স্বাদের লাউ না খাইলেন তো পস্তাইলেন! এমন একটি মজার কথা বেশ প্রচলিত আমাদের এই বাংলায়। কেনই বা পস্তাবেন না? অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের এই বাংলা যে প্রকৃতির সেরা আবিষ্কার। কি নেই এই বাংলায়? গ্রামের মনোরম দৃশ্য, পিঠার মনমাতানো ঘ্রাণ, পুকুরে সদ্য সাত বছরের শিশুর ঝাঁপাঝাঁপি, কাঠালের মনোমুগ্ধকর গন্ধ, লেবুর টাটকা ঘ্রাণ, চা পাতার রঙে রাঙা প্রকৃতি, কিংবা ঝরনার কলকলানি আওয়াজ? কি চাই আপনার? সবক’টাই পাবেন এই বাংলায়। তবে আর লোভ না বাড়িয়ে জেনে নেয়া যাক বাংলার আরেক রাজধানী, চায়ের রাজধানী বলে খ্যাত শ্রীমঙ্গল নিয়ে জানা অজানা যত তথ্য:
শ্রীমঙ্গল মূলত একটি পাহাড়ি এলাকা। যার মাইল থেকে মাইল চা বাগানের মনোরম পরিবেশ আপনি এক ঝলক দেখলে মনে অদ্ভুত একটি প্রকৃতির স্নিগ্ধ জাগানিয়া গন্ধ পাবেন। বিশ্বের সবচেয়ে উন্নতমানের চা এই শ্রীমঙ্গলেই পাওয়া যায়, যার আবার রপ্তানি দর বেশ চড়া।
এই শ্রীমঙ্গল কেবল চায়ের সমৃদ্ধিতেই সীমাবদ্ধ নয়, এখানে চা বাগানের পাশাপাশি রয়েছে লেবু, আনারস, মরিচ প্রভৃতি রকমের বাগান। বাংলাদেশের লেবুর বড় রকমের একটি চাহিদায় শ্রীমঙ্গলের অবদান অস্বীকার করার কোনো জো নেই। শ্রীমঙ্গলের প্রকৃতি কেবল দেশের জনগণের কাছেই নয়, বিদেশি পর্যটকের পছন্দ তালিকার অন্যতম একটি। সুতরাং মন খারাপের দিনে অথবা সদ্য বিবাহিত দম্পতির আমোদ প্রমোদের জন্য শ্রীমঙ্গলই হতে পারে আপনার শুরুর দিকের অন্যতম পছন্দ তালিকার একটি। এক এক করে শ্রীমঙ্গলের সবকটি জায়গার বর্ণনা চলুন জেনে নেয়া যাক-
চিড়িয়াখানা
নিজ উদ্যোগে গড়ে উঠা শ্রীমঙ্গলের একমাত্র চিড়িয়াখানা সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা নামে পরিচিত। স্থানীয় ব্যক্তি বাবু সীতেশের নামানুসারেই এই চিড়িয়াখানাটির নামকরণ করা হয়। সজারু, হরিণ, উল্লুক, ধনেশ পাখি, একাধিক প্রজাতির কাঠাবিড়ালি নিয়েই গড়ে উঠে অপরুপ এই চিড়িয়াখানা। এই চিড়িয়াখানায় যেতে হলে আপনাকে শ্রীমঙ্গলের মূল চৌমুহনী থেকে রিকশা যোগে যেতে হবে। যার জন্য গুণতে হবে ভাড়াবাবদ ১৫-২০ টাকা। প্রবেশ করতে লাগবে ১০ টাকার একটি নোট।
পল্লী
উইকিপিডিয়া সূত্রে জানা যায়, দেশের প্রায় নব্বই শতাংশ চা বাগানই এই শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত। বাগানের শ্রমিকদের একটি বড় অংশই মণিপুরী এবং খাসিয়া জাতিসত্তার। ইংরেজ আমলের শুরু থেকে যখন চা বাগানের হাতেখড়ি সেই থেকেই শ্রমিকদের এই বড় অংশটি শ্রীমঙ্গলে বসবাস করে আসছেন।
সাত রঙের চা
সপ্তম আশ্চর্য পান এ কি জিনিস! আসলেই কিন্তু বিস্মিত হওয়া ছাড়া উপায় নেই, কেননা এটি এমন এক সপ্তম আশ্চর্য যার সাত রঙের অনবদ্য সাতটি স্তর আপনাকে আরও আমেজের মাত্রা দিবে। কথা বলছিলাম বিখ্যাত সে সাত রঙের চা নিয়ে। এক গ্লাস চায়ে সাত সাতটি রঙ। প্রতিটি সাত রঙের চায়ে গুণতে হব আপনাকে ৭০-৮০ টাকা।
হাওর
সিলেট বিভাগের অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার শ্রীমঙ্গল। চা বাগান, চিড়িয়াখানার মতো এই জায়গায় আরও রয়েছে অপরুপ সৌন্দর্যের হাকালুকি হাওর। শ্রাবণের ঝরে পড়া বৃষ্টিতে হাওরের বিল যেন নদীতেই তার আপন শরীর মিশিয়ে তোলে। যার ফলে সৃষ্টি হয় সাগরের ন্যায় প্রকাণ্ড এক জলাশয়ের। বৃষ্টির দিনে হাওড়ের পার ডুবে গিয়ে তৈরি হয় মাছের আবাস্থল হিসেবে। ইঞ্জিন চালিত, হস্ত চালিত দেশীয় নৌকায় ঘুরে দেখা যায় হাওরের নৈসর্গিক রুপ। জেলেদের মাছ ধরা, গান গাওয়া মুগ্ধ করবেই আপনাকে।
চা বাগান
আপনারা চাইলে ঘুরে দেখতে পারেন, চা বাগানের ভেতরে এবং কারখানাগুলোতে। চাইলে আরও দেখতে পারেন বাংলাদেশের একমাত্র চা গবেষণা ইনস্টিটিউট। ভ্রমণ পথে সঙ্গী করে নিতে পারেন বাগানের সাধারণ লোকজনকে। থাকার জন্য চা গবেষণা ক্রেন্দ্রেই অবস্থিত রিসোর্ট ‘টি রিসোর্ট ‘ অত্যন্ত চমৎকার একটি স্থান। বাগানের টিলায় অবস্থিত বিশাল জায়গা নিয়ে নির্মিত এই রিসোর্টে রয়েছে ১২টির মতো কটেজ।
পড়ন্ত কোনো এক বিকেলে প্রিয়জনের সাথে ঘুরে আসবার জন্য স্থানটি অতি লোভনীয়।
মাধবপুর লেক
কিভাবে, আর কখন সৃষ্টি হলো এই লেকের তার হদিস কারো জানা নেই। এখানকার অতি রঞ্জিত প্রাকৃতিক পরিবেশে এক ঢুঁ মেরেই দেখুন না মনে কত শিহরণ জাগে? সময় করে লেকের চারপাশটা ঘুরে দেখতে পারলে নিঃসন্দেহে তা হবে এক দারুণ অভিজ্ঞতা।
বধ্যভূমি
শ্রীমঙ্গল চৌমুহনী থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শ্রীমঙ্গল বধ্যভূমি। প্রতিদিন হাজারো লোকের সমাগম ঘটে এই স্থানে। পাশেই চা বাগান, মাঝে বিশাল এলাকায় লোকজনের ঢ্ল, মোটামুটি আপনাকে চাঙ্গা করে তুলবে।
নীল কন্ঠ চা কেবিন
সাত রঙের চায়ের যেখানে হাতেখড়ি। এই কেবিনে যেতে হলে আপনাকে শ্রীমংগল চৌমুহনী থেকে রিকসা যোগে যেতে হবে। ভাড়া বড়জোর ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা। আপনি চাইলে নিজ উদ্যোগেই আসতে পারেন আমাদের এই শ্রীমংগলে। ঢাকা থেকে আসতে চাইলে ট্রেন পথই সবচেয়ে সুবিধাজনক ব্যবস্থা।
আপনাদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে প্রয়োজনীয় কিছু নাম্বার নিম্নে দেওয়া হল:
শ্যামলী পরিবহণ-০২-৭৫৪০৯৯৩,
০২৭৫৫০০৭১।
সৌদিয়া -০১৯১৯-৬৫৪৮৫৮,০১৯১৯-৬৫৪৮৬১।
স্পেশাল টি রিসোর্টগুলোর ফোন নাম্বার:
হোটেল প্লাজা-৮৬২৬৫২৫,
০১৭১১-৩৩২৬০৫।
হোটেল গ্র্যান্ড সুলতান -০১৫৫২-৬৮৩৪৫৪।
টুর অপারেটরদের নাম্বারগুলো:
গ্রীন বাংলাদেশ টুরস, ফোন : ০২-৮৬৫২২৫৪, ০১৮১৯-৪৮০৫৪০। দ্য গাইড টুরস লিমিটেড, ফোন : ০২-৯৮৮৬৯৮৩, ০১৭১১-৬৯৬৩৩৭। ক্যাপ্টেইন হলিডেজ, ফোন : ০১৯৭৭০৫৮৪৫২।
আপনাদের ভ্রমণ নিরাপদ হোক, শুভকামনা। শ্রীমঙ্গলের পক্ষ থেকে অগ্রিম স্বাগতম।