লাইফ ইন্সুরেন্স বা জীবন বীমা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেক ভ্রান্ত ধারনা আছে। অনেকে মনে করে জীবন বীমা শুধুমাত্র ধনী মানুষের জন্য। আপনি যদি এমন ধারণা পোষণ করে থাকেন তবে আপনি বোকার স্বর্গে বাস করছেন। লাইফ ইন্সুরেন্স বা জীবন বীমা আসলে বিশেষ কোনো শ্রেণির মানুষের জন্য নয়, যে কেউ লাইফ ইন্সুরেন্স গ্রহণ করতে পারে।
Source: Northwest Financial & Tax Solution
আপনি যদি কম রোজগারের মানুষ হয়ে থাকেন তবুও আপনার লাইফ ইনস্যুরেন্স করা উচিত। কেননা এই ইন্সুরেন্স আপনার উপর নির্ভরশীল মানুষগুলোর ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। মানুষের জন্ম হবে কবে তার দিনক্ষণ ডাক্তাররা বলে দিতে পারে। কিন্তু কবে, কখন, কোথায় মৃত্যু হবে তা কেউ বলতে পারে না। তাই আপনি যদি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হয়ে থাকেন এবং আপনার উপর পরিবারের সবাই নির্ভরশীল হয়ে থাকে তবে আপনার অবশ্যই লাইফ ইন্সুরেন্স করা উচিত। কেননা হঠাৎ করে যদি আপনি মারা যান তবে ওই মুহূর্ত থেকে আপনার পরিবার অসহায় হয়ে পড়বে, অর্থনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি হবে, গোটা পরিবার অকুল পাথারে পড়বে।
কিন্তু আপনার যদি জীবন বীমা থাকে তবে আপনার মৃত্যুর পর পরিবারের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বীমা কোম্পানি নিশ্চিত করবে।
Source: USA Today
অনেক মানুষ প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করার পরও জীবন বীমা করে না। তারা মনে করে মাসে মাসে বীমার টাকা পরিশোধ করার সামর্থ্য তাদের নেই। কিন্তু গবেষণা বলছে জীবন বীমা চালিয়ে নেওয়া যতটা খরচসাপেক্ষ ব্যাপার, মানুষ তার চেয়ে অনেক বেশি ভাবে। তাছাড়া জীবন বীমা করলেই যে প্রতিমাসে মোটা অংকের টাকা দিতে হবে এমন কোনো কথা নেই। আপনার সামর্থ্য এবং পছন্দ অনুযায়ী বীমা করার সুযোগ রয়েছে।
আজকের নিবন্ধে জীবনের এমন কিছু পরিস্থিতি বা অবস্থার কথা আলোচনা করা হলো যে অবস্থায় থাকলে আপনার অবশ্যই জীবন বীমা গ্রহণ করা উচিত।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি
আপনি যদি আপনার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হয়ে থাকেন তবে আজই আপনার জীবন বীমা করা উচিত। হঠাৎ আপনার মৃত্যু হলে আপনার স্ত্রী সন্তানদের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে চিন্তা করুন। মাসের বাড়ি ভাড়া, খাবার খরচ, চিকিৎসা খরচ এবং অন্যান্য খরচ কোথা থেকে আসবে?
যৌথ ঋণ থাকলে
আপনার যদি ব্যক্তিগত কোনো ঋণ থাকে যার দায়বদ্ধতা শুধু আপনার। এমনকি আপনার মৃত্যুর পর আপনার সম্পত্তি থেকে তা পরিশোধ করা হবে। তাহলে সেই ঋণের জন্য আপনার পরিবার ব্যতীত অন্য কাউকে ঝামেলায় পড়তে হবে না। মৃত্যুর পর আপনার ব্যক্তিগত সম্পত্তি যদি সেই ঋণের চেয়ে কম হয় তাহলে হয়তো ঋণদাতাকেই ঋণের দাবি ছেড়ে দিতে হবে।
Source: Real Detroit Weekly
কিন্তু আপনি যদি যৌথভাবে কারো সাথে ঋণ নিয়ে থাকেন, বা নিজে দায়বদ্ধ থেকে অন্য কাউকে ঋণ নিয়ে দেন, অথবা কোনো যৌথ ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মালিক হয়ে থাকেন, যার বিপরীতে ঋণ নেওয়া হয়েছে; যেমন- ক্রেডিট কার্ডের বকেয়া বিল, শিক্ষা ঋণ, বন্ধকী সম্পত্তির সনাক্তকারী ইত্যাদি ক্ষেত্রে নিরাপত্তার জন্য আপনার জীবন বীমার প্রয়োজন হবে। কেননা এসকল ঋণের ক্ষেত্রে অংশীদার মৃত্যুবরণ করলে সম্পূর্ণ ঋণের দায় আপনার উপর বর্তাবে। এমনকি অন্যের বন্ধকী সম্পত্তির সনাক্তকারী হলেও ঋণের দায় টানতে হতে পারে। তাই এ সকল ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য আপনার আজই জীবন বীমা করা উচিত।
Source: Serra Benefits
এছাড়া আপনি যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা, ক্যালিফর্নিয়া, আইডাহো, লুইসিয়ানা, নেভাডা, নিউ মেক্সিকো, টেক্সাস, ওয়াশিংটন এবং উইসকনসিন রাজ্যের বাসিন্দা হয়ে থাকেন তবে আপনার স্ত্রী আপনার ঋণের জন্য দায়ী থাকবেন। এছাড়া বাংলাদেশে পিতার রেখে যাওয়া ঋণের দায় সামাজিকভাবে সন্তানদের উপর বর্তায়। সুতরাং আপনি ঋণের বোঝা মাথায় রেখে মারা গেলে আপনার স্ত্রী ও সন্তানদের সেই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। তাই তাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এবং সুষ্ঠুভাবে ঋণ পরিশোধের পথ সুগম করতে আপনার অবশ্যই জীবন বীমা থাকা উচিত।
বয়স্কদের নিরাপত্তা
সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর প্রবণতা বেড়ে গেছে। অনেকে নিজের স্ট্যাটাস ধরে রাখতে পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর মতো নিষ্ঠুর কাজ করেন। আবার কেউ কেউ অর্থনৈতিক কারণে তাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়ে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠায়।
Source: Imgur
আপনি যদি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হয়ে থাকেন এবং আপনার উপর স্ত্রী-সন্তান ছাড়াও আপনার বয়স্ক পিতা-মাতা নির্ভরশীল হয়ে থাকে তবে তাদের নিরাপত্তার জন্য আপনার জীবন বীমা করা উচিত। যদি উপযুক্ত সময়ে পিতা-মাতার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে জীবন বীমা করেন তবে শেষ বয়সে পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাতে হবে না। তাতে পারিবারিক বন্ধন যেমন অটুট থাকবে তেমনি অর্থনৈতিকভাবেও আপনি নিরাপদ বোধ করবেন।
সন্তানের উচ্চশিক্ষা
বর্তমান সময়ে দৈনন্দিন জীবনযাপন খরচের তুলনায় শিক্ষা ব্যয় মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গেছে। বিশেষ করে আপনার সন্তানকে যদি বেসরকারি স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে হয়, তবে মাসে মাসে মোটা অংকের টাকা গুনতে হবে। যা বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে পূরণ করা প্রায় অসম্ভব। তাই সন্তানের ভবিষ্যৎ উচ্চ শিক্ষা নিশ্চিত করতে আপনার অবশ্যই স্বল্পমেয়াদে জীবন বীমা করা উচিত। উপযুক্ত সময় জীবন বীমা করলে ঠিক প্রয়োজনের সময় আপনি মোটা অংকের টাকা হাতে পেয়ে যাবেন। এমনকি দুর্ভাগ্যবশত আপনি যদি মারা যান তবুও আপনার সন্তানের উচ্চ শিক্ষা নিশ্চিত হবে।
Source: Better Nutrition
উন্নয়নশীল দেশের নাগরিক হিসেবে দৈনন্দিন জীবনে আপনাকে নানা টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সরকার আপনার সকল সুযোগ সুবিধা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে না। তাই নিজের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার কথা নিজেকেই ভাবতে হবে। আপনার অনুপস্থিতিতে পরিবারের ভবিষ্যৎ কী হবে তাও আপনাকে ভাবতে হবে। তাই আপনার জন্য সর্বোত্তম পছন্দ হবে আজই জীবন বীমা নিশ্চিত করা।
Feature Image: Serra Benefits