সময়ের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বিভিন্ন ধরনের চাকরির ক্ষেত্র গড়ে উঠেছে। চাকরি প্রত্যাশী কিংবা চাকরিতে কর্মরত ব্যক্তিদের যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে, তাদের ক্যারিয়ারকে আরো উন্নত এবং সফল করার লক্ষ্য নিয়ে গড়ে উঠেছে শিক্ষা ও উন্নয়ন ক্ষেত্র। এক্ষেত্রে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মীরা বিভিন্নভাবে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়নে অবদান রেখে চলছে। ফলে শিক্ষা এবং উন্নয়ন ক্ষেত্রের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে এই ক্ষেত্রে কর্মপরিবেশও ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলছে। উপযুক্ত দক্ষতা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা থাকলে, খুব সহজেই এই ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গঠন করা সম্ভব।
Source: lynda.com
আপনি যদি এই ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গঠন করতে চান, তবে কী কী নিয়ম-কানুন আপনাকে অনুসরণ হবে এবং কী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এই ক্ষেত্রের সঙ্গে সংযুক্ত হবেন। এইসব বিষয় সম্পর্কে আপনার স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। অন্যথায় আপনার যোগ্যতা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও, এই ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গঠন করতে ব্যর্থ হবেন। এই সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা, পরামর্শ ও নিয়ম-কানুন সম্পর্কে জানতে, এই আর্টিকেলটি পড়ুন। কারণ আমি এই আর্টিকেলটিতে আলোচনা করবো, কীভাবে শিক্ষা এবং উন্নয়ন ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গঠন করা সম্ভব।
শিক্ষা ও উন্নয়ন ক্ষেত্র কী
একজন ব্যক্তি কীভাবে চাকরি পেতে পারে কিংবা একজন কর্মী কীভাবে তার যোগ্যতা ও দক্ষতার উন্নয়ন করতে পারে, এই সংক্রান্ত বিষয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণ, দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ পাওয়া যায়, এই শিক্ষা ও উন্নয়ন কর্মক্ষেত্র। এই ক্ষেত্রের কর্মকর্তা ও কর্মীরা চাকরির জন্য আবশ্যকীয় বিভিন্ন দক্ষতা, যেমন: ভালো যোগাযোগ স্থাপন, নেতৃত্ব প্রদান, সৃজনশীলতা, তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধানের যোগ্যতা, সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা ইত্যাদি গুণাবলিগুলো উন্নয়নের জন্য, মানুষদের প্রশিক্ষণ প্রদান ও পরিচালনা করে থাকে।
Source: staffnet.manchester.ac.uk
আপনার যদি অন্যকে অনুপ্রেরণা দেওয়ার সক্ষমতা, ভালো যোগাযোগের দক্ষতা, সৃজনশীলতা, সমস্যা সমাধানের সক্ষমতা এবং অন্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মতো যোগ্যতা থাকে, তবে আপনার জন্য উপযুক্ত একটি কর্মক্ষেত্র হচ্ছে এই লার্নিং এন্ড ডেভোলপমেন্ট সেক্টর।
কোথায় কাজ করবেন?
শিক্ষা ও উন্নয়ন ক্ষেত্রের কর্মকর্তারা বিভিন্ন ব্যবসায়িক ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করে থাকে। তবে মানবসম্পদ উন্নয়ন ও বিক্রয় শিল্পে এই ক্ষেত্রের কর্মপরিবেশ সবচেয়ে বেশি বলে মনে করা হয়। আর সময়ের পরিক্রমায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ও শিল্পে এই ক্ষেত্রের কর্মকর্তাদের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিক্ষা ও উন্নয়ন শিল্পের কর্মকর্তা ও কর্মীরা সাধারণত যেসব কর্মক্ষেত্রে কাজ করে থাকে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-
১.বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান
২. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
৩. স্বাস্থ্য সেবা
Source: reed.co.uk
৪. আইন ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান
৫. কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সরকার
৬. প্রশিক্ষণ পরামর্শদাতা
৭. উৎপাদন প্রতিষ্ঠান
৮. প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান
শিক্ষা ও উন্নয়ন ক্ষেত্রের চাকরিসমূহ
শিক্ষা ও উন্নয়ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের চাকরির পদ রয়েছে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই ক্ষেত্রের চাহিদা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, ঠিক তেমনি এই ক্ষেত্রের কর্মপরিবেশ ও চাকরির পদও বেড়ে চলছে। যোগ্যতা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী এই ক্ষেত্রে যেসব চাকরির পদ রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-
১. শিক্ষা ও উন্নয়ন উপদেষ্টা
২. শিক্ষা ও উন্নয়ন ম্যানেজার
৩. শিক্ষা ও উন্নয়ন প্রধান
Source: englishfirst.com
৪. প্রশিক্ষণ প্রকল্প প্রশাসক
৫. বিক্রয় প্রশিক্ষক
৬. শিক্ষানবিশ সমন্বয়কারী
৭.পরামর্শদাতা
কীভাবে চাকরি পাবেন
শিক্ষা ও উন্নয়ন ক্ষেত্রে চাকরি পেতে হলে আপনার দক্ষতা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হবে। শিক্ষা ও উন্নয়ন ক্ষেত্রের নিয়োগকর্তারা, তাদের কর্মকর্তা নিয়োগ প্রদানের ক্ষেত্রে, এই তিনটি বিষয়কেই গুরুত্ব দিয়ে থাকে। চলুন তাহলে আমরা জেনে নিই, কী ধরনের দক্ষতা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হবে, যদি আপনি শিক্ষা এবং উন্নয়ন ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গঠন করতে ইচ্ছা-পোষন করেন।
দক্ষতা
দক্ষতা যেকোনো চাকরির জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। আপনার বিভিন্ন দক্ষতা থাকলে, যেকোনো ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গঠন করা, আপনার জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে। চাকরির কর্মপরিবেশের ভিন্নতা অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন দক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তিদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়ে থাকে।
Source: brightermonday.co.ke
শিক্ষা ও উন্নয়ন কর্মক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের নিয়োগ প্রদানের ক্ষেত্রে, যেসব দক্ষতাগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, সেগুলো হলো-
১.আন্তঃব্যক্তিগত দক্ষতা
২. অনুপ্রেরণা প্রদানের দক্ষতা
৩. সমস্যা সমাধানের দক্ষতা
৪. স্পষ্টভাবে কথা বলার দক্ষতা
৫. সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী সক্ষমতা
৬. চমৎকার সময় ব্যবস্থাপনা
৭. সাংগঠনিক দক্ষতা
অভিজ্ঞতা
শিক্ষা ও উন্নয়ন ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়তে হল, অবশ্যই পূর্ববর্তী কোনো কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। বিশেষ করে নেতৃত্ব, যোগাযোগের দক্ষতা, অন্যকে অনুপ্রেরণা দেওয়ার সক্ষমতা ইত্যাদি গুণাবলির বাস্তব অভিজ্ঞতা, নিয়োগকর্তাদের কাছে আপনার আবেদন পত্রের গুরুত্বকে বাড়িয়ে তুলবে। আবার মানব সম্পদ, বিক্রয়, বাণিজ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলোতে পূর্বে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকলে, তা অন্যান্য প্রার্থীদের তুলনায় আপনাকে এগিয়ে রাখবে।
Source: dailydot.com
যদি আপনার বাস্তব কাজ করার অভিজ্ঞতা না থাকে, তবে হতাশ হওয়ার প্রয়োজন নেই। আপনি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কিছুদিন কাজ করে, সহজেই অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংঘ কিংবা কোনো সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকলে, তা শিক্ষা ও উন্নয়ন ক্ষেত্রে আপনার ক্যারিয়ার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
যোগ্যতা
শিক্ষা ও উন্নয়ন ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গঠন করার ক্ষেত্রে উচ্চতর শিক্ষাগত ডিগ্রি তেমন আবশ্যক নয়। তবে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ডিগ্রি অর্জন করতে পারলে, ক্যারিয়ার গঠন করা সহজ হয়ে যায়। আপনি সিপিআইডিয়ের মতো বিভিন্ন কোর্স করেও, এই ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গঠন করতে পারেন। এই সেক্টরে ক্যারিয়ার গঠন করার ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার চেয়ে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকেই অধিক বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়ে থাকে।
Source: elearningindustry.com
বর্তমানে এই ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গঠন করার জন্য উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে, বিভিন্ন ধরনের কোর্স চালু হয়েছে। অনেকেই এই কোর্সগুলো করে, ইতিমধ্যেই সফল ক্যারিয়ার গঠন করতে সক্ষম হয়েছে।
আপনার যদি যোগ্যতা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা থাকে এবং শিক্ষা ও উন্নয়ন ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গঠন করার ইচ্ছা থাকে। তবে আপনি এই দিকনির্দেশনা ও পরামর্শগুলো প্রতি খেয়াল রেখে পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। তাহলে খুব সহজেই আপনি শিক্ষা ও উন্নয়ন ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন।
Featured Image:Bluearrow.co.uk