ক্যারিয়ার গড়তে এবং দক্ষ প্রযুক্তিপ্রেমী হতে যে বিষয়গুলো জানা আবশ্যক

Image: pexels

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সরকারি চাকরি মানেই সোনার হরিণ। কয়েকটি শব্দে গঠিত সহজ এই বাক্যটি শুনতে শুনতে হয়তো আমরা আজ অনেকেই ক্লান্ত। তবে ক্লান্ত কিংবা পরিশ্রান্ত যাই হই না কেন? বাক্যটির বাস্তবতা কিন্তু সত্যিই ভয়ানক। বাস্তবতার এই পরিসংখ্যান থেকে বের হয়ে অন্য একটি পরিসংখ্যানে নজর দেই চলুন। পরিসংখ্যান বলছে, আমাদের পার্শবর্তী দেশ ভারতের দক্ষ শ্রমিকেরা দক্ষতাকে পুঁজি করে আমাদের তথা বাংলাদেশের প্রাইভেট সেক্টর থেকে প্রতিবছর প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার নিয়ে যাচ্ছে। কি? খুব বেশি অবাক হচ্ছেন, তাই না?

source: familiesforlife.sg

এবার আমাদের মূল আলোচনায় ফিরে আসি, দক্ষতা, চাকরি ইত্যাদি ক্যারিয়ার সম্পর্কিত প্রায় সকল বিষয় একই সূত্রে গাঁথা। কেননা পেশাগত জীবনে আপনি যতো দক্ষ হবেন চাকরির বাজারে আপনার মূল্য তত বেশি। কিন্তু মজার বিষয় হলো, ছোট এই সমীকরণটা আমরা অনেকেই ভুলে যাই। তবে প্রযুক্তিতে ক্যারিয়ার গড়ার মাধ্যমে ছোট এই সমীকরণের মেলবন্ধনটাকে আপনি পরিপূর্ণ করতে পারেন খুব সহজেই নিচের বৈশিষ্ট্যগুলোর আলোকে।

গুগলের সাথে বন্ধুত্ব করুন 

“গুগলের সাথে বন্ধুত্ব” কি অদ্ভুত না! বিষয়টিকে ভাবতে অদ্ভুত লাগলেও বাস্তব জীবনে তথাকথিত বন্ধু আপনার জীবনে কোন প্রভাব না ফেললেও তথ্য প্রযুক্তির ভার্চুয়াল এই বন্ধু আপনার জীবনকে পরিপূর্ণ করে গড়ে তুলতে সম্পূর্ণরূপে সক্ষম। কেননা প্রযুক্তির প্রাণকেন্দ্র খ্যাত গুগলে জানা অজানা প্রায় সবকিছুই পাওয়া যায় নিমিষেই। পড়াশোনা, রান্না, কৃষি, ঔষধ এমনকি জীবন ব্যবস্থাপনা সহ প্রায় সকল বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞান নিতে গুগল হতে পারে অসাধারণ একটি মাধ্যম।

source: edu.google.com

তাই এখন থেকে গুগলের সাথে বন্ধুত্ব করার মাধ্যমে যেকোনো প্রশ্ন আপনার মনে আসলেই প্রথমে গুগল করে জানার অভ্যাস তৈরি করুন এবং নিজেই নিজেকে শিক্ষা দেওয়ার উত্তম শিক্ষাটা আয়ত্ত করুন খুব সহজেই।

কম্পিউটার ব্যবহারে দক্ষ হোন

আপনি যদি হতে চান একজন দক্ষ প্রযুক্তি প্রেমী তাহলে, অবশ্যই কম্পিউটারের বিষয়গুলোর জানা আপনার জন্য অত্যন্ত জরুরী। কেননা প্রযুক্তিকে খুব কাছ থেকে দেখার কিংবা শেখার উত্তম মাধ্যম হচ্ছে কম্পিউটার। আরো মজার বিষয় হলো, প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো গবেষণার জন্য একটি মাত্র কম্পিউটারই যথেষ্ট যেখানে অন্য বিজ্ঞানভিত্তিক বিষয়গুলো গবেষণার জন্য প্রয়োজন বড় বড় ল্যাবরেটরি সাথে উচ্চ মানের টাকা।

source: pexels.com

এজন্য কম্পিউটারের বিভিন্ন সহজ বিষয় সহ তথাকথিত কঠিন যেমন ভাইরাস, স্পাইওয়্যার, ম্যালওয়্যার ইত্যাদি কঠিন বিষয়গুলোর উপর দক্ষ হওয়া খুবই প্রয়োজন। তাই দক্ষ প্রযুক্তি প্রেমী হিসাবে নিজেকে পরিচিত করতে শুরু করেদিন কম্পিউটারের তুলনামূলক সহজ থেকে কঠিন বিষয়বস্তুগুলো আয়ত্ব করতে।

ধারণা রাখুন কয়েকটি প্রযুক্তিগত বিষয়ের উপর

প্রযুক্তির মতো, কমসময়ে পরিবর্তনীয় জিনিস পৃথিবীতে মনে হয় খুব কম আছে। প্রযুক্তিগত প্রত্যেকটি বিষয় বিগত কয়েকবছরে যে হারে আপডেট তথা পরিবর্তন হয়েছে সত্যিই সেটা কল্পনার বাইরে। কারণ কয়েকদিন আগে আপনি যা ভাবতেও পারেননি তা আজ হয়তো আপনার চোখের সামনে অথবা হাতের মুঠোয়। তাই প্রযুক্তিতে আপনার দখল রাখতে প্রযুক্তির বিষয়গুলোর পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে বিষয়গুলোর প্রতি প্রকৃত জ্ঞান অর্জনে নেমে পড়তে হবে এখনেই। আর, তা না হলে পড়তে হবে চরম বিপদে!

source: aiesec.ca

 

একটি উদাহরণ দেখি চলুন, কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধু জমানো টাকা দিয়ে মোটামুটি বাজেটের পছন্দের একটি ফোন কিনতে গেল কিন্তু কেনার পর দেখা গেল তার স্মার্ট মুঠোফোনটিতে বর্তমান সময়ের আকর্ষণীয় সুবিধাগুলো কাজ করছে না। কি ঝামেলায় না পড়তে হলো বেচারাকে! পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে বিস্তার এক গবেষণার পর সে জানতে পারলো তার স্বপ্নের স্মার্ট ফোনটি পুরনো মডেলের। উদাহরণটি বর্তমান সময়ের জন্য খুবেই সাদামাটা হলেও এরকম অসংখ্য প্রযুক্তিক জিনিস হয়তো আমাদের প্রতিনিয়ত কিনতে হয়। এজন্যই নিজেকে প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য প্রযুক্তিগত বিষয়গুলোর উপর ধারণা রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

যেকোনো একটি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হোন

প্রযুক্তির বিষয়গুলোর উপর ধারণা রাখার পাশাপাশি প্রযুক্তি সম্পর্কিত যেকোনো একটি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হওয়া অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে একটি বিষয় খেয়াল রাখা জরুরী – মনে রাখবেন, আপনি যে বিষয়টিতে বিশেষজ্ঞ হতে চাচ্ছেন সেই বিষয়টির বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ চাহিদা আছে কি না? কারণ পূর্বেই বলেছি, প্রযুক্তির বিষয়গুলো অতি মাত্রায় পরিবর্তনীয়। তবে আপনি প্রযুক্তি সম্পর্কিত যেকোনো একটি বিষয় বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে যেতে পারলে প্রযুক্তির বাকি জটিল এবং কঠিন বিষয়গুলো আপনার কাছে খুবই সহজ মনে হবে।

source: wilfa.no

প্রোগ্রামিংয়ে দক্ষতা অর্জন করুন 

প্রযুক্তির প্রাণ নামক যদি কিছু থাকে তাহলে সেটা নিঃসন্দেহে প্রোগ্রামিং। কারণ প্রযুক্তি সম্পর্কিত যত বিষয় আছে প্রায় সবগুলোর অন্তরালে প্রোগ্রামিংয়ের ভুমিকা ব্যাপক। জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ভাষা গুলোর মধ্যে সি, পাইথন, জাভা অন্যতম। এছাড়াও অসংখ্য প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ আছে যা প্রযুক্তিগত বিভিন্ন কাজে বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়। প্রোগ্রামিং কী? এটা তো জানা হলো না। প্রোগ্রামিংকে যদি এক কথায় প্রকাশ করি তাহলে, “এটি হলো কম্পিউটারকে দিক নির্দেশনা দেওয়ার প্রক্রিয়া।”

source: codeburst.io

একটু অন্যভাবে বললে, কম্পিউটার এবং আপনার ভাব প্রকাশের মাধ্যম। বর্তমানে আধুনিক বিশ্বে ক্যারিয়ার হিসেবে প্রোগ্রামিং খুবেই জনপ্রিয় একটি বিষয়। তাই দেরি না করে, প্রযুক্তিকে ভালোবেসে প্রোগ্রামিং এ দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে নির্ভরযগ্য একটি ক্যারিয়ার গড়ার সিন্ধান্ত নিন আজই।

অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারে দক্ষ হোন 

অপারেটিং সিস্টেম আসলে কী? এ বিষয়ে ধারণা থাকা জরুরী। আচ্ছা ভাবুন তো আপনার মস্তিস্ক ছাড়া মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে আপনার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু। এবার আপনার এই ভাবনাকে একটু অন্যভাবে চিন্তা করুন আমাদের আলোচিত বিষয় অপারেটিং সিস্টেমের সাথে। খুব কঠিন মনে হচ্ছে না? বিষয়টি হচ্ছে, আপনার মস্তিস্ক ছাড়া পৃথিবীতে আপনার যেমন কোনো মূল্য নেই ঠিক তেমনি কম্পিউটার বা স্মার্ট ফোনগুলোতে অপারেটিং সিস্টেম নামক সফটওয়্যার বা টুলসটি না থাকলে এটি শুধুমাত্র একটি খেলনার যন্ত্রাংশ ছাড়া কিছুই না।

 

source: mondaynote.com

একটু বাড়িয়ে বললে আমাদের কম্পিউটার বা স্মার্ট ফোনগুলোর প্রাণ বলা যায় এই অপারেটিং সিস্টেমকে। বর্তমানে বহুল প্রচলিত অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যে মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ, ওপেন সোর্স লিনাক্স, গুগলের এন্ড্রোয়েট, অ্যাপলের আই ও এস অন্যতম। আধুনিক প্রযুক্তির এই সময় নিজের কাজকে দ্রুতগতির সাথে এগিয়ে নিতে আপনাকে অবশ্যই দক্ষ হতে হবে প্রচলিত অপারেটিং সিস্টেমগুলোর সাথে। আর তা না হলে পিছিয়ে পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

প্রযুক্তি সম্পর্কিত বিভিন্ন কমিউনিটির সাথে যুক্ত হোন 

কোনো একটি বিষয়কে পরিপূর্ণভাবে এগিয়ে নিতে কমিউনিটির ভূমিকা অপরিসীম। কেননা এখানে আপনি খুব সহজেই পেয়ে যাবেন নির্ধারিত বিষয়ের উপর দক্ষ বা বিশেষজ্ঞ লেভেলের সব মানুষকে। আর বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে এটা এখন খুবেই সহজ হয়ে গেছে। তাই নিজেকে একজন প্রযুক্তিপ্রেমী হিসেবে পরিচিত করতে আপনার আশেপাশে যেমন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা সোসাল মিডিয়ায় যতো প্রযুক্তি সম্পর্কিত কমিউনিটি আছে সেগুলো যুক্ত হয়ে যান তাড়াতাড়ি। কেননা এখানে বিভিন্ন অনুপ্রেরণার পাশাপাশি খুব সহজেই পেয়ে যাবেন নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলার গঠনমূলক সব পদ্ধতি।

source: novagradiska.hr

প্রযুক্তিক পরিবেশ সৃষ্টি করুন 

জীবনের প্রত্যেকটি জিনিস প্রকৃতভাবে জানার এবং শেখার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো পরিবেশ। কেননা আপনার আশেপাশের পরিবেশ যদি ভালো হয় তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনি প্রকৃত মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করবেন এতে কোনো সন্দেহ নাই। কিন্তু পরিবেশ নামক এই সিস্টেম বা ব্যবস্থাপনা তো আর আপনি চাইলেই পরিবর্তন করতে পারবেন না, তাই না? এজন্য আপনাকে পরিবেশ নিজে নিজেই তৈরী করতে হবে।

source: deltalink.be

যেমন বন্ধু, বড় কিংবা ছোট ভাই অথবা বোন, সোশ্যাল মিডিয়া তথা আপনার আশেপাশে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করুন যেখানে সবাই প্রযুক্তিকে মন থেকে ভালোবাসে এমনকি দৈনন্দিন প্রযুক্তির আপডেট বিষয়গুলো নিয়ে পড়তে, জানতে এবং সবার সাথে আলোচনা করতে ভালোবাসেন। সত্যই স্বপ্নময় এরকম একটি পরিবেশের মধ্যে যদি আপনি, আমি কিংবা আমরা থাকতে পারি তাহলে খুব বেশি সময় লাগবে না প্রযুক্তিতে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে পরিচিত করতে।

Featured Image: pexels

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *