বিশ্বের ৭ টি চরম প্রতিকূল অঞ্চল

আমাদের এই পৃথিবী বিশাল বৈচিত্র্যে ভরপুর। হাজার হাজার মাইল সমুদ্রের ফেনিল জলরাশি যেমন আছে, তেমনি আছে জলহীন ঊষর মরুভূমি। আছে বন্ধুর পাহাড়, আবার বরফের সাম্রাজ্যও আছে। সব স্থান কী মানুষের বশে পুরোপুরি এসেছে? জানা যাক এমন কিছু অঞ্চল সম্পর্কে যাদের প্রতিকূলতা পুরোপুরি জয় করা এখনো মানুষের পক্ষে সম্ভব হয়নি।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

১. শীতলতম অঞ্চল, এন্টার্কটিকা

পৃথিবীর সবচেয়ে দক্ষিণের অংশ দখল করে আছে এন্টার্কটিকা। এই মহাদেশটি পুরোটাই বরফে ঢাকা। আর এসব বরফের সবচেয়ে কম পুরু বরফখন্ডের পুরুত্ব মাত্র এক কিলোমিটার। ভাবা যায়? বরফের কারণে শুধু প্রচন্ড ঠান্ডাই নয়, এ অঞ্চল জুড়ে ভয়াবহ শুষ্কতা বিরাজ করে। যার ফলে মানুষ তো বটেই, অন্যান্য প্রাণীর জন্যও ওখানে বেঁচে থাকা কষ্টকর। তবে বরফের রাজ্য এন্টার্কটিকার দৃশ্যগুলোও চোখ ধাঁধানোর মতো।

পানিতে আয়রন অক্সাইডের আধিক্যের কারণে ঠিক রক্তের মতো নদীর স্রোত যেমন সামনে দিয়ে বয়ে যাবে, তেমনি সেখানে দেখা যায় দৃষ্টিসীমা যতদূর যায় ততদূর পর্যন্ত বরফের পাহাড়। আবার চোখের সামনে পড়বে পেঙ্গুইনের দল।  যারা এই ভীষণ প্রতিকূলতাকে জয় করতে চান তাদের যেতে হয় বরফের মধ্যে চলার জন্য বিশেষায়িত জাহাজে ও বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে। তবে ২০১৮ সালে প্রথমবারের মত যাত্রীবাহী চার্টার্ড এরোপ্লেন এন্টার্কটিকায়  যাবার কথা রয়েছে। প্রায় -৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার ভয়ঙ্কর ঠান্ডা, প্রতি মুহুর্তে বিপদের ভয় আর বরফে ঢাকা প্রতিকূল পরিবেশে অ্যাডভেঞ্চারের জন্য এন্টার্কটিকার বিকল্প পাবেন না।

২. শুষ্কতম অঞ্চল, আতাকামা মরুভূমি, চিলি

একদিকে প্রশান্ত মহাসাগরের আদিগন্ত জল, আরেকদিকে দুর্গম আন্দিজ পর্বতমালা- মাঝখানে শ শ মাইল জুড়ে বিরান ধূসর অঞ্চল। গাছ তো নেই বটেই, দেখা পাওয়া যাবে না কোনো প্রাণীর টিকিও। পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্ক অঞ্চল আতাকামার পরিবেশ ঠিক এমনই। গত শতাব্দীতে এখানে বৃষ্টিপাত হয়েছে মাত্র ৩-৪ দিন। বিজ্ঞানীরা বলেন, আতাকামার শুষ্ক মাটির সাথে নাকি মঙ্গলগ্রহের মাটির সাদৃশ্য আছে।

{ "slotId": "", "unitType": "in-article", "pubId": "pub-6767816662210766" }

মহাকাশ নিয়ে নির্মিত বেশ কিছু চলচ্চিত্রের শ্যুটিং ও এখানে করা হয়েছে বিভিন্ন সময়। বিশ্বের সবচেয়ে শুষ্ক স্থানের প্রতিকূলতাকে জয় করতে  অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের পছন্দের জায়গার মধ্যে একটি চিলির বিশাল এই মরুভূমি।

৩. ভয়ঙ্করতম সৈকত, গানস বে, দক্ষিণ আফ্রিকা

আটলান্টিকের তীর ঘেঁষে দক্ষিণ আফ্রিকার শহর গানস বে। আর পাঁচটা সমুদ্রতীরের সাথে এর পার্থক্য হলো এর তীরের কাছাকাছি প্রচুর তিমির দেখা মেলে। এছাড়া অক্টোপাস, হাঙরসহ ভয়ংকর সব জলজ প্রাণী তো আছেই।

১৯৯৫ থেকে গানস বে’তে চালু করা হয় কেইজ ডাইভিং অর্থাৎ খাঁচায় পুরে আপনাকে নামিয়ে দেবে হাঙর, তিমি ভরা সমুদ্রের পানিতে। চোখের কয়েক ইঞ্চি সামনে দেখতে পাবেন আপনার দিকেই তেড়ে আসছে দাঁতালো কোনো হিংস্র প্রাণী। অ্যাডভেঞ্চারের জন্য আর কি চান!

৪. সর্বোচ্চ ঝর্ণা, এঞ্জেল ফল, ভেনিজুয়েলা

বিভূতিভূষণের ‘চাঁদের পাহাড়ে’র কথা মনে আছে? শঙ্কর, যে কিনা অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় দক্ষিণ আমেরিকা গিয়েছিল। সেই দক্ষিণ আমেরিকার ভেনিজুয়েলার প্রত্যন্ত জঙ্গলে অবস্থিত আইয়ান-টেপুই পর্বত। এরই এক প্রান্ত যা ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার উঁচু, তা থেকে পতিত ঝর্ণাটি পৃথিবীর সর্বোচ্চ ঝর্ণা।

এত উচ্চতা থেকে নিরন্তর পানির পতন আর এর ফলে সৃষ্ট কুয়াশায় ঘেরা পর্বত পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর স্থান। ঝর্ণাটির উপর দিয়ে প্রথম প্লেন উড়ানো পাইলট জিমি এঞ্জেলের নামানুসারেই এই ঝর্ণাটির নাম করা। প্রতি বছর আফ্রিকার নানা প্রতিকূলতাকে জয় করে এই ঝর্ণা দেখতে আসেন প্রচুর পর্যটক।

৫. উষ্ণতম স্থান, লুত মরুভূমি, ইরান

স্থানীয়দের কাছে এই অঞ্চলটির নাম ‘দাশতে লুত’ যার অর্থ পোড়া রুটি। সম্ভবত ইরানের লুত মরুভূমির উপর দিয়ে বয়ে চলা উত্তপ্ত হাওয়া থেকেই লু হাওয়া কথাটার উৎপত্তি। এই নিয়ে কিংবদন্তী আছে যে, একবার এই মরুর ভেতর দিয়ে গমের চালান নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো এবং মরুভূমির উত্তপ্ততায় সেই গমে আগুন ধরে যায়। এসব কথার পেছনে একটাই কারণ, এই অঞ্চলের অত্যাধিক তাপমাত্রা যা গড়ে প্রায় ৭০ ডিগ্রী সেলসিয়াস।

দিনের বেলা প্রচন্ড উত্তাপে লুত মরুভূমি মানুষসহ যেকোন প্রাণীর জন্যই মৃত্যুফাঁদ। ছবিসূত্র- i.imgur.com

লবণাক্ত বালি ও পাথরে গড়া এই মরুর বেশির ভাগ অংশেই কোনো উদ্ভিদ জন্মে না। অসম্ভব শুষ্ক ও উষ্ণ এই অঞ্চলে মানুষের বসতি অত্যন্ত কম। জীবন বাজি রেখে ঝুঁকি নিয়ে যারা জীবনের স্বাদ নিতে পিছপা হন না, সেসব অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীরাও এই মরুভূমিতে যেতে দ্বিধায় পড়ে যান।

৬. আদ্রতম অঞ্চল, মাসিরাম গ্রাম, মেঘালয়, ভারত

অত্যধিক বৃষ্টিপাতের জন্য ভারতের মেঘালয় রাজ্য এমনিতেই বিখ্যাত। এ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত খাসি পাহাড়ের দক্ষিণে একটি মালভূমির ওপর এই মাসিরাম গ্রামটি অবস্থিত। গ্রামের ঠিক দক্ষিণেই বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলার অংশ। বছরে গড়ে প্রায় ৪৬৭ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হওয়ায় সৃষ্ট অতিরিক্ত আর্দ্রতা ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশের জন্য কৃষিকাজসহ স্বাভাবিক জীবনযাপন এই অঞ্চলে বেশ কঠিন।

সারাবছরই বৃষ্টিতে ভিজে থাকে মেঘালয়ের এই গ্রামটি। ছবিসূত্র- i.ytimg.com

এরকম পরিবেশে সাপখোপ যে বেশি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এই অঞ্চলে আছে প্রচুর পান-সুপারির গাছ আর ছোট ছোট জলাভূমি। পাহাড়ি এই অঞ্চলে পৌঁছানোও অনেক কষ্টসাধ্য হলেও অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীরা প্রতি বছর ভিড় করছেন এই দূর্গম গ্রামে।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

৭. নির্জনতম দ্বীপ, ত্রিস্তান ডা কুনহা, যুক্তরাজ্য

মাঝে মাঝে এমন কোথাও হারিয়ে যেতে মন চায় যেখানে মানুষের কোনো কোলাহল নেই, নেই নিত্যদিনের ঝঞ্ঝাট। ঠিক এমনই শান্ত এক দ্বীপ ত্রিস্তান ডা কুনহা। একদিকে আফ্রিকা, আরেকদিকে দক্ষিণ আমেরিকার মাঝে আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝামাঝি অবস্থান এই দ্বীপটির। বিমানে তো দূরে থাক, দ্বীপটিতে যাওয়ার একমাত্র উপায় নৌকা। তাও আবার মাছ ধরার মৌসুমে। বাকিটা সময় সমুদ্রের ঐ অংশে জলযান চলাচল বিপজ্জনক হওয়ায় দ্বীপটি পৃথিবীর অন্যতম দূর্গম ও নির্জনতম স্থান।

নির্জনতার স্বরূপ হয়তো এ দ্বীপের বাসিন্দারাই ভালো বোঝেন। ছবিসূত্র- ukota.org

সেই ১৫০৬ সালে পর্তুগিজ নাবিকেরা আবিষ্কার করলেও আজ পর্যন্ত দ্বীপটি ব্রিটিশদের অধীনেই আছে। দ্বীপটিতে লোকসংখ্যা সর্বসাকুল্যে ২৬২ জন যাদের বেশিরভাগই আফ্রিকান অথবা ল্যাটিন বংশধর। মাছ ধরা ও কৃষিকাজ এদের প্রধান জীবিকা। পৃথিবীর সেই আদিম নির্জনতা উপভোগের জন্য জায়গাটি অনবদ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *