সাবেক মার্কিন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা জানেন আমেরিকান সমাজe এবং কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ, শ্বেতাঙ্গ-কৃষাঙ্গ নিয়ে কত ধরনের বৈষম্য রয়েছে। সম্প্রতি লস অ্যাঞ্জেলস এর ‘দি ইউনাইটেড স্টেটস অফ উইমেন সামিট’ এ তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, তিনি এই বৈষম্য দূর করার জন্য সামনে আরো কাজ করে যাবেন। অভিনেত্রী ট্রেসি এলিস রসের সাথে আনুমানিক ৪০ মিনিটের একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানান আমেরিকান সমাজে মানুষের জীবনে এবং কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করার জন্য আরো অনেক বেশি কাজ করে যেতে হবে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, নতুন প্রজন্ম এ ব্যাপারে আরও বেশি অগ্রসর হবে।
১. নারীদের নিজেদের সম্পর্কে ভাবতে হবে সেই সাথে অন্য সকল নারীদেরকে একত্রিত করতে হবে
ক্ষমতা বণ্টনের জন্য যে কাঠামো তৈরি করা হয়েছে সেটিতে নারীদের তেমন কোনো হাত নেই। এই কাঠামোই মূলত নারীদের সকল বাধার অন্যতম অন্তরায়। মিশেল জোর দিয়ে বলেন যে, নারীদেরকে এজন্য নিজেদের অধিকারের জন্য নিজেদেরকেই প্রশ্ন করতে হবে। শুধু নিজেকে প্রশ্ন করলেই হবে না। নিজেকে প্রশ্নের পাশাপাশি একে অন্যকেও প্রশ্ন করতে হবে।
সেই সাথে তিনি আরো বলেন নারীরা যদি নিজেদেরকে সন্দেহের চোখে দেখে তাহলে তারাই একজন আরেকজনের জন্য সর্বনাশ বয়ে আনবেন। তিনি বলেন, “আমরা কেন এখনও এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও ভাবতে পারি না যে আমাদের দেশে একজন নারী প্রেসিডেন্ট হতে পারেন?” এ কথায় তিনি কোথাও বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম উৎক্ষেপণ না করলেও কথার ইশারা তার দিকেই ছিল এটি বোঝা যাচ্ছিল। তিনি বলেন, নারীর ক্ষমতায়নের জন্য নারীদেরকে একত্রিত হয়ে নিজেদেরকে আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, তিনি কাউকে নারীবাদী হতে বলেননি।
কিন্তু ইন্টারভিউতে তিনি প্রশ্ন করেন, “একই জায়গায় অবস্থানরত একজন পুরুষ এবং একজন মহিলাকে কি আমরা সমানভাবে বিচার করি?” “যোগ্যতার পরিমাপকে আমরা কি এখনো পুরুষ এবং নারীকে একসাথে পরিমাপ করতে পারি?”
২. নারীরা যে আসনে বসেন সেই আসনে তাদের সেই আসনের মর্যাদা রাখতে হবে
মিশেল ওবামা বলেন, “আমরা যদি মনে করি আমাদের মেয়েরা বড় বড় স্বপ্ন দেখবে, তাহলে আমাদেরকে আরো বেশি কাজ করতে হবে এবং তাদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দিয়ে যেতে হবে যাতে তারা আগামীতে আরো ভালো করে নেতৃত্ব দিতে পারে” তিনি আরো বলেন, “আমি এখানে কারো সমালোচনা করছি না। কিন্তু আমরা ভুলে গিয়েছে কিভাবে নিকট ভবিষ্যতে এগিয়ে আসা নারীদের জন্য আজকের প্রতিষ্ঠ নারীদের কাজ করতে হবে?”
তিনি আরো বলেন, নারীদেরকে নিজের অধিকার আদায় এবং প্রতিষ্ঠার জন্য সামনে এগিয়ে আসতে হবে। নিজের সম্পর্কে নিজেকেই সচেতন হতে হবে। পরিশ্রম করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
অন্যদেরকে সহযোগিতা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, সবসময় পরিস্থিতি তোমার পক্ষে যাবে এমন কোনো কথা নেই। অনেক ঝুঁকি আসবে সামনে। সেগুলোকে সাহসের সাথে মোকাবিলা করতে হবে। কিন্তু তিনি সেই সাথে আরো বলেন, আমেরিকান সমাজে শুধু মেয়েরা এগিয়ে আসলেই যে সব সমস্যার সমাধান হবে এমন নয়। মেয়েদের পাশাপাশি সচেতন পুরুষদেরও সমঅধিকার এবং কর্মক্ষেত্রে নারীদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে।
৩. বাবা এবং অন্যান্য সকলকে তাদের কথা এবং কাজের মধ্যে সম্বন্বয় রাখতে হবে
মিশেল ওবামা স্মরণ করেন এবং বলেন, তার বাবার ভালোবাসা এবং লালনপালনের কৌশল তাকে অনেক বেশি প্রভাবিত করেছে। তিনি বলেন, “আমার বাবা কখনোই আমার ভাই এবং আমার মধ্যে ভেদাভেদ করেননি।’
বরং আমাদের দু’জনকে একসাথেই বড় করেছেন। তিনি আরো বলেন, “আমাদের পিতা আমাদের দুজনকে সমান শিক্ষা দিয়েছেন সেটি যত ক্ষুদ্র শিক্ষাই হোক না কেন। আমি মেয়ে বলে আমাকে কখনো বঞ্চিত করেননি।”
উপস্থিত সকল পুরুষদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমাদের কাছে দুটি পন্থা নেই। তোমরা তোমাদের মেয়েদেরকে ঘরে গিয়ে অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখাবে, কিন্তু তাদের জন্যই কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি করবে সেটি হবে না। এমন করলে মেয়েরা কখনোই তার স্বপ্নের জানা মেলে আকাশে উড়তে পারবে না। তাদের স্বপ্নগুলো তাহলে কখনোই বাস্তবায়ন হবে না।”
৪. সবার জীবনেই আশা থাকে, শুরু কর ছোট দিয়ে এবং ধীরে ধীরে সেটিকে বড় এবং পরিবর্তন কর
কর্মক্ষেত্রে রাতারাতি সবকিছুর পরিবর্তন হয়ে যাবে, কিংবা সমগ্র পৃথিবী একদিনেই নারীদের উন্নয়নে চিন্তা শুরু করে দিবে অথবা তাদের জন্য সম অধিকারের একটি কর্মক্ষেত্র তৈরি করে দিবে এটি আশা করা উচিত নয়। কোনো কাজই একদিনে সম্ভব নয়। আর এরকম বড় কোনো কাজ তো আরো সম্ভব নয়। এগুলো সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু মিশেল বলেন যে, সময় সাপেক্ষ হলেও ছোট ছোট উদ্যোগ নিয়েই কাজগুলো শুরু করতে হবে।
প্রথমে পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে ছোট ছোট পরিসীমায়। যেমন, তোমার পরিবার এবং বন্ধু-বান্ধব। মিশেল বলেন, “এ কাজটি শুরু করতে পারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং শক্তিশালী। ঘর থেকে শুরু করা এ ছোট্ট পদক্ষেপই ধীরে ধীরে নারীদের ক্ষমতায়ন এবং কর্মক্ষেত্রে নারীদের সম অধিকারে পরবর্তীতে অনেক বড় ভূমিকা রাখবে।
সাবেক মার্কিন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা বরাবরই নারীদের অগ্রযাত্রার জন্য অক্লান্ত কাজ করে যাচ্ছেন। এমনকি বর্তমানে ওয়াইট হাউসে না থেকেও তার এই কাজে তিনি কোনো বাধা আসতে দেননি।