেদন করার পর যখন ভাইবা বোর্ডে উপস্থিত হয় তখন বুঝতে পারে যে, প্রকৃতপক্ষে চাকরি এবং চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশিত লেখার সাথে কোনো সাদৃশ্য নাই। ২৯% এর মন্তব্য হলো, নিয়োগকর্তারা আবেদন পত্র যে পেয়েছেন, এ প্রাপ্তি স্বীকারটুকুও জানান না ।
এমন পরিস্থিতি তরুণ-তরুণীদের মধ্যে শুধু হতাশাই সৃষ্টি করছে না বরং তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। চাকরি প্রার্থীরা আবেদনপত্র জমা বা ভাইবা দিয়ে অপেক্ষার পর অপেক্ষা করতে থাকে তারা ভাবেন হয়তো কোনো ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক সাড়া পাবেন! কিন্তু তাদের অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় না।
নিয়োগকর্তাদের থেকে কোনো সাড়া না পাওয়া বা তারা কেনো প্রতিক্রিয়া জানান না! এ বিষয়ে বিভিন্ন নিয়োগকর্তাদের ও বিশেষজ্ঞদের মতামত পর্যালোচনা করে মুখ্য যে ১০টি কারণ উঠে এসেছে সেগুলো হলো।
১. চাকরি প্রার্থীদের মধ্যে যোগ্যতার তারতম্য
কিছু নিয়োগকর্তারা জানান, একটি পদের বিপরীতে অনেকগুলো আবেদনপত্র জমা পড়ে আবার ভাইবায়ও একটি পদের জন্য কয়েকগুণ প্রার্থীকে ডাকা হয়। আর স্বাভাবিকভাবেই এইসব চাকরি প্রত্যাশিতদের মধ্যে বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতার পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। তখন কম যোগ্যতা সম্পূর্ণদেরকে নিয়ে আর ভাববার সুযোগ হয়ে ওঠে না। তবে তারা এটাও স্বীকার করেন যে, ‘কম যোগ্যতা সম্পন্ন’ এর অর্থ এই না যে, তারা এই পদের জন্য যোগ্য ছিলো না! তাহলে দেখা যাচ্ছে চাকরি পদের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ হয়েও প্রার্থীদের মধ্যে যোগ্যতার তারতম্যের কারণে নিয়োগ কর্তাদের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাচ্ছে না।
২. প্রতিক্রিয়া জানানোর সাথে আইনি ও দায়বদ্ধতার প্রভাব
একজন প্রাক্তন নিয়োগকর্তা বলেন , ” এটা সত্য যে , নিয়োগকর্তাদের থেকে কোন সাড়া পেলে তা প্রার্থীর জন্য বেশ উপকারী কিন্তু এত আবেদন পত্র জমা হয় যে প্রত্যেকের সাথে পৃথক পৃথকভাবে ভাবে যোগাযোগ করা বা মন্তব্য জাননো একটা দূরহ কাজ হয়ে পড়ে । আর আমরা এটা একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যম দিয়ে ব্যতীত করতে পারি না ! আর এটা করতে গেলে আমাদের অনেক আইনি ও দায়বদ্ধগত ঝামেলা পোহাতে হবে”। অধিকাংশই এই ঝামেলায় জড়াতে চায় না।
৩. কোনো নিয়োগকর্তার একক সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য হয় না
একজন ম্যানেজার বলেন , “আমার হয়তো একজন প্রার্থীকে পছন্দ হয় কিন্তু নিয়োগ বোর্ড যদি অন্য কাউকে সিলেক্ট করে তখন তো আমার কিছু করার থাকে না আর পছন্দের প্রার্থী নির্বাচিত না হলে তাকে এমন সিদ্ধান্তের সংবাদ জানানো থেকে না জানানোই শ্রেয় মনে হয়।” আর এরকম পরিস্থিতির শিকার হওয়ার কারণেও অনেক প্রার্থী নিয়োগ কর্তাদের থেকে কোনো সাড়া পান না।
৪. নিয়োগে বিশেষ কোনো ব্যক্তির সুপারিশ কৃত প্রার্থীকে প্রাধান্য প্রদান
একজন সৎ নিয়োগকর্তা বলেন, “প্রার্থীদের মধ্যে এমন কেউ থাকে যে এমন কোন ব্যক্তির সুপারিশ পত্র নিয়ে হাজির হয়। সেই ব্যক্তি এতটাই প্রভাবশালী যে তার সুপারিশকৃত প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। ফলে অন্য এক আবেদনকারী যোগ্য হয়েও কোন ফিডব্যাক পায় না”।
৫. চাকরি দাতাদের সময়ের অপ্রতুলতা
নিয়োগকর্তারা তাদের কাজ নিয়ে এত মশগুল থাকে যে , প্রত্যেক আবেদনকারীকে আলাদা আলাদা ভাবে প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় হয়ে ওঠে না।
৬. পূর্ব নির্ধারিত প্রার্থী থাকা
কিছু নিয়োগকর্তাদাবী করেন,অনেক সময় চাকুরীতে আবেদন চাওয়া হয় শুধু ফর্মালিটি রক্ষার জন্য , নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রার্থী আগেই নির্বাচন করা থাকে। তখন অন্য আবেদনকারীদের নিয়ে কেউ ভাবার প্রয়োজন বোধ করেন না।” যার দরুণ চাকুরী প্রার্থীরা যোগ্যতা সম্পূর্ণ হয়েও নিয়োগকর্তাদের থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানতে পারে না।
৭. চাকরির দুষ্প্রাপ্যতা
বর্তমান সময়ে চাকরি আর সহজলভ্য বিষয় না। তাই আবেদন করলে বা ভাইবা দিলেই যে চাকরি হবে এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। আর চাকরি না হলে প্রার্থীরা নিয়োগকর্তাদের থেকে কোন সাড়াও পায় না।
৮. আবেদনকারীকে ভুলে যাওয়া
অনেক সময় দুর্ঘটনাবশত চাকুরীদাতারা কোনো প্রার্থীর আবেদন বা কাগজপত্র হারিয়ে ফেলে ।কারণ একটা নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হতে দীর্ঘসময় অতিবাহিত হয়। ফলে প্রার্থীকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো সম্ভব হয় না।
৯. চাকরি প্রার্থীদের ভুলত্রুটি
চাকরিদাতাদের থেকে কোনো সাড়া না পাওয়ার জন্য অনেকাংশে প্রার্থীরাও দায়ী। অনেক আবেদনকারী আছে যারা যোগাযোগের যে মাধ্যম উল্লেখ করে সেখানে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায় না। আবার প্রার্থীদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ঘাটতি বিশেষভাবে চোখে পড়ার মতো। যার ফলাফল হিসেবে আবেদনকারী নিয়োগ কর্মকর্তাদের থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানতে পারে না।
১০. নিয়োগ প্রক্রিয়ার জটিল কাঠামো
চাকরিতে নিয়োগ দেওয়ার পদ্ধতি কোন সহজ বিষয় না। বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রার্থীকে যাচাই – বাছাই করে প্রার্থী নির্বাচিত হলে অবশেষে তার সাথে যোগাযোগ করা হয়। আর যে সব আবেদনকারী এই জটিল প্রক্রিয়ার বেড়াজালে ছিটকে পড়ে , তাদের কে কোন ফিডব্যাক জানানো নিয়োগকর্তাদের পক্ষে সম্ভবপর হয়ে ওঠে না।
বর্তমান সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়া গবেষণা এবং চাকুরীদাতা ও প্রার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে এই ১০টি বিষয় প্রাধান ভাবে উঠে এসেছে। যার কারণে আজ চাকরি প্রার্থীরা চাকরিতে আবেদন কিংবা ভাইবা দেওয়ার পর চাকরির নিয়োগকর্তাদের থেকে কোনো ফিডব্যাক জানতে পারেন না এমনকি সাড়াও পান না।