১৯৯৪ সালে জেফ বেজোসের হাত ধরে গুটি গুটি পায়ে যাত্রা শুরু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজনের। ২৩ বছরের চড়াই উতরাই পাড়ি দিয়ে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির এই কম্পিউটার সাইন্স গ্র্যাজুয়েটের হাত ধরেই অ্যামাজন পরিণত হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে। সাথে সাথে বেজোস হয়ে উঠেছেন বিশ্বের সচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের একজন। ফোর্বসের তালিকায় বিল গেটস আর ওয়ারেন বাফেটের সাথে এক কাতারে চলে এসছেন এই অ্যামাজনের বদৌলতে। তবে শুধু অ্যামাজন নয় তার মালিকানায় রয়েছে মিডিয়া কোম্পানি ‘Washington Post’ আর ‘Blue Origin’ নামের এরোস্পেস কোম্পানি। জেফ বেজোসের এমনই জানা অজানা সব তথ্য নিয়েই এই আর্টিকেল।
বেজোসের এক মিনিটের আয় কত জানেন?
একজন গড়পড়তা সাধারণ আমেরিকানের বার্ষিক আয়ের চেয়ে জেফ বেজোসের এক মিনিটে আয় আরো বেশী। ২০১৬ সালে অ্যামাজনের সিইও আয় করেছেন ১৯.৩ বিলিয়ন। মোটামুটিভাবে প্রতি দিন ৫২ মিলিয়নের কাছাকাছি। ঘন্টার হিসেবে যা দাঁড়ায় ২ মিলিয়ন।
আর প্রতি মিনিটের হিসেবে তা দাঁড়ায় ৩৬ হাজার ডলার। আর অন্যদিকে আমেরিকার ২৫ থেকে ৩৪ বছর বয়সী তরুণ জনগোষ্ঠীর বার্ষিক আয় গড়ে ৩৯ হাজার ডলার।
ছাড়িয়ে গেছেন প্রিন্সটনকে
১৯৮৬ সালে আমেরিকার খ্যাতনামা প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তড়িৎ প্রকৌশল আর কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেন জেফ বেজোস। কিন্তু মূলধনের দিক থেকে ছাড়িয়ে গেছেন তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেও। ২০১৭ সালের মার্চ নাগাদ প্রিন্সটনের মূলধনের পরিমাণ ছিলো ২২.৮ বিলিয়ন, যা জেফ বেজোসের মূলধনের এক চতুর্থাংশ।
কিন্তু জেফ বেজোস তার এই সাফল্যের পিছনে সবসময়ই তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবদানকে স্বীকার করে গেছেন। মনে প্রাণে সহায়তা করে গেছেন বিশ্ববিদ্যলয়কে। ২০১১ সালে তিনি এবং তার স্ত্রী ‘প্রিন্সটন নিউরোসাইন্স ইন্সটিটিউট’ স্থাপনের জন্য ১৫ মিলিয়ন ডলারের অনুদান দিয়েছেন।
বেজোসের জমির পরিমাণ কত?
জমি কেনার দৌড়ে পিছিয়ে নেই বেজোস। আমেরিকায় সবচেয়ে বেশী জমির মালিকের তালিকায় পঁচিশ নাম্বার নামটি বেজোসের।
টেক্সাসের ভ্যান হর্নে ত্রিশ হাজার একরের বিশাল জমির মালিক এই ধনকুবের। এটি মূলত তার মালিকানাধীন এরোস্পেস কোম্পানি Blue Origin এর ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
জমির দামও আকাশচুম্বী
১৯৯৮ সালের কথা, ওয়াশিংটনের মেডিনা এলাকায় ১০ মিলিয়ন ডলারে বেজোস ৫.৫ একরের জমি কিনেছিলেন। পরের বছর যখন অ্যামাজনের বাজারমূল্য দাঁড়ায় ১.৬ বিলিয়ন তখন থেকেই ফোর্বসের সেরা ধনীদের তালিকায় জায়গাটা পাকাপোক্ত করে নেন জেফ বেজোস।
তখন থেকেই বেজোস তার ৫.৫ একরের জমিকে ঘিরে চারপাশে আরো জায়গা কিনতে থাকেন। যা বর্তমানে দশ একরে দাঁড়িয়েছে। আর এই জমির বাজারমূল্যও আকাশচুম্বী, কম করে হলেও ৭০ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।
ওয়াশিংটনের সবচেয়ে বড় বাড়িটি হবে বেজোসের
ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাইজের পর সবচেয়ে বড় ব্যক্তি মালিকানাধীন বাড়িটি হতে যাচ্ছে জেফ বেজোসের। ২০১৭ সালের জানুয়ারীতে ২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে কিনে নিয়েছেন একটি টেক্সটাইল মিউজিয়াম।
টেক্সটাইল মিউজিয়ামটিকে তার পরিকল্পনা অনুযায়ী রুপান্তরিত করা হবে সাতাশ হাজার বর্গ ফুটের বাসযোগ্য বাড়িতে। সহজেই অনুমান করা যায় কি বিশাল প্রাসাদ নির্মাণ করতে যাচ্ছেন আমাজন অধিপতি!
ছাড়িয়ে গেছেন ওয়ারেন বাফেটকে
১৯৯৪ সালে অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠার চার বছরের মাথায় ১৯৯৮ সালেই কোটিপতির খাতায় নাম লেখান বেজোস। সেই বছর ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নিয়ে ওয়ারেন বাফেট ছিলেন বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী।
২০ বছর পরে, বাফেটকে পিছনে ফেলে অনেক দূর এগিয়ে গেছেন জেফ বেজোস। মূলধনের দিক দিয়ে বাফেটের চেয়ে প্রায় ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে এগিয়ে এই মাস্টারমাইন্ড।
টাইমের প্রচ্ছদে বেজোস
১৯৯৯ সালে টাইম ম্যাগাজিনের Person of the Year হিসেবে প্রচ্ছদে জায়গা করে নেন তিনি। ২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবর তিনি কয়েক ঘন্টার জন্যে বিল গেটসকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন। তবে সে সুখ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি, কয়েক ঘন্টা পরেই মাইক্রোসফটের শেয়ারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আবারো বিল গেটস সে জায়গাটি দখল করেন। তবে ফোর্বসের হিসাব অনুযায়ী ৭২.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নিয়ে বিল গেটসের ঘাড়েই নিঃশ্বাস ফেলছেন অ্যামাজন অধিপতি।
দক্ষ ব্যবসায়ী বেজোস
১৯৬৪ সালের ১২ জানুয়ারী নিউ মেক্সিকোতে জন্ম নেওয়া জেফ বেজোস বরাবরই ছিলেন আত্মপ্রত্যয়ী আর দৃঢ়চেতা। ২০১৩ সালে তিনি যখন ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে ‘The Washington Post’ কিনে নিচ্ছিলেন তখন অনেকের মনেই সন্দেহ হচ্ছিলো বেজোসের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা নিয়ে। কিন্তু বেজোস তো দমে যাবার পাত্র নন। ওয়াশিংটন পোস্ট সহ এর সাথে সম্পর্কিত প্রকাশনা ব্যবসাকে ঢেলে সাজিয়ে লাভবান করে তুলেন খুব দ্রুত।
মহাকাশের প্রতি একটু বেশী দুর্বল বেজোস
ছোটবেলা থেকেই মহাকাশের প্রতি দুর্বলতা আছে বেজোসের। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও পৃথিবীর সীমা পেরিয়ে যাওয়ার ইচ্ছাটা ছিলো বেজোসের মনের মাঝেই। ২০০০ সালে তাই এরোস্পেস আর স্পেস ট্রাভেল বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘Blue Origin’ এর যাত্রা শুরু তার হাত ধরেই।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান অক্সফামের মতে, জেফ বেজোস যে গতিতে অগ্রসর হচ্ছেন হয়তো আগামী পঁচিশ বছরের মধ্যে তিনিই হবেন বিশ্বের প্রথম ট্রিলিওনিয়ার।