ইন্টারনেট সত্যিই এক বিস্ময়কর জগত! একটু বাড়িয়ে বললে এটি এমন একটি শক্তিশালী মাধ্যম যার পজিটিভ বা ইতিবাচক ব্যবহার যেমন আপনাকে করে তুলবে প্রোডাকটিভ বা উৎপাদনক্ষম। এর নেগেটিভ বা নেতিবাচক ব্যবহার আপনার জীবনকে এলোমেলো করে তোলার জন্য যথেষ্ট। ইন্টারনেটের ব্যবহারের কথা আসলে প্রথমেই আসে আমরা কে কত সময় ওয়েবসাইগুলোতে ব্যয় করছি। পরিসংখ্যান বলছে ইন্টারনেটের সার্ফেস ওয়েবে (Surface Web) বর্তমানে প্রায় ১ বিলিয়ন ওয়েবসাইট বিদ্যমান।
প্রশ্ন হলো, এতসংখ্যক ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যে প্রোডাকটিভ তথা কার্যকরী সাইটগুলো খুঁজে পাওয়া একটু বেশিই কষ্টকর। এই কষ্টকে উপলব্ধি করে আপনার দৈনন্দিন প্রোডাকটিভিটির মাত্রাকে অন্য লেভেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য দুই পর্বে থাকছে অসাধারণ কিছু ওয়েবসাইট এবং কিছু সফটওয়্যার বা টুলস। দুই পর্বের এই ধারাবাহিকতায় আজ থাকছে এমন কিছু সফটওয়্যার বা টুলস যা আপনার প্রতিদিনের কাজকে করে তুলবে অতিমাত্রায় প্রোডাকটিভ।
ট্রেলো
ছাত্র কিংবা প্রফেশনাল জীবনে আমাদের বিভিন্নরকম প্রজেক্ট করতে হয়। এই সময়টাতে কাজ এবং সময় এ দুইটির ব্যালেন্স তথা ভারসাম্য রক্ষা করা খুবেই জরুরী। আর এই ভারসাম্য রক্ষায় ট্রেলো (Trello) হতে পারে অসাধারণ একটি টুলস। কেননা ২০১৭ সালে ৯.৮ রেটিং নিয়ে সেরা প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার এটি ।
এর অন্যতম সুবিধাগুলোর মধ্যে আছে ইন-লাইন এডিটিং, ড্রাগ এন্ড ড্রপ ফাংশন, চেক লিস্ট, ফাইল আপলোড, ডাটা ফিল্টারিং, অ্যাকটিভ লগ, ভোটিং ফিচার সহ আরও অনেক কিছু। এছাড়াও পাবলিক এবং প্রাইভেটভাবে ব্যবহারের পাশাপাশি সম্পূর্ণ ফ্রি এই সফটওয়্যারটি ওয়েব, অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস (IOS) তিন মাধ্যমেই আপনি ব্যবহার করত পারবেন।
ওয়ানডারলিস্ট
এক কথায় বললে এটিও একটি প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার। কোনো কারণে শক্তিশালী ট্রেলো ভাল না লাগলে ব্যবহার করতে পারেন ওয়ানডারলিস্ট। প্রায় সব ধরনের ফিচার সহ এটিও আপনি সব প্লাটফর্মই ব্যবহার করতে পারবেন।
এভারনোট
প্রতিনিয়ত আপনার কর্মদক্ষতাকে বাড়াতে নোট লেখার গুরুত্ব অপরিসীম। নোট লেখার কাজটি আরও সহজ করার জন্য এভারনোটকে (Evernote) রাখতে পারেন পছন্দের শীর্ষে। কারণ দৈনন্দিন কাজকে স্মার্টভাবে করার জন্য এটি অসাধারণ একটি টুলস বা সফটওয়্যার।
এর প্রিমিয়াম ফিচারগুলোর মধ্যে অফলাইন নোট, প্রতিমাসে প্রায় ১০ জিবি ফাইল আপলোডের সাথে থাকছে সর্বোচ্চ ২০০ এমবি পর্যন্ত নোটের সুবিধা, বিজনেস কার্ড স্ক্যানিং, প্রেজেন্টেশন মুড, অক্যাউন্ট সুইচিং, দ্রুত ইমেজ রিকগনিশন, পিডিএফ এবং ডক সার্চিংয়ের পাশাপাশি থাকছে পিডিএফ এডিটের সুবিধাও। সব ডিভাইস উপযোগী হওয়ায় খুব স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করতে পারবেন এটি।
গুগল কিপ
নোট ম্যানেজমেন্টে এভারনোটের খুব কাছের প্রতিদ্বন্দ্বী গুগল কিপ (Google Keep)। এভারনোটের মতো এত ফিচার না থাকলেও গুগলের তৈরী এই টুলটি টু-ডু লিস্ট তৈরীতে অনেক জনপ্রিয়।
এর বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে সুপার ইজি চেকলিস্ট তৈরী, হোম স্ক্রিনে চেকলিস্ট দেখার সুযোগ, লিস্ট অরগানাইজড এবং রিমাইন্ডার অন্যতম। এছাড়াও বন্ধুদের সাথে শেয়ারের পাশাপাশি অফলাইনে ব্যবহার করার সুযোগ তো থাকছেই।
গুগল ক্যালেন্ডার
আপনার কর্মব্যস্ত জীবনে কখন কী করবেন কোন মিটিংয়ে কখন উপস্থিত হবেন সবকিছু মনে রাখা একটু কষ্টকর। কিন্তু এমন হতো যদি, আপনার হাতে থাকা ফোনটি কোন সময়ে কোন কাজটি করতে হবে তার রিমাইন্ডার দিত তাহলে কেমন হতো বলুন তো।
বলে রাখা ভাল, প্রায় প্রত্যেকটি ফোনেই রিমান্ডার অপশন থাকলেও এগুলো খুবই জটিল প্রসেসে করা। কিন্তু আপনি খুব সহজভাবে রিমাইন্ডার সেবাটি পাচ্ছেন গুগল ক্যালেন্ডারের মাধ্যমে। এর জন্য আপনাকে যেটা করতে হবে, কোন সময়ে কোন নির্দিষ্ট কাজটি করবেন সেটি সেট করতে হবে। যারা প্রতিনিয়ত কাজ ভুলে যান তারা আজই শুরু করে দিন এই টুলসি ব্যবহার।
মেগা
ব্যক্তিগত ফাইল সংরক্ষণ করার জন্য বহুল ব্যবহৃত টুলসটি হচ্ছে গুগল ড্রাইভ। কিন্তু সমস্যা হলো গুগল ড্রাইভে ১৫ জিবির বেশি ফাইল সংরক্ষণ করা যায় না।
এর সমাধান স্বরুপ আপনি আজই ব্যবহার করতে পারেন মেগা (Mega)। এখানে ৫০ জিবি পর্যন্ত ফাইল সেভ রাখতে পারবেন সম্পূর্ণ ফ্রি এবং নিরাপত্তার দিক থেকেও এটি অসাধারণ।
ড্রপবক্স
️ক্লাউডে ডাটা ব্যাকআপে রাখার বহুল ব্যবহৃত ও সবচেয়ে নিরাপদ মাধ্যম হচ্ছে ড্রপবক্স (Dropbox)। বর্তমানে প্রায় ৫০০ মিলিয়নের বেশী ব্যবহারকারী এটি ব্যবহার করছেন। তবে মাত্র ২ জিবি পর্যন্ত ডাটা রাখাতে পারবেন এখানে।
ওয়ান ড্রাইভ
উইন্ডোজ ব্যবহারকারীদের ডাটা ব্যাকআপ রাখার জন্য ওয়ান ড্রাইভ বেশ ভালো টুলস যার মাধ্যমে আপনি প্রায় ৫ জিবি পর্যন্ত ডাটা ফ্রি রাখতে পারবেন।
এয়ারটেবিল
প্রোগ্রামিং ছাড়া নিজেই নিজের ডাটাবেজ তৈরী করবেন কত মজার, তাই না? প্রতিদিন, প্রতিমাসে কিংবা প্রতিবছরে কী কী গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন সেটা যদি একটি ডাটাবেজের মাধ্যমে গোছালো থাকে তাহলে কত সুবিধার হতো বলুন তো।
আর হ্যাঁ, এই সবিধাগুলো নিতে দেরি না করে শুরু করে দিন এয়ারটেবিলের ব্যবহার। প্রথমে একটু কঠিন মনে হবে কিন্তু সময় নিয়ে অনুশীলন করলে দেখবেন সহজ হয়ে গেছে। আর এটিকে আরও সহজ করার জন্য ওয়েবসাইটেই পাবেন বেশ কিছু ভিডিও যা দেখলে আরও সহজ হয়ে যাবে।
প্রজেন্টেশন স্লাইড
মাইক্রোসফটের ‘পাওয়ার পয়েন্ট (Microsoft Powerpoint)’, ম্যাক অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীদের জন্য অ্যাপলের ‘কিনোট (Apple Keynote)’ এবং গুগলের ওয়েব ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন ‘গুগল স্লাইডস (Google Slides)’ সম্পর্কে আমরা প্রায় সবাই জানি। কিন্তু এর বাইরেও কিছু অসাধারণ ওয়েবসাইট রয়েছে যেমন Prezi, Slides, Beautiful AI এগুলো ব্যবহার করে আপনি তৈরি করতে পারেন দৃষ্টিনন্দন প্রেজেন্টেশন স্লাইড।
একজন সফল ব্যক্তি হিসাবে নিজেকে পরিচিত করার জন্য দৈনন্দিন কাজে প্রোডাকটিভ তথা কার্যক্ষম হওয়া খুবই প্রয়োজন। আর প্রযুক্তিগত উন্নয়নের এই সময়ে আপনার সফল হওয়ার কঠিন যাত্রাকে টেকনিক্যালি তথা স্মার্টলি সহজ করার জন্য উপরের প্রত্যেকটি টুলস খুবই সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তাহলে দেরি না করে শুরু করে দিন টুলসগুলোর ব্যবহার আর নিজেকে উন্নত করুন – কর্মদক্ষতায় ভরপুর এক অসাধারণ মানুষরূপে।