আমরা অনেক সময়ই কাজের অগ্রগতি নিয়ে হতাশায় ভুগি। হতাশার কারণে ভবিষ্যতেও কাজগুলো সুন্দরভাবে করা সম্ভব হয় না। কিন্তু মাত্র এক দিনে আপনি কাজের উন্নতি করতে পারবেন। তার জন্য প্রয়োজন তীব্র ইচ্ছা ও কঠোর পরিশ্রম করার মানসিকতা। কিছু অভ্যাস এবং কাজের মাধ্যমে মাত্র এক দিনেই আপনি কাজের উন্নতি করতে পারবেন। মাত্র এক দিনেই আপনার কাজে উন্নতির জন্য এই ১৬টি পরামর্শ মেনে দেখতে পারেন। প্রথম পর্বের পর থেকে শুরু করছি।
সামাজিকভাবে সক্রিয় থাকুন
পেশাগত কনফারেন্সে যোগ দিন, ম্যাগাজিন, পত্রিকা পড়ুন। পাশাপাশি ক্লাস নিন, ট্রেনিং করুন। এতে আপনার কাজের ব্যাপারে অন্যদের মতামত জানতে পারবেন। আপনার প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে আশেপাশের মানুষদের বলার সুযোগ পাবেন। সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মানুষ আপনার কাজগুলোর প্রতি আরও বেশি আগ্রহী হবে।
যোগাযোগ
আপনার সহকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রাখা জরুরি। কিছু সময় রাখুন তাদের সাথে কফি অথবা লাঞ্চের জন্য। মেইল কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও যোগাযোগ রাখতে পারেন। সহকর্মী কিংবা বসের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকলে আপনার কাজের গতি বেড়ে যাবে।
প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করুন
নিজেকে কিভাবে যোগ্য প্রতিনিধি করে তোলা যায় তার চেষ্টা করুন। নিজের প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করুন সব সময়। যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন হতে পারেন সেখানকার বস, কিংবা সাধারণ একজন কর্মকর্তা। কিন্তু যদি নিজেকে এই প্রতিষ্ঠানের একজন যোগ্য প্রতিনিধি করে তুলতে পারেন তাহলে কাজে উন্নতি করতে পারবেন।
নির্দিষ্ট পরিচয় তৈরি করুন
পণ্য কিংবা কোম্পানির একটি বিশেষ পরিচয় তৈরি করুন। বড় বড় ব্র্যান্ডগুলো কেমন জনপ্রিয় তা নিশ্চয়ই জানেন? তাই এমন একটি পরিচয় তৈরি করুন যা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করবে। যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারণা করা যাবে এবং কোম্পানির পণ্যের সাথে সাথে তাদের লক্ষ্যও জানা যাবে। বিখ্যাত কিছু প্রতিষ্ঠান যেমন ফোর্ড, ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব পাইরেক্স এই কোম্পানিগুলোর কথাই ধরুন না।
থেমে যাবেন না, এগিয়ে যান
কী করবেন বা কোন পথে আগাবেন তা ঠিক করে রাখুন। নিজের লক্ষ্য অনুসারে কথা ও কাজ তৈরি রাখুন। সবসময় ইতিবাচক চিন্তা করুন। ভালো ম্যানেজমেন্টের জন্য এটি গোপন সূত্র। তাই না থেমে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যান।
নিজের সাথে অন্যদের কাজের তুলনা করুন
অন্যদের কাজের সাথে নিজেদের কাজের তুলনা করুন। এতে আপনি কোন পর্যায়ে আছেন তা বুঝতে পারবেন। আপনার প্রতিষ্ঠানের মত আরও যেসব প্রতিষ্ঠান আছে তাদের সাথে আপনার কাজের তুলনা করলে বুঝতে পারবেন আপনি কোন অবস্থায় আছেন। ভবিষ্যত পরিকল্পনা এবং লক্ষ্য নির্ধারণ করতে সুবিধা হবে।
নিজেকে চ্যালেঞ্জ করুন
নিজেকে নতুন ভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করুন। বারবার একইভাবে কাজ না করে, কাজের একঘেয়েমি দূর করার জন্য জটিল কাজগুলো নতুনভাবে করুন। নতুন চ্যালেঞ্জ সামনে আনুন। কঠিন লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজের প্রতি ভালোলাগা থাকাটা জরুরি। কিন্তু একই ধরনের কাজ বারবার করতে থাকলে একঘেয়ে লাগবে, তাই নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে নতুনভাবে কাজ করুন। কাজের গতি যেমন বাড়বে তেমনি কাজের মানও বাড়বে।
স্বপ্নদর্শী হোন
আপনার কাজকে আপনি কোন পর্যায়ে নিতে চান তা ঠিক করুন। স্বপ্ন দেখুন, দেখতে শিখুন নিত্যনতুন স্বপ্ন। উন্নতি করতে চাইলে, অনেক বড় কিছু করতে চাইলে চাই সুন্দর কিছু স্বপ্ন। নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন আপনি কী চান, কীভাবে উন্নত হতে চান, তারপর সেইভাবে নিজের স্বপ্নের পথে এগিয়ে যেতে থাকুন। “মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়, বড় মানুষদের স্বপ্নও হয় অনেক বড়।”- এই কথাটি মনে রাখবেন।
নিজের যত্ন নিন
নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং শারীরিক সমস্যাগুলোর ব্যাপারে যত্নশীল হোন। শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ না থাকলে কোনো কাজই ভালমত করতে পারবে না কেউ। অনেকে ভাবেন খেয়ে না খেয়ে অতিরিক্ত পরিশ্রম করলেই বুঝি সফল হওয়া যাবে। কিন্তু ধারণাটি ভুল। যদি আপনি সুস্থই না থাকলেন তাহলে কাজ করবেন কীভাবে? তাই আমাদের উচিত শারীরিক ও মানসিক সাস্থ্যের দিকে নজর রাখা। অসুস্থ হলে সময়মত ডাক্তার দেখান, নিয়মিত ব্যায়াম করুন। অনেকেই মানসিক স্বাস্থ্যের দিকটা অবহেলা করেন, অনেকেই হতাশার মধ্যে থাকেন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। তাদের উচিত মানসিক স্বাস্থ্যগত উন্নতির জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া।
ইতিবাচক থাকুন
কাজের ক্ষেত্রে ভুলগুলোর ব্যাপারে যত্নশীল হোন। ইতিবাচক চিন্তা করুন। চিন্তায় ইতিবাচকতা থাকলে যে কারোই কাজের মান বাড়বে। আমাদের চিন্তা, কথা ও কাজে ইতিবাচক থাকা উচিত। ভুল হলে হতাশ না হয়ে ইতিবাচকভাবে ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। পরবর্তীতে যাতে ভুলগুলো এড়িয়ে যাওয়া যায়।
নতুন কিছু আবিষ্কার করুন
নতুন পণ্য অথবা সেবা চালু করুন অথবা পুরনো কিছুকে নতুনভাবে তুলে ধরুন। আপনার ক্রেতাদের কাছে নতুন কাজগুলো গুরুত্ব পায়। পণ্যের বা সেবার মানের দিকে নজর দিন, বৈচিত্র্য আনুন – তা যত সামান্যই হোক। কেননা নতুনত্বের দিকেই সবার ঝোঁক বেশি।
পরিপাটি থাকুন
নিজেকে সবসময় পরিপাটি রাখুন। এতে চাকুরিক্ষেত্রে আপনার প্রতি সবার দৃষ্টিভঙ্গি ভালো হবে। আপনি কী কাজ করছেন সেদিকে সবাই আগ্রহ বোধ করবে। এবং কর্মক্ষেত্রে অবশ্যই নির্দিষ্ট পোশাক পরিধান করুন। লক্ষ্য রাখুন যা পরছেন তা যেন কর্মক্ষেত্রের উপযুক্ত হয়।
কাজগুলোকে গুরুত্বানুযায়ী সাজান
কাজগুলো গুরুত্বানুযায়ী লিপিবদ্ধ করুন। যে কাজটি আপনি করতেই চান তা সবার আগে রাখুন। এভাবে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো আগে করার অভ্যাস করুন।
সমস্যা সমাধানে উদ্ভাবনী হোন
আপনার সমস্যাগুলোর উদ্ভাবনী সমাধান বের করুন। হাজারটা উপায় থেকে সবচেয়ে স্মার্ট এবং উদ্ভাবনী সমাধানটাই বেছে নিন। সেক্ষেত্রে আপনার প্রতি বস কিংবা সহকর্মীদের আস্থা বাড়বে। কাজের মানও বাড়বে। অনেক সময় সমস্যাগুলোকে সাধারণ পদ্ধতিতে সমাধান করা যায় না, তখন নতুন কোনো পদ্ধতিতে সমাধান করতে পারলে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে যাবেন।
ভুল করা স্বাভাবিক
আগের ভুলগুলো নিয়ে ভাবুন, তার জন্য লজ্জিত হোন এবং পরবর্তীতে তা এড়িয়ে চলুন। বারবার একই ভুল করা কোন উন্নতির লক্ষণ নয়। চেষ্টা করুন ভুলগুলো লিখে রাখতে। পরবর্তীতে একই ভুল করা থেকে বিরত থাকুন।
সহযোগিতা
কর্মক্ষেত্রে একে অন্যকে সহযোগিতা করুন। এমন কিছু মানুষ খুঁজে বের করুন যারা প্রয়োজনে আপনাকে সহযোগিতা করবে। আশা করি, আমাদের দুই পর্বের এই নিয়মগুলো মেনে চললেও আপনিও উপকৃত হবেন। কাজে থাকুন, নিজেকে ভালো রাখুন, দেশের সমৃদ্ধিতে এগিয়ে যান।