জ্ঞানী ব্যক্তিদের ৬টি বৈশিষ্ট্য

বুদ্ধিমত্তা হলো মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য। অধ্যবসায়ের মাধ্যমে বুদ্ধিমত্তাকে পুরোপুরি নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসা সম্ভব। কিন্তু জ্ঞান বিষয়টি অবশ্যই শিখতে হবে এবং পরিচর্যা করতে হবে। ‎বুদ্ধিমত্তাকে মূল্যায়ন তালিকায় সর্বপ্রথম রাখা হয়। অর্ন্তদৃষ্টি, যুক্তি এবং কোন কিছু শেখার ক্ষমতা বুদ্ধিমত্তার প্রধান বৈশিষ্ট্য। জ্ঞান বিষয়টি ও সবাই মূল্যয়ন করে তবে সেক্ষেত্রে জ্ঞানের আগে বুদ্ধিমত্তাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। কিন্তু জ্ঞানের স্তর চূড়ান্ত না হলে পুরোপুরি বুদ্ধিমত্তা অর্জন করা সম্ভব নয়। জ্ঞান হলো সৌন্দর্য। আমরা এর মূল্যয়ন করি, জ্ঞানী হবার সাধ পোষণ করি, আমরা জ্ঞানকে অনেক ক্ষেত্রে পরিমাপ ও করতে পারি কিন্তু চাইলেই সহজে জ্ঞান আমরা অর্জন করতে পারি। জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের কিছু মাথাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেগুলোর সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে জ্ঞান আরোহণ করা সম্ভব।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

১৯৮০ সালে বার্লিনে অনুষ্ঠিত Wisdom Project এ Max Planck Institute জ্ঞানকে সংজ্ঞায়িত করেছেন এইভাবে- জ্ঞান হলো আধ্যাত্মিক শিক্ষা, প্রকৃত শিক্ষা, উচ্চতর বিচার যোগ্যতা, সমস্যা সমাধানের চমৎকার বৈশিষ্ট্য, নম্রতা, মানসিক স্থিতিস্থাপকতা, উদারতা, মানসিক বৈশিষ্ট্যগুলো বোঝার অসাধারণ ক্ষমতা। এই গুণগুলো নেই? প্রায় সবারই যোগ্যতা রয়েছে এই সবগুলো গুণ আয়ত্ত করে জ্ঞানী হবার আর বিশেষভাবে যদি এই ৬টি বৈশিষ্ট্য যা সকল জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের মাঝে রয়েছে তা যদি মেনে চলা যায় তাহলে জ্ঞানী ব্যক্তিত্ব হবার ধাপগুলো সহজেই আয়ত্তে আনা যাবে।

১. সমাজবদ্ধ হয়ে কাজ করা 

গবেষণায় জানা গিয়েছে, যারা সবার সাথে মিলেমিশে থাকে বা সবসময় যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে নিজদের অবস্থানেকে পরিপক্ব করছে তারা অনেক বেশি জ্ঞানী যারা নিজদের বিচ্ছিন্ন রেখেছে তাদের তুলনায়। নতুন একটি সংঘে যোগদানের প্রচেষ্টা, দূরের বন্ধুদের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে যোগাযোগ রাখা, পুরাতন বন্ধুকে দাওয়াত দেওয়া কিংবা নতুন সহকর্মীর সাথে পরিচিত বাড়াতে কোথাও খেতে যাওয়া এইসকল অভ্যাসগুলো আপনার জ্ঞানের স্তরকে শক্তিশালী করবে। নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন বা কারো অভিজ্ঞতা সম্পর্কে নিজে জ্ঞাত হওয়ার প্রচেষ্টা আপনাকে জ্ঞানী করে তুলবে। আর তাই কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে গেলে একা দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটির সাথে কথোপকথন বাড়াবেন। মানুষ সাধারণত নিজের ব্যাপারে কথা বলতে ভালোবাসে আপনি একজন মনোযোগী শ্রোতা হয়ে তাদের কথা শুনুন। এই অভ্যাসগুলো আপনাকে অনেক বিষয়ে জ্ঞান আরোহণ করতে সাহায্য করবে।

 

Image source: shutterstock.com

২. মনখোলা মানুষ হবার অনুশীলন 

একটি সমস্যাকে সকল দিক থেকে বোঝার ক্ষমতাটির মধ্যে জ্ঞান বিষয়টি জড়িত থাকে। মনখোলা মানুষ মানে সহানুভূতির জায়গাগুলো খুঁজে বের করা এবং বুঝতে শেখা যে সবার জীবনেই কিছু জানা অজানা গল্প থাকে যা তাদের কাজের বা আচরণের উপর প্রভাব ফেলে। জীবনের যে মুহুর্তগুলো আপনার কাছে ত্রুটিপূর্ণ মনে হবে, সেই মুহুর্তগুলোকে লিখুন চিরকুট আকারে এবং এরপর সেই বিষয়গুলোকে অন্য প্রেক্ষাপটে ভাবুন। আপনার এই অভ্যাস নতুনভাবে চিন্তা করার গুণটিকে অনেক বেশি প্রভাবিত করবে।

{ "slotId": "", "unitType": "in-article", "pubId": "pub-6767816662210766" }
Image source: shutterstock.com

৩. সৎ স্বীকারোক্তি 

একজন জ্ঞানী ব্যক্তি বিশ্বাস করেন, একজন মানুষের পক্ষে সবকিছু জানা সম্ভব নয় এবং জীবনে যেকোনো সময় অপ্রত্যাশিত যে কোনো পরিস্থিতির সম্মুখীন করতে পারে। নিজের ভুলগুলোকে মেনে নেওয়ার বিষয়টি আপানাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বৃহত্তর জ্ঞানের দিকে এবং আপনার দ্বারাও যেকোনো সময় ভুল হতে পারে এরুপ স্বীকারোক্তি আপনার খ্যাতি এবং আত্মমর্যাদা আরো বেশি বাড়াবে এবং আপনার পরামর্শগুলোকে অনেক বেশি বিশ্বাসের সাথে গৃহীত হবে।

Image source: shutterstock.com

৪. সকল ধরণের বই পড়া 

ফিকশন এবং নন ফিকশন সকল বইই আপনাকে বর্তমান পরিস্থতি সম্পর্কে ধারণা দিবে। জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিত্বের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো পুরাতন বা চলতি সকল বিষয় সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে। বইয়ের তাকটিকে সাজান সকল ধরণের বই দিয়ে। ঐতিহাসিক, জীবনীমূলক, কাল্পনিক, মজার সকল ধরণের বই পড়ুন। এক ধরণের বই পড়ে চিন্তাশক্তিকে বেঁধে রাখবেন না। মনকে উন্মুক্ত করে দিন সকল ভাবনার জন্য। নিত্যনতুন অনেক কিছুই আপনার জ্ঞানের পাল্লাকে করবে ভারী।

৫. আত্মজ্ঞানকে পর্যালোচনা করা 

আপনি বেঁচে থাকার জন্য অনেক কিছুই শিখেছেন কিন্তু সেই শিক্ষা বা অভিজ্ঞতাগুলোকে কি কখনো পর্যালোচনা করে দেখেছেন? লিখে ফেলুন আপনার জীবনের তিনটি বড় ভুল এবং তিনটি বড় সাফল্য। প্রতিটি ঘটনাকে পর্যালোচনা করুন। প্রতিটি ঘটনা আপনার অবস্থানকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে আর আপনি কি শিখেছেন সেইসকল অভিজ্ঞতা থেকে সেগুলো যাচাই করুন। আপনার অভিজ্ঞতা থেকে উদাহরণগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। দুঃখপ্রকাশ বা গর্ববোধ করার সময় নেই। উদ্দেশ্য একটাই- অভিজ্ঞতাগুলো কি ভালো না খারাপ তা যাচাই করা যেহেতু জ্ঞানের পাল্লাকে ভারী করাই মুখ্য বিষয়।

Image source: shutterstock.com

৬. সংবাদ পড়ার অভ্যাস 

আপনি কখনোই সুষম পছন্দের দিকে যেতে পারবেন না যতক্ষণ না আপনি পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং অপরের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে না জানবেন। আপনার যদি পত্রিকা পড়ার অভ্যাস না থাকে তাহলে আজকে থেকেই পড়া শুরু করেন। কিছু সুখ্যাতিপ্রাপ্ত পত্রিকা বা অনলাইন নিউজ পোর্টাল পড়ুন প্রতিদিন। শুধু পত্রিকার পাতা উল্টাবেন না প্রতিটি প্রধান সংবাদ পড়ার চেষ্টা করুন। পুরো পৃথিবীতে কী ঘটছে প্রতিনিয়ত তা জানতে পারবেন সহজেই। এই অভ্যাসটি জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ করার বেশ কার্যকর পদ্ধতি।

Image source: shutterstock.com

জ্ঞানকে মুঠোবন্দি না রেখে প্রসারিত করার চেষ্টা করুন। আপনার প্রসারিত সমৃদ্ধ জ্ঞান ভান্ডার আপনাকে সম্মানিত করবে সবসময়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *