বিদেশে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে ভাষা জানাটা জরুরি। আপনি যদি দেশের বাইরে ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাহলে আপনাকে যেকোনো দ্বিতীয় ভাষা জানতে হবে। আপনার মাতৃভাষা ব্যতীত অন্য যেকোনো ভাষাই হলো আপনার দ্বিতীয় ভাষা। যারা দ্বিভাষী তাদের কাজের সুযোগও দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নিউ আমেরিকান ইকোনমির এক রিপোর্ট বলা হয়েছে, ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সালের এ সময়কালে আমেরিকায় দোভাষী কর্মীদের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এমন অনেক নতুন চাকরি রয়েছে, যেগুলো পেতে হলে আপনাকে দোভাষী বা বহুভাষী হতে হবে। যারা দ্বিতীয় ভাষা আয়ত্ত্ব করেছেন, তাদের জন্য স্বপ্নময় ৬টি চাকরি সম্পর্কে আজকের এই আলোচনা।
১. আন্তর্জাতিক সেলস ম্যানেজার
আপনি যদি বহির্মুখী ও বহুভাষী হয়ে থাকেন, তাহলে সহজেই আন্তর্জাতিক সেলস ম্যানেজার হিসেবে আপনার ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। বহু ধরণের আন্তর্জাতিক পণ্য রয়েছে, আর পণ্যভেদে বিক্রয়ের সেক্টরগুলোও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন, অনেক আন্তর্জাতিক সেলস সেক্টর ‘বিজনেস টু বিজনেস’ বিষয়কে ফোকাস করে থাকে। এক্ষেত্রে এক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যগুলো অন্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে। এমন ধরনের ক্রয়বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করা বেশ জটিল কাজ।
এ কাজ আরো জটিল করে তুলতে পারে যদি যদি সেলস ম্যানেজারের প্রয়োজনীয় ভাষার উপর দক্ষতা না থাকে। আর আপনি যদি বিদেশী ভাষায় দক্ষ হয়ে থাকেন, তাহলে এ ধরণের ক্রয়বিক্রয় আপনার জন্য বেশ সহজ হবে। সংস্কৃতি ও স্থানের ভিন্নতার কারণে ভাষাও ভিন্ন হয়ে থাকে ফলে সেলস ম্যনেজারকে অবশ্যই একাধিক ভাষায় দক্ষতা থাকতে হয়।
যেমন ধরুন, আপনি যদি জিনসেংয়ের ব্যবসা করতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই চাইনিজ ভাষা জানতে হবে। আর সেলস ম্যানেজারদের বেতনও বেশ ভালো হয়। শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরো জানায়, একজন আন্তর্জাতিক সেলস ম্যানেজারের বার্ষিক আয় প্রায় ১১৭, ৯৬০ মার্কিন ডলার। তবে দক্ষতা ও কাজের ধরনের উপর ভিত্তি করে বেতন কমবেশি হয়ে থাকে।
২. স্টাডি এব্রোড কোঅর্ডিনেটর
আপনি যদি বিদেশে শিক্ষাগত ভ্রমণ বিষয়ে অধিক উৎসাহী হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি স্টাডি এব্রোড কোঅর্ডিনেটর হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। বিদেশে উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে ইচ্ছুক স্টুডেন্টদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন, ভর্তি, বিদেশে নিরাপত্তা, ভ্রমণ, থাকা ও খাওয়া থেকে শুরু করে যাবতীয় কার্যক্রমে সাহায্য করে থাকে একজন স্টাডি এব্রোড কোঅর্ডিনেটর। আর এসব কাজগুলো করতে হলে কোঅর্ডিনেটরকে অবশ্যই একাধিক ভাষার উপর দক্ষ হতে হবে।
সাধারণত স্টুডেন্টরা ইংরেজি, স্প্যানিস, ফ্রেঞ্চ, জার্মান, ইটালিয়ান ও চাইনিজ স্টাডি প্রোগ্রামগুলোতে শিক্ষা অর্জন করতে বিদেশে পাড়ি জমান। তাই আপনার যদি এ ভাষাগুলোর উপর ভালো দক্ষতা থাকে, তাহলে আপনি স্টাডি এব্রোড কোঅর্ডিনেটর হিসেবে নিজের অবস্থানকে সুদৃঢ় করতে পারেন। শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, একজন স্ট্যাডি এব্রোড কোঅর্ডিনেটরের বার্ষিক আয় প্রায় ৯০,৭৬০ মার্কিন ডলার।
৩. ফরেন সার্ভিস অফিসার
আপনি যদি আপনার ভাষার দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ও নিজের দেশের প্রতিনিধি হিসেবে দেশকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে চান, তবে ফরেন সার্ভিস অফিসার হিসেবে আপনার ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। একজন ফরেন সার্ভিস অফিসার বিদেশে অবস্থান করে নিজ দেশের কল্যাণে অন্য দেশের সাথে বিভিন্ন কল্যাণমূলক চুক্তি ও সমঝোতা স্বাক্ষর করেন। এছাড়া নিজ দেশের নিরাপত্তা বিধানের জন্য তিনি নিরলসভাবে পরিশ্রম করে থাকেন।
আর এসব কাজগুলো করতে হলে অবশ্যই দ্বিতীয় ভাষার উপর দক্ষতা থাকতে হয়। এ পেশাটি বেশ সম্মানজনক, আয়ও বেশ ভালো।
৪. আন্তর্জাতিক উন্নয়ন প্রোগ্রাম অফিসার
আপনি যদি মানুষকে সাহায্য করতে ভালোবাসেন, তাহলে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন প্রোগ্রাম হলো আপনার জন্য স্বপ্নময় ক্যারিয়ারক্ষেত্র। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলো বিভিন্ন দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ, চিকিৎসা, স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পরিবেশ রক্ষাসহ আরো বিভিন্ন ধরণের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। সরকারি ও বেসরকারি উভয় ব্যবস্থাপনায়ই এ ধরণের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন প্রোগ্রামগুলো পরিচালিত হয়। প্রযুক্তিগত ও প্রশাসনিক উভয় ধরণের দক্ষতার ব্যক্তিবর্গ একসাথে এ ধরনের প্রোগ্রামে কাজ করেন।
আর এ কার্যক্রমগুলো যেহেতু বিদেশে পরিচালিত হয়, তাই যে দেশের উন্নয়নে প্রোগ্রাম হাতে নেয়া হয়, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সেদেশের স্থানীয় ভাষায় দক্ষ হতে হয়।
আপনার যদি একাধিক ভাষার উপর দখল থাকে, তবে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন প্রোগ্রামে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রতিযোগীদের থেকে এগিয়ে থাকবেন। আর এ কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার ফলে একদিকে যেমন মানুষের ভালোবাসা পাবেন, তেমনি অর্থও উপার্জন করতে পারেন।
৫. ইন্টেলিজেন্স অপারেটিভ
ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি হলো বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থার ইংরেজি নাম। দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম হাতিয়ার হলো ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি। এরা মূলত গোপনে ও লোকচক্ষুর অন্তরালে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। সিআইএ, মোসাদ, এমএসএস, এফএসবি, বিএনডি ইত্যাদি হলো বিশ্বের নামকরা ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি।
এগুলোতে কাজ করতে হলে উচ্চতর শিক্ষা ডিগ্রির পাশাপাশি বিদেশি ভাষার উপর ভালো দক্ষতা ও অ্যানালাইটিক্যাল যোগ্যতা থাকতে হবে। এসব সংস্থায় পজিশন অনুযায়ী বেতনের তারতম্য হয়ে থাকে। তবে যেকোনো পজিশনে কাজ করে ভালো মানের বেতন পাবেন। কাজের দক্ষতা বৃদ্ধির সাথে সাথে আপনার পদোন্নতিও ঘটতে থাকবে।
৬. বিদেশি সংবাদদাতা
বিদেশের খবর সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন বিদেশি সংবাদসংস্থা গড়ে উঠেছে। এসব সংস্থায় ক্যারিয়ার গড়তে হলে শুধু সাংবাদিকতা ও যোগাযোগ বিষয়ের উপর ডিগ্রি থাকলেই চলবে না, বরং বিদেশি ভাষার উপর ভালো দক্ষতা থাকতে হবে। আপনার যদি দ্বিতীয় কোনো ভাষার উপর ভালো দখল থাকে, তাহলে বিদেশি সংবাদ সংস্থাগুলোতে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেন। একজন সংবাদদাতাকে বিদেশের রাজনৈতিক, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্ঘটনা, যুদ্ধ বিগ্রহসহ বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য ও সংবাদ সংগ্রহ করতে হয়।
এক্ষেত্রে সরেজমিনে ঘটনা দেখা ছাড়াও স্থানীয়দের সাক্ষাৎকার নেওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়। ফলে সেখানকার স্থানীয় ভাষার উপর ভালো দখল ছাড়া সঠিক সংবাদ তুলে আনা সম্ভব নয়। বিদেশী সংবাদসংস্থায় কাজ করে বিভিন্ন স্থানে ফ্রি ভ্রমণ করার পাশাপাশি মোটা অংকের অর্থ পাবেন।
Featured Image: Westernhr.net