বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক এবং ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে পরিচালনা, সুন্দর এবং রুচিশীল করতে বর্তমানে অনেকেই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাছে ছুটে যান।
সুন্দর ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে যেকোনো আয়োজন বা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করাই হচ্ছে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট। বিয়ে, জন্মদিন, মেলা, ফ্যাশন শো, অফিসিয়াল মিটিং, সেমিনার,ওয়ার্ক শপ ইত্যাদি যেকোনো আয়োজন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সম্পন্ন করতে পারে। মানুষের কর্মব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় আমাদের দেশে দিন দিন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টর চাহিদা বাড়ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এ সেক্টরটি ক্রমেই প্রসারিত হচ্ছে।
নিঃসন্দেহে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট পরিচালনা করা একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা। তবে এখানে রয়েছে নিজেকে প্রমাণের সুযোগ এবং প্রচুর কাজের ক্ষেত্র। সবদিক বিবেচনা করে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট পেশা হিসেবে লোভনীয় হয়ে উঠেছে।
ফলে আমাদের দেশের অনেকই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। আপনিও যদি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম শুরু করতে চান অথবা নতুন ফার্ম শুরু করেছেন তাহলে আজকের এই পোষ্টটি অবশ্যই আপনার কাজে লাগবে।
আজকে আমরা আলোচনা করব কীভাবে আপনার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্মের প্রচার ও প্রসার করবেন।
ছোট হোক বা বড় সকল ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে প্রচারেই প্রসার। প্রচারেই হয় ব্যবসায়ের সমৃদ্ধি আর উন্নতি। তাই প্রচারটা ব্যবসায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
নেটওয়ার্কিং
গ্রাহক তৈরি করার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে নেটওয়ার্কিং। বর্তমানে যুগে বেশিরভাগ কাজই ব্যক্তিগত যোগাযোগ বা সুপারিশের মাধ্যমে হয়ে থাকে। তাই নেটওয়ার্কিং বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে পরিচিত হবার চেষ্টা করুন এবং নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। যত ভালো যোগাযোগ রক্ষা করতে পারবেন তত ব্যবসায়ের পরিধি বাড়াতে সক্ষম হবেন। সফলতার জন্য যোগাযোগ এবং ব্যবহারই ব্যবসায়ের সবচেয়ে বড় পুঁজি।
এছাড়াও বিভিন্ন ধরণের পেশাগত ইভেন্টগুলোতে অংশগ্রহণ করুন। এসব ইভেন্টে বিভিন্ন পেশার মানুষ একত্রিত হয়ে থাকেন। এভাবে আপনি অনেক মানুষের সাথে পরিচিত হতে পারবেন এবং দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবেন। ভবিষ্যতে এ সম্পর্কগুলো আপনার কাজে লাগতে পারে। সেইসাথে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজন এবং বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া যেমন ফেসবুক, লিঙ্ক এন্ড ইত্যাদির মাধ্যমে নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতে পারেন।
বিজ্ঞাপন
যেকোনো পণ্য বা সেবা প্রচারের জন্য বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত মাধ্যম হচ্ছে বিজ্ঞাপন। টিভি, রেডিও, পত্রিকা, ম্যাগাজিন, বিলবোর্ড, লিফলেট এবং এর সাথে বর্তমানে অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেওয়ার নতুন ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। আপনি আপনার পছন্দ এবং সুবিধা অনুযায়ী উপরোক্ত যেকোনো মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন।
এছাড়াও আরও ছোট ছোট কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে সহজেই আপনার ব্যবসায়ের সেবা সমূহের প্রচার করতে পারবেন।
- লেটার প্যাড ছাপুন।
- অফিসের নামে খাম বানান। কোথায় চিঠি বা ডকুমেন্ট পাঠালে উপরে প্রতিষ্ঠানের নামটা থাকলে তা প্রচার পাবে।
- প্রতিষ্ঠানের নামে একটা ওয়েবসাইট খুলুন এবং আপনাদের কাজ এবং সেবা সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরুন।
- গ্রাহককে সন্তষ্ট করার জন্য মাঝে মধ্যে অতিরিক্ত কোনো সেবা যেমন, পণ্যে ছাড় দেয়া, ফ্রি হোম ডেলিভারি ইত্যাদি প্রদান করুন। যা আপনার ব্যবসায়ের প্রসারের জন্য সহায়ক হবে।
- পত্রিকার সাথে একটি করে লিফলেট দিতে পারেন।
ভিজিটিং কার্ড
ভিজিটিং কার্ড তৈরি করুন। নিজের নামে, অফিসের নামে আলাদা আলাদা। আমরা প্রায় সবাই ভিজিটিং কার্ডের গুরুত্ব ও ব্যবহার সম্পর্কে জানি। অনেকেই মনে করেন, বর্তমানের ইন্টারনেটের যুগে ভিজিটিং কার্ডের খুব একটা প্রয়োজন নেই। কিন্তু ছোট একটি কার্ড হলেও যেকোনো ব্যবসায়ের প্রচার ক্ষেত্রে ভিজিটিং কার্ডের গুরুত্ব অনেক।
যেকোনো নতুন সম্পর্কের সেতুবন্ধন ঘটাতে সহায়তা করে ভিজিটিং কার্ড। ভিজিটিং কার্ডের সাহায্যে যেকোনো অপরিচিত ব্যক্তি আপনার সাথে পরিচিত হতে পারবেন। কারণ আপনার এবং প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত পরিচয় উল্লেখ থাকে ভিজিটিং কার্ডে। আপনি যাদের সাথে কাজ করবেন, যেমন: ফুল ব্যবসায়ী, ফটোগ্রাফার, ক্যাটারিং ব্যবসায়ী তাদের কাছে প্রয়োজনে হোক অথবা অপ্রয়োজনে আপনার ভিজিটিং কার্ডটি দিয়ে রাখুন। যেকোনো সময় কাজে লেগে যেতে পারে।
ইমেইল
বিজ্ঞাপনের আরেকটি অন্যতম মাধ্যম হলো ইমেইল। ইমেইলে প্রচারণার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো আপনি গ্রাহকের শ্রেণি অনুযায়ী একই বার্তা বিভিন্ন ভাবে আলাদা আলাদা গ্রাহকের কাছে পাঠাতে পারবেন, যা অন্য যেকোনো মাধ্যমে প্রায় অসম্ভব।
তাই আপনার টার্গেটকৃত কাস্টমারদের আপনাদের বিভিন্ন সেবাসমূহ, অফার, ছাড় ইত্যাদি সম্পর্কিত তথ্য জানিয়ে মেইল করুন।
ফেসবুক
যেকোনো কোম্পানির সেবা বা পণ্যের বিজ্ঞাপন ইত্যাদির জন্য এখন ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া, বিশেষ করে ফেসবুককে বেছে নিচ্ছেন। কম খরচে এবং অল্প সময়ে ব্যবসায়িক পরিচিতির জন্য এটা একটি অন্যতম প্রচারের মাধ্যম। ফেসবুকে প্রচারণা করলে, আপনার প্রচারণার ফলাফল তাৎক্ষনিক দেখতে পারবেন এবং ফলাফল পর্যালোচনা করতে পারবেন। সেইসাথে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী পুরাতন বিজ্ঞাপন বন্ধ করে নতুন ভাবে বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন। ফেসবুকের ব্যাপক প্রসারের কারণে সহজেই আপনি আপনার বার্তা অন্যের কাছে পৌঁছে দিতে পারবেন।
তাই ব্যবসায়ের প্রচারণা ও বিস্তৃতি, এবং গ্রাহক ধরে রাখার জন্য ফেসবুকে পেইজ খুলুন, সেখানে প্রচারণা চালান। ফেসবুকে নিয়মিত একটিভ থাকুন। নিয়মিত পোষ্ট, ভিডিও এবং সন্তষ্ট গ্রাহকদের রিভিউ সমূহ ফেসবুক পেইজে শেয়ার করুন। আপনার পরিচিতজনদের বলুন, তাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়ও আপনার ব্যবসার কথা প্রচার করতে।
গ্রাহক সেবা
ব্যবসায়ে গ্রাহক ধরে রাখা এবং সন্তষ্ট করার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে কাজের মান উন্নত করা এবং নিজস্বতা দিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টি করা। আপনার প্রদত্ত সেবার উপর নির্ভর করে, গ্রাহক সন্তুষ্ট হয়ে ভবিষ্যতে আপনার প্রতিষ্ঠান থেকে আবার সেবা গ্রহণ করবেন নাকি খারাপ গ্রাহক সেবার কারণে প্রতিজ্ঞা করবে, কখনো আপনার প্রতিষ্ঠান থেকে আর কোনো ধরনের সেবা গ্রহণ করবেন না। সুতরাং আপনার কাজের মান ঠিক রাখতে হবে। আপনার কাজের মান ভালো হলে, বাড়তে থাকবে আপনার কাজের পরিমাণ।
নিম্নলিখিত কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলে, আপনি আপনার ব্যবসায়ে আরও উন্নতি এবং প্রসার ঘটাতে পারবেন,
- ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের উপর কোর্স করতে পারেন। বাংলাদেশে বর্তমানে ছোট বড় অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের উপর কোর্স করানো হয়। এছাড়াও অনলাইনেও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের উপর বিভিন্ন ধরনের কোর্স রয়েছে, যা থেকে আপনি আপনার প্রয়োজন ও পছন্দ অনুযায়ী কোর্স করতে নিতে পারেন।
- ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের পরিচালনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার চেষ্টা করুন। যারা অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করছে, তাদের কাজ করার ধরণ লক্ষ্য করুন। দেখুন, জানুন এবং শিখুন। এসব কর্মজীবনে আপনার কাজে লাগবে। আপনি সঠিকভাবে তখনি শিখতে পারবেন, যখন বাস্তবজ্ঞান অর্জন করবেন।
- যারা ভবিষ্যতে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে সেক্টরে কাজ করতে চান, তারা অধ্যয়নরত অবস্থায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে খন্ডকালীন চাকরি করতে পারেন, তাহলে অভিজ্ঞতা বাড়বে।
- এছাড়াও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে সেক্টরে যারা অভিজ্ঞ তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারেন।
Feature Image: mysmarketingsolutions.com