কোনো মানুষই তার জায়গা থেকে পারফেক্ট নয়। কিন্তু এই কথাটা কি আপনার কর্মক্ষেত্রে কাউকে বুঝানো সম্ভব? এটা এমন এক জায়গা যেখানে আপনাকে সব সময় সচেতন থাকতে হবে, যথাসময়ে কাজ সম্পন্ন করতে হবে এবং সেই কাজে কোনো ধরনের ভুলও থাকা যাবে না! কিন্তু কেউ কি ভুল ইচ্ছা করে করতে চায়? না চাইতেও যদি ভুল হয়েই যায়, তখন কী করবেন? ধরুন আপনার ভুল বা সিদ্ধান্তহীনতার কারণে প্রতিষ্ঠান কোনো একজন ক্লায়েন্ট হারালো বা বড় কোনো চুক্তি মিস হয়ে গেলো, অথবা আপনার ভুলের কারণে একাউন্টিংএ কোনো ঝামেলা হয়ে প্রতিষ্ঠান বেশ বড় একটা এমাউন্টের ক্ষতির মুখে পড়ল। ঠিক সেই সময়ে আপনার করণীয় কী?
এমন কিছু যেমন প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতিকর তেমনি আপনার নিজের ক্যারিয়ারের জন্যেও হুমকি। তাই এমন কিছু হলে মোটেও চুপচাপ বসে থাকা যাবে না। কী করবেন তবে? জেনে নিন কিছু পরামর্শ।
১. শুধরে নেয়া
ভুল তো হয়েই গেছে। তাই বলে কি সাথে সাথে সেই ভুল বা ভুলের কারণে যে মাশুল আপনাকে দিতে হচ্ছে তা ভুলে গেলে চলবে? একদম না! বরং এই ভুল থেকে নিজেকে শুধরে নিতে হবে আপনাকেই। কিন্তু কীভাবে শোধরাবেন ভুল? সবার আগে নিজে জানুন যে আপনার দ্বারা একটি ভুল হয়ে গেছে এবং তাতে প্রতিষ্ঠান কিছুটা হলেও ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বিষয়টি সবার আগে আপনার সুপারভাইজারকে জানান। তার সাথে খোলামেলা আলোচনা করুন এবং আপনি আপনার ভুলগুলো স্বীকার করুন। ঠিক কী কারণে এমন ভুল হলো সেটা তাকে জানান। সব ঘটনাতেই স্পষ্টতা জরুরি।
কর্মক্ষেত্রে ভুল হতেই পারে। তবে শুরুতেই এটিকে শুধরে না নিলে ক্যারিয়ারে পরবর্তীতে দাগ ফেলতে পারে এই ভুলগুলোই। তাই সাবধান হতে হবে আগেই।
আপনার সুপারভাইজারকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলার পর তিনি অনুমতি দিলে কথা বলতে পারেন প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে। তাদেরকে জানান আপনি আপনার কাজে কীভাবে, কোথায় ভুল করেছেন এবং এই ভুল শোধরানোর জন্য আপনার পরবর্তী পরিকল্পনা কী।
২. ক্ষমা চাওয়া
স্কুলে পড়ার সময় আমরা অনেকেই ভাবতাম, ভুল হলে হোক, তবু ক্ষমা চাইব না। তবু এ ধারণার আসলে সঠিক কোন ভিত্তি নেই। কারণ ক্ষমা করতে শেখাটা যেমন জরুরি, তেমন জরুরি ক্ষমা চাইতে শেখাটাও। সেই বয়সে ‘ক্ষমা’ বিষয়টি সবার হয়ত বোধগম্য হয়ে ওঠে না। আর তাই একেকজনের দেখার দৃষ্টিও থাকে একেকরকম। কিন্তু কর্মক্ষেত্র সম্পূর্ণ বিপরীত একটি জায়গা। এখানে ভুল করলে ক্ষমা চাইতে হয় সবার আগে। নইলে ভুল শুধরে নেওয়ার সুযোগ থাকে না। তবে হ্যাঁ, ভুল করলেও ক্ষমা চাওয়ার এবং সেটি প্রকাশের জন্য সবার আগে দেখতে হবে প্রতিষ্ঠানে আপনি কোন অবস্থানে আছেন। যদি সিনিয়র হয়ে থাকেন তবে প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন ব্যক্তিদের সাথে সরাসরি কথা বলুন। আর যদি জুনিয়র বা নতুন জয়েন করেছেন এমন হয়ে থাকে তবে সরাসরি ভুল জানিয়ে রাখুন আপনার সুপারভাইজারকে। উনিই আপনাকে পরবর্তীতে জানাবেন আপনার কী করা উচিত।
ক্ষমা চাওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে; image source: Leading with trust
৩. অপ্রীতিকর অবস্থায় মানিয়ে নিতে শিখুন
কাজে ভুল হলে বেশ কিছু অপ্রীতিকর অবস্থার মুখোমুখি হতে পারেন আপনি। সহকর্মীরা এ সময় নানা ধরনের কটু কথা শোনাতে পারে। অথবা, যা আপনি পছন্দ করেন না তেমন অবস্থারও তৈরি হতে পারে। এমন অবস্থায় আগে নিজেকে সামলে নিন। মানিয়ে নিন অবস্থার সাথে। যখনই এই ধরণের অবস্থায় পড়বেন কয়েক সেকেন্ড চোখ বুজে সেই মানুষটির সাথে হাসিমুখে কথা বলুন। স্বীকার করুন যে আপনি ভুল করেছেন। এবং সেটি শোধরানোর জন্য যথেষ্ট পরিকল্পনাও আপনার রয়েছে।
আর এই ধরনের কটুকথা কিছু সময়ের জন্য আপনার খারাপ লাগলেও মানসিকভাবে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ গ্রহণের জন্য প্রস্তুত করে তোলে। তাই কঠিন পরিস্থিতি সব সময় খারাপ কিছুর জন্য হয় না, বরং ভালো কিছু আসে এখান থেকেই।
৪. অতীত থেকে শিক্ষা নিন
বস অথবা বিশ্বস্ত উর্ধ্বতন যিনিই আছেন তিনি আপনাকে ভুলের পর যে পরামর্শ দেন সেটা মেনে নিয়ে কাজ করুন। তারা আপনাকে জানাবে ভুল থেকে কীভাবে শুধরে নিতে হয়।
ভুল করলে শিক্ষা নিতে হয় সবসময় অতীত থেকেই; image source: Campaign
পরের বার এমন ভুল হবে না আর এবারের ভুলকে শুধরে নিয়ে যথাযথ পরিকল্পনা তাদের সামনে তুলে ধরুন। তারা আপনার পরিকল্পনাকে যাচাই করে আপনাকে জানাবেন। আর মনে রাখবেন, ভুল স্বীকার করাতে ছোট হবার কিছু নেই। বরং এতে আপনার দায়িত্ববোধ আর প্রতিষ্ঠানের প্রতি আনুগত্যই বোঝায়। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়াই দায়িত্ববান কর্মীর পরিচায়ক।
৫. ভবিষ্যতের প্রতিচ্ছবি
একটি ছোট ভুলও কখনো কখনো ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। কিন্তু এমনটি যেন না হয় সেদিকে থাকতে হবে সচেতন। বর্তমানের ভুল যেন ভবিষ্যত কাজের প্রতিচ্ছবি না হয়ে দাঁড়ায়। কিছু সময় চোখ বন্ধ করে নিশ্ছিদ্রভাবে ভাবুন কোন জায়গায় ভুল হলো, কী কারণে হলো, কীভাবে এই ভুল থেকে উতরানো যায়। পরেরবার এই জায়গাগুলোতে যেন আর ভুল না হয় সেজন্য মনকে তৈরি রাখুন।
একটি ভুলও প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠতে পারে পরবর্তী ক্যারিয়ারে; image source: Bartoon Careers
কর্মী ভালো কাজ করলে যেমন প্রতিষ্ঠান যেমন তাকে পুরস্কৃত করে তেমনি সেই কর্মীর দ্বারা ভুল হলে প্রতিষ্ঠান মনঃক্ষুণ্ণ হয়। তাই নিজের কাজের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে সব সময়। যদি এমন হয় যে ভুলের জন্য আপনাকে বর্তমান প্রতিষ্ঠান ছেড়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে যেতে হচ্ছে তবে ভুলগুলো যেন নতুন জায়গায় গিয়ে না হয় সেদিকে সদা দৃষ্টি রাখুন।
৬. ভুল স্বীকার করুন
ভুল করার পর অনেকেই স্বীকার করতে চান না তার কারণেই এই ভুলটি হয়েছে। ফলাফল, সুপারভাইজার থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কেউ খুশি হন না। যে কোনো ভালো কাজই করা হোক না কেন সব কিছুতেই ভুল ধরা হয়। আর এমন অবস্থা যে কোনো সময়ের জন্যই খারাপ। তাই ভুল হলে সবার আগে স্বীকার করতে হবে। হয়ত বস শুরুতে রাগ করবেন কিন্তু পরবর্তীতে দ্রুত তিনি ঠাণ্ডা হয়ে যাবেন আর আপনাকেই ডেকে বলবেন কীভাবে এই ভুল শোধরানো যায়। কাজেই নিজের ভুলের জন্য তাদের সাথে কখনোই দূরত্ব বাড়াবেন না।
৭. অজুহাত দেবেন না কখনো
ভুল ভুলই। একে অজুহাত দিয়ে দূরে রাখা কখনোই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। যে প্রজেক্টটি সম্পন্ন করতে গিয়ে আশানুরূপ ফলাফল আসেনি, সেটি নিয়ে নানা ধরনের অজুহাত না দেখিয়ে স্বীকার করে নিন। দলের যিনি দায়িত্বে আছেন তার সাথে খোলামেলা আলোচনা করুন।
ভুল করলেও সে বিষয়ে অজুহাত দেয়া যাবে না কখনোই; image source: VentureBeat
৮. ভাবনা অনুযায়ী কাজ গুছিয়ে নিন
আপনার হাতে ক্ষমতা আছে। আপনি জানেন আপনি কী করতে চান। তবু যেভাবে চেয়েছেন সেভাবে কাজ হয়নি। ভয়ের কিছু নেই। সবকিছু সব সময় চাওয়ামতো হবে না। বরং যে ভুল আজ করলেন তার পরবর্তী সমাধান কী হবে, সেটা নিয়ে ভেবে সামনে এগিয়ে যান। দেখবেন সবকিছু খুব সহজ হয়ে গিয়েছে।
কাজে ভুল করলেও তা শোধরানোর দায়িত্ব আপনারই; image source: Concernhealth.com
মনে রাখবেন, ভুল মানুষেরই হয়। আর শোধরাতেও হয় মানুষকেই। তবে ভুল করেছেন এর মানে এই নয় যে আপনি আর ভালো কাজ করতে পারবেন না বা অনেক কঠিন কাজ করেই সমাধানের দিকে এগোতে হবে। সহজ পথটিই বেছে নিন সব সময়। সমস্যা আর কঠিন মনে হবে না।
Feature image: My Paralegal Place