জন্মদিন, বিয়ে, ঈদ, পূজা, বড়দিন ইত্যাদি নানান পারিবারিক, সামাজিক, ও ধর্মীয় উৎসব ও অনুষ্ঠান আমরা পালন করি। এসব উৎসব সামনে এলেই প্রাসঙ্গিক ভাবে চলে আসে উপহারের কথা। কেননা কোনো বিশেষ দিনে প্রিয়জনকে মানুষ উপহার দিতে যেমন পছন্দ করে, তেমনি সবাই উপহার পেতে পছন্দ করে। উপহার যেহেতু বিশেষ দিনের বিশেষ আকর্ষণ, তাই উপহার সবসময় হওয়া চাই অভিনব ও নতুন।
ভাবছেন ইতিমধ্যেই আপনার কাছে থাকা সব অভিনব আইডিয়া ব্যবহার করে উপহার দেওয়া হয়ে গেছে! এরপর কি করা যায়? আরো কী কী অভিনব উপায় আছে উপহার দেওয়ার?
আজকের এই নিবন্ধ আমি জানাবো কিছু অভিনব উপহার আইডিয়ার কথা। বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। আমার বিশ্বাস এই আইডিয়া গুলো কাজে লাগিয়ে আপনার প্রিয়জনকে উপহার দিয়ে চমকে দিতে পারবেন। আর ভূমিকা নয়, চলুন ঢুকে পড়ি মুল আলোচনায়।
১. সুদৃশ্য মগ
আপনি চাইলে প্রিয় মানুষকে একটি সুদৃশ্য মগ উপহার দিতে পারেন। মগ উপহার দেয়ার ক্ষেত্রে অনেকগুলো সুবিধাজনক দিক আছে। যেমন আপনি চাইলে যেকোন রংয়ের এবং আকারের মগ কিনতে পারবেন। তাছাড়া বইপ্রেমী, সঙ্গীতপ্রেমী, সায়েন্স ফিকশন প্রেমী, চলচ্চিত্রপ্রেমী, খেলা প্রেমী, সহ যেকোনো ধরনের মানুষ চা, কফি খেতে পছন্দ করে।
সুতরাং স্বভাবতই একটি সুদৃশ্য মগ তাকে খুশি করতে যথেষ্ট। তার চেয়ে বড় কথা, একটি চমৎকার মগ কেনার জন্য আপনাকে বিশেষ কোথাও যেতে হবে না। সাধারণ যেকোনো সিরামিকের দোকানেই আপনি নানান রংয়ের এবং সাইজের মগ পেয়ে যাবেন। সুতরাং কম খরচে প্রিয় মানুষকে খুশি করতে তার জন্য একটি চমৎকার মগ কিনে আনুন। তারপর তা সুন্দর করে মোড়ক করুন, এবং উপযুক্ত সময়ে উপহার দিন।
২. বাবল গাম বা চকলেট
সাধারণত মানুষ উপহার হিসাবে এমন কিছু নির্বাচন করে যা দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়, অথবা সংরক্ষণ করা যায়। কিন্তু আপনি কি কখনো ভিন্নভাবে চিন্তা করে দেখেছেন?
আপনি যাকে উপহার দিচ্ছেন তিনি কতদিন উপহারটি সংরক্ষণ করবেন তার চেয়ে তিনি কতটা খুশি হচ্ছেন সেটা আপনার জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা একই ব্যক্তি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পাওয়া ভিন্ন ভিন্ন উপহারের সবগুলো সারাজীবন সংরক্ষণ করেন না।
সুতরাং সংরক্ষণযোগ্যতার চিন্তা ছেড়ে আপনি চাইলে মজাদার ও আকর্ষণীয় কোনো খাবার উপহার দিতে পারেন। এমন উপহার একই সাথে যেমন আকর্ষণীয় হবে তেমনি রসনাও মেটাবে। কাজেই প্রিয় মানুষকে উপহার হিসেবে এক বক্স বাবল গাম, অথবা চকলেট দিন। এই বাবুল গাম বা চকলেটের বক্স খোলার পর নিঃসন্দেহে আপনার প্রিয় মানুষটি অন্যসব উপহারের চেয়ে কিছুটা ব্যতিক্রম ভাবে খুশি হবেন।
৩. কাস্টম টি-শার্ট
আপনি জানেন, আপনার বন্ধু বা প্রিয় মানুষের অনেকগুলো টি-শার্ট আছে। এমনকি এত বেশি টি-শার্ট যে সবগুলো সে পরার সময় পায় না। সুতরাং এ অবস্থায় বন্ধুর জন্য টি-শার্ট উপহার দেওয়া খুবই বিরক্তিকর কাজ হবে।
কিন্তু ছোট্ট একটি পরিবর্তন বিরক্তির বদলে আপনার টি-শার্ট উপহার কে সবচেয়ে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে। আপনার প্রিয় মানুষের জন্য বিশেষভাবে অর্ডার দিয়ে একটি টি-শার্ট প্রিন্ট করান। আপনাদের দুজনের কোনো বিশেষ মুহূর্তের ছবি অথবা আপনার বন্ধুর কোনো ছবি দিয়ে একটি টি-শার্ট প্রিন্ট করাতে পারেন। সাথে ভাল লাগা কিছু কথাও লিখে দিতে পারেন।
এমন একটি কাস্টম ডিজাইনের টি-শার্ট নিঃসন্দেহে আপনার বন্ধুকে অনেক বেশি খুশি করবে। এভাবে টি শার্ট প্রিন্ট করার জন্য অসংখ্য প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি হয়েছে। অনলাইনে খোঁজ করলেই আপনি অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান পেয়ে যাবেন। নির্দিষ্ট রং এবং সাইজ পছন্দ করে তারপর প্রিন্ট করার বিষয়বস্তু সরবরাহ করলে দুই-একদিনের মধ্যেই এমন একটি টি-শার্ট আপনি হাতে পেয়ে যাবেন। সুতরাং আর দেরি নয়, কাস্টম ডিজাইনের একটি টি-শার্ট উপহার দিয়ে প্রিয় মানুষকে চমকে দিন।
৪. প্রিন্ট করা ছবির ফ্রেম
প্রিয় মানুষকে উপহার দেওয়ার জন্য একটি ছবির ফ্রেম দারুণ আইডিয়া হতে পারে। তবে তা সাধারণ কোনো ছবির ফ্রেম নয়। প্রথমে আপনি একটি সাধারণ ছবির ফ্রেম কিনুন। তারপর সেই ফ্রেমটি বিশেষভাবে রং করুন। সচরাচর ছবি রাখার ফ্রেম সবাই উপহার দেয়। কিন্তু সেই ফ্রেমটি বিশেষভাবে রং করে কেউ উপহার দেয় না।
আপনি যদি একটি সাধারণ ছবির ফ্রেমকে বিশেষভাবে রং করেন তবে তা বিশেষ উপহারে পরিণত হবে। এর জন্য আপনি পছন্দ মতো যেকোনো আকারের ছবির ফ্রেম কিনতে পারেন। তারপর ছবির ফ্রেমের গ্লাসের ধারে বিশেষ ডিজাইনে রং করুন। রং শুকিয়ে যাবার পর আপনি একটি চমৎকার ছবির ফ্রেম পাবেন, যা ইতিপূর্বে কেউ দেখেনি। সুতরাং প্রিয় মানুষকে চমকে দিতে একটি সাধারণ ছবির ফ্রেমকে অসাধারণ করে তুলুন।
মানুষ উপহার পেতে যেমন পছন্দ করে, তেমনি উপহার দিতেও পছন্দ করে। কাউকে উপহার দেওয়ার সময় শুধু মনে রাখুন উপহারটি যেন সম্মানজনক হয়। আপনি যে উপহারটি প্রস্তুত করছেন এমন উপহার আপনি নিজে পেলে আদৌ খুশি হতেন কিনা। যেমন উপহার আপনি নিজে পেলে খুশি হতেন না তেমন উপহার কাউকে দিবেন না। ভেবে দেখুন, এভাবে চিন্তা করলে আপনার দেওয়া প্রতিটি উপহারই অসাধারণ হতে বাধ্য। সুতরাং লক্ষ্য রাখুন, উপহার যেন শুধু সামাজিকতার অংশ না হয়ে ভালোবাসার অংশ হয়ে ওঠে। এমন ভালোবাসাপূর্ণ উপহার পরস্পরের মধ্যে হৃদ্যতা বাড়িয়ে তোলে, সম্পর্ক মধুর করে।