আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মাঝে অন্যতম হলো দাঁত। দাঁতের যত্ন না নিলে হাড়ের মত দাঁতেরও ক্ষয় হয়। আর দাঁতের ব্যাথা যেমন অসহনীয় তেমনি দাঁতের চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুলও বটে। তাছাড়া কেই বা পছন্দ করবে ডেন্টিস্টের কাজে যেতে? কথায় আছে, দাঁত থাকতে মানুষ দাঁতের মর্যাদা বোঝে না। অনেকেই ঠিকমত দাঁত ব্রাশ করেন না, দাঁতের যত্ন নেন না যার পরিণতি খুব খারাপ। দাঁত ক্ষয় হতে হতে সেখান থেকে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। তাই আমাদের সবার উচিৎ দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা দেওয়া। চলুন জেনে নেওয়া যাক দাঁতের ক্ষয় রোধের ৭টি সহজ এবং ঘরোয়া পদ্ধতি।
১. খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনা
আমাদের মাঝে খুব কম মানুষই সঠিক খাদ্যাভাস মেনে চলি। অতিরিক্ত চিনি জাতীয় দ্রব্য খেলে আমাদের দাঁতের অনেক ক্ষতি হয়। তাছাড়া আমরা যদি সঠিক খাদ্যাভাস মেনে চলি তবে তা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যও অনেক উপকারী। দাঁত তো সুস্থ থাকবেই, সাথে আমাদের শরীরও। অতিরিক্ত পরিমাণে চিনি জাতীয় দ্রব্য, কোক জাতীয় পানীয় গ্রহণের কারণে দাঁত অকালেই ক্ষয়ে যেতে পারে।
The British Medical Journal এর এক জরিপে বলা হয়েছে, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে পারলে দাঁতের ক্ষয় রোধ করা সম্ভব। অতিরিক্ত চা কফি পান করলেও আপনার দাঁত ক্ষয় হতে পারে। তাই বলা হয় খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনলে এমন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না। নিজের খাদ্যাভাসে নিম্নলিখিত ব্যাপারগুলো যোগ করলেই কাজ অনেকটা সহজ হয়ে যাবে।
- বেশী পরিমাণে ক্যালসিয়াম জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করুন। প্রতিদিনের খাবার তালিকায় দুধ, দই জাতীয় খাবার রাখুন।
- মিষ্টিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। কোক, সোডা জাতীয় পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকুন। এসবের বদলে সাধারণ খাবার পানি, চিনি না দেয়া চা, গ্রীন টি, সিজনাল ফলের জুস পান করতে পারেন। সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার যেটা তা হলো, বেশী করে পানি পান করা। যত বেশি পানি পান করবেন আপনি তত বেশি সুস্থ থাকবেন। বেশি পানি পান করলে আপনার শরীর হাইড্রেট থাকবে এবং শরীরের যাবতীয় কাজ ঠিকভাবে হবে।
২. মিষ্টি বিহীন চুইংগাম চাবান
অবাক লাগছে? শুনতে একটু অবাক লাগলেও এটি সত্য। মিষ্টি বিহীন চুইংগাম চাবালে আপনার দাঁত ক্ষয় রোধ হতে পারে। সাধারণত মিষ্টি বিহীন চুইংগামে জাইটল নামক উপাদান থাকে। যার জন্য আপনার মুখে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে না। তাছাড়া আপনি যদি চুইংগাম চাবাতে থাকেন তবে আপনার মুখে যে লালা তৈরী হবে তার মাধ্যমে মুখের অবশিষ্ট খাবারও পরিষ্কার হয়ে যায়।
৩. নিয়মিত টুথব্রাশ পরিবর্তন করুন
আপনার দাঁতের যত্নের সবচেয়ে জরুরী জিনিস কোনটি? ব্রাশ। প্রতিদিন নিয়ম করে দুইবেলা ব্রাশ করলে আমাদের দাঁত অনেকাংশেই ভালো থাকবে। দাঁতের ক্ষয় রোধ হবে। তাই সঠিক টুথব্রাশ নির্বাচন করা খুবই জরুরী, খুব মানুষই জানে দাঁতের জন্য সঠিক টুথব্রাশ কোনটি।
- সবসময় মাঝারি সাইজের টুথব্রাশ নির্বাচন করুন। আর খেয়াল রাখবেন আপনার ব্রাশ যাতে আপনার দাঁতের শেষ পর্যন্ত পৌছায়। কারণ দাঁতের মাঝে খাদ্য কণা লুকিয়ে থাকতে পারে।
- কখনও ব্রাশের উপর ঢাকনা ব্যবহার করবেন না। ব্রাশ সবসময় খোলা রাখবেন। কেননা ঢেকে রাখলে ব্রাশেই ময়লা জমে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে। তারচেয়ে ভালো প্রতিবার ব্যবহারের আগে এবং পরে ভালোমত ব্রাশ ধুয়ে রাখা।
- নিয়মিত টুথব্রাশ বদলান। একই ব্রাশ এক নাগাড়ে ৩ মাসের অধিক ব্যবহার করা স্বাস্থ্যসম্মত নয়।
৪. ডেন্টাল কেয়ার রুটিন মেনে চলুন
ছোটবেলা থেকেই হয়তো সবাই এই কথা শুনে বড় হয়েছেন। কিন্তু খুব কম মানুষই মেনে চলে এই নিয়ম। International Dental Health Association এর এক জরিপে বলা হয়েছে যে, শতকরা ৪২ জন টুথব্রাশই ব্যবহার করে দাঁতের যত্নে। এর বেশী কোন যত্ন নেওয়া হয় না দাঁতের। কিন্তু নিম্নোক্ত নিয়মগুলো মেনে চলা খুবই জরুরী।
- প্রতিদিন নিয়ম করে দুই মিনিট ব্রাশ করবেন। দাঁতের কোন অংশ যাতয়ে বাদ না পড়ে। সবগুলো দাঁতই ভালোমতো পরিষ্কার করতে হবে।
- মাঝে মাঝে ফ্লসিং করতে হবে। অনেকসময় ব্রাশ করলেও দাঁতে ময়লা থেকে যায়। তাই বলা হয় যে ফ্লসিং করা উচিত।
- মাউথওয়াশ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। মুখের সব ব্যাকটেরিয়া, দুর্গন্ধ ্দূর হয়ে যায়। তাই দাঁত ব্রাশের পর নিয়মিত মাউথওয়াশ দিয়ে কুলকুচা করা উচিত। এরপর সাধারণ পানি দিয়ে মুখ ধুবেন না, তাহলে এটি বেশী সময় ধরে কার্যকর থাকবে।
৫. নিয়মিত চেকাপ করানো
খুব কম মানুষই ডেন্টিস্টের কাছে যেতে পছন্দ করে। কিন্তু তাও দাঁতের যত্ন নেয়ার জন্য আপনার উচিৎ নিয়ম মেনে ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়া। আপনি যতই দাঁত ব্রাশ, ফ্লস করুন না কেন, কিছু জায়গা থাকে যেখানে আপনার পৌঁছানো অসম্ভব। সেক্ষেত্রে আপনাকে ডেন্টিস্টের শরণাপন্ন হতেই হবে। ডেন্টিস্ট সেসব স্থানের ময়লা পরিষ্কার করে দিবে। যদি আপনার দাঁতে কোনো প্রকার পাথর জমে তবে তাও তারা পরিষ্কার করে দিবে।
৬. আপনার খাদ্য তালিকায় ভিটামিন যুক্ত করুন
খাদ্য তালিকায় ভিটামিন যুক্ত করুন। এতে আপনার দাঁত ক্ষয় রোধের সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে। চাইলে শস্য জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে পারেন। এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি এবং আয়রন। বেশী করে সামুদ্রিক খাবার গ্রহণ করতে পারেন।
৭. নিজস্ব টুথপেস্ট ব্যবহার করুন
আপনি চাইলেই নিজের টুথপেস্ট ঘরে বসেই বানাতে পারেন। এর প্রতিটি উপাদানই প্রাকৃতিক, তাই এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। নিম্নোক্ত উপাদানগুলো প্রয়োজন পড়বে টুথপেস্টটি বানাতে।
- ৪ টেবিল চামচ ক্যালসিয়াম পাউডার
- ১ টেবিল চামচ স্টেভিয়া
- ১ টেবিল চামচ সামুদ্রিক লবণ
- ২ টেবিল চামচ বেকিং সোডা
- ১/৪ কাপ নারকেল তেল
সবগুলো উপাদান একত্রে মিশান, মাঝে দানাদার কিছু যাতে না থাকে। ব্যস, তৈরী হয়ে গেলো আপনার নিজের টুথপেস্ট।
বিঃদ্র: এই টুথপেস্ট একাধারে ৩০ দিনের বেশী ব্যবহার করবেন না।