মিলিটারি টেকনোলজি: বাস্তবে ব্যবহৃত যত অবিশ্বাস্য প্রযুক্তি

Source: Pinterest

বিভিন্ন দেশের যুদ্ধের সিনেমায় আমরা নানা রকমের প্রযুক্তির ব্যবহার দেখি। মনমাতানো সেইসব সিনেমায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার দেখে আমাদের মনে প্রায়ই প্রশ্ন জাগে বাস্তবে সেসব প্রযুক্তির অস্তিত্ব আসলেই রয়েছে কিনা। তেমন কিছু মিলিটারির প্রযুক্তি আর অস্ত্র নিয়েই আমাদের এই ফিচার।

১. সি ৪০ পিএস হাইব্রিড হেডসেট

এয়ার সাপোর্ট আর বিভিন্ন প্যারাট্যুপ কমান্ডো মিশনে হেডসেটের ব্যবহার আর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বলার কিছু নেই। তবে মিলিটারি বেজের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, বিমানের ইঞ্জিন অথবা হেলিকপ্টারের ব্লেডের প্রচন্ড শব্দ হেডসেটে যোগাযোগের বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করে।

Source: rankred

আর এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য তৈরি করা হয়েছে এই বিশেষ ধরনের হেডসেটটি।  সি ৪০ পিএস মডেলের হাইব্রিড মিলিটারী গ্রেড হেডসেট তৈরি করা হয়েছে রোবাস্ট ইস্পাত কোরের ক্যাবল আর স্পেশাল মোডিফাইড কলার ক্লিপ দিয়ে। নয়েজ ক্যান্সেলেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি এই হেডসেটটি ২০১২ সাল থেকে বিভিন্ন স্পেশাল ফোর্সে ব্যবহার হয়ে আসছে।

২. টেস টর্চ

স্টার ওয়ারের লাইট ছেবারের সাথে এই জিনিসের বেশ ভালো মিল রয়েছে। বিভিন্ন অপারেশনে দ্রুত দরজা কেটে ফেলা, তালা গলিয়ে ফেলা অথবা লক পিকিংয়ের বিকল্প হিসাবে এই যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয়।

Source: rankred

টেস টর্চের ব্যবহার শুরু হয় ২০১৫ সালে আমেরিকান এয়ার ফোর্সের বিভিন্ন অপারেশনে থেকে। হালকা ওজনের সংকর ধাতুর কাঠামোর এই টেস টর্স ২৭০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা উৎপাদন করতে পারে যা যেকোন কিছুই গলিয়ে ফেলতে সক্ষম।

৩. প্রিজম ২০০ সি ব্যাকপ্যাক

আপনি যদি শত্রুর অবস্থান দেখতে না পারেন তাহলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও নিতে পারবেন না। প্রিজম ২০০ সি ব্যাকপ্যাকে ব্যবহার শুরু হয় ব্রিটিশ স্পেশাল ফোর্সের হাত ধরে। এর কাজ একটাই দেয়াল ভেদ করে শত্রুর অবস্থান নিখুঁতভাবে নির্নয় করা। হোক সেই দেয়াল কনক্রিট, ইস্পাত বা কাঠের।

Source: rankred

প্রিজম ২০০ সি ব্যাকপ্যাকের মাধ্যমে এক্সরে ভিশনের মত সবকিছুর অবস্থান স্পষ্ট দেখা যাবে। যদিও এই ধরনের প্রযুক্তি নতুন কিছু নয়, তবে এই ব্যাগাটি প্রথম ব্যবহৃত প্রযুক্তি যেটা চালনা ও বহন করার জন্য একজন ব্যক্তিই যথেষ্ঠ।

৪. ওয়ান শট এক্সজি

এক কিলোমিটারের দূরবর্তী কোন লক্ষ্যে নিখুঁতভাবে গুলিভেদ করা ৮৭ শতাংশ স্নাইপারের জন্য শ্বাসরুদ্ধকর কাজ বটে। কারন বুলেট তার লক্ষ্যে নিখুঁতভাবে পৌছাবে কিনা তার উপর বিভিন্ন বিষয় নির্ভর করে। যেমন বাতাসের গতি, বাতাসের দিক, বাতাসের আর্দ্রতা, ব্যাক ফোর্স, রাইফেলের এলাইনমেন্ট।

Source: rankred

আর এইসব সমস্যা থেকে স্নাইপারের কষ্টের মুক্তি মিলাতে তৈরি করা হয়েছে ওয়ান শট এক্সজি। প্রায় স্কোপের মতোই দেখতে এই যন্ত্রটি রাইফেলের স্কোপ বা ব্যারেলে বসিয়ে ব্যবহার করা হয়। ২০১৩ সালে ডার্পা ওয়ান শট এক্সজির উৎপাদন শুরু করে। তাদের ভাষ্যমতে এই টেকনোলজি বিভিন্ন ভেরিয়েবলের তথ্য গ্রহণ ও নির্নয় করে স্নাইপারকে নিখুঁত শটের সম্ভবনা বাড়িয়ে দেয়।

৫. স্মাট বুলেট এক্সাটো

ডার্পার হাত ধরেই স্মাট বুলেট এক্সাটোর দেখা মিলেছে। মিসাইলের ছোট সংস্করণ বলা চলে এই বুলেটকে। লক্ষ্য ঠিক করে এই বুলেট ছোড়া হলে প্রয়োজন নিজের গতিপথ পরিবর্তন করে এই বুলেটে তার লক্ষ্যে নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে পারে। কল্পনা করে দেখন, আপনি সাত আট মাইল দূরে থেকে কোন চলন্ত বস্তুকে গুলি করলেন, সেই লক্ষ্যে বুলেট আঘাত হানার সম্ভাবনা কতখানি? শূন্যই বলা চলে। কিন্তু এই স্মার্ট বুলেট নিজের গতিপথ পরিবর্তন করে ঘুরে গিয়ে তার লক্ষ্যে নিখুঁতভাবে আঘাত হানার সম্ভবনা ১০০ ভাগ।

Source: rankred

অপাটিক্যাল গাইডেন্স টেকনোলজির ব্যবহারের সাথে সাথে আবহাওয়া এবং বাতাসের পরিবর্তন হিসাবের পাশাপাশি লক্ষ্যের অবস্থান পরিবর্তনের হিসাবও এই বুলেট করে থাকে। শুধু আমারিকানদের হাতেই এই প্রযুক্তি নেই। ২০১৬ সালে রাশিয়া এক বিবৃতিতে জানায় তাদের তৈরি স্মার্ট বুলেট দশ কিলোমিটার দূরের বস্তুকে আঘাত হানতে সক্ষম।

৬. এক্সোস ২ এস্কেলিটন: রোবটিক স্যুট

রোবটিক স্যুটের আইডিয়া নতুন কিছু নয়। আপনি যদি টম ক্রুসের এজ অফ টুমরো সিনেমাটি দেখে থাকেন তাহলে ভালোভাবে এই ধরনের স্যুটের কথা জেনে থাকবেন। এক্সোস ২ এস্কেলিটনের দেখা মিলেছে ডার্পার হাত ধরেই। এক্সোস ১ এর পরবর্তী জেনারেশন এক্সোস ২।

Source: rankred

এক্সোস ১ থেকে আরো হালকা সংকর ধাতু দিয়ে তৈরি এই রোবটিক স্যুট পূর্ববর্তী ডিজাইনের অর্ধেক পরিমান ব্যাটারির শক্তিতে চলে। সাথে যুক্ত করা হয়েছে আরো উন্নত কন্ট্রোলার এবং স্পেশাল সেন্সর। এছাড়া এ্যলমুনিয়ামের রিইনফোর্সমেন্টের পাশাপাশি ব্যবহার করা হয়েছে উচ্চ প্রেশারের হাইড্রোলিক সিস্টেম, যার ফলে ১৭:১ রেশিও পরিমান ওজনের মালামাল এই রবোটিক স্যুট বহন করতে পারে।

৭. হাইব্রিড ইনসেক্ট মাইক্রো ইলেকট্রো ম্যাকানিকাল সিস্টেম ( হাই এমইএমএস)

সাইন্স ফিকশন বা একশন সিনেমাতে স্পাই দেয় পোকার মত দেখতে ডিভাইস ব্যবহার করতে দেখা যায়। সিনেমা আর উপন্যাসের সেই কাল্পনিক প্রযুক্তিকে বাস্তবতায় রূপ দিয়েছে ডার্পা। দেখে পোকার পিঠে মাইক্রো চিফ বসানো ছাড়া আর কিছু না মনে হলেও,

Source: rankred

এই প্রযুক্তি তৈরি করতে ডার্পার কয়েক যুগের বেশি সময় লেগেছে। তাদের তৈরি এই প্রযুক্তি লং রেঞ্জে অপারেট করতে সক্ষম। সাথে উচ্চ কোয়ালিটির ভিডিও চিত্র এবং শব্দ রেকর্ডের ব্যবস্থা তো আছেই।

৮. কোয়ান্টাম স্টেল্থ ক্যামোফ্লাশ ক্লোথ

জিআই জো সিনেমায় স্টেল্থ ক্যামোফ্লাশের দেখা মিলে। পুরোপুরি সাইন্স ফিকশন থেকে বেরিয়ে আসা এই টেকনোলজি ব্যবহার হচ্ছে গত দশক থেকেই। তবে মিলেনি এর সম্পর্কে বিস্তারিত কোন তথ্য। এর ব্যাপারে এতটাই গোপনীয়তা রাখা হয়েছে যে এর ছবিও প্রকাশিত করা হয়নি।

Source: rankred

তবে জানা যায়, এই কোয়ান্টাম স্টেল্থ ক্যামোফ্লাশ ক্লোথ চোখ অথবা ক্যামেরা থেকে ব্যবহারকারীকে অদৃশ্য তো করেই, সাথে সাথে ইনফ্রারেড আর থার্মাল স্কোপ থেকেও আড়াল রাখতে সক্ষম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *