সব ধরনের কর্মক্ষেত্রে সাধারণত একই নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে, ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করা হয় না। কিছু কিছু কর্মক্ষেত্রে দেখা যায়, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে অধীনস্থ কর্মচারীদের ঘনিষ্ঠপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। আবার কিছু প্রতিষ্ঠানে দেখা যায়, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে অধীনস্থ কর্মচারীদের তেমন কোনো সম্পর্ক নেই বললেই চলে। ব্যবসার ধরন ও কাজের পরিবেশের উপর ভিত্তি করে, বিভিন্ন স্টাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালিত হয়ে থাকে।
Source: martechadvisor.com
আপনি আপনার অফিসের কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের মধ্যে, কী ধরনের আন্তঃসম্পর্ক রয়েছে, তার উপরে ভিত্তি করেই বুঝতে পারবেন, আপনার অফিসে কী ধরনের ব্যবস্থাপনাশৈলী প্রদর্শিত হয়ে থাকে। নানা ধরনের ব্যবস্থাপনাশৈলীর মধ্যে, অধিক প্রচলিত পাঁচটি ব্যবস্থাপনা রীতি সম্পর্কে জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ুন।
১. স্বৈরাচারী
স্বৈরতন্ত্রী ব্যবস্থাপনা রীতিতে একজন ব্যবস্থাপক তার নিজের স্বাধীন ইচ্ছামতোভাবে ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করে থাকে। ব্যবস্থাপকের অধীনস্থ কিংবা দলের সদস্যদের মতামত প্রকাশের তেমন কোনো সুযোগ নেই। স্বৈরাচারী ব্যবস্থাপক কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্তের ব্যাপারে অন্যের কাছে জিজ্ঞাসা করে না। কোনো বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হলে, এই ধরনের ব্যবস্থাপনা রীতি কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও ব্যবস্থাপক যদি সৎ, বিচক্ষণ ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তি হয়ে থাকে, তবে তিনি এই নীতি অনুসরণ করে ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করলে, সহজেই প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হয়।
Source: workzone.com
আবার ব্যবস্থাপক এই রীতি অনুসরণ করে, নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করলে, প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অশান্তি বিরাজ করতে পারে। এছাড়াও বর্তমান কালের আধুনিক শ্রমিকরা স্বৈরাচারী নেতার অধীনে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে না। আপনার অফিসে যদি এই নীতি বিরাজমান থাকে, তবে আপনি সরাসরি আপনার ব্যবস্থাপকে চ্যালেঞ্জ করবেন না। বরং কৌশল অবলম্বন করে, ব্যবস্থাপকের সঙ্গে সমঝোতাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে কাজ চালিয়ে যেতে থাকুন। এতে কর্মক্ষেত্রে সহজেই নিজেকে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হবেন।
২. গণতান্ত্রিক
স্বৈরতন্ত্রী রীতির ঠিক বিপরীতশৈলী হচ্ছে গণতান্ত্রিক। গণতান্ত্রিক রীতিতে একজন ব্যবস্থাপক তার দলের সকল সদস্যদের, মতামত প্রকাশের সমান সুযোগ দিয়ে থাকে। প্রত্যেককেই তাদের চিন্তা-চেতনা ও মতামতের স্বাধীন প্রকাশ ঘটাতে পারে।
Source: getsling.com
আর অধিক সংখ্যক সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়ে থাকে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা রীতিতে সৃজনশীলতা, যোগাযোগ স্থাপন ও সহযোগিতায় উৎসাহিত করা হয়। কর্মচারীদের স্বায়ত্তশাসনের ধারণা দেওয়া হয় এবং সবার মধ্যে সন্তুষ্ট বিরাজমান থাকে। ব্যবস্থাপনায় গণতান্ত্রিক রীতিতে এতো সুবিধা থাকা সত্ত্বেও, কিছু অসুবিধাও পরিলক্ষিত হয়। অনেক সময়ই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা দেখা দেয়। কখনো কখনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনিশ্চয়তার দিকেও পরিচালিত হয়।
Source: jeannereavesconsulting.com
যেহেতু কোনো নির্দিষ্ট নেতা থাকে না, তাই অনেক সময় ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এ ধরনের অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও ব্যবস্থাপনায় গণতান্ত্রিক রীতি, প্রতিষ্ঠানের সফলতা অর্জনে কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে।
৩. অবাধ নীতি
অবাধ নীতিতে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক সদস্যের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ আছে। এক্ষেত্রে ব্যবস্থাপক নিজের ক্ষমতা অন্যের উপরে চাপিয়ে দেয় না। বরং সকল সদস্য যেনো নিজস্ব স্বাধীনতা বজায় রেখে কাজ চালিয়ে যেতে পারে, সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। দক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে এই নীতি অনুসরণ করলে, ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব। এতে প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মী সহজেই নিজেদের দক্ষতার প্রকাশ ঘটাতে সক্ষম হয়।
Source: reed.co.uk
এই রীতিতে এসব সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও রয়েছে, যেমন: অনেক ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হয় না, কর্মীদের মধ্যে কাজে ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা পরিলক্ষিত হতে পারে ইত্যাদি। আপনার কর্মক্ষেত্রে এই নীতি বিরাজমান থাকলে, আপনি আপনার কাজ ও দায়িত্বকে ভালোভাবে উপভোগ করুন এবং নিজের ক্ষমতার প্রতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠুন। এতে সহজেই চাকরিতে নিজের দক্ষতার প্রমাণ দিতে সক্ষম হবেন।
৪. লেনদেনগত
লেনদেনগত রীতির ব্যবস্থাপক চেষ্টা করে, প্রতিদিনের কাজকর্মগুলো যেনো সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, কোনো কাজ যেনো কোনোভাবেই থেমে না থাকে। ব্যবস্থাপক ব্যবসার রক্ষণাবেক্ষণ ও কর্মীদের কর্মক্ষমতার প্রতি সবসময় খেয়াল রাখার চেষ্টা করে থাকে।
Source: thebalancecareers.com
তাদের মধ্যে অনেকেই কর্মীদের থেকে প্রশংসাসূচক বাক্য শুনতেও পছন্দ করে। তাই আপনি যদি এই রীতির কর্মক্ষেত্রে চাকরি করেন, তবে ব্যবস্থাপকের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করুন এবং বিভিন্ন সময়ে ধন্যবাদসূচক বাক্য উচ্চারণ করুন। এতে কর্মক্ষেত্রে আপনার অবস্থান সহজেই সুদৃঢ় হবে। এই রীতিতে পরিচালিত ব্যবস্থাপনায় ব্যবস্থাপকেরা, প্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান প্রক্রিয়ায় উৎপাদন কর্ম পরিচালনা করতে বেশি পছন্দ করে থাকে।
৫. রূপান্তরমূলক
ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তন ও উন্নয়ন ঘটানোর জন্য কী করা প্রয়োজন, এ বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের কর্মপন্থা ও কৌশল গ্রহণ করে থাকে রূপান্তরমূলক রীতির ব্যবস্থাপক। এই রীতির পরিচালকেরা সব সময়ই চেষ্টা করে, কীভাবে কাজে ভিন্নতা নিয়ে আসা যায়। কোম্পানির ক্রমশ উন্নয়ন ও পরিবর্তন ঘটানোর জন্য, তারা কর্মীদের বিভিন্নভাবে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিয়ে থাকে। আর এতে কর্মীরাও গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে এসে, নিত্যনতুন বিষয়ের প্রকাশ ঘটাতে সক্ষম হয়।
Source: insperity.com
তারা সর্বদা ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করে এবং ব্যক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে অনুপ্রেরণা প্রদান করে। আত্মবিশ্বাসহীন ব্যক্তিও এই রীতির অধীনে কাজ করে, আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে পারে এবং সফল ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। এই শৈলীর এমন সব ইতিবাচক দিকগুলোর পাশাপাশি কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে, যেমন: আবেগ ও প্রবৃত্তি মাঝেমধ্যেই কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাজের প্রতি অন্ধ করে দিতে পারে, এতে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবার কিছুকিছু ক্ষেত্রে কর্মীদের কঠোর পরিশ্রম, উপযুক্ত মূল্যায়ন থেকে বঞ্চিত হয়। এসব নেতিবাচক দিক থাকা সত্ত্বেও, রূপান্তরমূলক রীতি ব্যবস্থাপনাক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে।
Source: smallbizclub.com
অধিকাংশ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমই সাধারণত এই ৫টি শৈলীর কোনো একটিতে পরিচালিত হয়ে থাকে। তাই কাজ শুরু করার আগে, এগুলো সম্পর্কে আপনার ধারণা থাকলে, কর্মক্ষেত্রে নিজেকে সহজেই মানিয়ে নিতে সক্ষম হবেন। আর যদি এই শৈলী ও রীতি সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকে, তবে কর্মক্ষেত্রে গিয়ে ঝামেলায় পড়তে পারেন।
Featured Image:Hubspot.com