পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়িক বাস্তবতা ও অবস্থানের দিকে তাকালে লক্ষ্য করা যায় অর্থ উপার্জনের অন্যতম উপায় হল ব্যবসা। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান দিয়ে সারা পৃথিবীতে সুনাম অর্জন করা যায়। ব্যবসায়িক অগ্রগতির এই যুগেও অনেক মানুষ বিনিয়োগ করতে ভয় পায়। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগ করাকে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে বলে মনে করেন অনেকে। তবে আমজনতার ভিড়ে গুটিকয়েক অসাধারণ মানুষ আছেন যারা উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগ করেও লাভবান হতে পারেন। সফল মানুষেরা চিন্তা, চেতনা ও সাধনায় সাধারণ আমজনতা থেকে অনেকাংশে এগিয়ে থাকে। তাই তারা সফল হয়। সফল হওয়ার জন্য চাই শুধু ইচ্ছাশক্তি ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টা।
উন্নয়নশীল দেশ, স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশসমূহে অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে যার সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে অভিনব ব্যবসা দাঁড় করানো সম্ভব। আসুন জেনে নিই উন্নয়নশীল দেশের কয়েকটি চমৎকার ব্যবসায়িক আইডিয়া সম্পর্কে।
শক্তির বিকল্প ব্যবহার
উন্নয়নশীল দেশে সঠিকভাবে প্রাকৃতিক সম্পদ ও শক্তিসমূহ সরবরাহ করা হয় না। যার ফলে শক্তির বিকল্প উৎসের উপর নির্ভর করতে হয়। শক্তির বিকল্প উৎসের ব্যবহার করে চমৎকার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারেন। সৌরশক্তির ব্যবহার, বায়ুশক্তির ব্যবহার করে আপনি অভিনব ব্যবসা গড়ে তুলতে পারেন। জেনারেটর আমদানি রপ্তানি করেও আপনি অনেক অর্থ উপার্জন করতে পারেন।
জ্বালানির বিকল্প উৎস
উন্নয়নশীল দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি সম্পদ হলো কেরোসিন, ডিজেল, পেট্রোল। কিন্তু এই জ্বালানি শক্তির দাম তুলনামূলক বেশী এবং প্রতিনিয়ত মানুষ এগুলোকে ব্যবহার করে। অধিকাংশ মানুষ উচ্চদামে জ্বালানি কিনতে পারে না, আবার কিনতে চাইলেও পায় না। কারণ সরবরাহ কম। জৈব জ্বালানি এবং ইথানলের ব্যবহার জ্বালানির বিকল্প উৎস। জৈব জ্বালানি ও ইথানলকে কাজে লাগিয়ে অভিনব ব্যবসা শুরু করলে কয়েক মাসের ব্যবধানে ভালো উপার্জন করতে পারবেন।
আমদানি ও রপ্তানি মূলক ব্যবসা
উন্নয়নশীল দেশে আমদানি ও রপ্তানি মূলক ব্যবসা করে আপনি ধনী হতে পারবেন। ব্যবসা শুরু করা যায় যদি আত্মবিশ্বাস ও দক্ষতা থাকে। কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, সৌর চার্জার, পোশাক, খাবার ও প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করে নিজ দেশে নির্দিষ্ট দামে বিক্রি করতে পারেন। কৃষি যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি রপ্তানি করতে পারেন সেসব দেশে যে দেশগুলোতে এই যন্ত্রপাতিগুলোর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেজ খাবারের ব্যবসা
মধ্যম আয়ের দেশে বসবাস করেও নিজের বেকারত্ব দূর করে নিজের পায়ে দাঁড়ানো যায় ব্যবসার মাধ্যমে। খাবারের ব্যবসা বড় একটি সুযোগ। তবে মাথায় রাখতে হবে কাঁচা খাবার নয়, শুকনো ও প্যাকেজিং খাবারের ব্যবসা করতে হবে। কাঁচা ও পচনশীল খাবার বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায় না। ময়দা, কাস্টার্ড, তেল, গম, বিভিন্ন ধরণের মশলা ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ব্যবসা করতে পারেন। প্যাকেজিং ও শুকনো খাবার সংরক্ষণ করা যায়। তাছাড়া বহন করা সুবিধাজনক।
ব্যবহৃত পণ্য বিক্রি
উন্নয়নশীল দেশে অর্থের অভাবে অনেকে নতুন পণ্য কিনতে পারে না। তাই এই দেশগুলোতে উন্নত দেশের ব্যবহৃত পণ্য বিক্রি করেও আপনি প্রচুর অর্থ আয় করতে পারেন। ব্যবহৃত পণ্য যেমন মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, গাড়ি, পোশাক ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ইলেক্ট্রিক পণ্য বিক্রি করে চমৎকার আয় করতে পারেন।
মাংস প্যাকেজিং ও সরবরাহ
উন্নয়নশীল দেশে বসবাস করেও অনেকে খুব স্বাস্থ্যসচেতন থাকেন। স্থানীয় বাজার থেকে মাংস কিনলে অনেক সময় তা ভালো হয় না। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে না। তাই এই সুযোগে আপনি সুন্দর একটি মাংসের দোকান দিতে পারেন। উন্নত যন্ত্রপাতি ব্যবহার ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে মাংসের অর্ডার গ্রহণ ও বাড়িতে সরবরাহ করার মাধ্যমে চমৎকার আয় করতে পারেন। বলা যায় অনেক ব্যবসায়িক আইডিয়া আছে। শুধু গ্রহণ করলেই বাজিমাত হয়ে যাবে।
রিয়েল এস্টেট
রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা করে আপনি স্বাবলম্বী হতে পারেন। আফ্রিকা ও অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশে রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা করে যুগান্তকরী পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। তাই আপনিও শুরু করুন নতুন ব্যবসা। বসে থাকার কোন সুযোগ নেই। আয়ের উন্মাদনায় কাজে লেগে যান, সফল হবেন সন্দেহ নেই।
মাল পরিবহন ও পরিবহন সেবা
বিভিন্ন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, অন্যন্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য একস্থান থেকে অন্যস্থানে নেয়ার জন্য গাড়ি, ট্রাক ব্যবহার করে। সব কোম্পানির নিজস্ব গাড়ি থাকে না। আপনি চাইলে বেশ কয়েকটি গাড়ি সংবলিত একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলুন যার কাজ হবে অন্যদের পরিবহন সুবিধা প্রদান করা। উন্নয়নশীল দেশে পরিবহণ সুবিধা প্রদান করে বিপুল আয় করা সম্ভব, অধিকাংশ মানুষের নিজস্ব গাড়ি নেই বলে তারা অন্য পরিবহন সুবিধা ভোগ করতে চায়।
ফাস্টফুড ও সুপারমার্কেট ফ্রাঞ্চাইজ
ম্যাকডোনাল্ড, কেএফসি, টেসকো সহ আরো অনেক কোম্পানি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সফলতার সাথে ব্যবসা করে যাচ্ছে ফ্রাঞ্চাইজের মাধ্যমে। ফাস্টফুডের দোকান দিয়ে আপনিও ব্যবসা শুরু করতে পারেন। প্রথমে মূলধন প্রয়োজন। পরবর্তীতে লাভবান হবেন নিঃসন্দেহে। খাবারের ব্যবসায়ে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন না। চাইলে বিশ্ব বাজার শাসন করা বড় কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ফ্রাঞ্চাইজিং এর মাধ্যমে মালিকানা কিনে নিতে পারেন অথবা ব্যবসায়িক পার্টনার হতে পারেন।
পোশাকের ব্যবসা
পোশাকের ব্যবসা দিয়ে আপনি অধিক লাভবান হতে পারবেন। বর্তমান যুগ পোশাক ও ফ্যাশনের যুগ। নতুন নতুন ডিজাইন ও গুণে মানে উন্নত জামা বানালে খুব দ্রুত আপনার সব পণ্য বিক্রি হয়ে যাবে। এবং আপনি খুব লাভবান হবেন। তাই দেরি না করে আজই ব্যবসায়ে নেমে পড়ুন।
নিয়োগ সংস্থা
সমাজে অধিকাংশ লোক বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে বসবাস করে। তারা ভালো চাকরি পেতে চায় এবং জানতে চায় কোন প্রতিষ্ঠানে পদ খালি আছে। আপনি নিয়োগ সংস্থা গড়ে তোলে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান ও চাকরি প্রার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ে দিতে পারেন। এর মধ্য দিয়ে প্রত্যাশিত অর্থ আয় করতে পারবেন।