দেখতে দেখতে চলে গেলো আরো একটি বছর। নতুন বছরটায় মেনে চলুন কয়েকটি অভ্যাস, যেগুলো আপনার শরীর ও মনের জন্য উপকারী। সুস্থ স্বাভাবিক জীবন ও দীর্ঘায়ু পেতে এগুলো যেমন সাহায্য করবে তেমনি আপনার কাজেও জোগাবে নতুন উদ্যম। দেখে নিন কী কী অভ্যাস মেনে চলতে পারেন নতুন বছর থেকে।
১. নজর দিন স্বাস্থ্যের দিকে
নতুন বছরের শুরুটা হোক সুস্বাস্থ্য লাভের মধ্য দিয়ে। অলসতাকে না বলুন প্রথমেই। যতটুকু সম্ভব শারীরিক পরিশ্রম করুন। লিফটের বদলে না হয় সিঁড়িতেই উঠলেন কিংবা অল্প দুরত্বে যাতায়াত করলেন পায়ে হেঁটে।
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখুন ফলমূল, শাক সবজি এবং পান করুন প্রচুর পানি। শরীরের বাড়তি ওজন ঝরিয়ে ফেলুন নিয়ম মেনে। এক্সারসাইজের জন্য যেতে পারেন জিমে। নিয়মিত আগ্রহ ধরে রাখতে একজন সঙ্গীকে সাথে নিতে পারেন। বিভিন্ন ফুড এবং এক্সারসাইজ এ্যাপস আছে যেগুলোর সাহায্যে আপনি জানতে পারবেন সারাদিন কতটুকু ক্যালরি ব্যয় করলেন এবং সচেতন থাকতে পারবেন আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কে।
২. ভ্রমণ করুন
বৈচিত্র্যে ভরপুর এই বিশাল পৃথিবী পুরোপুরি দেখা কারো পক্ষে হয়তো সম্ভব হয়নি, কিন্তু মানুষ হাল ছাড়েনি। তো আপনিও এ বছর থেকে লেগে পড়তে পারেন ভ্রমণে। প্রতি সপ্তাহে না হোক, মাসে একবার অন্তত বেরিয়ে পড়ুন নতুন জায়গার উদ্দেশ্যে, পাহাড়, নদী কিংবা ঐতিহাসিক কোনো স্থাপনায় ।
বন্ধু কিংবা সহকর্মীদের নিয়ে একটি দল বানান, যাদের সাথে বেড়াতে পারেন। মাসিক আয় বা হাত খরচ থেকে একটু করে টাকা জমিয়ে রাখুন বেড়ানোর জন্য । মাসে একবার ভ্রমণে গেলে বছর শেষে আপনার দেখা হয়ে যাবে ১২টি জায়গা।
৩. হতাশা ও দুশ্চিন্তা দূরে রাখুন
দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ আপনার কাজে খারাপ প্রভাব ফেলে, জীবনকে করে দেয় দুর্বিষহ। নতুন বছরে চেষ্টা করুন দুশ্চিন্তা এড়িয়ে চলতে। এতে কাজগুলো করতে পারবেন নির্বিঘ্নে, কাজে মনোযোগও আসবে। সকালে বা রাতে প্রতিদিন মেডিটেশন ও হালকা এক্সারসাইজ এক্ষেত্রে মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে ।
মানসিক চাপ কমাতে বছরের শুরু থেকে কোনো গঠনমূলক কাজে নেমে পড়ুন। হতে পারে সেটা কোনো স্বেচ্ছাসেবামূলক কিংবা শরীরচর্চা অথবা নতুন কোনো কোর্স। যাতে করে আপনি নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারবেন। নিজের দুঃখ নিয়ে ঘরের কোণে বসে না থেকে চারপাশের মানুষকে দেখুন, কেউ থেমে নেই হতাশ হয়ে । তো, দুশ্চিন্তা ও হতাশাকে দূরে রাখুন এ বছর থেকে।
৪. ফাস্টফুড এবং মাদককে না বলুন
কাজের ফাঁকে অথবা ক্লাসের চাপে লাঞ্চ বা ডিনার সময়মতো করা হয় না, করলেও খেতে হয় বাইরের খাবার বা ফাস্টফুড। এতে যেমন মাসে শেষে পকেটেও টান পড়ে তেমনি শরীরের জন্যও বিশেষ সুফল বয়ে আনে না মুখরোচক ফাস্টফুডগুলো। বাইরের ফাস্টফুড খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে বাড়িতে রান্না করা খাবারে অভ্যস্ত হোন এ বছর থেকে। এতে যেমন তৃপ্তি পাবেন, তেমনি প্রয়োজনীয় পুস্টিরও জোগান দেবে ।
যাদের ধুমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস আছে তারা এ বছর থেকে কমিয়ে ফেলুন। যদি একবারে না পারেন তবে গ্রহণের পরিমাণ আস্তে আস্তে কমাতে থাকুন।
৫. শিখুন নতুন কিছু
নতুন বছরে শিখে নিতে পারেন নতুন কিছু। সেটি হতে পারে নতুন কোনো ভাষা, সুস্বাদু রেসিপি বা যেকোনো বাদ্যযন্ত্র।
সাঁতার বা ড্রাইভিংও শিখে ফেলতে পারেন, বাস্তব জীবনে দারুণভাবে কাজে দেয় এই দুটি দক্ষতা । নতুন কিছু শেখা কষ্টকর এবং সময়সাপেক্ষ, তবে হাল ছাড়লে চলবে না । শুরু করুন ছোট ছোট টার্গেট পূরণ করে, আনন্দদায়ক উপায়ে।
৬. প্রিয়জনদের সময় দিন
প্রিয়জনের সাথে সময় কাটানো শরীর এবং মন দুটোর জন্যেই উপকারী । বিভিন্ন কাজে ব্যস্ততা থাকবেই কিন্তু তার মাঝেও সময় রাখুন পরিবার ও বন্ধুদের জন্য।
প্রিয়জনের সান্নিধ্য আপনাকে প্রফুল্ল রাখবে। ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে কোথাও বেড়াতে যেতে পারেন অথবা পুরনো বন্ধু্দের সাথে মেতে উঠুন হাসি ঠাট্টায় কিংবা বাড়িতেই আপ্যায়ন করুন সহকর্মীদের। পরিবারের বয়োজেষ্ঠদেরকেও সময় দিন। তাদের অভিজ্ঞতাও যেমন আপনার কাজে আসবে তেমনি আপনার সান্নিধ্যেও তারা খুশি হবে।
৭. গুছিয়ে নিন নিজেকে
গোছালো থাকা একটি বড় গুণ। এতে করে কাজের জটিলতা অনেক কমে আসে এবং কাজের সময় বিরক্তিও কমে আসে । সপ্তাহের কাজগুলো ভাগ করে নিন এবং লিখে রাখুন নোট আকারে। দিন শেষে কিছুক্ষণ সময় রাখুন সারাদিনের কাজের হিসাব মেলাতে এবং পরের দিনের কাজের প্রস্তুতি নিতে।
কয়েকটি ফাইল ও বক্স নিন, প্রয়োজনীয় কাগজ ও জিনিসগুলো গুছিয়ে রাখুন আলাদা আলাদা ফাইলে। বাড়ি বা কাজের জায়গায় এভাবে জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখলে খুঁজে পেতে সুবিধা হবে। এভাবে নতুন বছরে গুছিয়ে নিন নিজেকে।
৮. সেলফোন ব্যবহার কমান
সেলফোন ব্যবহার যে নেশার শামিল সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফেসবুকে একটু ঢুঁ মারতে গিয়ে কখন আপনার মূল্যবান সময় ফুরিয়ে যায় টের পাওয়া যায় না। কাজের সময় ফোন দূরে রাখুন অথবা সাইলেন্ট রাখুন। অবসরে ফোন স্ক্রলের পরিবর্তে নতুন বছর থেকে হাতে নিন পত্রিকা বা বই।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন গড়ে আমরা ১০০ বার ফোন ব্যবহার করি। ফোনে অতিরিক্ত সময় দেওয়া থেকে বিরতির জন্য বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন উপায় বের করেছেন। দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে নিন যখন প্রয়োজনীয় মেইল বা ফেসবুকের নিউজ ফিডটায় ঢুঁ মারবেন ।