যে ৮ টি ব্যবহার্য জিনিস শেয়ার করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর

শেয়ারিং মানে কেয়ারিং কথাটা মিথ্যা নয়। ছোটবেলা থেকেই আমরা শিখে আসছি, শুনে আসছি- অন্যের সাথে সুখ, দুঃখ ভাগ করে নাও। ছোটবেলার চিপস চকলেট অন্যদের সাথে ভাগ করে খাওয়া ছাড়াও তরুণ বয়সের ব্যাচেলর বন্ধুদের সাথে জামা কাপড়, চশমা ভাগ করে নেবার গল্প আমাদের সকলেরই মনে থাকার কথা। এই যে খাবার-পরিধেয় কাপড় বা জিনিসপত্র ভাগ করে নেবার বিষয়টা কতটুকু স্বাস্থ্য সম্মত, কখনো ভেবেছেন কী? বিজ্ঞানীরা কিন্তু ঠিকই ভাবেন। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের তালিকা তৈরি করেছেন যেসব জিনিসে অন্যদের ভাগ না দেওয়াই ভালো ।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

যে ৮ টি জিনিস আপনি কখনোই কারো সাথে শেয়ার করবেন না এবং নিজের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করেই কারো সাথে শেয়ার করবেন না সেগুলো নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন।

টুপি

মাথার টুপি -চিরুনি বালিশ কারো সাথেই শেয়ার করবেন না; Image source: brightside

ঠিকই ধরেছেন টুপি! আপনাদের নিশ্চয়ই উকুনের কথা মনে আছে, ছোটবেলায় বন্ধু-বান্ধবীর বা বোনের চিরূনি দিয়ে চুল আঁচড়েছিলেন, ফলাফল মাথা ভর্তি উকুন! তাই মাথায় বা চুলের সংস্পর্শে আসে এমন জিনিস কারও সাথে শেয়ার করবেন না। হতে পারে সেটা টুপি, বালিশের কাভার কিংবা চিরুনি। কেননা মাথায় সারাদিনের ময়লা জমে থাকে। তাই উকুন থেকে শুরু করে খোস পাঁচড়া মাথায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

ক্রিম

মুখের বা গায়ে দেবার ক্রিম কারো সাথে শেয়ার করবেন না; Image source: Brightside

মুখের মাস্ক, সিরাম বা যেকোনো ক্রিম আমাদের ব্যক্তিগত প্রসাধনের মূল বিষয়। ভুলেও কারো সাথে আপনার এই ব্যক্তিগত জিনিস শেয়ার করবেন না। মনে রাখবেন, এইসব ক্রিমও রোগের আবাসস্থল। আমরা যখন ক্রিম ব্যবহার করি, তখন আঙ্গুল ডুবিয়ে ক্রিম ব্যবহার করি। এসময় হাত থেকে জীবাণু যেমন ক্রিমে জমা হয়, তেমনি হাত মুখের চামড়ায় থাকা জীবাণু ক্রিমে চলে আসে।

{ "slotId": "", "unitType": "in-article", "pubId": "pub-6767816662210766" }

আপনি যখন নিজের প্রসাধনী কারো সাথে শেয়ার করবেন, তখন অন্যের শরীরের জীবাণু আপনার ক্রিমে ছড়িয়ে পড়ে। এর থেকে চামড়ায় ফাঙ্গাল ইনফেকশন, র‍্যাশ, খোস-পাঁচড়া নানা রকমের চামড়ার রোগ ছড়ায়। তাই নিজের গরজে এসব জিনিস সাবধানে রাখবেন এবং ক্রিমের কৌটায় জীবাণুর বংশবিস্তার রোধে বায়ু নিরুদ্ধ ক্রিমের কৌটা ব্যবহার করতে পারেন।

আন্ডারগার্মেন্টস এবং মোজা

নিজের ব্যক্তিগত জিনিস যেমন- মোজা। শুধু নিজে ব্যবহার করুন; Image source: Brightside

কোনো ব্যক্তি বিশেষের সবচেয়ে ব্যক্তিগত বিষয় হচ্ছে আন্ডারগার্মেন্টস এবং মোজা। যদিও এই বিষয়টি পরিষ্কার-পরিচ্ছনতার সাধারণ জ্ঞানের মধ্যে পড়ে। তবুও জেনে রাখা দরকার কেন এসব শেয়ার করা উচিত নয়। প্রত্যেক মানুষের বিশেষ অঙ্গের জীবাণু আলাদা আলাদা। তাই কখনোই অন্যের পরিধেয় আন্ডারগার্মেন্টস এবং মোজা পরবেন না। এমনকি দম্পতিগণও এই বিষয়ে সতর্ক থাকবেন, প্রয়োজনে বেশি করে মোজা জমা করে রাখবেন ড্রয়ারে।

টুথব্রাশ, টুথ পিক এবং দাঁতের ফ্লস

নিজের দাঁতের যত্নে সচেতন হোন; Images source: Brightside

আমার মতো আপনিও হয়তো ভাবছেন, ইশ! কেউ কি টুথ ব্রাশ কারো সাথে শেয়ার করে নাকি? না, হয়তো। তবে শিশুরা ভুলে বড়দের টুথ ব্রাশ মুখে দিতে পারে। আমেরিকান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া তথ্য মতে, আপনার  ব্যবহৃত টুথব্রাশ তিন মাসের পুরনো হলে এতে ইকোলাই থেকে শুরু করে খোস- পাঁচড়ার ব্যকাটেরিয়া তৈরি হয়। এমনকি মুখে ইনফেকশনও হতে পারে শুধুমাত্র টুথব্রাশ বা টুথ পিক আদান-প্রদানের মাধ্যমে।

ভ্রমণে ব্রাশ আনতে ভুলে গেছেন? টুথপেস্ট নেই? এমন সমস্যায় যাতে না পড়তে হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। ব্যাগে সবসময় পরিষ্কার তোয়ালে রাখবেন এবং খাবার পর কুলি করতে ভুলবেন না।

শেভিং সেট

মেয়েদের ব্যাগে যেমন নিজস্ব কিছু জিনিস থাকে তেমনি ছেলেদের থাকে শেভিং সেট। কোথাও যাবার সময় নিতে ভুলে গেছেন,  তারপরও অন্যের ব্যবহৃত রেজর ব্যবহার করবেন না। ডাক্তারদের মতে, হেপাটাইটিস, এইডসের মতো রোগগুলো ছড়ায় রেজরের মাধ্যমে। এছাড়া রেজরের মাধ্যমে মুখের জীবাণু যেমন- ব্রণের জীবাণু, ছত্রাক-ব্যাকটেরিয়া ছড়ায়। তাছাড়া শেভিং সেটের অন্যান্য উপাদান যেমন- নখ কাটার মেশিন, চিরুনি এসব জিনিস কারো সাথে শেয়ার করবেন না।

ভ্রমণের আগে নিজের শেভিং সেট ব্যাগে ঢোকান; Image source: Brightside

একটি ব্যাপার খেয়াল রাখবেন, পুরোনো রেজর বেশিদিন ব্যবহার করবেন না এবং বিশেষ করে অন্যের রেজর তো অবশ্যই ব্যবহার করবেন না।

পা পরিষ্কারের ঝামা পাথর 

পায়ের হাইজিনের বিষয়ে সচেতন হোন Image sources: Brightside

পা হচ্ছে আমাদের দেহের বহুল ব্যবহৃত পেশী। শরীরের ওজন নেওয়া থেকে শুরু করে ঘুমানো পর্জন্ত অবিরাম হাঁটায় পায়ের কোষগুলো নষ্ট হয়ে যায় দ্রুত। এতে পা দেখতে খারাপ দেখায়। এই সমস্যার সামধানে ঝামাপাথর দিয়ে পা ঘষে পরিষ্কার করা হয়। এখন মোটামটি সবার বাথরুমে এই পাথর পাওয়া যায়। কোথাও বেড়াতে এসেছেন কিংবা বন্ধুর বাসায় গোসলের সময় ঝামা পাথর দিয়ে পা পরিষ্কার করলেন।

কিন্তু এমন কাজ ভবিষ্যতে আর করবেন না। পা যেমন দেহের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত অঙ্গ ঠিক তেমনি পায়ের মাধ্যমে জীবাণুর প্রথম সংক্রমণ হয়। কেননা পা সরাসরি রাস্তার ধুলো ময়লা আর ঘামের ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে আসে। আপনি যদি অন্যের ব্যবহৃত ঝামা পাথর দিয়ে পা ঘষেন তবে ঐ ঝামা পাথরে থাকা সব জীবাণু ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হবেন। তাই অন্যের ব্যবহার করা ঝামা পাথর ব্যবহার না করে বরং পায়ে পা ঘষে অবাঞ্ছিত মৃত কোষ পরিষ্কার করুন।

এয়ারফোন এবং এয়ারবাড

নিজের এয়ারবাড কারো সাথে শেয়ার করবেন না এমনকি অন্যেরটাও ব্যবহার করবেন না; Image source: Brightside

এখন গান শোনা মানে কানে এয়ারফোন কিংবা এয়ার বাডের ব্যবহার। সঙ্গীত প্রেমীদের কাছে এটা দৈনন্দিন ব্যাপার। রাস্তায় মাঝে মাঝে খেয়াল করে দেখবেন, পাশাপাশি বসা বন্ধুরা নিজেদের এয়ারফোন বা এয়ার বাড একে অন্যের সাথে শেয়ার করে প্রিয় গান শুনছেন। আশা করি, আজকের পর কাজটি বুঝে শুনে করবেন। কারণ কানের ভেতরে থাকা জীবাণু এয়ারবাডের মাধ্যমে ছড়ায়। প্রত্যেক মানুষের শরীরে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের জীবাণু থাকে। তাই এসব বিষয়ে সাবধানতার অবলম্বন খুবই জরুরী।আর একান্তই যদি অন্যের এয়ারফোন দরকার পড়ে তবে অবশ্যই অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল দিয়ে আগে মুছে নেবেন।   

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

ঘরের স্পঞ্জ স্যান্ডেল

রোগ জীবাণু বিস্তার রোধে নিজের স্যান্ডেল আলাদা রাখুন; Image source: Brightside

জানি আপনিও ভ্রু কুঁচকাচ্ছেন। বাড়িতে তো আমরা সবসময় একে অন্যের স্যান্ডেল ব্যবহার করি। কিন্তু না জেনে আমরা যে কি পরিমাণ রোগের বিস্তার নিজেদের মাঝে ঘটাচ্ছি তার ইয়ত্তা নেই। এইসব স্যান্ডেল আমরা যেমন ঘরে পরি, তেমনি ঘরের বাইরেও এই স্যান্ডেল নিয়ে চলাফেরা করি। এভাবে বহুজনের ব্যবহারের ফলে স্যান্ডেলগুলো জীবাণুর গুদামঘর হয়ে পড়ে। তাই নিজের সুস্থতার কথা চিন্তা করে এবং পরিচ্ছন্নতার কথা মাথায় রেখে অবশ্যই নিজের স্যান্ডেল আলাদা করে রাখবেন।

আপনি যদি নিজের বিষয়ে সচেতন মানুষ হন। তবে আজ থেকে এই ৮ টি জিনিস আলাদা করে রাখবেন এবং সাবধানে ব্যবহার করবেন। অনেকে আপনার এই বিশেষ গুণের জন্য শুচিবাই বলবে। কিন্তু মনে রাখবেন, স্বাস্থ্য আপনার। আর স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *